1. sjranabd1@gmail.com : Rana : S Jewel
  2. solaimanjewel@hotmail.com : kalakkhor : kal akkhor
দ্য মিল্কি সীজ : সোমালিয়ার রহস্যময় দুধের সাগর - কালাক্ষর
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৮:০৫ অপরাহ্ন

দ্য মিল্কি সীজ : সোমালিয়ার রহস্যময় দুধের সাগর

  • Update Time : মঙ্গলবার, ১৫ জুন, ২০২১
দুধ সাগরের অবস্থান। ইমেজ সোর্স - atlasobscura.com

মাঝে মাঝে বিজ্ঞানীদের কথায় বেশ হতাশ হতে হয়, যে বিজ্ঞানীরা মঙ্গল গ্রহে গবেষণার জন্য যানবাহন (রোভার) পাঠায়, কোটি কোটি আলোকবর্ষ দুরের কোন গ্রহে প্রানের অস্তিত্ব আছে কি নেই তা নিয়ে গবেষণা করে, সেই বিজ্ঞানীরাই আবার বলে মহাকাশ সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা যতটুকু জানেন, তারচেয়েও হাজারগুণে কম জানেন গভীর সাগর সম্পর্কে জানেন ! এই সব শুনে নষ্টালজিক মনে কবি গুরুর একটি কবিতার চরন ভেসে ওঠে, “বহু দিন ধরে; বহু ক্রোশ দূরে,বহু ব্যয় করি,বহু দেশ ঘুরে,দেখিতে গিয়েছি পর্বতমালা,দেখিতে গিয়েছি সিন্ধু।দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়াঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া,একটি ধানের শিষের উপর, একটি শিশিরবিন্দু। হ্যা, আপনাদের কাছেও হয়ত তাই ই মনে হতে পারে, কিন্তু কেন? এমন কেন হবে? মহাকাশ তো শত কোটি আলোকবর্ষ দূরে, আর সাগর! সে তো পায়ের দুরুত্বে? তার পরেও কেন? এর কারণ সাগরের গভীরের বিপদ সঙ্কুল প্রকৃতি। আর এর রহস্যময়তা।

সাগর আসলে কতটা রহস্যময় তা বিজ্ঞানীদের এই জাতীয় মন্তব্য থেকেই বোঝা যায় ! সাগরের বালুময় সৈকতে দাঁড়িয়ে দিগন্ত বিস্তৃত যে নীল দরিয়া আপনি উপভোগ করেন, আপনি হয়ত জানেন না ঠিক সেখানে দাঁড়িয়ে হাজার বছর ধরে বিজ্ঞানী গবেষক ও প্রাচীন ভাবুকরা মনে মনে সাগরের জটিল রহস্যের জাল বুনে চলেছে। ভারত মহাসাগরের অন্তর্গত সোমালিয়ার ‘দ্য মিল্কি সীজ’ এমনই এক ক্ষুদ্র রহস্যময় অংশ…

দুধের সাগর দ্য মিল্কি সীজ

দ্য মিল্কি সীজ (The Milky Seas) নামে পরিচিত এই দুধের সাগর এর অবস্থান সোমালিয়ার দক্ষিণ উপকূলে। এখানের প্রায় ২৫০ বর্গ কিমি এলাকা জুড়ে সাগরের পানি অন্য সব সাগরের পানি থেকে একেবারেই আলাদা। বিশেষ করে রাতে মিল্কি সী’র পানি এক অপার্থিব রং ধারণ করে। পানির রঙের কারণেই কালের বিবর্তনে এই সাগরের নামের সাথে ‘মিল্কি’ অর্থাৎ ‘দুধের ন্যায় সাদা’ শব্দটি জড়িয়ে পড়েছে।

