সৃজনশীল ব্লগ কালাক্ষর এ আজকে আমরা হাত ধোয়ার গুরুত্ব নিয়ে ত্যানা প্যাচাবো – আমরা সবাই জানি যে, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা জীবনের অঙ্গ। হাত পরিষ্কার রাখা একটি গুরুত্বপূর্ণ অভ্যাস যার মাধ্যমে সহজেই অসুস্থতা থেকে বাঁচা যায় আমাদের পরিচিত অনেক রোগই কিন্তু ছড়ায় পরিষ্কার পানি আর সাবান দিয়ে হাত না ধোয়ার ফলে। সাধারণত জীবাণু সবচেয়ে বেশী ছড়ায় টয়লেট ব্যবহারের পর ভালভাবে হাত না ধোয়ার কারণেই । ডায়রিয়ার অন্যতম অনুঘটক হিসাবে মানুষ এবং অন্যান্য পশুর বিষ্ঠায় থাকা সালমোনেলা, ই-কোলাই এবং নোরোভাইরাসের মতো জীবাণু গুলো কাজ করে । শুধু তাই নয় এগুলো শ্বাসনালীর সংক্রমণ যেমন এডিনোভাইরাস এবং হ্যান্ড-ফুট-মাউথ রোগেরও কারণ। আজকের বহুল প্রচারিত অসুখ কোভিড ১৯ এর জীবানু গুলো মানুষের হাতের মাধ্যমেই সব চেয়ে বেশি সংক্রমিত হয়েছে। এই ধরনের জীবানু মানুষের হাতের মাধ্যমে নাক মুখের মাধ্যমে মানুষের দেহে প্রবেশ করে। আবার ডায়রিয়া এর জীবানূ গুলো মানুষের হাতে আসে টয়লেট থেকে বা বাচ্চার ডায়াপার বদলানোর পর হাত ভালভাবে না ধোয়া থেকে, শুধু তাই নয় কাঁচা মাংস নিয়ে কাজ করলেও এই জীবাণু মানুষের হাতে চলে আসতে পারে।
এছাড়াও কফ, হাঁচি, কাশি থেকে জীবাণুর সঙক্রমণ হয়। দুষিত কোনো কিছুর সংস্পর্শে আসলেও মানুষের হাতে জীবাণু আসতে পারে। আর হাতে লেগে থাকা এই জীবাণু যদি ধুয়ে না ফেলা হয় তাহলে শুধু যিনি বাহকের সাথে সাথে বাহকের কাছে যারাই আসবেন সবাই-ই সংক্রমিত হতে পারেন।তা প্রতিটি মানুষের খাবার শুরুতে হাত ধুয়ে নেওয়া দরকার, তেমনি খাবার বানাতে যাবার আগে এবং খাবার পরিবেশন করতেও হাত ধোয়া জরুরী। শুধু তাই নয় প্রতিটি মানুষের খাবার শেষে হাত ধুয়ে – ভেজা হাতটি মোছার জন্য যে তোয়ালে টি ব্যাবহার করা হয় সেই তোয়ালেটাও পরিষ্কার থাকা উচিৎ। প্রতিটা ক্ষেত্রে হাত ধোয়া হাত পরিষ্কার রাখা সুস্বাস্থ্যের অন্যতম পূর্বশর্ত। এই একটি অভ্যাস আমাদের স্বাস্থ্যের উপর বিরাট প্রভাব রাখতে পারে।
মানুষের সুস্থ থাকার জন্য প্রাথমিক কাজই হল খাবার খাওয়ার আগে ভালভাবে হাত ধোয়া। এ ক্ষেত্রে হাত ধোয়ার সময় সাবান বা অন্য যে কোন এন্টিসেপটিক ব্যবহার করে হাত ধোয়া হলে হাতে জমে থাকা জীবানু গুলো বহুল অংশে পরিস্কার হয়।ব্যাপারটা বেশির ভাগ মানুষ জানলেও বাস্তবে এর অনুসরণ খুব কম মানুষ ই করে থাকেন । এ কারনেই প্রতি বছর ১৫ অক্টোবর বিশ্বব্যাপী “গ্লোবাল হ্যান্ড ওয়াশিং ডে এর মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী মানুষের হাত ধোয়ার গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো এবং হাত ধোয়া উদ্বুদ্ধ করনোর জন্য পালন করা হয়।
কখন হাত ধোয়া উচিৎ
• খাবার তৈরি করার আগে, মাঝখানে এবং পরে।
