1. sjranabd1@gmail.com : Rana : S Jewel
  2. solaimanjewel@hotmail.com : kalakkhor : kal akkhor
লজ্জা বা সামাজিক (সোশ্যাল) ফোবিয়া কি? আজ জানবো তার ইতিবৃত্ব - কালাক্ষর
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ০৭:০১ অপরাহ্ন

লজ্জা বা সামাজিক (সোশ্যাল) ফোবিয়া কি? আজ জানবো তার ইতিবৃত্ব

  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ৩ জুন, ২০২১
সোশ্যাল ফোবিয়া
ছবি - শবনম ফারিয়া। ইমেজ ফোর্স - ফেসবুক

আমাদের সামাজিক জীবনে লজ্জা শব্দ টির সাথে প্রায় সবাই পরিচিত। শুধু লজ্জা নয় এর সমর্থক শব্দ গুলোর সাথেও আমরা বেশ পরিচিত। আমাদের সামাজিক জীবনে যার লজ্জা কম তাদের আমরা নির্লজ্জ বলি। আবার যার লজ্জা বেশি তাকে আমরা লজ্জাবতি বা এই জাতীয় শব্দ দিয়ে  বুঝাই। কিন্ত কেউ  কি আমায় বলতে পারবেন  লজ্জা  জিনিস কি? 

লজ্জা হল এক ধরনের অস্বস্তি । আমাদের অনেকের অপরিচিত লোকের সঙ্গে কথা বলতে গেলে আমাদের ভিতর এক ধরনের আরষ্টতা কাজ করে,আর এই আরোষ্টতাই হল লজ্জা। কিন্তু প্রাথমিক আড়ষ্টতা কেটে গেলে আমরা স্বচ্ছন্দ বোধ করি,কিছু মানুষ আছেন এই আড়ষ্টতা কে ভয় পেয়ে অপরিচিত কারো সাথে কিংবা অপরিচিত কোন জায়গায় যেতে খুব ভয় পান। এবং সামাজিক ভাবে অনেক ক্ষেত্রে অনেকের চেয়ে পিছিয়ে পড়েন, আর মানষিক অশান্তির কথা নাই বা বলি।

ফোবিয়া একটি ল্যাটিন শব্দ। যার বাংলা প্রতিশব্দ ভয়। প্রতিটি মানুষের ভিতর কম কিংবা বেশি কোন না কোন বিষয়ে ভয় কাজ করে। সেটা মাকড়সা দেখে ভয় হউক অথবা কোন উঁচু জায়গায় দাঁড়ালে মাথা ঘুরে যাওয়ার কারনে হউক। তবে সাধারণতঃ এই সব ভয়  আমাদের দৈনন্দিন কাজের ব্যাঘাত ঘটায় না। ভয় তখনি ফোবিয়া হয়ে দাঁড়ায় যখন এর ফলে আমাদের স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হয়। আর সোশ্যাল ফোবিয়া বলতে আমরা তাকেই বুঝি যদি কোন মানুষের ভিতর মানুষের সাথে মিশতে, অপরিচিত কোন জায়গায় কিংবা কোন মানুষের সাথে যেতে ভয় লাগে কিংবা গেলেও অসস্তির চুরান্ত অবস্থায় পৌছায় তাকে।

আপনার সোশ্যাল ফোবিয়া থাকলে আপনি অচেনা লোকের সামনে খুব অস্বস্তিবোধ করবেন। আপনার মনে হবে সবাই আপনাকে অপছন্দ করছে, আপনাকে নিয়ে যা তা ভাবছে, লোক জন কি ভাবছে? বা ভাব্বে?  আপনি এখনি কী করতে পাবেন? কি বলবেন?  কী করে বসবেন ? মোট কথা নিজের ভিতর অসস্তি বারতে বারতে তাল গোল পাকিয়ে ফেলবেন।

হিউম্যান সাইকোলজি নিয়ে আমার অন্য লেখা গুলো পড়তে চাইলে নিচের লিংক গুলোতে ক্লিক করুনঃ

এই অনুভূতি এতই কষ্টকর হতে পারে যে আপনি হয়ত লোকের সঙ্গে মেলামেশাই করতে পারবেন না। সব সামাজিক অনুষ্ঠান আপনি এড়িয়ে যাবেন। সৃজন শীল বাংলা ব্লগ “কালাক্ষর” এ আজ আমরা মানুষের  সোসাল ফোবিয়া নিয়ে আলাপ করবো। জানার চেষ্টা করবো সোসাল ফোবিয়া এর কারণ কেন হয়, সাথে প্রতিকার ব্যাবস্থা ও। 

