এবসেন্ট মাইন্ড এর অর্থ হচ্ছে অনুপস্থিত মন, সোজা বাংলায় ভুলোমন। এবসেন্ট মাইন্ডেড লোক বিভিন্ন জিনিস ভুলে যায় বা তার চারপাশে কি ঘটছে সে ব্যাপারে মনোযোগী থাকে না কারণ সে তখন অন্য কোনো ভাবনায় ব্যস্ত থাকে।
যেমন – কোনো কিছু পড়ার সময় মাঝে মাঝে দুইতিন প্যারা পড়ার পর হঠাৎ খেয়াল হয়, কি পড়ছিলাম সেটা তো মনে নেই। চিন্তা করলে দেখা যাবে তখন নিশ্চয়ই অন্য কোনো ব্যাপার আমাদের মাথায় ঘুরছিল।কখনো আবার এক রুম থেকে অন্য রুমে কোনো একটা কাজ করতে গেলে কি জন্য অন্য রুমে এসেছিলাম সেটাই মনে থাকে না। এইগুলা আমাদের অমনোযোগীতা বা অনুপস্থিত মনের কারণেই হয়।
ভুলোমনের ব্যাপারটা সবার মধ্যে না থাকলেও যারা এ সমস্যায় আক্রান্ত তাদের প্রতিনিয়ত বেশ অসুবিধায় পরতে হয়। আশা করি নিচের বিষয়গুলো অনুসরণ করলে এ সমস্যা থেকে বের হয়ে আসতে পারবেন।
১. মনোযোগ দেয়া- প্রতিদিন আমরা কত কাজই অভ্যাসবশত করি। ব্রাশ করা, হাঁটা, খাওয়া এগুলা এমন কিছু অভ্যাস যা চোখ বন্ধ করেই করতে পারি আমরা। প্রতিদিন নিয়ম করে অন্তত পাঁচটা জিনিস পরিপূর্ণ মনোযোগ দিয়ে করুন। সেটা খুব ছোট্ট জিনিস হতে পারে। যেমন – চেয়ারে বসা, উঠা, চায়ের গন্ধ, খাবারের স্বাদ এইগুলা অনুভব করুন। অন্যদিকে মন না দিয়ে তখন শুধু এইসবের দিকেই মনযোগ দিন।
২. সবকিছু নির্দিষ্ট স্থানে রাখা – চাবির রিং, মানিব্যাগ, মোজা, রুমাল এইসব ছোটখাট জিনিস নির্ধারিত জায়গায় রাখুন। তারপর আস্তে আস্তে সবকিছুই নিদিষ্ট স্থানে রাখার অভ্যাস গড়ে তুলুন। এতে যেমন কোনো জিনিস হারিয়ে যায় না, তেমনি কাজের সময় খোঁঁজার জন্যে আলাদা প্রেশার পরে না।
৩. কাজের লিস্ট বানানো – কোনো কোনো দিন আমাদের করার মত অনেক কাজ থাকে যার সবগুলোই প্রয়োজনীয় কাজ। কিন্তু দিনশেষে দেখা যায় দুই-একটা কাজ বাকি রয়ে গেছে যা করা আসলেই ভীষণ দরকারি ছিল। তাই রাতে ঘুমানোর আগে বা সকালে ঘুম থেকে উঠে সেদিনের কাজের একটা লিস্ট বানিয়ে নিন। সেটা মোবাইলের নোটস এ লিখেও সেভ করে রাখতে পারেন। মাঝে মাঝে নোটস বের করে মিলিয়ে নিন আর কী কী করতে হবে, তাতে সেই কাজ আর ভুলে যাবার সম্ভাবনা থাকে না।
মডেল জয়া আহসান। ছবি – ফেসবুক
৪. একসাথে একটা কাজই করা – যখন কোনো কাজ করা শুরু করতে যাবেন তার আগে চিন্তা করে নিন কাজটি কিভাবে করবেন, কি কি জিনিস লাগবে কাজটি করতে। তারপর সেই কাজ শুরু করলে পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে কাজ করার চেষ্টা করুন। অন্য কোনোদিকে মনযোগ দিবেন না। তবে আমাদের মনের স্বভাবই হচ্ছে বার বার অন্যদিকে চলে যাওয়া। যখনই বুঝবেন মন অন্যদিকে চলে যাচ্ছে, অন্যকিছু না ভেবে আবার কাজে মনোযোগ দিন।
৫. সময় ধরে কাজ করা বা টাইমার সেট করা – কোনো একটা কাজ শুরু করার আগে ভেবে নিন কাজটা করতে কত সময় লাগতে পারে৷ তারপর টাইমার সেট করে সেই কাজ করতে বসে যান। বড় কাজ হলে মাঝে মাঝে বিরতি নিন। কিন্তু যে কাজ শুরু করেছেন তা শেষ করার পরেই অন্য কাজ করার চেষ্টা করুন।
৬. চারপাশ পরিষ্কার করে নেয়া – পরিচ্ছন্নতা শুধু ঈমাণের অংশই নয়, পরিচ্ছন্ন পরিবেশ আমাদের কাজের গতিও বাড়িয়ে দেয় বহুগুণ। আমাদের চারপাশে অনেক অপ্রয়োজনীয় জিনিস থাকলে তা আমাদের মনোযোগ কেড়ে নেয়। চারপাশের নানা জিনিস বা শব্দে আমরা মনোযোগ দেই, এবং ভুলে যাই কী কাজ করছিলাম। এতে করে অনেক সময় নষ্ট হয়। কখনো আবার সেই কাজের প্রতিই আগ্রহ হারিয়ে ফেলি বা মেতে উঠি মনোযোগ কেড়ে নেয়া সেই জিনিস নিয়েই। তাই কোনো কাজে বসার আগে টেবিল বা চারপাশ গুছিয়ে নেয়া, টেলিভিশন বন্ধ করে কাজ করতে বসা, পড়াশোনার কাজ হলে ফোন সাইলেন্ট মোডে নিয়ে গেলে যেমন অল্প সময়ে অনেককিছু শিখে ফেলা যায়, তেমনি আবার অনেকক্ষণ সময় মনোযোগও ধরে রাখা যায়।
Leave a Reply