সোলায়মান জুয়েল : আচ্ছা আপনাকে যদি প্রশ্ন করা হয় পৃথিবীর সব চেয়ে মুল্যবান জীনিসের নাম কি? আপনি যদি কম বুদ্ধি সম্পন্ন হন। তবে হয়ত আপনার উত্তর হবে হীরা মুক্তা জহরত জাতীয় বৈষয়িক জিনিস পত্র- কিন্তু যদি আপনী মোটামুটি বোঝেন তবে উত্তর হবে মানুষ এর জীবন।
কারন আপনার শরীরে প্রান থাকলে ই কেবল ওই সব বৈষয়িক বিষয়াদির মুল্যমান আপনার কাছে থাকবে । যদি প্রান না থাকে তবে দুনিয়ার সব হীরা জহরত নিয়ে এসে আপনার সামনে রাখা হয় তার কোন মুল্যই আপনার কাছে থাকবে না। তাই কবির ভাষায় বলতে হয় শোন হে মহাশয় মানুষ এর জীবনের চেয়ে মুল্যবান কিছু ত্রিভুবনে নাই ।
অথচ আপনি কি জানেন যুগে যুগে কিছু মানুষ এই মানুষ এর জীবন নিয়েছে নিজেদের তুচ্ছ সার্থের জন্য । রক্তে রঞ্জিত করেছে ধরনী মাতার বুক । ভাই হয়ে ভাইয়ের রক্তে রঞ্জিত করেছে হাত- আর তা আজো থেমে নেই । এই মানূশ মারার কালচার এখনো চলছে অবরিত ভাবেই তবে আমাদের আজকের টপিক খুন নয়, সৃজনশীল ব্লগ কালাক্ষর এর আজকের পোস্টমর্টেমের বিষয় বস্তুর নাম হচ্ছে বলি মানে মানব বলি। আরো সোজা ভাষায় বললে সবার কাছে অতি পরিচিত নাম টি ই বলতে হয় – নরবলি –
মিথ্যা কু- সংস্কারের বশভুত হয়ে মানুষ হয়ে মানুষকে দিয়েছে বলি-তাদের নিজেদের জীবন সম্রিদ্ধি আনতে মাটির প্রতিমা গড়ে তার পা মানুষ এর তাজা রক্তে ভরিয়ে দিয়েছে অবলিলায় – বিশ্বের ইতিহাসে বিভিন্ন সময় এই মানুষ যেসব বিষয় মনুষ্যত্বকে কলঙ্কিত করেছে, ‘নরবলি’ সেগুলোর মাঝে নিঃসন্দেহে শীর্ষস্থানীয়। আর সেই খ্রিস্টপূর্ব সময়কাল থেকে শুরু করে এই একবিংশ শতকেও পাওয়া গেছে নরবলির বিভিন্ন নমুনা। তেমনই কিছু ইতিহাস নিয়ে সাজানো হয়েছে আমাদের আজকের পোস্ট মর্টেমের প্রসঙ্গ —
কার্থেজ – প্রচীন দুনিয়ার এক প্রতাপশালী জনপদের নাম- প্রাচীন বিশ্বে এই কার্থেজ অধিবাসীরা ছিল অন্যতম সমৃদ্ধিশালী এবং একইসাথে ক্ষমতার অধিকারী। কিন্তু এরপরও তাদের মাঝে এমন কিছু অদ্ভুত রীতিনীতি প্রচলিত ছিলো যা তাদেরকে এক কথায় বর্বর হিসাবে গন্য করা যায়। বিভিন্ন কারনে শিশুবলি দেওয়া ছিল তাদের প্যাশন- স্রষ্টার সন্তুষ্টি অর্জনের ভুয়া তরিকাময় খেলায় এরা শিশুবলি দিতে তারা ছিল বেশ পটু । ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় অন্য অঞ্চলের তুলনায় তাদের জন সংখ্যার বৃদ্ধি হার ছিল বেশ ধীর – যার মূল কারন ছিল এই শিশুবলি- কার্থেজের ধনী লোকেরা তাদের সম্পত্তির সুরক্ষার জন্য নিজেদের সন্তানদেরকেই দেবতার উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করতো।
নরবলি। ছবি – সংগ্রহিত
ধারনা করা হয়- ৮০০ থেকে ১৪৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত রোমান দের সাথে কার্থেজ দের যুদ্ধ ভয়াবহ যুদ্ধ চলে – এ সময় রোমানরা আস্তে আস্তে পুরো কার্থেজ দখল করে নেয়। কার্থেজ দের সাথে রোমান দের যুদ্ধ চলা কালে রোমান দের হারাতে কার্থজ রা দেবতাদের সন্তস্টির জন্য কার্থেজের আনুমানিক প্রায় ২০,০০০ শিশুকে বলি দিয়েছিল । তবে এ মতের বিরোধীতাও করে থাকেন অনেক ঐতিহাসিক। তাদের মতে সেই শিশুদের অনেকে প্রাকৃতিক কারণেই মারা গিয়েছিলো।
প্রাচীন ইসরাইলে মালাখ নামের এক দেবতার পুজারীর সংখ্যা খুব বেড়ে যায় – আর মালাখ কে সন্তস্টির এক মাত্র উপলক্ষ ছিল শিশু বলি – তারা শিশুদেরকে পুড়িয়ে এ বলিদানের কাজটি সারতো। পড়ে সেই দেশের রাজা এর বিপক্ষে চলে যায় –
আর রাজ ধর্ম হিসাবে মালাখ কে বাদ দেওয়া হয় – শুরু হয় মালাখ দেবতার পুজারীদের ধর পাকর। তার বলে এরা থেমে থাকেনী- এরা একটা গুপ্ত সংগঠন তৈরি করে – এবং তাদের দেবতার সন্তস্টির জন্য বেশ গোপনে এই শিশু বলি দিতে থাকে -তবে এ বিষয়টি নিয়ে দ্বিমত পোষণ করে থাকেন অনেক ইতিহাসবিদই। তাই আজও এর সত্যতা রহস্যাবৃতই রয়ে গেছে।
এট্রুস্কান সভ্যতা গড়ে ঊঠেছিল বর্তমান কালের ইতালীর আসে পাশের অঞ্চল জুড়ে – প্রাচীন ইউরোপের যে কয়েক টি সভ্যতা বিকোশিত হয়েছিল সম্পদ আর ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে – এট্রুস্কান সভ্যতাছিল তার একটি।টুস্কানি, পশ্চিম আম্ব্রিয়া ও উত্তর লাজিওতে ছিলো তাদের বসবাস। মূলত এরা কৃষিকাজ ও ব্যবসা-বাণিজ্যের মাধ্যমেই জীবিকা নির্বাহ করতো । তখন কার্থেজ ও গ্রীসের সাথে তাদের বাণিজ্যিক সুসম্পর্ক বজায় ছিলো। পাশাপাশি বিভিন্ন খনিজ দ্রব্যও তাদের অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করতো।
অনেক ইতিহাসবিদ মানতে চান নি যে, এমন একটি সভ্যতার মাঝেও যে নরবলির মতো বিষয়টি প্রচলিত থাকবে, তবে ইউনিভার্সিটি অফ মিলানের একদল প্রত্নতত্ত্ববিদেরা গবেষণায় প্রমাণ করেছেন – এই সভ্যতার মানুষের ভিতরেও নরবলির প্রচলন ছিল। প্রমান সুরুপ- টার্কুইনিয়াতে তারা এমন কিছু বলি দেয়া মানুষের কবর আবিস্কার করেন – তবে এদের নরবলি তালিকায় শিশু ও প্রাপ্তবয়স্করা যারা অসুস্থ,চলা চলে অক্ষম লোক জনের সংখ্যা ছিল বেশি – এছাড়াও নিম্ন সামাজিক মর্যাদাসম্পন্ন লোক জন কিংবা তাদের সন্তান সন্তাদি কিংবা ভিনদেশী লোক জনের সংখ্যা ই বেশি ছিল বলে ধারনা করা হয়।
