1. sjranabd1@gmail.com : Rana : S Jewel
  2. solaimanjewel@hotmail.com : kalakkhor : kal akkhor
মাল্টিপল পার্সোনালিটি ডিস অর্ডার – তোমার ঘরে বাস করে কয় জনা মন জানোনা- কালাক্ষর
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৪:১০ অপরাহ্ন

মাল্টিপল পার্সোনালিটি ডিস অর্ডার – তোমার ঘরে বাস করে কয় জনা মন জানোনা-

  • Update Time : সোমবার, ১২ অক্টোবর, ২০২০
ম

প্রখ্যাত বাঙ্গালী সাধক বাউল লালন সাঁই এর একটা গান আজ শিরোনামে এড করে দিয়েছি  “তোমার ঘরে বাস করে কয় জনা, মন জানোনা” ? গান টি প্রতিটি জীবনে এক বারো শোনে নাই কিংবা আনমনে গেয়ে ওঠে নাই এমন বাঙ্গালি খুজে পাওয়া দুস্কর হবে কিন্তু যদি বলা হয় গান টি কেন লিখেছিলেন বাউল ? কিংবা গান টির শানে নজুল কি? তখন হয়ত নানান জনের নানান মত আস্তে পারে কিন্তু বেশির ভাগ ই বলবেন লালন শাই তার গান দিয়ে তার ঘর বলতে মন কে বুঝাতে চেয়েছেন- আর সেই ঘরে মানে মনের ভিতর ধারন করা সত্বা কে বুঝাতে চেয়েছেন- মানে লালন শাইয়ের মনের ভিতর বাস করা সত্বা যার কিছু নিজের চরিত্র ধারন করে আবার কিছু সত্বা সমাজ ,সামজিকতা,ন্যায়- অন্যায় ,নীতিবোধ, সব কিছু কে ধারন করে- যে গুলো তার নিজের নয়- কিন্তু পরিবেশ পরিস্থিতি এর চাপে পড়ে কিংবা বাধ্য হয়ে এমন সত্বা এর চাহিদা মাফিক চলতে হয় নিজের অলক্ষ্যেই – সেই সত্বা এর দন্দ কে বুঝাতে চেয়েছেন, আর এই সব সত্বা যে সব লোক ধারন করে,তাদের কে বলা হয় মাল্টিপল পার্সোনালিটি ডিসওডার, এটা একটা রোগ – 

মাল্টিপল পার্সোনালিটি ডিস অর্ডার

আজকের বাংলাদেশের বড় শহরগুলোতে বাস করা মধ্যবিত্ত শ্রেণীর কথা বলেন কিংবা গ্রামের নিম্ন মধ্যবিত্ব লোক দের কথাই বলেন –এদের  প্রায় ৯৯% এই মাল্টিপল পার্সোনালিটি ডিজ অর্ডার সমস্যায় ভুগছে।এটি এমন একটি অবস্থা যাকে আপনি ডাবল স্ট্যান্ডার্ড বলতে পারেন। প্রথমে এর লক্ষণ বলি। পরে এর কারণ ও সমাধান বলছি।

ধরুন আপনি একজন মেয়ে। আপনি দোজখের ভয়ে ভীত থাকেন সব সময়,আপনার বাবা মা – আপনার মাথায় পর্দা করার জন্য আপনার মাথায় এমন কিছু ধর্মীয় বানী পুশ করেছেন, কিংবা আপনার চার পাশের লোক জন যারা সর্বদা আপনাকে ধর্মীয় বিধি মাফিক পর্দা করার বিধি চাপিয়ে দিয়েছেন- আর তাই আপনি আপনার ফ্যামিলী মেম্বার হউক কিংবা সমাজের  লোক  জনের চাপে নিজেকে আবৃত করে চলেন, অথচ আপনার মন ভীষণভাবে পুরুষের ভালোবাসা চায়, পুরুষকে আকৃষ্ট করতে চায়। যখন আপনি কমদামে রুচিশীল জামাকাপড় কিনে আর বড়লোকদের অঙ্গভঙ্গি নকল করে তাদের মতো করে কথা বলে বড়লোক সেজে থাকার চেষ্টা করেন, অথচ নিজে জানেন, আপনি বড়লোক নন। এগুলো হচ্ছে আপনার দুই রুপ-

এর একটি হল আপনার একান্ত নিজেস্য সত্বা –যা একান্তই আপনার নিজের- আরেকটি সমাজের চাপে বা দোজখের ভয়ে ভীত আপনার পরিবর্তিত সত্বা।এ গেলো লক্ষণ। 

মাল্টিপল পার্সোনালিটি ডিস ওয়ার্ডডার

মডেল – প্রভা ছবি – কালাক্ষর ডেক্স

ধুরুন কখনো আপনি বস্তির গরীব ছেলেমেয়েদের সাথে অথবা কুকুর বিড়ালের সাথে ছবি তুলে ফেসবুকে আপলোড দিয়ে সুন্দর একটা ক্যাপশন দেন।এর পিছনে আপনার অবচেতন মনের দুটি উদ্দেশ্য থাকে।নিজেকে অন্যের চেয়ে শ্রেষ্ঠ জাত প্রমান করা। কারণ- আপনি এমন এক ধরনের ফ্যামীলীতে বাস করেন তারা মধ্যবিত্ব- মধ্যবিত্ব মানে আপনাকে না ধনী না গরীব কোন ক্লাসে ফেলা যায় না-  ধনীরা নিজেরা জানে তারা ধনী। আবার গরীবরাও জানে তারা গরীব- কিন্তু আপনি মিডিল ক্লাস-

আপনি না পারেন ধনীর মত হতে আবার না পারেন গরীব হিসাবে নিজেকে মেনে নিতে- ব্যাস- আপনার অবচেন মন সব সময় নিজের সীমাবদ্ধতা গুলো গোপন করে ধনী হিসাবে নিজেকে জাহির করতে মত্ত-  মিডলক্লাস পিপল কোন ভাবেই নিজেকে মিডলক্লাস  দেখতে পছন্দ করে না-  তারা অভিজাত সেজে থাকতে পছন্দ করে। এজন্যই তারা নিজের দুর্বলতা গোপন করতে যা কিছু করতে রাজি থাকে। 

আর তা কাউকে ছোট করে হলেও, টিটকারী করে হলেও,নিজের দুর্বলতা ঢেকে নিজেকে উর্দ্ধে রাখার জন্য জন্য কাউকে পঁচানো দরকার হয়ে পড়ে। লক্ষ করে দেখবেন, অনন্ত জলিলকে কারা বেশী পঁচায় ? মিডল ক্লাস। টিকটকে তাহেরীর ওয়াজ চা খাবেন, ঢেলে দেই, এসব নিয়ে কারা ভিডিও বানায় ? মিডল ক্লাস। এরকম হাজারো নজির মিলিয়ে দেখুন।আমি কেন বারবার মধ্যবিত্তকে টেনে আনছি। কারন, আপনি যে রোগ সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন, সে রোগটি এই শ্রেণীর সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত।

আমাদের সমাজে আজ এত নৈতিক অবক্ষয় এর কারন কিন্তু এই সব ই- অমুকের চেয়ে বড় আমি- এইটা প্রমান করতে কত কিছু করে – ঢাকা শহরে অনেক আধুনিক পতিতা আছে- যাদের ফ্যামীলী এর যা আছে তা দিয়ে হয়ত সে সাদা মাটা চলতে পারতো- কিন্তু শুধু মাত্র কিছু পার্সোনাল ভ্যালু বাড়াবার জন্য তারা পতিতা ব্ররত্তি করতে ও পিচু পা হয় না- অথচ তারা বুঝতেই পারে না- অন্যের চোখে বড় সাজতে গিয়ে- দামী কিছু ড্রেস কিংবা কস্পেটিকস এর জন্য যা ব্যাবহার করে যাস্ট তার চার পাশের লোক জন দেখিয়ে নিজের ভ্যালু বাড়াবে যাস্ট এই জন্য সমাজের ঘৃণীত পেশা পতিতা বৃত্তি করতেও পিছু পা হয় না- আর এই জন্য কত ঘর ভেঙ্গেছে- কত বাবা তার সম্মান লুটিয়ে যেতে দেখেছে- কত শত উদাহরন তা নিজেকে প্রশ্ন করে দেখলেই বুঝবেন-  

তাহলে এই রোগের সমাধান কি ? আত্মতত্ব জানা। নিজের যা আছে তাই নিয়ে নিজেকে সুখি ভাবা নিজেকে চিনলেই আর সামাজিক চাপ আপনাকে কাবু করতে পারবেনা।নিজে চাপ অনুভব করবেন না, তাই অন্যকেও আর চাপ দিতে ইচ্ছা করবেনা।কেউ আপনাকে অপমান করলে আপনি সেই বিষ হজম করুন।আয়নার মতো রিফ্লেক্ট করে অন্য কারো গায়ে তাহেরীর মতো ঢেলে দেবেন না। নিজেকে জানলেই এ কমপ্লেক্স থেকে বেচে থাকা সম্ভব।

হাইড আর জেকিল নামে একটা বই আছে- আমার ধারনা বেশির ভাগ মানুষ ই এই বইয়ের গল্প জানেন- মানুষের দ্বৈত সত্বা সম্পর্কে ডিটেইলস দেওয়া আছে বইটিতে।আর সেই সাথে নিজের দেহের মধ্যে কি কি মনস্তত্ব কাজ করছে। কিভাবে আত্মনিয়ন্ত্রণ করা যায়, সে সম্পর্কে আমাদের বাংলা অঞ্চলের বাউল সাধকরা হাজার বছরের গবেষণা লব্ধ ফলাফল তাদের গানে প্রকাশ করে গেছেন। লালন গীতিসমগ্র, জালাল গীতিসমগ্র, কালাশা গীতিসমগ্র ইত্যাদি অ্যাপগুলো নিয়ে স্টাডি করুন, নিজেকে চেনার পথ খুলে যাবে, সমস্যাটিও আর থাকবেনা। বেস্ট অফ লাক ! ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর ! ধন্যবাদ !

Solaiman Jewel

ব্লগার/ চিত্র নাট্যকার / নাট্য পরিচালক / প্রযোজক

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

More News Of This Category
©2021 All rights reserved © kalakkhor.com
Customized By BlogTheme
error: Content is protected !!

Discover more from কালাক্ষর

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading