কালাক্ষর ডেক্সঃ বংগ দেশে খুব কম ই আদম সন্তান আছেন যারা প্রথম প্রেমে ছ্যাকা খেয়ে হাত কাটে নাই। কিংবা কাউকে ইমশনালি ব্যাক মেইল করতে সিগারেট এর স্যাকা সহ নিজের শরীর কে ক্ষত বিক্ষত করে নাই, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এই কাজ গুলো গুলো মানব জীবন চক্রের বয়সন্ধী কালিন সময় কিংবা এর আশে পাশের সময় গুলোতে বেশি করতে দেখা যায়। কারন এই সময় কালিন স্টেজে মানুষ তাদের আবেগ কে সংবরন করতে পারে না।
অনেক সময় দেখা যায় বয়সন্ধী কালিন সময় পার হয়ে গেলেও কিছু মানুষের ভিতর আবেগ কে সংবরন করার ক্ষমতা প্রিম্যাচিউড পর্যায়ে ই থাকে। অনেক ক্ষেত্রে তা আরো বৃদ্ধি পায়।এইটা একটা সাইকোলজিক্যাল সিন্ড্রোম। যাকে মন বিজ্ঞানী গন ভ্যান গগ সিন্ড্রোম বলে আখ্যায়িত করে থাকেন।
লেখাটিতে আরো যা জানতে পারবেন
ভুবন বিখ্যাত চিত্রশিল্পী ভিনসেন্ট ভ্যান গগ এর নাম অনুসারে এই সাইকোলজিক্যাল ডিজিজ এর নাম করন করা হয়েছে। ১৮৯০ সালের ২৯ জুলাই দীর্ঘ বিষন্নতা ও মানসিক অসুস্থতায় ভুগে মাত্র ৩৭ বছর বয়সে আত্মহত্যা করেন তিনি। রেখে যান কিছু অমূল্য চিত্রকলা আর একটা অসম্পূর্ণ জীবনের করুণ ইতিহাস। সেই সঙ্গে চিকিত্সাশাস্ত্রে সংযোজিত হয় নতুন একটি শব্দবন্ধ– ভ্যান গগ সিনড্রোম।
ভ্যান গগ ছবি – উইকিপিডিয়া
১৮৮২ সালে ২৯ বছর বয়সে বিখ্যাত চিত্রশিল্পী ভিনসেন্ট ভ্যান গগ ছোট ভাই থিয়োকে লিখেছিলেন, ‘আমার মধ্যে প্রায়ই ভয়ঙ্কর বিষাদ নেমে আসে, খিটখিটে হয়ে যাই তখন, আমি একই সঙ্গে শারীরিক ও মানসিক ভাবে সংবেদনশীল হয়ে পড়ি, সেই শোচনীয় বছরগুলিতে সৃষ্টি হওয়া নার্ভাসনেস আমাকে বিপর্যস্ত করে দিয়েছে।’ ভালবাসা ও স্বীকৃতির কাঙাল ভ্যান গগের শিল্পীজীবন ঘিরে শুধুই ছিল মরুভুমির শুষ্কতা। গোটা জীবনে তিনি সে ভাবে কাউকেই নির্ভর করে উঠতে পারেন নি। সাহায্য ও সহানুভূতির স্পর্শে একমাত্র ব্যতিক্রম থিয়ো। ভিনসেন্ট ভ্যান গগের জীবনে ছায়ার মতো জড়িয়ে ছিলেন ছোট ভাই থিয়ো ভ্যান গগ। থিয়োকে লেখা চিঠিপত্রগুলো থেকেই এই বিখ্যাত শিল্পী মানুষটির জীবনের বহু তথ্য পাওয়া যায়।
স্বাভাবিক মানুষের মতো জীবন ছিল না ভ্যান গগের। ছেলেবেলা থেকে নানা বিপর্যয় এবং ওঠাপড়া তাঁকে বার বার বিধ্বস্ত করেছে। জীবত্কালে নিজের শিল্পকর্মের কোনও স্বীকৃতিই পাননি। হতাশাগ্রস্ত ভ্যান গগ চরম বিমর্ষতার মধ্যে থাকতে থাকতে একসময় ভীষণ মদ্যপান শুরু করেন। মেজাজ হয়ে ওঠে তিরিক্ষি, একটুতেই উত্তেজিত হয়ে যেতেন তখন। তাঁর সমকালীন চিত্র সমালোচক ও সহ-শিল্পীরা ভ্যান গগের আঁকা ছবির প্রশংসা করা দূরের কথা নিরবচ্ছিন্নভাবে কট্টর সমালোচনা করে গেছেন। ফলে, তাঁর আঁকা ছবি বিক্রিই হত না। এভাবেই চরম দারিদ্র্য বার বার ক্ষতবিক্ষত করেছে এই শিল্পী মানুষটিকে। অথচ ভাবতে অবাক লাগে, তাঁরই আঁকা বেশ কিছু ছবিকে আজ পৃথিবীর সবচেয়ে দামী শিল্পকর্মগুলির মধ্যে গণ্য করা হয়।
