1. sjranabd1@gmail.com : Rana : S Jewel
  2. solaimanjewel@hotmail.com : kalakkhor : kal akkhor
অস্তিত্ব সংকটে ইস্রাইল! - কালাক্ষর
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:৪৭ পূর্বাহ্ন

অস্তিত্ব সংকটে ইস্রাইল!

  • Update Time : সোমবার, ২২ জানুয়ারী, ২০২৪

মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাসে গত ২০২৩ সালের ৭ই অক্টোবর একটা গুরুত্বপূর্ণ দিন হয়ে থাকবে। সেদিন সকালে ইসরাইলেরই হাতে তৈরি হামাস পন্থী ফিলিস্তিনিরা গাজা উপত্যকা থেকে বের হয়ে এসে দখলদার ইস্রাইলি বাহিনীর উপর হামলা করে বসে এবং ইস্রাইলের ব্যাপারে বহুদিন ধরে তৈরি করা কল্পকাহিনীগুলিকে মিথ্যা প্রমাণ করে। প্রথম কয়েকদিন ধরে পশ্চিমা মিডিয়াতে হামলার ভিডিওগুলি সম্পূর্ণ দেখানো হচ্ছিলো না; কারণ সেখানে ইস্রাইলি বাহিনীর উপর হামলার পদ্ধতিকে সুন্দরভাবে দেখিয়ে দেয়া হচ্ছিলো। তবে একসময় আরব টিভি চ্যানেলগুলিতে এই ভিডিওগুলি ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়লে পশ্চিমা মিডিয়াগুলিও ধীরে ধীরে পুরো ভিডিও দেখাতে থাকে। এর মাঝে আবার ইস্রাইল লবির লোকেরা সোশাল মিডিয়াতে এই ভিডিওগুলির বিরুদ্ধে রিপোর্ট করে সেগুলির ছড়িয়ে পড়াকে কিছুটা হলেও আটকাবার চেষ্টা করে। পশ্চিমা মিডিয়া ফিলিস্তিনের এই হামলাকে শুধুমাত্র হামাসের হামলা বললেও যে ব্যাপারটা পরিষ্কার তা হলো, এখানে হামাস ছাড়াও পুরো গাজাবাসী জড়িত ছিল। স্বতস্ফূর্ত সমর্থন ছাড়া একটা রাজনৈতিক দলের পক্ষে এহেন হামলা সম্ভব ছিল না। কারণ ১৮ই অক্টোবর পর্যন্ত ইস্রাইলি পাশবিক হামলায় সাড়ে ৩ হাজার ফিলিস্তিনির মৃত্যু ঘটলেও ফিলিস্তিনিদের মাঝে হাল ছেড়ে দেয়ার প্রবণতা দেখা যায়নি।

হামলার কারণ এবং সময় হিসেবে অনেকেই ধারণা করছেন সৌদি-ইস্রাইল সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের প্রক্রিয়া। কারণ সৌদিদের আগে ইতোমধ্যেই মধ্যপ্রাচ্যের বাকি দেশগুলিও ‘আব্রাহাম একর্ড’এর মাধ্যমে মার্কিন মধ্যস্ততায় ইস্রাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করে ফেলেছে। একসময় এটা একটা সমঝোতা ছিল যে, স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র না হওয়া পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলি ইস্রাইলকে স্বীকৃতি দেবে না। কিন্তু সৌদিরাও যখন ইস্রাইলের সাথে মিলে যাচ্ছিলো, তখন এটা পরিষ্কার হচ্ছিলো যে, আরবরা ফিলিস্তিনকে বিক্রি করে দিয়েছে। হামাস বলছে যে, ফিলিস্তিন সাম্প্রতিক সময়ে আলোচনার টেবিল থেকে হারিয়ে যাচ্ছিলো। আরও একটা অতিরিক্ত লক্ষ্য হয়তো হামাসের থাকতে পারে; তা হলো, ইস্রাইলের কারাগারে থাকা প্রায় ৬ হাজার রাজবন্দীর মুক্তি; যাদের মাঝে কিছু ব্যক্তিকে ৪০ বছর ধরে আটকে রাখা হয়েছে। হয়তো দু’শ ইস্রাইলি বন্দীর বিনিময়ে তাদেরকে ফেরত পেতে চাইতে পারে হামাস। এর আগে ২০১১ সালে একজন ইস্রাইলি সেনার বিনিময়ে কয়েক’শ ফিলিস্তিনি কয়েদিকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছিল ইস্রাইল। এর মূল কারণ হলো ইস্রাইলের সেনাবাহিনী হলো গণবাহিনী; যেখানে পেশাদার সেনার সংখ্যা খুবই কম। বাধ্যতামূলকভাবে সেনাবাহিনীতে সার্ভিস দিতে আসা সেনার পরিবার সর্বদাই আশা করে যে সরকার যুদ্ধবন্দীদের যেকোন মূল্যে ফেরত আনবে। এটা না করলে সরকারের ক্ষমতায় টিকে থাকাই দায় হয়ে যাবে।

