শুনতে খারাপ লাগলেও অস্বীকার করার কোন উপায় নেই, আমাদের দেশের নীতিনির্ধারকদের শীর্ষে যারা বসে আছেন তারা সবাই নারী। আমাদের প্রধান মন্ত্রী নারী, প্রধান বিরোধী দলের নেত্রী নারী, আবার ২য় বিরোধীদলীয় নেত্রী ও একজন নারী। শুধু তাই নয় আমাদের সংসদের চীপ হুইপ ও এক জন নারী। তো বলতেই পারেন আমাদের দেশে নারীর ক্ষ্মতায়ন খুব ভাল ভাবে চলছে। নারী রা তাদের নিজ যোগ্যতা দিয়ে উপরে চলে আসছেন। বিষয়টি যদি তাই হত তবে আদতেই ভাল হত। কিন্তু বাস্তবে তো ভিন্ন কথা বলে কারণ যে সব নারীদের কথা উদাহরণ হিসেবে দিয়েছি তাদের আজকের অবস্থানে আসার পিছনে তাদের নিজেদের যোগ্যতা বিন্দু মাত্র নেই। এক জন ক্লাস এইট পাশ করে দুই বারের প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। আর কেন তিনি প্রধান মন্ত্রী হয়েছিলেন তা ও আমরা ভাল ভাবেই জানি। কেউ বাবার নাম বিক্রি করে কেউ হাজবেন্ড এর নাম বিক্রি করে। নিজের যোগ্যতায় কেউ ই না। এখন বলুন তো ক্লাস এইট পাশ কেউ যদি নরমালী জব চায় তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতায় বড়জোর একটা অফিসের ঝাড়ুদার হতে পারবে। তাকে যদি দেশের প্রধানমন্ত্রী বানানো হয় তবে সেই দেশের সামগ্রীক অবস্থা কেমন হবে?
ইম্পোস্টার সিনড্রোম। ছবি – সানুরাই বিন্তে কামাল
আপনারা হয়ত জানেন, যদি কোন অযোগ্য লোক কে কোন স্পর্শ কাতর প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদে আসীন করা হয় বা কোন প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব দেওয়া হয় তখন সেই অযোগ্য মানুষ তাঁর অযোগ্যতা কে ঢাকতে সব সময় হিনম্মতায় ভুগে থাকেন। তাঁর গোমড় যাতে ফাস না হয় শুধু মাত্র এই কারণে তাঁর চার পাশে সব যোগ্য লোক জন কে বিদায় করে দিয়ে এমন সব অযোগ্য লোক জনকে বসায়। যারা তাঁর যোগ্যতা নিয়ে কোন প্রশ্ন তুলবে না। এমন টি সে করে থাকে কারণ তাঁর যে যগ্যতা নেই তা বলার মত কাউকে সে পছন্দ করে না। রেজাল্ট হিসেবে দেখাযায় প্রতিষ্ঠানটির বারোটা বাজিয়ে দেউলিয়া হতে বেশিক্ষন লাগে না। আমাদের দেশের সামগ্রীক পরিস্থিতি বিচার বিবেচনা করলেই বুঝতে পারবেন। যাই হোক – আমি কাউকে হেও প্রতিপন্ন করতে আজকের লেখাটি লিখতে বসি নি। আমি যাস্ট আপনাদের বোঝাতে উদাহরণ টি টেনেছি।
আমার আজকের লেখার বিষয় বস্তু উদাহরনে দেওয়া সেই সব অযোগ্য নারীদের নিয়ে নয়। বরং তুলনা মূলক ভাবে যোগ্য কোন নারীদের নিয়ে যারা তাদের যোগ্যতা মাপকাঠি পুরন করার পরেও ইম্পোস্টার সিনড্রোম এ ভোগার ফলে যে সব সমস্যায় পড়ে তা নিয়ে। আজ আমরা আলোচনা করবো নারীরা এই ইম্পোস্টার সিনড্রোমের ক্ষপ্পড়ে পড়ে কেমন ভোগান্তির স্বীকার হয়।
যদি আপনি সামগ্রীক ভাবে ইম্পোস্টার সিনড্রোম এর বিষদ- ইম্পোস্টার সিনড্রোম কি? কি ভাবে কাজ করে? এর ফলে কি হয়? তা জানতে চান তবে এই বিষয়ে আমার একটি দীর্ঘ লেখা আছে। তা পড়ে ফেলার অনুরোধ রইল।
ইম্পোস্টার সিনড্রোম বলতে আমরা বুঝে থাকি, জীবনের সব পরিক্ষায় উত্তির্ণ হবার পরেও যদি কারো এমন মনে হয় যে, শুধুমাত্র ভাগ্যের ডানায় চড়েই সে সাফল্যের মুখ দেখেছে? জীবনে তাঁর যত অর্জন তা কেবলই দৈববলে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনা? যদি কারো প্রায়শই মনে হয়,তাঁর আজকে যে উল্লেখযোগ্য অবস্থান, প্রকৃতপক্ষে সে তার যোগ্য নয়? যেকোনো সময় সেই লোকের চারপাশের মানুষের কাছে এটি খোলাসা হয়ে যাবে যে,সেই লোকটি আদতে একজন প্রতারক? সাফল্য, অর্জন, দক্ষতা, যোগ্যতা এসবই তাঁর চূড়ান্তরকমের ভণ্ডামি?
দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেই লোকটির মত আপনার মনে এসব প্রশ্নের উত্তর ‘হ্যাঁ’ হয়ে থাকে, তবে নির্দিধায় বলা যায়, আপনি সম্ভবত ইম্পোস্টার সিনড্রোমে ভুগছেন। নিজের দক্ষতা,মেধা, শিক্ষা, প্রতিভা ইত্যাদির ওপর কোনো ধরনের বিশ্বাস না থাকার এ প্রবণতা সর্বপ্রথম আলোচিত হয় ১৯৭৮ সালে। মানুষের মনে জেকে বসা এই অদ্ভুত সমস্যা নিয়ে মনোবিজ্ঞানী পলিন রোজ ক্ল্যান্স এবং সুজান ইমস তাদের বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ লেখেন। তারা এর নাম দ্যান ইম্পোস্টার সিনড্রোম ।
Zahara Mitu, ছবি- ফেসবুক
তবে আমাদের আজকের এ আলোচনার বিষয়বস্তু ইম্পোস্টার সিনড্রোম নয়, বরং পলিন এবং সুজানের করা কাজটি যে বিষয়টির সূচনা করে, তা নিয়ে। পলিন এবং সুজান তাদের প্রবন্ধে একটি প্রস্তাবনা রাখেন যে, খুব সম্ভবত নারীরা খুব বেশি পরিমানে ইম্পোস্টার সিনড্রোমে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। এর কারণ তো আপনার বোঝার কথা আমাদের সমাজে যদি সফল কোন নারীর দিকে তাকান তবে দেখবেন তাদের ৮০% সফলতা অন্যের দয়ায়। মানে বাবা হাজবেন্ড কিংবা পারিবারিক অবস্থান, তাই যদি কেউ নিজের যগ্যতা বলে সফল ও হন তখন চার পাশে মেরূদন্ড হীন সফলতার তকমা নিয়ে অবস্থান করা মেয়েদের ভিরে নিজের অস্তিত বিলিন করে ফেলেন। তাঁর কাছে ও মনে হয় হয়ত তাদের মত তাকেও সবাই এক কাতারে ফেলেদিবে। শুধু নারীরা নয় নারীদের পাশাপাশি পুরুষরাও নিজেদের যোগ্যতার প্রতি আস্থাহীনতা এবং স্বীয় কর্মগুণে অর্জিত সাফল্যকে নিজের বলে ভাবতে না পারার চর্চা করে থাকেন, তবে নারীদের ক্ষেত্রে সমস্যাটির ইতিবৃত্ত বৈশিষ্ট্যসূচকভাবে আলাদা হিসেবে প্রকাশ পায়।
‘দ্য সিক্রেট থটস অভ সাক্সেসফুল ওম্যান‘ বইয়ের লেখক ভ্যালেরি ইয়াং একজন ইম্পোস্টার সিনড্রোম বিশেষজ্ঞ হিসেবে বেশ সুনাম কেড়েছিলেন। ভ্যালেরি ইয়াং ইম্পোস্টার সিনড্রোমে আক্রান্ত ব্যক্তিদের আচরণে কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য তিনি খুঁজে পেয়েছিলেন তা নিন্মে দেওয়া হল:
ইম্পোস্টার সিনড্রোম
একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, নারীদের ভিতর, বিশেষ করে কৃষ্ণাঙ্গ নারীরা ইম্পোস্টার সিনড্রোমের শিকার মারাত্মকভাবে হয়ে থাকেন। কৃষ্ণাঙ্গ নারীদের ন্যায় এলজিবিটিকিউ কিংবা আদিবাসী জনগণও এই সিনড্রোমে ভোগার ঝুঁকিতে থাকেন। কেন এমন টা হয়? চলুন এর কারণগুলো নিয়ে আলোচনা করা যাক।