আমার পুর্বের লেখা গুলো পড়তে নিচের লিংক গুলোতে ক্লিক করুন
প্রাচীন চীনে নরবলির বিষয়টিকে খুব সাধারণ ভাবে দেখা হত। ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় নরবলি কে চিনের প্রায় প্রতিটি রাজ বংশের শাসনামলেই স্রষ্টার আশির্বাদ হিসাবে দেখা হত- তবে সব চেয়ে বেশি বিস্তার ঘটে শ্যাং রাজবংশের শাসনামলে। সে সময় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে খতম করা এবং স্রষ্টার মনোরঞ্জন করার উদ্দেশ্যে এ সময় খুব বৃহৎ পরিসরে সংঘটিত নরবলির ব্যাবস্থা করা হত –
সে সময় প্রধানত তিন ভাবে চীনের নরবলিগুলো সংগঠিত হত । এক, যাকে নরবলি দেওয়া হবে সে যদি যুবক হত তবে তাকে মাটিতে গর্ত করে উৎসর্গ করা হতো – এ সময় নরবলীদেওয়া লোকটির অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হত । কোন স্থাপনা টেকশই করতে উৎসর্গ করা হত বিভিন্ন শিশুদের। আর এদের মৃত্যু কার্যকর করা হতো বেশ মর্মান্তিক উপায়ে। কিছুটা আলাদা জায়গায় বলি দেয়া হতো কিশোরী ও তরুণীদের। অবশ্য প্রথম দু’শ্রেণীর মতো তাদের মৃতদেহের করুণ অবস্থা হতো না। দুর্ভাগা সেই কিশোরী ও তরুণীদের মৃতদেহের সৎকার ঠিকমতোই করা হতো।
যুদ্ধ ও প্রতিরক্ষার দেবতা ‘কু’-এর আশীর্বাদ লাভ করতে পারবে এই আশায় এককালে হাওয়াইয়ের অধিবাসীদের নরবলি দেওয়ার প্রচলন ছিল বলে জানা যায়- এদের বিশ্বাস ছিল তারা নর বলি দিতে দেবতাগন তাদের পক্ষালম্বন করবে আর তারা সহজেই প্রতি পক্ষকে হারাতে পারবে- ফলে যুদ্ধ কালিন সময়ে তাদের মন্দিরগুলোতে চলতো রক্তের হোলী, যেটিকে তারা নাম দিয়েছিল ‘হেইয়াউ’। সাধারণত বিভিন্ন প্রতিপক্ষ গোত্রের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তি, যারা যুদ্ধে বন্দী হয়েছিলেন, তাদেরকেই বলি দেয়ার জন্য বেছে নেয়া হতো
নরবলি। ইমেজ সোর্স – sciencemag.org
যাকে নর বলী দেওয়া হবে সেই দুর্ভাগাকে প্রথমে কোনো কাঠের ফ্রেমে প্রথমে উল্টো করে ঝোলানো হতো। তারপর তাকে এমনভাবে পেটানো হতো যে তাতেই বেচারার প্রাণপাখি আর তার দেহে থাকতো না । অতঃপর একটি বিশেষ প্রক্রিয়ায় মৃৎ লোকটির নাড়িভুঁড়ি বের করে ফেলা হতো।কি মনে করছেন বলি শেষ ? সবে বলি মাত্র অর্ধেক সম্পন্ন হয়েছে। এবার সেই মৃতদেহ হয় রান্না করে খাওয়া হত কিংবা কাঁচা খাওয়া হতো। আর পুরোহিত ও গোত্রপতিরা থাকতেন খাদকদের তালিকার প্রথম সারীতে –
