প্রিন্সেস সিনড্রোম (princess syndrome)/ প্রিন্সেস সিকনেস (Princess sickness): স্বপ্ন দেখা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি গুলোর একটি। ঘুমের ভিতর হউক কিংবা অবচেতন মনের কল্পনায়, পৃথিবীর প্রায় সব মানুষ ই স্বপ্ন দেখলেও সেই স্বপ্ন মানুষ আর পরিবেশ ভেদে আলাদা হয়। এর ভিতর কিছু কিছু স্বপ্ন আছে যা কমন। যেমন মেয়েদের রাজকন্যা আর পঙ্খীরাজ ঘোড়ায় চেপে স্বপ্নের রাজ কুমার কাহিনীর স্বপ্ন। আমার বিশ্বাস দুনিয়াতে এমন কোন মেয়ে নাই যে জীবনে একবারের জন্য হলেও কল্পনায় ভাবে নাই যে তার রাজকুমার পংখিরাজ ঘোড়ায় চেপে তাকে নিতে আসবে না। বাস্তবে সম্ভব নয় জেনেও মনের অলিক কল্পনায় তারা এই স্বপ্ন দেখবেই দেখবে। সে সুন্দরী হউক আর দেখতে ভজঘট হউক। তাতে কি আসে যায়? রাজকুমার আসবে আর তার সব মুস্কিল আসান করে দিয়ে তাকে উদ্ধার করে নিয়ে যাবে। বিষয়টা এত দূর পর্যন্ত থাকলে ঠিক ছিল কিন্তু কিছু কিছু মেয়ে এইটা নিজের ভিতর ধারন করে। নিজেকে তাদের কাছে রাজকন্যা/প্রিন্সেস বলে মনে হয়। তাদের আচার আচারন আর স্বভাবে তার অনেকটাই প্রকাশ করে। আর তখনই সুরু হয় যত ভজোঘটো কান্ড কারখানা। নিজেকে রাজকন্যা ভাবা, প্রাচীন রাজকন্যার মত আচার আচরন করতে যাওয়ার মুলে আসলে থাকে, তার দিকে যেন মানুষ ইন্টেশন দ্যায়। তার সব কিছু ভাল খারাপ যাই হউক তার বৈধতা যেন দেওয়া হয় এই ভাবনা থেকেই মেয়েরা এমন করে। আপনি জেনে অবাক হবেন মেয়েদের এই নিজেকে রাজকন্যা/প্রিন্সস ভাবা,কিংবা তাদের মত করতে চাওয়া একটা মেন্টাল ডিস অর্ডার এর পর্যায়ে পড়ে। যার নাম প্রিন্সেস সিনড্রোম (princess syndrome) কেউ কেউ মেয়েদের এই মেন্টাল-ডিজঅর্ডার (mental disorder) টিকে প্রিন্সেস সিকনেস (Princess sickness) নামেও আখ্যায়িত করে থাকেন।
সাইকোলজি নিয়ে আমার লেখা পুরাতন পোস্ট গুলো পড়ে আসতে পারেন
প্রিন্সেস সিনড্রোম (princess syndrome) শব্দটি চীন, ভিয়েতনাম ও কোরিয়া অঞ্চলের যুবতী বা কিশোরী মেয়েদের বিশেষ করে বয়সন্ধীকালিন সময়ের কিশোরীদের প্রভাবিত করে এমন একটি মনস্তাত্ত্বিক ঘটনা বুঝাতে ব্যাবহার করা হয়। প্রিন্সেস সিনড্রোম (princess syndrome) বা প্রিন্সেস সিকনেস (Princess sickness) এর প্রভাবে মেয়েরা নিজেদের রাজকন্যা ভাবে অথবা তাদের সমকক্ষ হিসেবে একটি ভ্রান্ত বিশ্বাস নিজের মনের ভিতর লালন করে । আর এই আকাশ সম প্রত্যাশা এবং অবাস্তব আদর্শ লালন করার জন্য তারা বিশ্বাস করে যে, সবাইকে তারা যা চায় তা দিতে হবে।
মেয়েদের নিজেকে প্রিন্সেস ভাবা নিয়ে সুন্দর প্রবাদটি হয়তো সবার ই জানেন,
“Every girl deserves to be treated like a princess.“
Heidi Montag
প্রিন্সেস সিন্ড্রোমযুক্ত একটি মেয়ে একটি রূপকথার গল্পর মত জীবনযাপন করতে চায়, সে বিশ্বাস করে যে তিনি বিশ্বজগতের কেন্দ্র এবং পৃথিবী এবং এর লোকেরা তাকে রক্ষা করবে এবং যাই হোক না কেন তাকে ভালবাসবে।
ফাইল ফটো
১.সর্বদা তালগোল পাকানোর চেষ্টা করে থাকেঃ এসব রাজকন্যারা কখনই রূপক এবং আক্ষরিকভাবে পরিশ্রম করতে চায় না। তারা তাদের পছন্দগুলির জন্য ক্ষমা করতে এবং সারাক্ষণ ‘ভিভিআইপি’ হিসাবে বিবেচিত হতে চায়। তারা নিজেরা নিজের জন্য কিছু করে না বরং চায় বাকিরা সবসময় সে চাহিবামাত্র তার কাজ করে দিবে।
২.অনবরত ঘ্যানঘ্যান করেঃ যখন সে তার মত পথ পাবে না বা স্পটলাইট তার উপর উজ্জ্বলভাবে জ্বলছে না, তখন একজন রাজকন্যা হাহাকার করবে। এবং কোনও ব্যক্তি তাকে সন্তুষ্ট না করা পর্যন্ত তিনি হাহাকার এবং অভিযোগ করবেন। যদি তা না হয় তবে আপনাকে তার কালো মুখ এবং বাকী দিনটির জন্য নিষ্ক্রিয়-আক্রমণাত্মক জবাবদিহি করতে হবে।
৩.দ্বিধান্বিত থাকবে তবু দায়িত্ব চাইঃ সে সবসময় বসের মত আচারন করবে, সে চাইবে তার কথাই শেষ কথা হোক এবং একাই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নকারী হোক ।
৪.প্রতিটি সমালোচনাকে ব্যক্তিগত আক্রমণ হিসাবে গ্রহণ করাঃ কোনও রাজকন্যা সমালোচনাকে ভালভাবে গ্রহণ করে না বা পরামর্শকে গঠনমূলক বলে বিবেচনা করে না। কখনও না। তারা সাধারণত যে কোনও মূল্যেই ভুল স্বীকার করবে না। প্রতিটি আঘাত ব্যক্তিগত আক্রমণ হিসাবে গ্রহণ করবে ; এমনকি যদি আপনি তাকে বলেন “আপনাকে আজ অন্যরকম দেখাচ্ছে।” সে বলবে ? তুমি কি বলছো আমাকে খারাপ দেখাচ্ছে ??
ফাইল ফটো
৫. তার চেয়ে নিচু শ্রেণী এমন কোনো ছেলেকে সুযোগ দেয় নাঃ এই মেয়েদের কঠোর চেকলিস্ট রয়েছে যা সাধারনত বেশিরভাগ ছেলেদের সাথে মিশে না তাই তাদের বাজেভাবে প্রত্যাখ্যান করে।
এমন সিনড্রোমের দরুন তারা পরবর্তীতে বাস্তবতার মুখোমুখি হয়ে বিভিন্ন সমস্যায় ভুগে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলঃ-
স্বাধিনতার অভাব: মেয়েটি বিশ্বাস করে সর্বদা লোকেরা তার পিছনে পিছনে আসবে এবং তার সমস্যাগুলি সমাধান করে দিবে, মেয়েটি আপনার,বা তার প্রেমিক এবং বন্ধুদের উপর অতিরিক্ত নির্ভরশীল হতে পারেন। এটি বহু বছরের সাধারণ ফলাফল যা পিতামাতারা তাদের তরুণ প্রাপ্তবয়স্ক জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই তাদের মেয়েদের পথ স্মুথ এবং ‘সহায়তা’ করতে ব্যয় করেছিলেন।
হতাশা: জীবনে সম্পূর্ণ হতাশায় পর্যবাসিত হয় যখন মেয়েটি বুঝতে পারে না যে লোকেরা কেন তার প্রত্যাশা পূরণ করে না। এবং যখন তাকে কিছু নির্দিষ্ট কাজ করতে হয় বা কখনো লোকেরা তার কাছ থেকে প্রত্যাশা করে থাকে।
এইধরনের মানসিক ব্যাধি থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে এবং জীবনের বাস্তবতা মেনে নিয়ে চলতে হবেএবং উপভোগ করতে হবে।মনে রাখতে হবে পৃথিবীটা শুধু আপনাকে কেন্দ্র করে ঘুরে না এবং আপনি যেমন ভাবে পৃথিবী দেখেন বাকীরা তেমন ভাবে দেখা না। তবে একটা ক্ষেত্রে এই স্বভাব কাজে দেয় যখন আপনি এক্সপেকটেশনের দিক দিয়ে নয় বরং সুন্দর মন মানসিকতার জন্য প্রিন্সেস হতে চান।
“Behaving like a princess is work. It’s not just about looking beautiful or wearing a crown. It’s more about how you are inside.”
Julie Andrews
তথ্যসুত্রঃ
Leave a Reply