লিন ইন এর গবেষণামতে, যুক্তরাষ্ট্রের কর্পোরেট সংস্কৃতি নারীদের ইম্পোস্টার সিনড্রোমের উর্বরভূমি। তাদের তথ্যমতে, যুক্তরাষ্ট্রের অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে ব্যবস্থাপক পদে নারীদের নিয়োগ কিংবা পদোন্নতির হার খুবই কম। ২০১৯ সালে তাদের পরিচালিত এক জরিপানুযায়ী, কোনো দলে প্রতি ১০০ জন পুরুষ নিয়োগের বিপরীতে মাত্র ৭২ জন নারী নিয়োগ পান। ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত পদগুলোর ৬২ শতাংশ পুরুষদের দখলে, যেখানে নারীরা অধিকার করে আছেন অবশিষ্ট ৩৮ শতাংশ। ক্যাটালিস্টের তথ্যমতে, যুক্তরাষ্ট্রে ২০১৯ সালে পরিচালকের মতো পদগুলোতে নারীদের উপস্থিতি ২৬.১ শতাংশ, যেটি ২০১৬ সালে ছিল ২০.৩। যুক্তরাজ্যে অবস্থাটি যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে কিছুটা অধিকতর সন্তোষজনক। ২০১৯ সালে নারীদের উপস্থিত ছিল ৩১.৭ শতাংশ, যেটি ২০১৬ সালে ছিল ২৫.৩।
নারীরা কোনো রোল মডেল খুঁজে পাচ্ছেন না। অর্থাৎ, তাদের সামনে অনুসরণীয় কোনো নারী নেই। থাকলেও সেটা প্রচারের অভাবে বা সংখ্যার বিচারে প্রভাব বিস্তারকারী কিছু হতে পারছে না। এর ফলে কী হচ্ছে? কোনো একজন নারী সম্পূর্ণভাবেই তার নিজস্ব মেধা, শ্রমের মাধ্যমে যখন খুব উঁচু একটি পদে আসীন হচ্ছেন, তখন তিনি একধরনের অনিরাপদ বোধ করতে শুরু করেন। কারণ, পুরুষ যেখানে তার চারপাশে অসংখ্য রোল মডেল বা তারই মতো প্রচুর ‘হাই অ্যাচিভার’ দেখতে পাচ্ছেন, সেখানে নারী নিজেকে আবিষ্কার করছেন একদম একাকী। কর্পোরেট দুনিয়ায় তিনি যত উপরে উঠছেন, লৈঙ্গিক বিচারে তিনি নিজের সহচারী খুঁজে পাচ্ছেন না বললেই চলে। এই যখন শ্বেতাঙ্গ নারীদের অবস্থা, তখন ওম্যান অভ কালারস বা কৃষ্ণাঙ্গ নারীরা ঠিক কোথায় আছেন, বোঝাই যাচ্ছে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, যুক্তরাষ্ট্রের মোট জনসংখ্যার ১৮ শতাংশ কৃষ্ণাঙ্গ হওয়ার পরও পরিচালক পদে তাদের উপস্থিতি মাত্র ৫ শতাংশ। ফরচুন ফাইভ হান্ড্রেড প্রতিষ্ঠানগুলোর ইতিহাসে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হওয়া একমাত্র কৃষ্ণাঙ্গ নারী হলেন জেরক্সের উরসুলা বার্ন্স, যিনি এ পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন ২০১৬ সালে।
বর্ণবাদী মনোভাব এবং লিঙ্গভিত্তিক তথাকথিত চিন্তাভাবনার প্রচার-প্রসার নারীদের ইম্পোস্টার সিনড্রোমের শিকার হওয়ার আরেকটি বড় কারণ। নারীরা গণিতে বা বিজ্ঞানে ভালো না, নারীদের বুদ্ধিমত্তা কম, আবেগ দিয়ে চিন্তা করার কারণে নারীরা বাস্তববাদী সিদ্ধান্ত নিতে পারে না, আদিবাসী এবং কৃষ্ণাঙ্গরা খুবই অলস, মাথামোটা এবং তাদের মাঝে ঐক্যের অভাব ইত্যাদি প্রচলিত ধারণাগুলো বহুল চর্চার ফলে মানুষের মনে পাকাপাকিভাবে অবস্থান করে নিয়েছে। এগুলোও নারীদের নিজেদেরকে ইম্পোস্টার ভাবতে বাধ্য করে।
ইম্পোস্টার সিনড্রোম