মেসোপটেমিয়া – বর্তমান কালের মধ্য প্রাচ্যের ইরাকের অধিকাংশ, কুয়েত, সিরিয়ার পূর্বাঞ্চল, তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল এবং তুর্কি-সিরীয় ও ইরান-ইরাক সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলোকে একত্রে মেসোপটেমিয়ার বলা হত । দুনিয়ার অন্য সব এলাকার মত এ অঞ্চলেও নরবলির প্রথা প্রচলিত ছিলো। মিসরের পিরামিডের পাশের রাজ সমাধীর মত এ অঞ্চলের রাজসভার সভাসদবর্গ, যোদ্ধা ও চাকরদেরকে তাদের মালিকের সাথে কবর দেয়া হতো যেন যাতে পরকালে তাদের মালিক জীবীত হয়ে ওঠার সময় তারাও মালিকের সাথে জীবিত হয়ে উঠে তাদের মালিকের সেবা-যত্ন করতে পারে। যোদ্ধাদের সাথে তাদের অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে দেয়া হতো, অপরদিকে চাকরদের মাথায় শোভা পেতো পাগড়ি।
প্রথম দিকে ঐতিহাসিক গন ধারনা পোষন করতেন যে এই এই সকল মানুষদের মারতে বিষ ব্যবহার করা হতো। কিন্তু পরবর্তীতে এ ধারণাটি ভুল প্রমাণিত হয়। কারন বিভিন্ন তথ্য উপাত্য ঘেটে যানা জায়, সেই সময় সেই দুর্ভাগা সেই মানুষগুলোকে মারতে তারা ব্যাবহার করতো বর্শার- এরা বলি দেওয়া হতভাগ্য মানুষের মাথায় বর্শা ঢুকিয়ে দিয়ে তাদের হত্যা করতো !
আজটেক রা সুর্য কে প্রথিবী টিকে থাকার প্রধান মাধ্যম মনে করতো। তারা বিশ্বাস করতো দুনিয়ার সব শক্তির আধার হল সুর্য। তাই যে কোন মুল্যে সুর্যকে বাচিয়ে রাখতে হবে- আর তার জন্য দরকার দেবতাদের সন্তুস্টি- আর দেবতারা এক মাত্র নরবলিতেই সন্তুস্ট হয় – একারনেই অ্যাজটেকদের নরবলির পেছনের দর্শন কে বেশ অদ্ভুত বলে ধরা হয় । বলির শিকার হওয়া মানুষের রক্তকে তারা বেশ পবিত্র মনে করতো। তাদের বিশ্বাস ছিলো নরবলির মাধ্যমে দেওয়া পবিত্র রক্ত তাদের সৌরদেবতা হুইতজিলোপোখ্তলির রাগ প্রশমন ও পুষ্টির জন্য একান্ত প্রয়োজনীয় বস্তু।
খুব ভয়াবহ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অ্যাজটেকরা এই নরবলির প্রক্রিয়া সম্পাদন করতো- এতে কখনো কখনো স্বেচ্ছাসেবীদের ভিতর থেকে বলী দেওয়া হতভাগ্য মানুষ সংগ্রহ করা হলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ব্যাবহার করার হত যুদ্ধবন্দীদের। শহরের ব্যাস্ততম রাস্তা দিয়ে বলি দিতে যাওয়া হতভাগ্য মানুষ টিকে প্রথমে হাঁটিয়ে নিয়ে যাওয়া হতো মন্দিরের উদ্দেশ্যে ।
নরবলি। ছবি – সংগ্রহিত
আর যে রাস্তাদিয়ে তাকে হাটিয়ে নেওয়া হত তার দুই পাশে উৎসুক জনতার জমে যেত ভির। এর পর তাকে মন্দিরের সামনে যে খানে সুর্যের আলো সরাসরী পড়ে সেখানে লোকটিকে নেওয়া হলে মন্দিরের পুরোহিত লোকটির গলা থেকে শুরু করে একেবারে পেট পর্যন্ত চিরে ফেলতেন! এরপর লোকটির হৃদপিণ্ড শরীর থেকে আলাদা করে সুর্যের দিকে সুর্যের আলোক রশ্মি বরাবর উচু করে ধরা হত- আর এভাবেই এক এক করে অনেক হতভাগ্য মানুষের হৃদ পিন্ড উৎসর্গ করা হতো দেবতার উদ্দেশ্যে। হৃদ পিন্ড উতসর্গ করার পর অন্য পুরোহিত রা বলির দেহের অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কেটে ফেলতো ।
স্রষ্টার সন্তুষ্টির নিমিত্তে ইনকা সভ্যতার লোক জন ও আয়োজন করতো নরবলির । শিশুরাই ছিল তাদের প্রথম পছন্দের । প্রায়শই আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত, ভূমিকম্প, বন্যা ইত্যাদি নানাবিধ প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি হতো ইনকা সাম্রাজ্য। নরবলির মাধ্যমেই কেবল মাত্র এসব দুর্যোগ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব বলে মনে করতো । সে কারনের স্রষ্টাকে সন্তুষ্ট করতে প্রাণ হারাতে হতো নিরীহ ইনকা শিশুদের।
মজার ব্যাপার হল কুরবানির গরু ছাগল কে যেমন পেলে পুষে বড় করা হয় কোরবানী দেওয়ার জন্য- তেমন করেই ইঙ্কো সভ্যতার লোক জন তাদের সমাজে অনেক শিশু কে যাস্ট বোলি দেওয়া হবে বলেই বড় করা হত। ভাবতে পারেন কি অবস্থা? আর এসব শিশুদের বলির ব্যাপারকে ইনকারা ‘সবচেয়ে পবিত্র বলি’ হিসেবে মনে করতো। তারা বিশ্বাস করতো মানুষ বার বার জন্মাবে – আর প্রথম জীবনে মৃত্যুর পর এ শিশুরা পরের জীন্মে অনেক সুন্দর এক জীবনের অধিকারী হবে। একারনেই মৃত্যুর আগে তাদের সাথে সবাই খুব ভালো ব্যবহার করা হতো। তাদেরকে দেয়া হতো পছন্দসই খাবার, এমনকি মিলতো সম্রাটের সাথে সাক্ষাতের সৌভাগ্যও।
প্রাচীন পৃথিবীর জ্ঞ্যান পিঠ মিশরেও ছিল জঘন্য নরবলির এই জঘন্য প্রথার প্রচলন । ম্ত্যুর পর যদি রাজা বা ফারাওরা আবার জীবিত হয় সেই জীবনেও দাসেরা মনিবের সেবা করে যেতে পারে সেজন্য ফারাওয়ের কোনো গুরুত্বপূর্ণ সঙ্গীকে তার সাথে কবর দেয়া হতো । আর সাথে থাকতো অসংখ্য দাস দাসি- বিখ্যাত ইজিপ্টোলজিস্ট জর্জ রেইজনার জানিয়েছেন যে, রাজা জার ও আহারের কবরগুলো ভৃত্যদের মরদেহ দিয়ে পরিপূর্ণ ছিলো। আর সেই ভৃত্যদের সাথে দেয়া হয়েছিলো বিভিন্ন দরকারি জিনিসপত্র যাতে পরকালে মনিবের সেবা করতে কোনোরুপ অসুবিধা না হয়!