সোশ্যাল ফোবিয়া

ছবি – পায়েল। ইমেজ সোর্স – ফেসবুক

সোশ্যাল ফোবিয়া সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে।

সাধারণ (বা জেনেরালাইজেড) এবং স্পেসিফিক

সাধারন জেনেরালাইজেড সোশ্যাল ফোবিয়াঃ

  • আপনার মনে হবে যে লোকজন আপনার দিকে তাকিয়ে আছে
  • আপনার মনে হবে, আপনি কী করছেন আর কি না করছেন তার উপর লোকজন নজর রাখছে
  • অপরিচিত লোকের সঙ্গে আলাপ করতে আপনার মনে সায় দিচ্ছে না
  • দোকানে বা রেস্তোরাঁতে যাওয়া দরকার কিন্তু যেতে ইচ্ছে করে না।
  • লোক জনের সামনে খেতে অসুবিধা হচ্ছে
  • স্বল্প পোশাকে বাইরে বেরোতে চাইছেন না (যেমন সমুদ্রের ধারে)
  • প্রয়োজন সত্ত্বেও স্পষ্ট করে নিজের মনোভাব জানাতে দ্বিধাবোধ করছেন

এই জাতীয় ফোবিয়া হলে পার্টিতে কিংবা এই জাতীয় কোন জায়গায় যাওয়া বিশেষ ভাবে অস্বস্তিকর হয়ে দাঁড়াতে পারে। আপনি মনে মনে চাইলেও আপনি ঘরভর্তি লোকের সামনে যেতে দ্বিধাবোধ করবেন। আপনি সোশ্যাল ফোবিয়া আক্রান্ত হয়ে থাকে আপনি নিজের ঘরেও যদি কোন মেহমান আসে সেই ঘানে যেতে কুন্ঠা বোধ করবেন। দেখা যাবে আপনি নিজের বাড়িতে ঘরের দোরগোড়াতেই দাঁড়িয়ে আছেন এবং ঘরের ভিতরে ঢুকতে কুন্ঠাবোধ করছেন। আর তেমন হলে আপনার স্বভাব দেখে সকলে ভাবতে পারে যে আপনার ভিতরে হয়ত ক্লস্ট্রোফোবিয়ার (বদ্ধ ঘরে ভয় পাবার ফোবিয়া) লক্ষন আছে। শেষমেষ আপনি যখন ঘরে ঢুকলেন, তখন আপনার মনে হবে যে সবাই আপনাকে দেখছে। অনেকে পাব বা পার্টিতে যেতে গেলে যাবার আগে মদ্যপান করে নেন যাতে একটু রিল্যাক্সড বোধ করতে পারেন এবং মেন্টাল ট্রেস কমিয়ে পার্টিটা উপভোগ করতে পারেন।

স্পেসিফিক সোশ্যাল ফোবিয়াঃ

স্পেসিফিক সোশ্যাল ফোবিয়া বিশেষ করে নায়ক, গায়ক, শিক্ষক বা ইউনিয়নের নেতা শ্রেনীর মানুষের মধ্যে দেখা যায়,কারণ তাদের কাজের  ধরন পাবলিক রিলেটেড, তাই  তাঁদের প্রায়শই কোন সভা কিংবা আসরের মধ্যমণি হতে হয়। স্পেসিফিক সোশ্যাল ফোবিয়া থাকলে অবশ্য লোকের সঙ্গে মেলামেশা করতে কোনো অসুবিধা হয় না। কিন্তু সবার সামনে যখন দাঁড়িয়ে কথা বলতে বা গান গাইতে গেলে সেই ব্যাক্তির টেনসন হয় এবং এসময়  কেউ কেউ  ভয় বলুন আর লজ্জা বলুন সে তোতলাতে থাকেন। এমনকী যাঁরা অভিজ্ঞ, এবং এই কাজ প্রায়ই করে থাকেন তাঁদের হঠাৎ এই উপসর্গ দেখা দিতে পারে। এমনও হতে পারে যে লোকের সামনে একটাও কথা বলা যায় না, একটা প্রশ্ন অবধি করা যায় না।

সোশ্যাল ফোবিয়াতে কী রকম ভয় অনুভূতি হয়?