সারা বিশ্ব জুড়ে নারীদের রূপের প্রশংসা একটি তুমুল জনপ্রিয় চর্চা। পশ্চিমা দেশগুলো জ্ঞান-বিজ্ঞানে আকাশচুম্বী খ্যাতি অর্জন করলেও নারীদের প্রতি তাদের মনোভাব সেই তুলনায় খুব একটা প্রশংসনীয় নয়। বাহ্যিক রূপ কিংবা সৌন্দর্যের প্রশংসা করা হয় দু’ভাবে। প্রথমত, একজন নারীর চেহারার গুণকীর্তন করে তাকে পটানোর চেষ্টা করা। দ্বিতীয়ত, তাকে আকারে ইঙ্গিতে এটা বোঝানো যে, আপনার সাফল্য, অর্জন সবই আপনার শারীরিক সৌন্দর্যের দান। কর্মক্ষেত্রে এ বিষয়টি এত বেশি প্রচলিত যে, নারীরা নিজেরাও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এটিকেই সত্য বলে বিশ্বাস করা শুরু করেন, বিশেষত তিনি যদি সত্যিই রূপবতী হয়ে থাকেন। অর্থাৎ দক্ষতা, জ্ঞান, মেধা ইত্যাদির প্রশংসা না করে রূপের প্রশংসা করার প্রথাও নারীদেরকে ইম্পোস্টার ভাবতে প্রেরণা যোগায়।
স্রেফ নারী হওয়াই কখনও সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কীরকম? নারী-পুরুষ সমতা রক্ষা করতে গিয়ে কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান কখনও কখনও ইচ্ছাকৃতভাবেই নারীদেরকে নিয়োগ প্রদান করে। এখানে লক্ষ রাখা দরকার যে, এই কাজটি কেউ কেউ করে থাকে মানে এই নয় যে, এটিই সর্বক্ষেত্রের স্বীকৃত বাস্তবতা। নারীদের এহেন নিয়োগযোগ্য নারীদেরকেও একই কাতারে ফেলতে প্রলুব্ধ করে। নিজের যোগ্যতা, মেধা, প্রতিভা দিয়ে প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ পর্যায়ে যাওয়ার পরও অনেক নারীই বিশ্বাস করেন যে, তিনি শুধু আজ নারী বলেই এ জায়গায়। প্রতিষ্ঠানের নারী-পুরুষ ভারসাম্য রক্ষা নীতির আশীর্বাদেই তিনি আজকের অবস্থানে।
শেষের কথা
যদি আপনার মনে ইম্পোস্টার সিনড্রোম থেকে মুক্তি পাবার ইচ্ছে জাগে, তবে বলি, দুঃখজনক হলেও সত্য যে, ইম্পোস্টার সিনড্রোম থেকে সম্পূর্ণ মুক্তি পাওয়া যায় না। আমরা জানি ইতিবাচক চিন্তা মানুষকে অনেক কিছু থেকেই মুক্তি দিলেও ইম্পোস্টার সিনড্রোম নির্মুল করার ক্ষেত্রে খুব একটা কাজ আসে না। এক্ষেত্রে মনোবিজ্ঞানীদের পরামর্শ হচ্ছে, নিজেদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া। নিজেদের বিশ্বস্ত কাউকে নিজের অনুভূতির পুরোটা খুলে বলতে পারলে তাদের কাছ থেকে প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়, যা কিনা খুবই সহায়ক হয়ে থাকে। নিজের সকল সফলতা, অর্জন, খ্যাতি খাতায় লিখে ফেললে তখন নিজের যোগ্যতা, মেধা, আন্তরিকতা, শ্রম ইত্যাদির মূল্য একদম স্পষ্ট হয়ে ওঠে চোখের সামনে। নিজের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করার ক্ষেত্রে একেবারে চূড়ান্ত পর্যায়ে যেতেই হবে এমন নীতি অনুসরণ না করাটাই নিজের জন্য মঙ্গলজনক।
This article is in Bangla languse. It is about high rate of imposter syndrome in women.
All the necessary references are hyperlinked within the article
Leave a Reply