পৃথিবীতে মানুষের আদিম তম স্বভাবের ভিতর একটি হল সেক্স। অর্থাৎ যখন এই পৃথিবীতে কোন দেশ ছিল না। সমাজ ছিল না। মানুষের থাকার জন্য কোন বসত বাড়ি ছিল না। পরিধান করার মত কোন বস্ত্র ছিল না। যখন মানুষের মাঝে কোন ভাষার প্রচলন ছিল না তখন ও মানুষ সেক্স করতো। আবার আমাদের এই সভ্য সমাজের সর্বচ্য শিখরে এসেও মানুষ সেক্স কে এভোয়েট করতে পারে না। সো বুঝতেই পারছেন সেক্স মানুষের জীবনে কতটা ইমোর্টেন্ট। অথচ আমাদের নিজেদের মধ্যের বিশেষ করে আমাদের বাংলাদেশীদের মধ্যে সেক্স বা যৌনতা নিয়ে কথা বলার ক্ষেত্রে যথেষ্ট বিরোধীতা আছে। খাটি বাংলায় বলতে গেলে এটাই আমাদের সেক্সুয়াল ট্রেডিশন। আমরা সবাই এখনো এই বিষয়টাতে একমত যে, যৌনতা বা শারীরিক চাহিদা আসলে একটি গোপনীয় বিষয়, যা বন্ধ দরজার মধ্যে থাকাটাই ভালো। আবার অন্যদিকে LGBT গ্রুপ বা তাদের সম্পর্ক এবং জন্মনিয়ন্ত্রণ নিয়ে কথা বলাটাকে আমরা পাবলিক ইস্যুর মত বানিয়ে ফেলি।
কিন্তু আপনি যদি ইতিহাস বা অন্যান্য সভ্যতার ভিতরে সেক্স বা যৌনতা নিয়ে গবেষণা করেন তবে আপনি সেক্স, যৌনতা বা শারীরিক সম্পর্ক নিয়ে তাদের মধ্যে এক বিশালতা দেখতে পাবেন যা অতীত কিংবা বর্তমান কোন কালেই আমাদের দেশের মানুষের ভিতর খুঁজে পাবেন না। সেক্স কে আমরা নিষিদ্ধতার এমন এক চাদরে মুড়িয়ে ফেলেছি যে, একটি কনডম কিনতে বা তার ব্যবহার নিয়ে বলতে আমরা অনেক লজ্জা বোধ করি যেখানে সু প্রাচীন কিংবা বর্তমান কালে পৃথিবীতে বিরাজনমান অন্যান্য সভ্যতাতে যৌনতা নিয়ে বলাকে খুবই স্বাভাবিক একটা ব্যাপার হিসাবে দেখা হয় বা দেখা হত। বর্তমান কালে পশ্চিমা দেশ গুলোতে পাঠ্যবইয়ের সাথে সেক্স বা যৌনতা বিষয়ক জ্ঞান দেওয়া হয় এবং কি করলে কি হবে বা তাদের সেক্স বা শারীরিক সম্পর্কের সময় কি ব্যবহার করতে হবে সেটা নিয়ে অনেক শিক্ষাও দেয়া হয়।
কালাক্ষর ব্লগে আমার লেখা পুরাতন পোস্ট গুলো পড়ার অনুরোধ রইল
শুধু কি তাই অন্যান্য কিছু দেশ কিংবা অতীতের কোন সভ্যতার মধ্যে এমন অনেক সেক্স বা যৌনতার ট্রেডিশন আছে বা বিরাজমান ছিল যা আমাদের নিজেদের দেশে খারাপ হিসাবে ধরা হয় যা আমাদের অনেকেরই অজানা। সৃজনশীল ব্লগ “কালাক্ষর” এ আজ আমরা আলোচনা করবো অতীত কিংবা বর্তমান কালে সেক্স বা যৌনতা নিয়ে বিভিন্ন দেশ কিংবা প্রাচীন সভ্যতায় কি ধরনের প্রথা বা ট্রেডিশন প্রচলিত ছিল তা নিয়ে-
প্রাচীন মিশর : প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতায় সেক্স নিয়ে যথেষ্ট উদারতা দেখা যেত। কুমারীত্ব বা Virginity নিয়ে কার মাঝে কোনো মতভেদ ছিলোনা। কুমারীত্ব বা Virginity থাকা বা না থাকা নিয়ে কারো মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব ছিলোনা । প্রাচীন মিশরীয় পুরাণ কাহিনী তে দেখা যায়, তাদের প্রথম যেই দেবতা ছিলো, সেই দেবতা পৃথিবীতে একটি প্রজন্মের জন্ম দিয়েছিলেন শুধুমাত্র হস্তমৈথুন করার মাধ্যমে। প্রাচীন কালে মিশরীয়রা বাবলা গাছের আঠা জন্ম নিয়ন্ত্রনের কাজে ব্যবহার করতেন, বাবলা গাছের আঠা ছড়াও কুমিরের বিষ্ঠা সহ আরো অদ্ভুত অনেক ধাতু ব্যবহার করতেন।