ব্যর্থ ইস্রাইলের ইন্টেলিজেন্স এবং সামরিক বাহিনী

যে ব্যাপার নিশ্চিত তা হলো, হামাসের এই পরিকল্পনা দুই বছরের। ২০২১ সালের মে মাসে গাজা যুদ্ধের সময় হামাস ইস্রাইলের ‘আয়রন ডোম’ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সর্বোচ্চ সক্ষমতার একটা ধারণা করে ফেলে। খুব সম্ভবতঃ তখনই তারা নিশ্চিত হয়ে যায় যে, ইস্রাইলকে পরাজিত করা সম্ভব। একারণেই এবারের হামলার শুরুটা হয় ৩০ মিনিটে ৫ হাজার রকেট ছোঁড়ার মাধ্যমে; যার বেশিরভাগই ‘আয়রন ডোম’ ঠেকাতে ব্যর্থ হয়। হামাসের সশস্ত্র বিভাগ ‘ইজ্জাদ্দিন আল-কাসাম ব্রিগেড’এর সদস্যরা দুই বছর ধরে ট্রেনিং নিয়েছে। হামাসের ট্রেনিং ভিডিওগুলিতে দেখা যায় যে, তারা ইস্রাইলের লোহার বেড়াগুলি ভেঙ্গে তার মাঝ দিয়ে মোটরসাইকেল নিয়ে যাবার জন্যে প্রস্তুতি নিয়েছে এবং শহরাঞ্চলে ঘর থেকে ঘরে হামলা করে শত্রুদের পরাস্ত করার ব্যাপারেও ট্রেনিং নিয়েছে। প্যারা গ্লাইডার ব্যবহার করে দেয়ালের উপর দিয়ে উড়ে গিয়ে ইস্রাইলি অঞ্চলে ঢুকে পড়ার ট্রেনিংও ছিল এর মাঝে। হামাসের নেভাল কমান্ডোরা বেশ কয়েক বছর ধরেই ইস্রাইলের উপকূলে ঢুকে পড়ার অপারেশন চালিয়ে যাচ্ছিলো; যেখানে তারা কিছু ক্ষেত্রে সফল বা কিছু ক্ষেত্রে বিফলও হয়েছিল। তবে যে ব্যাপারটা নতুন ছিল তা হলো, কোয়াডকপ্টার ড্রোনের মাধ্যমে ছোট বোমা ফেলে ইস্রাইলি ওয়াচটাওয়ারের উপর গোয়েন্দা ক্যামেরাগুলিকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলা। ৭ই অক্টোবরের হামাসের ভিডিওতে দেখা যায় যে, বিকল করে ফেলা ওয়াচটাওয়ারের দিকে ছুটছে ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা; কারণ সেই অঞ্চলে ইস্রাইলিরা কিছু সময়ের জন্যে অন্ধ হয়ে গেছে। সমস্যা হওয়া অঞ্চলে ছুটে আসা টহলরত ‘মেরকাভা মার্ক-৪’ ট্যাংকের উপর কোয়াডকপ্টার ড্রোন থেকে মর্টার শেল ফেলে সেটাকে পুরোপুরিভাবে ধ্বংস করে ফেলা হয়। ‘মেরকাভা-৪’এর বর্ম যে উপরের দিকে কতটা দুর্বল, তা এই ঘটনায় পরিষ্কার হয়ে যায়। যেকারণে ইস্রাইল এখন সকল ট্যাঙ্কের উপরে খাঁচা স্থাপন করছে; যাতে করে ট্যাঙ্কগুলিকে ড্রোনের আক্রমণ থেকে বাঁচানো যায়।