দুধরনের ফোবিয়াতেই মানুষের মনে স্ট্রেসের উপসর্গ দেখা দেয়। যদি আপনি নিজেকে সোশ্যাল ফোবিয়াতে আক্রান্ত কি না তা পরিক্ষা করতে চান তখন নিচের বিষয় গুলো আপনার সাথে ঘটে কি না তা মিলিয়ে দেখুনঃ

  • আপনি খুব চিন্তা করছেন যে লোকের সামনে আমি আবার কোন ধরনের অস্বাভাবিক কোনো আচরণ না করে ফেলি
  • আপনার যেখানে যেতে মন টানছে না, অথচ সেই বিষয়ে নিয়ে সবসময় ভেবে যাচ্ছেন
  • আপনি মনে মনে ভাবছেন কবে কখন কোন পরিস্থিতিতে আপনি লজ্জা জনক পড়েছিলেন
  • আপনি যা করতে চান বা বলতে চান তা বলতে বা পারছেন না
  • আপনার জীবনে ঘটা কোন একটি ঘটনার পর আপনি বার বার ভাবছেন ‘কী করলাম, কী করলাম’
  • আপনি হয়ত বার বার পুংখানুপুংক্ষ ভাবে নিজের মনে ভাবছেন আপনার কী করা উচিৎ ছিল বা আপনার বলা উচিৎ ছিল।

এই দুধরনের সোশ্যাল ফোবিয়াতেই কিছু শারীরিক উপসর্গ দেখা দেয়। যেমন ধরুনঃ

  • মুখ শুকিয়ে যাওয়া
  • অতিরিক্ত ঘামা
  • বুক ধড়ফড় করা
  • বারবার পেচ্ছাপ বা পায়খানা পাওয়া/ কিংবা প্রশ্রাব পায়খানা পাবার মত বেগ অনুভুত হওয়া।
  • হাত বা পা মাথা ঝিমঝিম করা বা শরীর অসাড় হয়ে যাওয়া
  • শ্বাস প্রশ্বাস এর গতি হুট করেই বেড়ে যাওয়া।

অন্যেরা হয়ত আপনাকে দেখে বুঝতে পারবেন যে আপনি অস্বস্তিতে পড়েছেন। আপনি হয়ত লাল হয়ে যাচ্ছেন, তোতলাচ্ছেন বা আপনার হাত পা কাঁপছে।  এই উপসর্গগুলি আপনার ভীষণ ভয়ানক মনে হতে পারে এবং আপনার টেনশন আরো বাড়িয়ে দিতে পারে।

সোশ্যাল ফোবিয়া

ছবি – তানজিন তিশা। ইমেজ সোর্স – ফেসবুক

এরপর এটি চক্রাকারে বারতে থাকে। আপনি টেনশন নিয়ে টেনশন করেন আর তাতে আপনার টেনশন আরো বাড়ে। আপনার চোখেমুখে টেনশনের অভিব্যাক্তি ফুটে ওঠে। তাই নির্দিধায় বলা যায় আপনার টেনশনই আপনার সবচেয়ে বড় শত্রু।

প্যানিক

দুধরনের সোশ্যাল ফোবিয়াতেই প্যানিক  হতে পারে। প্যানিক বেশিক্ষণ থাকে না, মিনিট কয়েক মাত্র থাকে। সাংঘাতিক দুশ্চিন্তা হয়, মনে হয় আপনি পরিস্থিতির উপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলছেন। আপনার মনে হয় আপনি এবার হয় মারা যাবেন নয়ত পাগল হয়ে যাবেন। সচরাচর যে পরিস্থিতিতে এটি হয়েছে সেখান থেকে আপনি বেরিয়ে যাবার চেষ্টা করবেন। প্যানিকের অনুভূতি অত্যন্ত তীব্র কিন্তু ক্ষণস্থায়ী, এটি কেটে গেলে আপনি ক্লান্ত বোধ হবে। প্যানিক যতই ভয়প্রদ হোক না কেন, এতে আপনার শারীরিক কোনো ক্ষতি হয় না এবং নিজে নিজেই এটি কমে যায়।

সোশ্যাল ফোবিয়া কিভাবে মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করে ?

অনেকে নিজেদের জীবনযাত্রায় পরিবর্তন এনে এই সমস্যার মোকাবিলা করেন। এর অর্থ তাঁরা এবং তাঁদের পরিবারের অন্য সদস্যেরা যা করতে ভালবাসতেন তা অনেক সময় না করা। তাঁরা বাচ্ছার স্কুলে যেতে পারেন না, ডেন্টিস্টের কাছে যেতে পারেন না বা বাজার করতে যেতে পারেন না। এমনকী তাঁরা অনেক সময় নিজেদের পদোন্নতিতেও বাধা দেন যদিও তাঁদের পক্ষে চাকরির উন্নতির পথে আর কোনো বাধা নেই। যাঁদের সোশ্যাল ফোবিয়া থাকে তাঁদের অর্ধেকের বেশি বিশেষত; যে সব পুরুষদের ভিতর সোশ্যাল ফোবিয়া বিদ্যমান তারা কোন দিন দীর্ঘস্থায়ী কোন সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারেন না। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, একশো জনের মধ্যে পাঁচ জনের সোশ্যাল ফোবিয়া থাকে। পুরুষের তুলনায় মহিলাদের ক্ষেত্রে এটি দুতিনগুণ বেশি দেখা যায়।

সোশ্যাল ফোবিয়া  থেকে আর কী হতে পারে?