প্রাচীন গ্রিক : প্রাচীন গ্রীসে একজন উপযুক্ত বা প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষের সাথে একটি বাচ্চা ছেলের বা নাবালকের সেক্স বা যৌনতার সম্পর্ককে খুব সাধারণভাবে দেখা হত। এই ধরনের সম্পর্ক সাধারন মানুষের চেয়ে উচ্চ মর্যাদার বা রাজকীয় পরিবার গুলোতে বেশি থাকত।
পাপুয়া নিউগিনি : পাপুয়া নিউগিনিতে কোন শিশুর সাত বছর বয়সের সময় থেকেই টরবিয়ান্ড বা সেক্সুয়াল যৌনতার শিক্ষা দেয়া হয় । তারা প্রাপ্ত বয়সী হলে একে অন্যকে কিভাবে আকর্ষণ করবে তা খেলার ছলে তাদের শিক্ষা দেওয়া হয়ে থাকে। এর ফলে ওইসব শিশুরা যখন সাবালক হয়, তখন তারা তাদের Sexual partner বা যৌনতার সঙ্গীকে পুর্ব শিক্ষা লব্ধ জ্ঞ্যান অনুযায়ী নিজেরাই নির্ধারণ করে নিতে পারে এবং যেকোনো সময় তাকে পরিত্যাগ করে আরেকজনকে গ্রহন করতে পারে। এই খানে শুধু ছেলেরাই নয় মহিলারাও নিজেদের প্রেমিক বা সঙ্গীকে নির্ধারন ও ত্যাগ করার করার ক্ষমতা রাখেন। পাপুয়া নিউগিনিতে বিবাহের রীতি অনেক অদ্ভুত, এই খানে কোন প্রেমিক যদি তাঁর প্রেমিকার ঘরে রাতের খাবার খেয়ে সূর্য উঠার আগেই সেই ঘর থেকে বের হয়ে না আসে, তাহলেই তাদের বিয়ে হয়ে যায় এবং নতুন জামাইকে প্রেমিকার মা পরের দিন সকালবেলা মিষ্টি আলু রান্না করে খাওয়ায়।
ফাইল ফটো । ইমেজ সোর্স -concretewardrobe.com
পাপুয়া নিউগিনির সাম্বিয়া গোত্রে একটা ছেলে কে পুরুষে পরিনত করতে ছয়টা ধাপ পার হতে হয়। আর এই সকল ধাপ গুলো পর্যায় ক্রমে ছেলেটির বয়স যখন ছয় বছর তখন থেকে। পুরুষে পরিনত হওয়ার সময় তাদের শিখানো হয় কিভাবে তারা যোদ্ধা হবে? কি ভাবে তাঁরা শিকার করবে ইত্যাদি সব চেয়ে অবাক করা বিষয় হল এই পুরা সময়টিতে তাদেরকে মেয়েদের কাছ থেকে দূরে রাখা হয় এমনকি তাদের নিজেদের মায়েদের কাছ থেকেও তাদের দূরে রাখা হয়।এই সময় অনেকেই সমকামিতার শিকার হয় কিন্তু এই ব্যাপারটাকে তারা তাদের বড় হবার প্রক্রিয়ার একটা অংশ বলে মনে করে। এই পুরুষ হবার প্রক্রিয়া প্রায় টানা দশ থেকে পনের বছর ধরে চলে এরপর সে পুরুষ হিসাবে কোন সন্তানের বাবা হবার অনুমতি পায়।
অস্ট্রেলিয়া : অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস কারী আদিবাসীদের মধ্যে একটি ভয়ঙ্কর প্রথা চালু আছে, এখানে দশ থেকে বারো বছরের ছেলেদের কে সামনের যে কোন একটি দাঁত উঠিয়ে ফেলে দিতে হয় তার Adulthood বা প্রাপ্ত বয়স্ক হবার কথা সবাইকে জানান দিতে। এরপর তাকে তার পছন্দের কোন স্থানে নিয়ে গিয়ে লিঙ্গ এর চর্মছেদন করা হয় এবং সেই চামড়াটুকু তাকে গিলে খেতে হয়। এই সমস্থ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পর তাকে শিকারে পাঠানো হয় যতক্ষণ পর্যন্ত সে শিকার করে নিয়ে আসা খাবার দিয়ে ভোজের আয়োজন করে ততক্ষণ পর্যন্ত সে কোন নারী সঙ্গ পায় না।
আফ্রিকা : আফ্রিকার উদ-আবের মধ্যে একটা ছোট গোত্র আছে যাদের ক্যামেরুন , মধ্য আফ্রিকা , চাঁদ , নিগার এবং নাইজেরিয়ার কিছু অঞ্চলে পাওয়া যায়। এই সব উপজাতী গুলো তাদের অদ্ভুত সাজসজ্জা এবং বিভিন্ন সামগ্রী দিয়ে তৈরি পোশাক পরার জন্য বিখ্যাত। এই গোত্রের মধ্যে একটি উৎসবের প্রচলন আছে যেখানে পুরুষেরা তাদের পারদর্শিতা এবং দক্ষতা নাচ গানের মাধ্যমে বিবাহ উপযুক্ত মেয়েদের সামনে উপস্থাপন করেন। একদল মেয়েদের জুরি সেখান থেকে সবচে আকর্ষণীয় পুরুষকে নির্বাচন করেন । এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মহিলারা তাদের প্রেমিক বা স্বামী নির্বাচন করে থাকে। আবার অনেক জুটি ভেঙ্গে গিয়ে নতুন জুটি তৈরি হয় । এই প্রক্রিয়ায় অনেক পুরুষ প্রাপ্তি হিসেবে দুজন স্ত্রী পেয়ে থাকেন।
হাইতি : হাইতি তে একটি গোত্র আছে যাদের “ঝর্ণা” বা Saut-D’Eau বলা হয়। এই উপজাতির লোকেরা প্রতি বছর জুলাই মাসে ভোডোডু উৎসবের জন্য দূরের কোন একটি ঝর্নার কাছে যায়। এই উৎসবের তিন দিন মেয়েরা প্রকাশ্যে যে কারো সাথে সেক্স বা শারীরিক সম্পর্ক করার অনুমতি পেয়ে থাকে বলে এই উৎসবটিকে উর্বরতার উৎসব বলা হয়ে থাকে।
নেপালের একটি গোত্রে বাস আপন দুই ভাই। যারা গোত্রের নিয়ম অনুযায়ি একটি মেয়েকে বিয়ে করে। ইমেজ সোর্স – concretewardrobe.com
নেপাল : মহাভারতের পাণ্ডু পুত্রদের মত নেপালের তিব্বতিয়ানদের মধ্যে একটি গোত্র বাস করে। এই গোত্রের এক নারীর বহু স্বামী নেবার ক্ষমতা থাকে। মূলত গোত্রটিরজনসংখ্যার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য এই প্রথার প্রচলন হয়। এদের প্রথা অনুযায়ী এক পরিবারে যে কয়েকজন ভাই থাকে তাদের সবাই একজন নারীকেই বউ হিসাবে গ্রহন করে, এবং নিয়ম অনুযায়ী সবাই সপ্তাহের একটি দিন তার সাথে কাটায়। এই প্রচলিত প্রথায় জন্ম নেয়া সন্তানদের আসল পিতা কে তা নিয়ে কেও মাথা ঘামান না বরং শিশুটি পরিবারের একজন সদস্য হিসাবে গ্রহন করা হয়।
যা হোক সেক্স বা যৌনতা আমাদের জীবনের একটি অপূরণীয় অংশ বা চাহিদা, তাই সু-প্রাচীন কাল থেকে এই সেক্স বা যৌনতা বা শারীরিক সম্পর্ককে একটি অন্যমাত্রায় উপস্থাপন করা হয়েছে । এর কারণ আপনি আমি সবাই জানি সেক্স বা যৌনতার উপর নির্ভরে করে বিস্তার করে এক একটি সভ্যতা। তাই কোনো সভ্যতার যৌনতা নিয়ে নিন্দনীয় কিছু বলার আগে তাদের জীবনযাপন আচার-আচরণ সম্পর্কে সঠিক ভাবে জেনে নেওয়া দরকার। আবেগ বা ধর্ম দ্বারা বিবেচনা না করে একে সভ্যতার বিকাশ হিসাবে যদি দেখা যায়, তবে সেক্স বা যৌনতা অনেক সহজভাবেই গ্রহণীয় হবে। সবাই ভাল থাকবেন। ধন্যবাদ
তথ্যসুত্রঃ wikipidia.com
image sorce by –
Leave a Reply