সাত দশকেও ইস্রাইলিরা ফিলিস্তিনিদেরকে দুর্বল করতে ব্যর্থ হয়েছে। ১৯৪৮ সালে ৭ লক্ষের বেশি ফিলিস্তিনিকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়ার পর ইস্রাইলিরা মনে করেছিলো যে, ফিলিস্তিনিরা হয় ফিলিস্তিন ছেড়ে চলে যাবে অথবা ইস্রাইলের বশ্যতা স্বীকার করে নেবে; ফিলিস্তিনি ছেলেরা পড়াশোনার অভাবে ও কর্মহীনতায় মাদকাসক্ত হয়ে পড়বে। সেটা হয়নি। এরপর ইস্রাইলিরা ফিলিস্তিনি পুরুষদেরকে কারাগারে পুরে মনে করেছিলো যে, ফিলিস্তিনি আন্দোলনের এটাই বুঝি শেষ। কিন্তু ১৯৮৭ সালের ইন্তিফাদার সময় শিশু এবং মহিলারাও রাস্তায় নেমে ইস্রাইলকে ভুল প্রমাণ করেছিলো। মোসাদ যথারীতি ব্যর্থ ছিলো কোনরূপ আগাম সতর্কতা দিতে। ইস্রাইলিরা গুড়িয়ে দিলো ফিলিস্তিনিদের বাড়িঘর। প্রত্যুত্তরে ফিলিস্তিনিরা হাজির হলো রকেট নিয়ে। দ্বিতীয় ইন্তিফাদাও হলো ২০০০ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত; যেখানে চার বছরে এক হাজার ইস্রাইলি প্রাণ হারালো। ইস্রাইলিরা উঁচু দেয়াল তুলে দিলো। জবাবে ফিলিস্তিনিরা দেয়ালের নিচ দিয়ে সুরঙ্গ খুঁড়লো। সাত দশক পর ২০২৩ সালে সবচাইতে বড় হামলা এলো গাজা থেকে। ইস্রাইলের যেকোন শহর এখন রকেটের পাল্লার ভেতরে। ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা বুদ্ধিমত্তা, পরিকল্পনা ও কর্মসম্পাদনে ইস্রাইলের প্রযুক্তিগত উতকর্ষতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। ইস্রাইলিদের মাঝে প্রশ্ন আসাটা স্বাভাবিক – এই সংঘাতের শেষ কি আদৌ সম্ভব? অথবা ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইস্রাইলের বিজয় কি আদৌ সম্ভব কিনা?

 ইস্রাইলিরা কি ভয় পেয়েছে? 

ইস্রাইলের সরকারি হিসেবে ১৫ই অক্টোবর পর্যন্ত ১৪’শ ইস্রাইলি নিহত হয়েছে। ১৯শে অক্টোবর সকাল পর্যন্ত ৩’শ ৬৩ জন সামরিক এবং পুলিশ বাহিনীর সদস্য নিহত হয়েছে। ৩ জন কর্নেলের মাঝে ছিলেন রোই লেভি; যিনি ইস্রাইলের ‘ঘোস্ট ইউনিট’ বলে খ্যাত ‘মাল্টিডোমেইন ইউনিট’ নামের স্পেশাল ফোর্সের কমান্ডার ছিলেন। এছাড়াও ৪ জন লেঃ কর্নেল, ২১ জন মেজর, ১৮ জন ক্যাপ্টেন, ১৭ জন লেফটেন্যান্ট ছিল মৃতদের মাঝে। ১৯৭৩ সালের যুদ্ধের পর থেকে ইস্রাইলিরা তাদের নিজেদের এত মৃতদেহ দেখেনি। ইস্রাইলের ‘হারেতস’ পত্রিকার এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে যে, বহু ইস্রাইলি ভয়ে প্লেনের টিকেট কেটেছে পালিয়ে যাবার জন্যে। ইস্রাইলে কেউ কেউ হতাশা নিয়ে বলছেন যে, সাত দশকেও এই দেশ তাদেরকে শান্তি ও নিরাপত্তা দিতে পারেনি; এর চাইতে দেশ ছেড়ে চলে যাওয়াই ভালো। ইস্রাইল নিজেকে শক্তিশালী করতে বিভিন্ন দেশে থাকা ইহুদীদেরকে ইস্রাইলে এসে বসবাস করার জন্যে অনুপ্রাণিত করেছে সর্বদা। কিন্তু ইস্রাইল প্রতিষ্ঠার সাত দশক পরেও নিরাপত্তাহীনতা অনেকের জন্যেই পীড়াদায়ক ঠেকেছে।

এখানে একটা বড় ব্যাপার ছিল ফিলিস্তিনিদের মরণপণ টিকে থাকার সংগ্রাম। বিত্তশালী এবং সুবিধাভোগী ফিলিস্তিনিরা অনেক আগেই ফিলিস্তিন ছেড়ে পালিয়েছিলো। যারা রয়ে গিয়েছিলো, তাদের বিরুদ্ধেই ইস্রাইলি বাহিনী তাদের বর্বরতাকে টার্গেট করেছিল। ইস্রাইলিরা চাইছিলো যে, ফিলিস্তিনিরা যেন অত্যাচারিত হয়ে তাদের ভূমি ছেড়ে পালিয়ে যায়; তাহলে ইস্রাইল পুরো ভূমির দখল নিতে পারবে। কিন্তু কয়েক লক্ষ ফিলিস্তিনি মাটি কামড়ে পড়ে থাকে; ইস্রাইলি হামলায় তাদের পরিবারের সদস্যরা মৃত্যুবরণ করার পরেও এবং ইস্রাইলিরা তাদের জীবনযাত্রা অস্বাভাবিক রকমের কষ্টকরা করে ফেলার পরেও তারা তাদের ভূমি ছেড়ে যায়নি। ফিলিস্তিন বলতে এখন শুধুই জর্ডান নদীর পশ্চিম তীর এবং গাজা; বাকি পুরো ফিলিস্তিন এখন ইস্রাইলের দখলে। অস্ত্রের জোরে দখল করে নেয়া এই ভূমিতে ইস্রাইলিরা বসতি স্থাপন করেছে এবং ফিলিস্তিনিরা তাদের উপর হামলা করলে তারা বলছে যে, ফিলিস্তিনিরা সন্ত্রাসী এবং তারা মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে। যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা বিশ্ব যথারীতি ইস্রাইলকে পুরো সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে এবং ইস্রাইলের সকল কর্মকান্ডকে বৈধতা দান করছে। তবে আশ্চর্য্য ব্যাপার হলো, মুসলিম বিশ্বের নেতৃবৃন্দ এবং বিরাট সংখ্যক জনগণ এরপরেও পশ্চিমা দেশগুলিকে মানবাধিকার এবং সুবিচারের উদাহরণ হিসেবে দেখছে এবং তাদেরকে বন্ধু মনে করছে।