বিষাদরোগঃ সোশ্যাল ফোবিয়া থেকে আপনার মনে বিষন্নতার জন্ম হতে পারে। আর তাঁর পরিমাণ তীব্র হতে পারে যে তার জন্য আলাদা ভাবে ডাক্তারের কাছে যেতে হতে পারে চিকিৎসার জন্য।

আগারোফোবিয়াঃ আপনি যদি সবসময় যেখানে মানুষ আছে সেই জায়গায় না যান তবে এই জায়গাগুলির প্রতি আপনার ভীতি জন্মাতে পারে। এমনকী আপনি নিজের বাড়ী ছেড়ে বেরোতেও ভয় পেতে পারেন—তাকে বলে আগারোফোবিয়া।

মদ ও অন্য নেশাঃ আপনি হয়ত আপনার মনের কষ্ট লাঘব করতে মদ, ড্রাগ বা ঘুমের ঔষধ ব্যবহার করতে পারেন। এর ফলে আপনি মাদকাসক্ত হয়ে যেতে পারেন।

শারীরিক স্বাস্থ্যঃ প্যানিক এবং চিন্তার হলে উদ্ভূত টেনশান আপনার শরীরের রক্ত চাপ বাড়িয়ে তুলতে পারে যার সাথে হার্টের অসুখের সম্ভাবনা সম্পর্ক বিদ্যামান।

সোশ্যাল ফোবিয়া

ছবি – অহনা রহমান। ইমেজ সোর্স – ফেসবুক

 সোশ্যাল ফোবিয়া হবার কারণঃ

সঠিক ভাবে এখনো বের করা যায় নি কেন বা কিসের জন্য মানুষ সোশ্যাল ফোবিয়াতে  আক্রান্ত হয়।  তবে একটি গবেষণা তে দেখা গেছে যে সব মানুষ লোকসমক্ষে নিজেদের ব্যবহার সম্পর্কে অতি মাত্রায় সচেতন থাকে তাদের সোশ্যাল ফোবিয়াতে বেশি আক্রান্ত হতে দেখা যায়। এছাড়াও যারা অল্পবয়সে তোতলামিতে ভুগতেন তারা ও সোশ্যাল ফোবিয়াতে আক্রান্ত হন বেশি।

সোশ্যাল ফোবিয়া থেকে প্রতিকার মুক্ত হতে হলে আপনাকে যা করতে হবে

  1. আপনি স্বভাবতই লাজুক হলে লোকাল কোনো আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর কোর্স করতে পারেন।
  2. রিল্যাক্স করতে শিখুন। বই, টেপ, সিডি, ডিভিডি সব পাওয়া যায় রিল্যাক্সসেসান পদ্ধতি শেখানোর। আপনি দুশিন্তা শুরু হলেই রিল্যাক্স করলে বাড়াবাড়ি আটকে দিতে পারবেন।
  3. আপনার দুশ্চিন্তাগুলি লিখে রাখুন। আপনার সম্পর্কে যে ছবি ফুটে উঠছে, লিখে রাখলে তার পরিবর্তন করা অপেক্ষাকৃত সহজ।
  4. আপনি নিজে মনে মনে কী ভাবছেন সেকথা চিন্তা  না করে লোকে কী বলছে তা শোনার চেষ্টা করুন।
  5. যে সাবধানতা আপনি অবলম্বন করেন, সেটা বন্ধ করুন। যেটি সহজতম সেটি দিয়েই শুরু করুন।

কোনো ভয়জনক পরিস্থিতি হলে তাকে ছোটো ছোটো ধাপে ভেঙ্গে দেখুন। প্রথম ধাপটি অভ্যাস করুন। অভ্যস্ত হতে সময় লাগতে পারে। অভ্যস্ত হয়ে গেলে পরের ধাপে এগোন। তারপর তার পরের ধাপে। এমনি করে ধাপে ধাপে এগিয়ে চলুন।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

More News Of This Category
©2021 All rights reserved © kalakkhor.com
Customized By BlogTheme
error: Content is protected !!

Discover more from কালাক্ষর

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading