ঝড়ে বক পড়ে আর ফকিরের কেরামতি বারে – প্রবাদ বাক্য টি শুনতে শুনতে আমাদের মাঝে এমন কেউ ক্লান্ত হন নাই বলে খুজে পাওয়া সত্যই দুরহ ব্যাপার। তেমন এই ঝড়ে বক পরার মত কাক আর তাল পড়া নিয়েও একটা গল্প আছে। এক দিন একটা কাক তাল গাছের পাশ দিয়ে উড়ে যাচ্ছিল। ঠিক সেই সময় একটি তাল হঠাৎ-ই পড়ে গেল মাটিতে। মানুষ ভাবলো ওই কাকটাই বুঝি তালটাকে ফেলেছে। আসলে কাকের মত দুর্বল ছোট পাখির পক্ষে এত বড় ফল নীচে ফেলা শুধু মুশকিলই না, অসম্ভবও।ব্যাসিক্যালি তালটা পেঁকে এমনিতেই পড়ে গেছে।আর এই ঘটনার কাক এবং তালের কাহিনির এরকম সম্পর্কহীন অথচ দৃশ্যত সম্পর্কযুক্ত ব্যাপারটি থেকেই ‘কাকতালীয়’ ব্যাপারটির সূত্রপাত হয়েছে।
পৃথিবীর হাজার বছরের ইতিহাসে কাকতালীয় ঘটনার শেষ নেই। আমেরিকার বিখ্যাত প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কন ও জন কেনেডির জন্ম-মৃত্যুর কাকতালীয় ঘটনা অনেকেরই জানা।সুতরাং এর বাইরের কিছু কাকতালীয় ঘটনা নিয়ে আলোচনা করা যাকঃ
ঘটনা ১
১৮৩৫ সালে হ্যালির ধুমকেতু আবির্ভাবের দিন দুনিয়াতে এসেছিলেন মার্ক টোয়েন। ৭৬ বছর পর ঠিক যেদিন পরবর্তী ধুমকেতুর আবির্ভাব হয় ঠিক সেদিনই ১৯১০ সালে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছিলেন এই মহান লেখক। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো মৃত্যুর এক বছর আগে তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন,আমি হ্যালির ধুমকেতুর সাথে এসেছি, আশা করছি পরের বছর ধুমকেতু আমাকে তার সাথেই নিয়ে যাবে। হ্যালির ধুমকেতু এই মহান লেখককে আশাহত করেনি!
ঘটনা ২
১৯৩০ সালে আমেরিকার ডেট্রয়েট অঙ্গরাজ্যে ২ বছরের এক শিশু তিন তলা বাড়ির জানালা দিয়ে পড়ে যায়। ঘটনাক্রমে মি. ফিগলক নামে এক ব্যক্তি বাড়ির পাশের রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি পড়ন্ত বাচ্চাকে দেখে ফেলেন আর দক্ষতার সাথে ক্যাচ ধরে ফেলেন। আহা! পিচ্চিটা কত সৌভাগ্যবান ছিল! জগৎসেরা কেয়ারলেস মায়ের(অথবা বাবার) সেই শিশুটি ঠিক এক বছর পরে একই জানালা দিয়ে আবারও পড়ে যায়। এবং এবারও বেঁচে যায় পিচ্চিটা। কারন এবারও ঐ রাস্তায় হেটে যাচ্ছিলেন সেই মি. জন্টি ফিগলক রোডস।
ঘটনা ৩
১৯৪৪ সাল। ২য় বিশ্বযুদ্ধের নরম্যান্ডি অভিযানের জন্য মিত্রবাহিনীর শীর্ষনেতারা কয়েকটি শব্দ নিয়ে কিছু সিক্রেট কোড তৈরি করেন। গোপন শব্দগুলো ছিল নেপচুন ,ওভারলর্ড,ইউটাহ,মালবেরি ইত্যাদি। অভিযানের আগের দিন ডেইলি টেলিগ্রাফ এর শব্দজট বা ক্রসওয়ার্ড পাজল সমাধান করতে গিয়ে তো সেই সেনাকর্তাদের চক্ষু চড়কগাছ! তারা দেখেন তাদের গোপন শব্দগুলো অদ্ভূতভাবে হুবহু মিলে গেছে সেই পাজলের উত্তরের সাথে। গুপ্তচর সন্দেহে ধরে রিমান্ডে নেয়া হলো বেচারা ধাঁধাপ্রণেতাকে। বেচারার ঘাম ছুটে গেল এটা প্রমাণ করতে যে শব্দগুলো তার মাথায় হঠাৎই এসেছিল।