ইস্রাইলের নিরাপত্তা যখন তার প্রতিবেশীদের হাতে!

তবে ইস্রাইলের নিরাপত্তার মূল দায়িত্ব তার আশেপাশের আরব দেশগুলির হাতে। যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটেনের বন্ধু এই দেশগুলি বিশাল সামরিক শক্তির মালিক হলেও তারা ইস্রাইলের বিরুদ্ধে সেই শক্তিকে ব্যবহার করবে না নীতিতে এগুচ্ছে। মূলতঃ পশ্চিমাদের ইশারাতেই তাদের এই নীতি। ইস্রাইলের সাথে বন্ধুত্বের পুরষ্কারস্বরূপ মিশর যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ থেকে যুদ্ধবিমান, যুদ্ধজাহাজ এবং ট্যাংক পেয়েছে। ‘গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার’এর হিসেবে মিশর বিশ্বের ১৪তম শক্তিশালী রাষ্ট্র এবং ইস্রাইলের তুলনায় মিশরের শক্তি যথেষ্টই বেশি। এর সাথে জর্ডান যোগ হলে ইস্রাইলের জন্যে যেকোন যুদ্ধে জেতা প্রায় অসম্ভব। কিন্তু ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত ইস্রাইল সবগুলি যুদ্ধে জিতেছে – এই ছুতো দেখিয়ে এই দেশগুলির নেতৃত্ব ইস্রাইলের সাথে যুদ্ধ করা থেকে বিরত থাকে। শুধু তা-ই নয়, এবার ফিলিস্তিনি হামলার আগে মিশর ইস্রাইলকে আগাম সতর্কবার্তা দিয়েছিল বলে খবর বেরিয়ে এসেছে। এতে পরিষ্কার হয় যে, মিশরের সরকার প্রকৃতপক্ষে কাদের বন্ধু। ইস্রাইলের অনুমতি না পেয়ে ১৯শে অক্টোবর পর্যন্ত মিশর গাজার সাথে সীমান্ত বন্ধ করে রেখেছিল। এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ইশারাতেই মিশরের প্রেসিডেন্ট আব্দেল ফাত্তাল এল-সিসি গাজার সীমান্ত খুলে দিতে রাজি হন। অপরদিকে লেবানন এবং জর্ডানে জনগণ ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ করলে সেই দেশের পুলিশ জনগণের উপর হামলা করে প্রমাণ করে যে, তারা শুধু ইস্রাইলের বন্ধুই নয়, বরং মার্কিনী এবং ইস্রাইলিদের আজ্ঞাবহও বটে।

ইস্রাইল তার নিরাপত্তার জন্যে আশেপাশের দেশগুলির উপর কতটা নির্ভরশীল, তার প্রমাণ পাওয়া যায় ইস্রাইলের সেনাবাহিনীর ফর্মেশনের দিকে তাকালে। ইস্রাইলি সেনাবাহিনীর একটা প্লাটুনে রয়েছে মাত্র দু’টা ট্যাংক; যেখানে বাকি দেশগুলিতে ট্যাংক প্লাটুনে রয়েছে ৩ থেকে ৪টা করে ট্যাংক। একটা ট্যাংক কোম্পানিতে যেখানে ১২ থেকে ১৪টা ট্যাংক থাকার কথা, সেখানে ইস্রাইল রেখেছে ১০টা করে। আর একটা ট্যাংক ব্যাটালিয়নে তিনটা কোম্পানির স্থলে ইস্রাইল রেখেছে মাত্র দু’টা। এর ফলে যেখানে বাকি সকল দেশের ট্যাংক ব্যাটালিয়নে ট্যাংক থাকে ৪০ থেকে ৫০টা, সেখানে ইস্রাইলের ট্যাংক ব্যাটালিয়নে ট্যাংক থাকে মাত্র ২২টা। এর কারণ একটাই – হামাস বা হিযবুল্লাহর সাথে যুদ্ধ করতে তো একটা প্লাটুনে দু’টা বা একটা ব্যাটালিয়নে ২২টার বেশি ট্যাংক দরকার হবে না। অর্থাৎ ইস্রাইলের সেনাবাহিনী কোন রাষ্ট্রীয় সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে প্রস্তুত নয়।