 দুধ সাগর

দুধ সাগরের অবস্থান। ইমেজ সোর্স – atlasobscura.com

মিল্কি সীজ প্রথম মানুষের নজরে আসে ১৮৬৪ সালে। সিমেস সিএসএস আলাবামা নামক একটি জাহাজে ক্যাপটেন রাফায়েল নামে এক নাবিক ওই সমুদ্র পথ পাড়ি দিচ্ছিলেন। জাহাজের কেবিন থেকে তার দৃষ্টিগোচর হয় সাগরের পানির এই অদ্ভুত রং। রাফায়েলের ভাষায়, হঠাৎ যেনো নীল পানি থেকে আলো ঠিকরে বেরিয়ে আসছে। মনে হচ্ছিলো যেনো কোনো এক বরফ বিছানো মাঠের ভিতর দিয়ে তাদের জাহাজটা যাচ্ছে !

রাফায়েলের কাছে যখন মিল্কি সী বরফ বিছানো মাঠ মনে হচ্ছিলো, তখন অন্য ক্রুদের অবস্থা তথৈবচ ! কারণ প্রাচীনকাল থেকে আঠারো শতক পর্যন্ত সাগর ছিলো নাবিকদের কাছে একেবারেই রহস্যময়। তারা বিভিন্ন দেব-দেবীকে সাগরের নিয়ন্ত্রক হিসেবে বিশ্বাস করতেন। ফলে মিল্কি সী তাদের কাছে মনে হয়েছিলো অত্যন্ত ভীতিকর এবং অশুভ একটি জায়গা…

সময়ের সাথে সাথে সাগর এখন নাবিকদের কাছে আগের চেয়ে অনেক বেশি উন্মোচিত। বিজ্ঞানের কল্যাণে মিল্কি সী’র রহস্য কিছুটা উন্মোচিত হয়েছে। বিজ্ঞানীরা প্রমাণ পেয়েছেন, পানির এই আলোকিত অবস্থা একশ্রেণীর ব্যাকটেরিয়ার কারসাজিতে ঘটছে। বিজ্ঞানের পরিভাষায়, এই শ্রেণীর ব্যাকটেরিয়াকে বায়োলুমিনিসেন্স (Bioluminescence Bacteria) বলে।

দ্য মিল্কি সীজ র ওপর থেকে তল অবধি এই বায়োলুমিনিসেন্স ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন বিদ্যমান। আর কোটি কোটি বায়োলুমিনিসেন্সই সাগরের এই অংশে আলো ছড়িয়ে পানির রং দুধের ন্যায় সাদা করে দিচ্ছে !

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে কিভাবে এই বায়োলুমিনিসেন্স গঠিত হয়? কেনোই বা সাগরের এই অংশে এত বেশি বায়োলুমিনিসেন্স জড়ো হলো? এসব প্রশ্নের উত্তর এখনো বিজ্ঞানীরা অনুসন্ধান করে চলেছেন। কলারাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক স্টিভেন এমনই এক অনুসন্ধানী বিজ্ঞানী। ১৯৯৫ সাল থেকে তিনি দ্য মিল্কি সী’জ এর ওপর গবেষণা করছেন।

তিনি বলেন, আমরা এখনো মিল্কি সী’র রহস্য ভেদ করতে পারিনি। মিল্কি সী’র পানি আলোকিত হওয়ার কারণ শনাক্ত করা গেলেও কেনো এই অংশে এত বেশি বায়োলুমিনিসেন্স গঠিত হয়, তা আজো অজানা…

সাগরের গভীরতার চেয়ে এর রহস্যের গভীরতা আরো অনেক বেশি। বিজ্ঞানের কল্যাণে আস্তে আস্তে কিছুটা রহস্যের জট খুলতে শুরু করেছে। সেদিন হয়ত বেশি দূরে নয়, যেদিন মিল্কি সি’র এই রহস্যের জটও খুলে যাবে। আপাতত কেবল এটুকুই বলা যায়…

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

More News Of This Category
©2021 All rights reserved © kalakkhor.com
Customized By BlogTheme
error: Content is protected !!

Discover more from কালাক্ষর

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading