শ্যাম্পু। আজকের দুনিয়ায় মাথার চুলের গোড়া মজবুত কিংবা খুশকির বিস্তার রোধ কিংবা চুল মসৃণ করার একটি অপ্রিহার্য বিজ্ঞাপনের নাম। ক্রেতার চাহিদার উপর ভিত্তি করে হরেক রকমের হরেক নামে বাজার ছেয়ে গেছে এই শ্যাম্পু দিয়ে। অথচ আমরা কয়জন ই বা জানি, বুহুল ব্যাবহৃত এই শ্যাম্পু কোথা থেকে আসলো? কে সর্ব প্রথম এর প্রচলন করেছিল কিংবা কিংবা এর আদি নিবাস ই বা কোথায়? পাঠক সৃজনশীল বাংলা ব্লগ কালাক্ষর এর আজকের আয়োজন এই শ্যাম্পু এর আদি পান্ত নিয়েই।
শ্যাম্পু এর প্রথম প্রচলন শুরু হয় একজন বাঙালি উদ্যোক্তা শেখ দীন মুহাম্মদ হাত ধরে। শেখ দীন মুহাম্মদ এর মাথাতেই সর্বপ্রথম কলকাতার চ্যাম্পি বা মাথা ম্যাসাজ কে আধুনিকীকরণ করার কথা এসেছিল।কলকাতায় বসবাস কারী শেখ দীন মুহাম্মদ এ সময় খোজ নিয়ে দেখেন যে কলকাতা তথা ভারতের কিছু মানুষ প্রাচীন কাল থেকেই মাথা পরিস্কার করতে শ্যাম্পু জাতীয় দ্রব্য চুলে ব্যবহার করা করতো। বেশিরভাগ সময় মূনিঋষিদের সান্নিধ্যে বা তাদের আশ্রামে যে সব ভক্ত রা যেত তাদের মাথা পরিস্কার করতে ব্যাবহার করা হত। মূনিঋষিরা তাদের ভক্তদের মাথা পরিস্কার করতে আমলকী, ক্ষুণ ও বিবিধ বীরুৎ এবং ভেষজ জাতীয় উদ্ভিদের ব্যবহার করে তার থেকে রস বা নির্জাস বের করে এই মাথা পরিস্কার করার দ্রব্য প্রস্তুত করা করতো। সেই রস ভক্তরা হাতে করে অনেকটা আজকের দিনে মাথায় তেল মাখার মতো করে মাখতো এবং কিছুক্ষণ পর মাথা ধুয়ে নিত। এই প্রক্রিয়ার নাম ছিল চ্যাম্পি । আর এই চ্যাম্পি থেকেই আজকের শ্যাম্পু শব্দটির উৎপত্তি। বিষয় টি শেখ দীন মুহাম্মদ এর মাথায় খেলে যায়। তিনি এই পদ্ধিতিতে মাথা পরিস্কার করার বিষয় টি আশ্রমের বাইরে সাধারন মানুষের ভিতর বাজার জাত করার সিদ্ধান্ত নেন।
আর এর ধারাবাহিকতায় ১৭৬২ সালের দিকে শেখ দীন মুহাম্মদ এর মাধ্যামে চাম্পি প্রক্রিয়া এবং চ্যাম্পি শব্দটি সঙ্গে ব্রিটিশদের নখদর্পনে আসে । এবং ১৮০০ শতকের শুরুর দিকে চ্যাম্পি তদানন্তিন ইংরেজ সমাজে প্রচলন শুরু হর এবং ইংরেজি উচ্চারণে চাম্পি বির্তিত হয়ে চ্যাম্পু নামে পরিচিতি লাভ করে।
পরবর্তীতে শেখ দীন মুহাম্মদ তার স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে একসাথে লন্ডনে “মোহাম্মদ’স স্টিম অ্যান্ড ভ্যাপোর সি ওয়াটার মেডিকেটেড বাথস” নামে ইংল্যান্ডের ব্রাইটনে একটি পার্লার খোলেন। এবং চ্যাম্পু আরো প্রসিদ্ধি লাভ করে।
ততদিনে চ্যাম্পি কলকাতায় ও প্রচলিত হয়ে পরে। এবং যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে চলতে চ্যাম্পু হয়ে যায় শ্যাম্পু আর ধীরে ধীরে বিভিন্ন কসমেটিক্স উৎপাদনকারী কোম্পানী আরো এগিয়ে এসে আমাদের হাতে তুলে দিচ্ছে আমাদের পছন্দের শ্যাম্পু।
আজকের দিনে শ্যাম্পু সাধারণ আমরা আমাদের চুল কে পরিষ্কার এবং নমনীয় করতে ব্যবহার করি। এখন বিভিন্ন ধরনের শ্যাম্পু আমাদের হাতের নাগালে চলে এসেছে, যেমন ” পেট শ্যাম্পু ” আমরা আমাদের পোষ্য যেমন কুকুর বিড়ালের শরীরের ময়লা পরিষ্কার করার জন্য ব্যবহার করতে পারি। ” বেবি শ্যাম্পু ” বিশেষভাবে শিশুদের জন্য তৈরী। এবং কন্ডিশনিং যেটি শ্যাম্পু র ই উন্নত রুপ।
মডেল- চিত্রনায়িকা পরী মনি । ছবি – কালাক্ষর ডেক্স
শ্যাম্পুর আধুনিক ইতিহাস (1900-1990)
আধুনিক শ্যাম্পু আবির্ভাবের আগে, মানুষ সাধারণত ব্যক্তিগত যত্নের জন্য সাবান ব্যবহার করতো। যাইহোক, সাবান চোখে জ্বালা এবং খোলা জলের সঙ্গে অসঙ্গত ছিল এবং সাবান চুলের উপর একটি নিস্তেজ এবং রুক্ষ প্রতিফলন ছেড়ে দেওয়াটাও একটা বিরাট বড় অসুবিধা ছিল। 1930-এর দশকের প্রথম দিকে, প্রথম কৃত্রিম উপায়ে ডিটারজেন্ট শ্যাম্পু চালু করা হয়, যদিও এটি এখনও আজকের দিনের মতো হয়নি, তবুও আগের থেকে অনেক বেশি উৎপাদন কম খরচ এবং ক্রেতার চাহিদার কারণে সবাই এই দিকেই ঝাঁপিয়ে পড়েন। ১৯৬০-এর দশকে আমরা আজকে যে প্রযুক্তি ব্যবহার করি সেইরকম শ্যাম্পু ধীরে ধীরে বাজারে আসতে শুরু করে।
বছরের পর বছর ধরে, শ্যাম্পুর অনেক উন্নতি করা হয়েছে। নতুন ডিটারজেন্ট চোখ এবং ত্বকের কম ক্ষতিকর এবং উন্নত স্বাস্থ্য এবং পরিবেশগত গুণাবলী প্রদান করা হয়েছে । এছাড়াও, উপাদান প্রযুক্তি উন্নত হয়েছে, শ্যাম্পুর মধ্যে হাজার হাজার উপকারী উপাদান অন্তর্ভুক্ত করতে আজ আমারা সক্ষম।
তো এই শ্যাম্পু র ইতিহাস। কমেন্টস করে জানান কেমন লাগল আপনার এই শ্যাম্পু র ইতিহাস।
Leave a Reply