শুধু প্রতিবেশী দেশগুলিই নয়; ইস্রাইল ফিলিস্তিনিদেরকেও বিভক্ত করে রেখেছে, যাতে করে এক ফিলিস্তিনি অন্য ফিলিস্তিনির সহায়তায় এগিয়ে না আসে। একসময় ইয়াসির আরাফাতের ফাতাহ পার্টির জনপ্রিয়তাকে বিভক্ত করতে ইস্রাইল হামাসকে উঠতে দিয়েছে। এরপর ২০০০ সালের পর দ্বিতীয় ইন্তিফাদার সময় ইস্রাইল পশ্চিম তীরে হামাসের নেতৃত্বকে নিশ্চিহ্ন করেছে; যাতে করে পশ্চিম তীরে শুধু ফাতাহ থাকে; আর গাজায় থাকে শুধুই হামাস। মোসাদ এবং সিআইএতে অনেকেই হামাসকে সহায়তা দেয়ার বিরোধী ছিল। তবে ইস্রাইলিরা তাদের নীতি চালিয়ে নেয় ‘ডিভাইড এন্ড রুল’ বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে। ইস্রাইল সর্বদাই ফিলিস্তিনের ইস্যুগুলিকে আলাদাভাবে টেবিলে নিয়ে আসে (যদিও আলোচনার ফলাফল সর্বদাই ছিল শূণ্য); যেমন, আল-আকসা ইস্যু, পশ্চিম তীরে ইহুদি বসতি ইস্যু, সীমানা ইস্যু, গাজা ইস্যু, অথবা অন্য কোন ইস্যু। প্রতিটা ইস্যুতে তারা ভিন্ন পক্ষের সাথে বসেছে এবং ফিলিস্তিনিদের মাঝে বিভেদ তৈরি করেছে। এর ফলশ্রুতিতে এখনও দেখা যায় যে, গাজাতে বোমা ফেলার সময় পশ্চিম তীরে খুব একটা বড় কোন ঘটনা ঘটছে না। ইস্রাইলের এই পরিকল্পনাকে বাস্তবতা দিচ্ছে মাহমুদ আব্বাসের ফিলিস্তিন সরকার। যেমন, পশ্চিম তীরে গাজার সমর্থনে বিক্ষোভে আব্বাসের পুলিশ বাহিনী হামলা চালিয়েছে।

ইস্রাইলের সেনাবাহিনী কোন পেশাদার বাহিনী নয়

ইস্রাইলের সামরিক বাহিনী মূলতঃ বাধ্যতামূলক সার্ভিসের উপর ভিত্তি করে গঠিত। সেখানে পেশাদার সেনার সংখ্যা খুবই কম। আর পার্ট-টাইম সেনা হবার কারণেই এই সেনাদের জীবনের নিরাপত্তা দেয়ার জন্যে ইস্রাইল এতটা উদগ্রীব। ইস্রাইলি সেনাবাহিনীই একমাত্র সেনাবাহিনী, যারা ট্যাংক চ্যাসিসের উপর ভিত্তি করে আর্মার্ড পার্সোনেল ক্যারিয়ার বা এপিসি তৈরি করে। এই এপিসির কাজ হলো শত্রুর গুলি থেকে নিজেদের সেনাদেরকে কিছুটা রক্ষা করা। একারণে বিশ্বের বেশিরভাগ এপিসি মেশিন গানের গোলা ঠেকাতে পারে। তবে এন্টি-ট্যাঙ্ক অস্ত্রের মুখে এগুলি একেবারেই তুচ্ছ। অপরদিকে ইস্রাইলের সেনাবাহিনীতে রয়েছে হেভি এপিসি – ‘আখজারিট’, ‘নাগমাশন’, ‘নাকপাদন’, ‘নামের’। এগুলি ৫২ টন থেকে শুরু করে ৬৪ টন পর্যন্ত ওজনের। এই বর্মাবৃত গাড়িগুলির চেহাড়া দেখলেও বোঝা যায় যে, এর ভেতর বসে থাকা সেনারা নিজেদের জীবন নিয়ে কতটা ভীত।