ভ্যান গগের কান দুটো ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বড় আকৃতির। বিষন্ন, বিরক্ত ও হতাশাগ্রস্ত ভ্যান গগ ১৮৮৮ সালের ২৬ ডিসেম্বর ক্ষুর দিয়ে নিজের ডান কানের লতি শরীর থেকে আলাদা করে ফেলেন। তার পরে কাটা কানের লতিটিকে ক্রিসমাসের উপহার হিসেবে পাঠিয়ে দেন সেই মহিলাকে, যিনি একবার ভ্যান গগকে উপহাস করে বলেছিলেন যে, তাঁর কানদুটো নাকি খুব সুন্দর। তবে এই নিয়ে বিতর্ক আছে। আধুনিক তথ্য এমনটাই জানাচ্ছে যে, শিল্পী পল গগাঁর সঙ্গে বচসা চলাকালীন তাঁর কান কাটা পড়ে অথবা তিনি নিজেই কান কেটে ফেলেন।
মডেল – রোমানা সর্ণা। ছবি- কালাক্ষর ডেক্স
এই রোগের সর্বচ্য বৃদ্ধি তে মানুষ অনেক হীনো কর কাজ করে, তবে তা অন্য কারো সাথে নয় নিজেকে যন্ত্রণা দিয়ে তিলে তিলে শেষ করে দিতে চাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়,খুব বিরল ক্ষেত্রেই এই সব আত্মঘাতী আঘাত প্রাণনাশের কারণ হয়। সাধারণভাবে এগুলোকে আত্মহত্যার বহিঃপ্রকাশও বলা যায় না। দেখা গেছে, স্ব-অঙ্গহানি সেই সব মানুষরাই বেশি করেন, যাঁরা বর্ডার লাইন পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডারে ভুগছেন।
হিউম্যান সাইকোলিজি নিয়ে আমার লেখা পুরাতন পোস্ট গুলো পড়ে আসতে পারেন
অথবা এমনও হতে পারে তীব্র মানসিক চাপ, প্রচণ্ড রাগ কিংবা নিদারুণ মানসিক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে মানুষ এই ধরনের কাজ করে থাকেন। এই স্ব-অঙ্গহানি রোগটির সঙ্গে অন্য যে ধরনের স্বভাব জড়িয়ে আছে তাকে উচ্চ মাত্রার আবেগপ্রবণতা বলা যেতে পারে।
২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসে ইন্ডিয়ার পশ্চিম বংগের রাজধানী কলকাতার একটি ঘটনা সভ্য সমাজকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। সেই ঘটনার বিষয়ে যতটুকু জানা গিয়েছিল তা হল, এক প্রোমোটার তাঁর স্ত্রী ও শিশুপুত্রকে হত্যা করার পরেই তাঁর বিবাহ বর্হিভুত সম্পর্কের প্রেমিকা ও প্রেমিকার তিন বছরের কন্যাকেও হত্যা করেন। সবশেষে নিজের গোপনাঙ্গ কেটে ফেলে এবং শরীরের নানা জায়গায় আঘাত করে আত্মঘাতী হন।
লোকটির সম্বন্ধে যখন তদন্ত হয় তখন তার ব্যাবসার গতি জেট প্লেনের গতিতে উথ্থান হয়েছিল এই প্রোমোটারের। একদা ঘুঘনি বিক্রেতা এই মানুষটি রিয়েল এস্টেটের ব্যবসায় নেমে খুব তাড়াতাড়ি কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যান।
তবে তাঁর আয় ও ব্যয়ের মধ্যে কোনও সামঞ্জস্য ছিল না। আর তাতে প্রচুর দেনার প্রবল অর্থনৈতিক চাপ তাঁকে পর্যুদস্ত করে দিচ্ছিল। সেই সঙ্গে দুই সংসারের প্রবল অশান্তিও তাঁকে মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত করে দেয়। ছিল আরও কিছু অবৈধ যোগাযোগ। সম্ভবত সে কারণেই তাঁর মধ্যে ভ্যানগগ সিনড্রোম-এর এই বিরল প্রকারটি দেখা গিয়েছিল, যেখানে স্বেচ্ছায় নিজের গোপনাঙ্গ কেটে নেওয়ার পরেও তিনি আত্মঘাতী হন।
Leave a Reply