ঘটনা ৪
১৯৫০ সাল। ভক্তি গীতির রিহার্সেলের জন্য গির্জায় উপস্থিত হবার কথা ১৫ জন গায়কের। অদ্ভূত ব্যাপার তাদের সবাই বিভিন্ন কারনে সঠিক সময়ে আসতে পারলেন না। কারো গাড়ি স্টার্ট নিচ্ছিল না,কারো ইস্ত্রী করতে দেরি,একজনের আসার আগে ছোটবেলার বন্ধুর সাথে দেখা আবার হয়তো কারও বাচ্চা শিশি করে দিয়েছিল জামায়। ঠিক সন্ধ্যা সোয়া ৭ টায় সেখানে উপস্থিত হবার কথা ছিল তাদের। ভাগ্যিস আসেননি। ৭ টা ২৫ মিনিটে এক ভয়াবহ বিস্ফোরণে ধংসস্তুপে পরিণত হয় সেই গির্জা। সম্ভাব্যতার সূত্র দিয়ে এক গবেষক ঘটনাটি ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেন। তার মতে একই সাথে একই যায়গায় যেতে ১৫ জন মানুষের সবার দেরি হবার মত ঘটনা প্রতি ১০ লক্ষ বারে ১ বার হবার সম্ভাবনা থাকে। এই সূত্র কাউকে খুশী করতে পারেনি তখন। এই ঘটনায় মহাপরাক্রমশালী সৃষ্টিকর্তার হাত আছে এমন বিশ্বাসই ছিল প্রায় সবারই।
ঘটনা ৫
আমেরিকার দুই জমজ শিশুর অদ্ভূত কাকতালীয় ঘটনা বোধহয় উপরের সব ঘটনাকেই ছাড়িয়ে যাবে।এ ঘটনার শুরুতেই বাংলা সিনেমার কাহিনির মত জন্মের সময় সেই জমজ দুই ভাই একে অন্যের থেকে আলাদা হয়ে যায়। ভিন্ন পরিবারে বেড়ে ওঠে দুজন। তাদের বা দুই পরিবারের মধ্যে কোন ধরনের যোগাযোগই ছিল না। অথচ দুজনেরই নাম রাখা হয় জেমস। এখনই অবাক হয়ে গেলেন! থামেন! কাক তো কেবল উড়াল দিল। এখনও তালের কাছে পৌছানো বাকি। বড় হয়ে আইন পেশায় নাম লেখালো দুজনই। একসময় বিয়ে করল তারা। মজার ব্যাপার দু’জনের বউয়ের নাম একই, লিন্ডা। দুজনেরই দু’টি করে ছেলে হলো। মাশাল্লাহ, তাদের নামও এক। জেমস এলেন ও জেমস এলান। প্রায় একই সময় উভয়েরই ডিভোর্স হলো। আবার বিয়ে করলেন দু’জনেই। এখানেও মিল। দুজনের স্ত্রীর নামই বেটি(Betty)! চল্লিশ বছর পর সেই দু’ভাই এর দেখা হয় এবং তারা নিজেদের অদ্ভূত কাকতালীয় ব্যাপারগুলো জানতে পারেন।
.
উপরের ঘটনাগুলো কি নিছকই কাকতালীয়? গনিতবিদরা এগুলোকে সম্ভাব্যতার সূত্র,পদার্থবিদরা সম্পর্ক-শৃঙ্খলা সূত্র দিয়ে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছেন। সত্যিই কি এই সব কাকতালীয় ঘটনাকে কি সূত্র দিয়ে ব্যাখ্যা করা সম্ভব? সম্পর্ক-শৃঙ্খলা সূত্র বা সম্ভাব্যতার সূত্র সঠিক হবার সম্ভাবিলিটিই বা কতটুক? নাকি এসব অজানা কোন রহস্যময় শক্তির লীলাখেলা? এসবের উত্তর এখনো পাওয়া যায়নি।
Source: Mysteries of the Unexplained
Reader Digest, January 1980
রহস্য পত্রিকা মার্চ ১৯৮৯
Leave a Reply