নরবলী মানেই কষ্টদায়ক আর যন্ত্রণার ইতিহাস তবে এতক্ষন যত ঘটনার আলোচনা করলাম তাদের ভিতর ফিজির ঘটনাটি সব চেয়ে বেশি কষ্টদায়ক। সেখানে এককালে নিয়ম ছিলো স্বামী মারা গেলে তার স্ত্রীকেও শ্বাসরোধ করে হত্যা করতে হবে। সেখানকার নানা নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী বেশ গুরুত্বের সাথেই এ নিয়মটি অনুসরণ করতো। তারা বিশ্বাস করতো স্ত্রীর কর্তব্য হলো ইহকালের পাশাপাশি পরকালেও স্বামীকে সঙ্গ দেয়া। এজন্য স্বামীর মৃত্যুর সাথে সাথে তার সকল স্ত্রীকেই বলির শিকার হতে হতো।
ফিজিতে বিধবা এ সকল নারীকে বলা হতো ‘থোথো’, যার অর্থ ‘স্বামীর কবরের গালিচা’! আরো দুঃখজনক ব্যাপার হলো নারীদের শ্বাসরোধ করে হত্যা করার দায়িত্বটি পালন করতো তাদের আপন ভাইয়েরা। সেটা না করতে পারলে অন্তত নির্মম এ হত্যাযজ্ঞের সাক্ষী তাকে অবশ্যই হওয়া লাগতো।
ডাহোম ছিল পশ্চিম আফ্রিকার পুরনো এক রাজ্যের নাম – সেখানে বার্ষিক এক উৎসবের নাম ছিলো জোয়েতানু। খুব ঘটা করে উৎসব এর সাথে পালন করা হত। জোয়েতানু- উৎসবের সব চেয়ে বড় আকর্ষণ ছিল নরবলি । দাস-দাসী ও বিভিন্ন যুদ্ধবন্দীদের ভিতর থেকে বেছে নেওয়া হত বলি দেওয়ার মানুষ কে – মূলত শিরশ্ছেদের মাধ্যমে ঘটানো হত এই নরবলির প্রক্রিয়া। তখনকার জীবিত ও মৃত রাজাদের সম্মানার্থে সংঘটিত এ নরবলি কার্যকর করা হতো এহেনো গর্হিত কাজ – আর এই প্রথা এতই বহুল প্রচলিত যে, শুধুমাত্র একজন রাজার শাসনামলেই আনুমানিক ৮,০০০ লোক এ জোয়েতানুর নরবলিতে মারা যায় বলে জানা গেছে।
সিনেমায় মায়া সভ্যতার নরবলি দেখা যায় – প্রাচীন মায়া সভ্যতার লোকেরাও এ প্রথা অনুসরণকারীদের তালিকায় নাম লিখিয়েছিলো। বিশেষ কোনো উপলক্ষে তারা এমনটা করতো। নরবলিগুলো মাঝে মাঝে দেয়া হতো মন্দিরে। দুর্ভাগারা অধিকাংশ থাকতো বিভিন্ন যুদ্ধবন্দী। চিচেন ইৎজাতে নরবলি দেয়ার সময় বৃষ্টির দেবতা চাকের সম্মানার্থে বন্দীদের গায়ে নীল রঙ মাখা হতো। এরপর তাদের ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়া হতো কোনো কুয়ায়।
আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশে সুপ্রাচীন কাল থেকেই সতীদাহ প্রথার অস্তিত্ব ছিলো – হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ভিতর একজন নারী বিধবা হবার পর স্বামীর সাথে সহমরণে চিতায় যাবার বিষয়টিকে সতীদাহ বলা হয়। আর এই সহমরন প্রথাকেই সতীদাহ প্রথা বলে- এই সহ মরন প্রথায় সদ্য বিধবা নারী কখনো যেতেন স্বেচ্ছায়, কখনো বা তাকে জোরপূর্বক চিতায় পাঠানো হতো। ভারতের বিশিষ্ট সমাজ সংস্কারক রাজা রামমোহন রায়ের একান্ত প্রচেষ্টায় এবং সে সময় কার ইংরেজ রাজ ১৮২৯ সালে অমানবিক এ প্রথার রোহিত করেন। তবে এখনো মাঝে মাঝে ভারতে সতী দাহ প্রথার অস্তিত্ব আছে বলে জানা যার ।
সর্ব শেষ – ২০০৬ সালে বিবিসি এক খবর প্রকাশ করে, ভারতের মধ্যপ্রদেশের তুসলিপার গ্রামের চল্লিশ বছর বয়স্কা এক নারী স্বামীর মৃত্যুর পর সতীদাহ প্রথার মাধ্যমে আত্মাহুতি দিয়েছিলেন। তবে এই কাজ করতে কেউ তাকে বাধ্য করে নি। তিনি নিজেই সেখানে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন বলে পুলিশ কারো নামে মামলার এজাহার করে নি বলে জানা যায় –
সোলায়মান জুয়েল
ব্লগার/ নাট্য পরিচালক/ প্রযোজক
সোর্স – wikipidia
Leave a Reply