• খাওয়ার আগে
• অসুস্থ কারো সেবা করার আগে এবং পরে
• দেহের কাঁটা ছেড়া বা ক্ষতর চিকিৎসা করার আগে ও পরে
• পায়াখানা প্রস্রাবের পরে
• বাবুর ডায়াপার বদলানো বা বাবুর পায়খানা পরিষ্কারের পরে
• নাক ঝাড়া, কফ ফেলা বা হাঁচি দেবার পরে
• কোনো পশুপাখি বা পশুপাখির খাবার বা পশুর বিষ্ঠা ধরার পরে
• পোষা জীব জন্তুর খাবার ধরার পরে
• আবর্জনা ধরার পরে
কিভাবে হাত ধোয়া উচিৎ
• পরিষ্কার পানিতে হাত ভেজান, হাতে সাবান দিন
• হাতে হাত ঘষে ফেনা তৈরি করুন, আঙ্গুলের ফাকে, নখের মধ্যে পরিষ্কার করুন
• অন্তত ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ডলে পরিষ্কার করুন।
• পরিষ্কার চলমান পানিতে হাত ভালোভাবে ধুয়ে নিন।
• পরিষ্কার তোয়ালে দিয়ে হাত মুছুন অথবা বাতাসে শুকিয়ে নিন।
• পানি বা সাবান না থাকলে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যাবহার করুন। তবে হাত খুব বেশী ময়লা হলে হ্যান্ড স্যানিটাইজার আমাদের হাত থেকে সমস্ত জীবাণু এবং ক্ষতিকর রাসায়নিক সরাতে পারে না।
• হাত ধোয়া জীবন বাঁচায় হাত ধোয়ার মতো স্বাস্থ্যকর চর্চা ডায়রিয়ার ঝুঁকি প্রায় অর্ধেক কমিয়ে দেয়। হাত ধোয়া বিভিন্ন রোগের সংক্রমণের হাত থেকে আমাদের বাঁচায়, যেমন:
• মানুষ প্রায় সময়েই অন্যমনস্ক ভাবে তাদের চোখ, নাক বা মুখে হাত দেয়। এইভাবে চোখ, নাক বা মুখের মাধ্যমে হাতে থাকা জীবাণু শরীরে প্রবেশ করতে পারে।
• হাত না ধুয়ে খাবার তৈরি বা পরিবেশন করলে হাতে থাকা জীবাণু খুব সহজেই খাবারে প্রবেশ করতে পারে। এমনকি কিছু অসাস্থকর পরিবেশ যা রোগ জিবানু বংশ বৃদ্ধি তরান্বিত করে এমন পরিবেশে অনেকক্ষণ থাকলে খাবারের সেই জীবাণু বংশবৃদ্ধি করে বেড়ে যেতে পারে আর সেই সব খাবার যখন মানুষ খায় তখন তাদের অসুস্থ হয়ে যাবার পরিমান অনেক অংশেই বৃদ্ধি পেতে পারে।
• হাত থেকে জীবাণু অন্যান্য জিনিসপত্রে যেতে পারে যেমন, সিঁড়ির রেলিং, টেবিল, খেলনা, যা থেকে অন্য মানুষের হাতে জীবাণু ছড়ায়।
• কিছুক্ষণ পর পর হাত ধোয়া ডায়রিয়া, শ্বাসনালীর সংক্রমণ, ত্বক ও চোখের সংক্রমণ থেকে আমাদের বাঁচায়।
তাই বাচ্চাদের এবং বড়দের হাত ধোয়া শেখানোর মাধ্যমে আমরা আমাদের চারপাশের মানুষকে সুস্থ রাখতে পারি। নিয়মিত হাত ধোয়া –
• ডায়রিয়ার সংক্রমণ কমায় ৩১ শতাংশ।
• পেটের অন্যান্য রোগ যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকলে হয়, তা কমায় শতকরা ৫৮ ভাগ।
• শ্বাসনালীর সংক্রমণ, ঠাণ্ডা, ফ্লু ইত্যাদি কমায় ১৬ থেকে ২১ শতাংশ।
এ কথা অনুশিকার্য যে শিশুদের হাত ধোয়ার অভ্যাস তাদের বিভিন্ন রোগের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে এবং প্রতিটি শিশুর দেহের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়াতেও সাহায্য করে।
Leave a Reply