ইস্রাইলি সেনাবাহিনীর ইউনিটগুলির সেনাদের অভিজ্ঞতাও প্রশ্ন করার মতো। একেকটা ট্যাংক প্লাটুনে ৮জন করে সেনা থাকে; যাদের মাঝে একজনের অভিজ্ঞতা থাকে সর্বোচ্চ দুই থেকে ৪ বছর। কারণ তারা সেই মুহুর্তে সেনাবাহিনীতে তাদের সার্ভিসের একেবারে শেষের দিকে রয়েছেন। ইস্রাইলের সেনাবাহিনীতে কোন পেশাদার এনসিও নেই, যাদের অভিজ্ঞতা ৩২ মাসের বেশি। অপরদিকে অন্য যেকোন পেশাদার সেনাবাহিনীতে বেশিরভাগ এনসিওর অভিজ্ঞতা ১০ বছর বা এর চাইতে আরও অনেক বেশি হবে। ইস্রাইলের এই সেনাবাহিনীতে আবার রয়েছে রিক্রুটমেন্ট সমস্যা। ইস্রাইলের গোড়া ইহুদি বা হারেদি জনগোষ্ঠী জায়নিস্ট জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী নয়। তাই তারা সেনাবাহিনীতে সার্ভিস দিতে চায় না। তারা বলে যে, জায়নিস্টরা ইস্রাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে সমস্যা তৈরি করেছে; তাই তৈরি করা সমস্যা তাদেরই মেটানো উচিৎ। হারেদিদের জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পেয়ে ২০২২ সাল নাগাদ প্রায় ১৩ লক্ষ বা ইস্রাইলের মোট জনসংখ্যার ১৩ শতাংশের বেশি হয়ে গেছে। এত বড় জনগোষ্ঠীকে সামরিক সার্ভিসের বাইরে রাখতে চাইছে না ইস্রাইল; তাই হারেদিদের সাথে রাষ্ট্রের চলছে দ্বন্দ্ব। রিক্রুটমেন্ট সমস্যা সমাধানে ইস্রাইল ব্যাপক হারে মহিলাদেরকে সামরিক বাহিনীতে নিচ্ছে। কিন্তু এর ফলশ্রুতিতে সামরিক বাহিনীতে নিয়মশৃংখলা ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়েছে। ২০২১ সালের এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে যে, সেনাবাহিনীর এক-তৃতীয়াংশ মহিলা সদস্য যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন। পেশাদার সেনাবাহিনী না হওয়ায় এই বাহিনীতে মহিলা সদস্যদের সামরিক যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন ওঠাটা অস্বাভাবিক নয়। সোশাল মিডিয়াতে ইস্রাইলি মহিলা সামরিক সদস্যদের মুখরোচক পোস্টের বন্যাই এর কারণ।

এর বাইরেও ইস্রাইলের ইহুদি সমাজে রয়েছে ব্যাপক বর্ণবাদ। ইউরোপ থেকে আসা শ্বেতাঙ্গ ‘আশকেনাজি’ ইহুদিরা মূলতঃ ক্ষমতাধর এবং ধনী। অপরদিকে এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকার অশ্বেতাঙ্গ ‘মিজরাহি’ ইহুদিরা গরীব এবং নিগৃহীত। রাষ্ট্র প্রথম থেকেই ইউরোপ থেকে আসা ইহুদিদেরকে আলাদা সুবিধা দিয়েছে; আর অশ্বেতাঙ্গ ইহুদীদেরকে প্রায় শরণার্থী শিবিরে রাখার মতো করে দেখাশোনা করেছে। সাত দশক একত্রে থাকার পরেও এই দুই গোত্রের ইহুদিদের মাঝে বৈবাহিক সম্পর্ক কম। জনসংখ্যার মাত্র ১৫ শতাংশ এই দুই জনগোষ্ঠীর মিলিত প্রডাক্ট।

ইসরাইলের সাথে সাথে যুক্তরাষ্ট্রও যত ভয় 

ইস্রাইলকে সহায়তা দিতে যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে দু’টা বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ প্রেরণ করেছে; যা কিনা সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যায় না। ইস্রাইলি এবং মার্কিনী বিশ্লেষকেরা বলছেন যে, ইরান এবং হিযবুল্লাহর যুদ্ধে জড়াবার সম্ভাবনা খুবই কম; কারণ তারা কেউই সাম্প্রতিক সময়ে তাদের কষ্টার্জিত অবস্থানকে জ্বলাঞ্জলি দিতে চায় না। একারণেই তারা চাইছে গাজাতে ইস্রাইলের স্থল হামলা প্রতিরোধ করতে। কারণ স্থল হামলা হলে প্রাণহানি আরও বাড়বে এবং একইসাথে এই দেশগুলির সরকারগুলিও তাদের নিজস্ব জনগণের চাপের মাঝে পড়বে। ইরান এখনও তার পদক্ষেপকে হুমকির উপরেই সীমাবদ্ধ রেখেছে। আর হিযবুল্লাহ তার দেড় লক্ষ রকেটকে মজুদে রেখে দিয়ে সীমান্তে ইস্রাইলি গোয়েন্দা ক্যামেরাগুলিতে ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়ছে। লেবাননের বাস্তবতাও হিযবুল্লাহর পদক্ষেপকে প্রভাবিত করবে। কারণ লেবানন খুবই বিভক্ত একটা রাষ্ট্র। হিযবুল্লাহ গাজা ইস্যুতে ইস্রাইলের সাথে যুদ্ধে জড়ালে লেবাননের বাকি গ্রুপগুলির সমর্থন তারা না-ও পেতে পারে। কারণ গাজা ইস্যুতে ইস্রাইলের পাল্টা বিমান হামলা নেয়ার মতো মানসিকতা সকলের নেই। ইস্রাইলও কৌশলগত কারণেই একাধিক ফ্রন্টে যুদ্ধ চাইবে না। তাই তারাও হিযবুল্লাহর সাথে সংঘাতকে সীমান্ত সংঘাতের মাঝেই সীমাবদ্ধ রাখতে চাইবে। কাজেই হিযবুল্লাহ এবং ইরানকে আপাততঃ ইস্রাইল এবং যুক্তরাষ্ট্র মূল হুমকি মনে করছে না।

যে ব্যাপারটা পরিষ্কার তা হলো, যুক্তরাষ্ট্র ভয় পাচ্ছে যে, মুসলিম দেশগুলিতে কেউ কেউ তাদের জাতীয়তাবাদকে ভুলে গিয়ে তাদের ফিলিস্তিনি মুসলিম ভাইদের সহায়তায় এগিয়ে আসতে পারে। অর্থাৎ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্রগুলির সরকার পশ্চিমাদের আজ্ঞাবহ হলেও এই দেশগুলির সামরিক বাহিনীর কোন অংশ যদি নেতৃত্বের আদেশ অমান্য করে ব্যারাক থেকে বের হয়ে আসে, তাহলে ইস্রাইলের গণবাহিনীর জন্যে মহাবিপদ হাজির হবে। এই সম্ভাবনাকে আটকাতেই যুক্তরাষ্ট্র ইস্রাইলে সামরিক সহায়তা পাঠিয়েছে। প্রকারান্তরে যুক্তরাষ্ট্র স্বীকার করে নিচ্ছে যে, ইস্রাইলের সামরিক বাহিনী হুমকি মোকাবিলায় যথেষ্ট নয়। এটা সত্যিই প্রথম বারের মতো ঘটলো।

মার্কিন চিন্তাবিদেরা সকলেই স্বীকার করে নিয়েছেন যে, ইস্রাইলের ইন্টেলিজেন্স পুরোপুরিভাবে ব্যর্থ হয়েছে হামলার পূর্বাভাস দিতে। একইসাথে ইস্রাইলের সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে হামাসের পরিকল্পিত আক্রমণকেও অনেকে পেশাদার বাহিনীর কর্মকান্ডের সাথে তুলনা করেছেন। সিআইএর প্রাক্তন একজন ডিরেক্টর ধারণা করছেন যে, ফিলিস্তিনিদের মাঝে মোসাদের এজেন্ট হয়তো ‘কমপ্রোমাইজড’ হয়েছে; অর্থাৎ ধরা পড়ে তথ্যের সোর্স বন্ধ হয়ে গিয়েছে; অথবা ধরা পড়ার পর মোসাদকে ভুল তথ্য সরবরাহ করেছে। এতে হামাসের কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স উইংএর প্রশংসা করতেই হয়। মার্কিন সামরিক বিশ্লেষকেরা প্রশ্ন করছেন যে, ইস্রাইল কি নিশ্চিত যে কোন উদ্দেশ্য নিয়ে তারা গাজার ভেতর প্রবেশ করবে? ইস্রাইলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু তো বলেছেন যে, তিনি হামাসকে ধ্বংস করবেন। কিন্তু সেটা কিভাবে হবে সেব্যাপারে তিনি কতটা নিশ্চিত? আবার হামাসের হাতে ফিলিস্তিনিদের যে ‘শ’দুয়েক বন্দী রয়েছে, তাদেরকে কিভাবে উদ্ধার করা হবে? এদেরকে উদ্ধার করাটা কি আরেকটা উদ্দেশ্য হবে? আবার অনেকেই হামাসের সুরঙ্গ নেটওয়ার্কের কথাও বলছেন; যা কিনা ইস্রাইলি বাহিনীর জন্যে হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। সাবেক মার্কিন জেনারেল এবং সিআইএর প্রাক্তন ডিরেক্টর ডেভিড পেট্রেয়াস মনে করছেন যে, হামাসকে ধ্বংস করার আগে চিন্তা করা উচিৎ কাকে দিয়ে হামাসকে প্রতিস্থাপিত করা হবে। কারণ ইরাক এবং আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্র শিক্ষা নিয়েছে যে, একটা রাষ্ট্রের রাজনৈতিক নেতৃত্ব ধ্বংস করে ফেললে সেখানে নতুন করে আরেকটা নেতৃত্ব তৈরি করাটা বেশ কঠিন কাজ। শুধু তা-ই নয়, যুক্তরাষ্ট্র ৯-১১এর পর বিভিন্ন দেশে হামলা করে পরবর্তীতে দীর্ঘ যুদ্ধে জড়িয়েছে; যার ফলশ্রুতিতে বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক অবস্থান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইস্রাইলকে এই ব্যাপারগুলি ভাবতে হবে; নাহলে পরবর্তীতে পস্তাতে হবে। মার্কিনীদের এহেন চিন্তাগুলি বলে দিচ্ছে যে, যুক্তরাষ্ট্র চাইছে না যে, ইস্রাইল গাজার যুদ্ধকে প্রলম্বিত করুক; বরং দ্রুত সমাধান করে কোন একটা সমঝোতায় আসা যায় কিনা, সেদিকেই হাঁটুক ইস্রাইল।

যখন চীন যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং ইউক্রেনকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে টিকিয়ে রাখতে ব্যাপক সামরিক এবং অর্থনৈতিক সহায়তা দিতে হচ্ছে, তখন যুক্তরাষ্ট্র চাইছে না যে, মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে আরেকটা সমস্যা তৈরি হোক। একসাথে তিনটা এলাকা পাহাড়া দেয়ার মতো সামরিক সক্ষমতা যুক্তরাষ্ট্রের নেই। রাশিয়া এবং চীন এই ইস্যুকে ব্যবহার করে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে বারংবার ভোটাভুটির আয়োজন করবে এবং যুক্তরাষ্ট্র সেখানে ইস্রাইলের পক্ষে ভেটো প্রয়োগ করতে বাধ্য হবে। ইস্রাইলকে সরাসরি সমর্থন দিতে গিয়ে মুসলিম বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্র-বিরোধী চিন্তা দানা বাঁধবে এবং মার্কিন নিয়ন্ত্রিত পশ্চিমা বিশ্বব্যবস্থার বিকল্প কোন ব্যবস্থা খোঁজার ক্ষেত্র প্রশস্ত হবে। শুধু তা-ই নয়, স্বল্প মেয়াদেও তা বাইডেন প্রশাসনের জন্যে সমস্যার। কারণ সামনেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন; যার আগে মার্কিন ডেমোক্র্যাট শিবির কোন অবস্থাতেই আরেকটা কূটনৈতিক ব্যর্থতা দেখতে চায় না। অপরদিকে রিপাবলিকান শিবির চাইছে ডেমোক্র্যাটদের ব্যর্থতা প্রমাণ করতে।

ইস্রাইলের দুর্বলতাগুলি আজ দিনের আলোর মতো পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে। ফিলিস্তিনিদের হামলা প্রমাণ করেছে যে, ইস্রাইল কোন অজেয় শক্তি নয়; যা ইস্রাইলকে নিরাপত্তা দিতে মার্কিন বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ মোতায়েনের মাধ্যমে প্রমাণিত। মার্কিনীরা বিপদ বুঝেই আলোচনার মাধ্যমে ব্যাপারটা মিটমাট করে ফেলতে চাইছে; কারণ চীন ও রাশিয়ার সমান্তরালে আরেকটা ফ্রন্ট খোলার সামর্থ নেই যুক্তরাষ্ট্রের। একইসাথে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলির নেতৃবৃন্দ পড়েছে বিপাকে। কারণ তাদেরকে ইস্রাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ক্ষেপে যাওয়া মুসলিম জনগোষ্ঠীকে সামাল দিতে হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র চায় না এই দেশগুলিতে বড় কোন পরিবর্তন আসুক, যা কিনা যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক অবস্থানকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলবে। ২০২১ সালের গাজা যুদ্ধ যেমন প্রমাণ করেছিলো যে, সংঘাত নিরসনে ইস্রাইল আঞ্চলিক প্রতিবেশীদের উপর আরও বেশি নির্ভরশীল হয়েছে; তেমনি ২০২৩ সালের যুদ্ধ প্রমাণ করলো যে, ইস্রাইল সংঘাত নিরসনে যাদের উপর নির্ভর করছে, তারাও তাদের মুসলিম জনগণের আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে হিমসিম খাচ্ছে। মোটকথা যুক্তরাষ্ট্র, ইস্রাইল এবং ইস্রাইলের প্রতিবেশী পশ্চিমাদের অনুগত দেশগুলির কেউই মুসলিম ভূখন্ডগুলির বাস্তবিক পরিবর্তনকে না পারছে নিয়ন্ত্রণ করতে, না পারছে এড়িয়ে যেতে। বাস্তবতা হলো, এই গন্তব্য একমুখী। আর এটা একদিকে যেমন যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বব্যাপী নিয়ন্ত্রণকে আরও দুর্বল করছে, তেমনি ইস্রাইলকে অস্তিত্ব সংকটের দিকে ধাবিত করছে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

More News Of This Category
©2021 All rights reserved © kalakkhor.com
Customized By BlogTheme
error: Content is protected !!

Discover more from কালাক্ষর

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading