1. sjranabd1@gmail.com : Rana : S Jewel
  2. solaimanjewel@hotmail.com : kalakkhor : kal akkhor
সারভাইভরশিপ বায়াসঃ সফল মানুষদের অনুসরণ করতে গিয়ে আমরা যেভাবে ব্যার্থ হই - কালাক্ষর
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০২:৪৭ পূর্বাহ্ন

সারভাইভরশিপ বায়াসঃ সফল মানুষদের অনুসরণ করতে গিয়ে আমরা যেভাবে ব্যার্থ হই

  • Update Time : মঙ্গলবার, ১ জুন, ২০২১
ফলস কজ ফ্যালাসি
মডেল - জয়া আহসান। ছবি- ফেসবুক

সাফল্যের পিছনে ছোটা এই দুনিয়া সব সময় সফল মানুষদের গলাতেই মালা পড়ায়। আর ব্যার্থদের ছুড়ে ফেলে দ্যায় আস্তাকুরে। ব্যার্থতার চাদর গায়ে ব্যার্থদের নাম আস্তাকুরে থেকে এক সময় একেবারে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। আর সফল ব্যাক্তদের দের কথা লেখা হয় ইতিহাসের পাতায়। বেচে থাকে যুগের পর যুগ, শতাব্দীর পর শতাব্দি। আর তাই সেই সফল মানুষগুলোকে অন্য সব মানুষ অনুসরণ করে। তাদের মত হতে চায়। স্কুল কলেজে চলে সেই সফল ব্যাক্তিদের জীবন নিয়ে আলোচনা। বাবা মা তাদের সন্তানদের সফল মানুষদের মত হবার জন্য পাঠ্যবই এর সাথে সফল ব্যাক্তিদের জীবনী পড়ায়,যাতে তাদের জীবনী পড়ে অনুপ্রাণিত হয়ে তাদের সন্তান তাদের মত হয়। কিন্তু আপনি কি জানেন? যেকোনো ব্যাপারে সফল মানুষদের অনুসরণ করা এবং তাদের থেকে পাঠ নেওয়ার যে স্বাভাবিক প্রবৃত্তি আপনার ভিতর বিরাজনমান, তা আপনার মারাত্বক বিপর্যয়ের কারণ হতে পারে?

কি বুঝতে পারেন নাই তাই না? যখন শুধুমাত্র ‘সারভাইভর’ অর্থাৎ যে সব সফল ব্যাক্তি শত প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়েও চলেও সাফল্যকে শিখরে আরহন করতে পেরেছেন, তাদের অভিজ্ঞতার উপরে নির্ভর করে সম্পূর্ণ চিত্রটির ব্যাপারে ধারণা তৈরির চেষ্টা করা হয়, তখন একটি ভ্রান্ত ছবি ফুটে উঠে যা বাস্তব পৃথিবীর সাথে মেলে না। কারণ, সারভাইভরদের বৈশিষ্ট্যযুক্ত আরো অনেক অংশগ্রহণকারী থাকতে পারে যারা একইরকম পরিস্থিতিতে একইরকম সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেও সাফল্য পায়নি।

কি এখনো বোঝেন নাই তাই না? দাড়ান আপনাকে আরো সহজ করে দিচ্ছি। বিল গেটস ও মার্ক জাকারবার্গের মতো বিলিয়নেয়াররা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি সম্পন্ন না করেই সফল হয়েছিলেন। এই ব্যাপারটি মিডিয়ার পর্যাপ্ত নজর কেড়েছে এবং তা নিয়ে তারা বেশ রঙচঙে প্রবন্ধও প্রকাশ করেছে। নিউ ইয়র্ক টাইমসের মত প্ত্রিকা পর্যন্ত তাদের নিয়ে এরকম একটি প্রবন্ধে একটি কার্টুন ফিচার করে সেখানে “College is for suckers” লেখার সাহস পর্যন্ত দেখিয়েছিল।

আবার, ২০১১ সালে যুক্তরাস্ট্রের সিলিকন ভ্যালির উদ্যোক্তা পিটার থিইল ড্রপ আউট হতে চাওয়া তরুণ উদ্যোক্তাদের মাঝে এক লক্ষ ডলারের পুরষ্কার ঘোষণা করেছিলন। আমি জানি, পাঠক মনে এই জাতীয় গল্পগুলোর আবেদন অনুভব করা বেশ সহজ। কারণ, এরকম সাফল্যের গল্পগুলো প্রতিকূলতাটাকেই উৎসাহদায়ক করে তোলে। এরকম আত্মবিশ্বাস জন্ম নেয় যে, তারা যদি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াই ধনী হতে পারে, তাহলে আমার দ্বারা সম্ভব নয় কেন? আর এই জাতী ভাবনার ফলেই মানুষ সহজে সারভাইভরশিপ বায়াসের শিকার হয়। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি নেই এমন কতোজন মানুষ ব্যর্থ এই দুনিয়াতে ব্যার্থতার শেকল পড়ে জীবনের জাবনিকা টেনেছেন, সেটি খুঁজতে গেলেই ভিন্ন একটি ছবি ধরা দেবে।

দৈনিক আট মাইল হেটে স্কুলে গিয়ে আমাদের সদ্য প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক দেশের সেরা ব্যাবসায়ী হয়েছিলেন। কিন্তু কয়জন কে আপনি মনে রেখেছেন যারা এত দূরে স্কুলে ক্লাস করে পড়া লেখা করে ভাল রেজাল্ট করার পরেও শুধু মাত্র পারিবারিক কিংবা আমাদের দেশের সিস্টেমের কারণে ব্যার্থ হয়ে সমাজের কীটদের মত জীবন যাপন করছেন যদি হিসেব করতে যান তবেই উত্তর পেয়ে যাবেন।

সৃজনশীল ব্লগ কালাক্ষর হিউম্যান সাইকোলজী নিয়ে নিরীক্ষাধর্মী লেখাগুলো পড়ে ফেলার অনুরোধ রইল  

২০১৮ সালে এক গবেষণায় দেখা যায় ব্রিটেনের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েট করাদের চাকরির হার ছিল ৮৮ শতাংশ এবং তারা বার্ষিক গড়ে বেতন পেতেন ৩৪,০০০ ইউরো। গ্র্যাজুয়েট নন এমন দের মধ্যে এই হার ছিল ৭২ শতাংশ এবং বেতনের গড় ছিল ২৪,০০০ ইউরো। সুতরাং এই পরিসংখ্যান থেকেই স্পষ্ট বোঝাযায়, ধনী হতে গেলে বিশ্ববিদ্যালয় সবচেয়ে প্রয়োজনীয় উপাদান না হলেও এটা সাহায্য করে। সত্য বলতে, যারা প্রতিকূলতাকে জয় করেছে তাদের অভিজ্ঞতার ভিত্তিরে পৃথিবীর প্রকৃতি নির্ণয় করতে গেলে সহজাতভাবেই আপনি সম্পূর্ণ চিত্রটি দেখতে পাবেন না। এরকম ব্যক্তিরা অবশ্যই সম্পূর্ণ ছবিটির প্রতিনিধিত্ব করেন না আর তাই তাদের অনুকরণ করতে সাবধানী হতে হবে। যদি বেশিরভাগ মানুষই এরকম বড় ঝুঁকির জায়গাগুলোতে সফল হতো, তাহলে এগুলোকে বড় ঝুঁকি হিসেবে চিহ্নিতই করা হতো না।

সারভাইভরশিপ বায়াস

মডেল – মৌসুমি হামিদ । ছবি – কালাক্ষর ডেক্স

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সাফল্যের বিপরীতে হাজার হাজার ব্যর্থতার গল্প রয়েছে। কিন্তু এরকম ব্যর্থতার গল্পগুলো মানুষের কাছে আকর্ষণীয় নয়, কেউ ই ব্যার্থ লোক জনের কথা শুনে তাদের কাছ থেকে শিক্ষা নিতে চায় না আর তাই এগুলো গণমাধ্যম গুলো ঠিকঠাক প্রকাশ করে না। ফলে ধারাবাহিক ভাবে আমরা সফল ব্যাক্তিদের সফলতার গল্প গুলো থেকে পাঠ নেই আর এভাবে পর্যায়ক্রমে সাফল্যের গল্প গুলো থেকে পাঠ নেওয়ার ফলে, আমাদের কাছে সফল হওয়ার হার বাস্তবের তুলনায় অনেক বেশি মনে হয়। এভাবে, একটি ভুল ধারণার জন্ম হয়। যা আমাদের ভুল পথে ধাবিত করে। স্টুডেন্টদের কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ড্রপ আউটের গল্প তো আগেই উল্লেখ করেছি। চাইলে এরকম আরো কিছু ব্যতিক্রমী উদাহরণ উদাহরণ দিতে পারি। ব্রোজো ঘোষ নামে আমার নিজ গ্রামেই এক লোক ছিল, পেশায় চৌকিদার লোক টি সকালে ঘুম থেকে উঠে গাজা না খেয়ে সকালের নাস্তা করতো। দিনে তার ৫/৬ পুরিয়া গাজা না হলে চলতো না। আর সেই সাথে চলতো তার ধূমপান, এই ব্রোজো বাসি নামক লোকটি ১১৮ বছর পর্যন্ত বেচেছিলেন। আবার, রেকর্ড কোম্পানি থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়েও চারজন তরুণ মিউজিশিয়ান পরবর্তীতে ইতিহাসের সবচেয়ে সফল ব্যান্ড “দ্যা বিটলস” তৈরি করেছিলেন। কিন্তু আমাদের মেজর সমস্যা হচ্ছে জানেন? প্রত্যাখ্যাত বা নিয়মভাঙা গল্প গুলোতে আমাদের ফোকাস বেশি থাকে, সাথে যদি সেটা সফলতার হয় তবে তো কথাই নেই। কিন্তু এই সফলতার বিপরীতে যে বিশাল সংখ্যক ব্যর্থতার গল্প লুকিয়ে রয়েছে, সেগুলো নিয়ে আমরা আমাদের মাথাতেই আনতে চাই না। আমাদের এই কগনিটিভ শর্টকাটের ফলাফলই হচ্ছে সারভাইভরশিপ বায়াস।

শুধু মাত্র সফল ব্যাক্তিদের উপরেই যদি শুধুমাত্র আমাদের সমস্ত ফোকাস থাকে, তাহলে বেইজ রেটের ব্যাপারে আমাদের মাঝে একটি ভুল ধারণা তৈরি হতে বাধ্য। এখন বলতে পারেন বেইজ রেট টা আবার কি? বেইজ রেট হল কোন একটি নমুনা থেকে নির্দিষ্ট ফলাফল পাওয়ার সম্ভাবনা এবং এটাকে শতকরায় প্রকাশ করা হয়। যেমন: রুলেট (Roulette) খেলায় ৩৮টি গেমের মধ্যে জেতার সম্ভাবনা থাকে একটিতে, যা ২.৬৩%। এই শতাংশটিই বেইজ রেট। সমস্যাটি তখনই তৈরি হয়, যখন আমরা নিজেদেরকে বিজয়ীদেরকে ঐ গেমটির প্রতিনিধি মনে করি। আমাদের ভাবনায় তখন জেতার সম্ভাবনা আরো বেশি প্রকট আকারে দেখা দেয়। কেবল মনে হয় ও পারলে আমি কেন নয়? মাইক্রো সফটের চেয়ারম্যান বিল গেটস, দ্যা বিটলস এরকমই উদাহরণ। তবে এই কথাও ঠিক সফল ব্যাক্তিদের  উদাহরণগুলো থেকে অনেক কিছু শেখার থাকলেও, তাদের মত হতে পারবেন, বা ঐ জাতীয় কিছু হয়ে যাবেন একইরকম প্রত্যাশা করা কেবল চরম ভুল ই নয় চরম মুর্খতার শামিল।

একটি সহজ উদাহরণ দেওয়া যাক। ওয়াল্টার আইজ্যাকসন  ২০১১ সালে স্টিভ জবসের জীবনী নিয়ে যে বই লেখেন, সেই বইটি বেস্ট সেলার হয়। এরপরে, স্টিভ জবস কে অনুসরণ করে কতোজন যে ড্রপআউট হয়ে নিজের গ্যারেজে নতুন কম্পিউটার কোম্পানি শুরু করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। কেউ তাদের কথা তাদের ব্যার্থতা নিয়ে বই লেখেন নি যে, কারনে, তাদের এই ব্যর্থতার গল্পগুলো আমাদের কাছে এসে পৌঁছাবে। আমরা শুধু স্টিভ জবসের সাফল্য সম্পর্কেই জানি এবং সেই সাফল্য ই মহিমান্বিত রূপে বারবার আমাদের চোখে ধরা দেয়।

আচ্ছা কেউ যদি যথেষ্ট চেষ্টা করে তাবে কি যেকোনো কিছু অর্জন করতে পারবে? এর উত্তর হচ্ছে, না। কারণ ও ফলাফলের (cause and effect) উপর সারভাইভরশিপ বায়াস একটি ভুল ধারণা তৈরি করে। অনেকক্ষেত্রেই মানুষ জন নিছক কাকতালীয় ভাবে ঘটা বিভিন্ন ঘটনার মধ্যেও কজ অ্যান্ড ইফেক্টের প্যাটার্ন গুলো টেনে নিয়ে আসে যেখানে আসলে বাস্তবে এমন কোনোই প্যাটার্ন নেই। বিখ্যাত উদ্যোক্তারা বিশ্ববিদ্যালয় ড্রপআউট করে সফলতা পেয়েছেন, এটা শুধুমাত্রই একটি কাকতালিয় ব্যাপার। কলেজ থেকে ড্রপআউট করা তাদের সাফল্যের পেছনে কোনো কারণ নয়। কিন্তু মজার ব্যাপার হল আমরা সবাই এই ড্রপ আউট করাকেই অন্যতম কারণ হিসেবে দেখার চেষ্টা করি। সারভাইভরশিপ বায়াস এভাবে সংগতিকে কার্যকারণ হিসেবে চিন্তা করার একটি ভ্রান্তি তৈরি করে।

দুনিয়াতে খুব কম মানুষই এমন কোন ব্যবসায়ীর গল্প শুনতে চাইবেন, যে ব্যাবসায়ী দেউলিয়া হয়ে তার বাকি জীবন ঋণের মধ্যে কাটাচ্ছেন বা জেলের ঘানী টানছেন। কিংবা এমন কোন মিউজিশিয়ানের গল্প,যে মিউজিশিয়ান বারবার চেষ্টা করা সত্ত্বেও সাফল্য পান নি। সাফল্যের জন্যে আমাদের যে অনুপ্রেরণা প্রয়োজন, সারভাইভরশিপ বায়াস তার যোগান দেয়; এমনকি আমাদের নিজ সামর্থ্যের ব্যাপারে যে আত্মবিশ্বাস প্রয়োজন সেটুকুও। কিন্তু বাস্তব পৃথিবীতে কোন মানুষের সাফল্য কখনো গ্যারান্টিযুক্ত নয়। কারণ বেশিরভাগ ব্যবসাই ব্যর্থ হয়। পৃথিবীর বেশিরভাগ মানুষই ধনী কিংবা বিখ্যাত হতে পারে না। পৃথিবীর বেশিরভাগ ‘লিপ অব ফেইথ’ আশানুরূপ কাজ করে না। তার অর্থ এই না যে, আমাদেরকে চেষ্টা করা বন্ধ করে দিতে হবে। কিন্তু বাস্তব পৃথিবীর ব্যাপারে আমাদের প্রত্যাশা ও ভাবনা বাস্তবসম্মত হতে হবে।

ব্যবসা বানিজ্যের জগতে এই ভ্রান্তিটির বেশ প্রকট আকারের প্রভাব রয়েছে। যেসব কোম্পানি প্রথমদিকেই ব্যর্থ হয়, তাদের সম্পর্কে মানুষের মাঝে খুব কমই আলোচনা হয়। অন্যদিকে, কিছু কোম্পানীর পাওয়া বিরল সাফল্যর গল্প গুলো বছরের পর বছর ধরে প্রশংসিত হতে থাকে। এমন কি যেসব কোম্পানি ব্যর্থ হয়, মার্কেট পারফরম্যান্সের স্টাডিতে বেশিরভাগ সময়েই তাদের ব্যাপারে পর্যাপ্ত তথ্য না রেখে মুছে ফেলা হয়, অথচ ব্যার্থতার গল্প থেকে ব্যর্থতার কারণ অনুসন্ধান করে পর্যাপ্ত শিক্ষা নেওয়া যায়।

সারভাইভরশিপ বায়াস

ফাইল ফটো

ইতিহাস সব সময় বিজয়ীদের হাতে লিখিত হয়,ব্যার্থ দের হাতে নয়, ব্যবসাক্ষেত্রের ব্যাপারেও অনেকটা সেরকম ই বলা চলে। এই খানে যারা ব্যর্থ, তারা তাদের অভিজ্ঞতা প্রকাশ করতে কোন প্ল্যাটফর্ম পায় না। ভাগ্য বা কাকতালিয় কোন বিষয় যে, কারো সাফল্য ও ব্যর্থতার মধ্যে একটি বড় নিয়ামক হতে পারে, সে ব্যাপারটিকে যারা উপেক্ষা করেন, তারা ব্যর্থকে শুধুমাত্র ব্যর্থতা দিয়েই বিবেচনা করে থাকেন। এমনো দেখা যায়, অনেক সফল মানুষ তার সফলতার পেছনে শুধুমাত্র নিজ কর্মের সক্ষমতাকেই বড় করে দেখেন। কিন্তু তার সফল হতে নিজের সক্ষমতা ছাড়াও যে, অনেকগুলো ব্যাপার তার পক্ষে কাজ করেছে, যেগুলোর উপরে তার কোন নিয়ন্ত্রণ ছিল না, সেই ব্যাপারগুলো সেই সফল মানুষ বেমালুম ভুলে যান।

সৃজনশীল ব্লগ কালাক্ষর হিউম্যান সাইকোলজী নিয়ে নিরীক্ষাধর্মী লেখাগুলো পড়ে ফেলার অনুরোধ রইল   

ব্যবসা ও উদ্যোক্তা সংক্রান্ত সাময়িকী গুলোতে নিয়মভাঙা সাফল্য, অর্থাৎ যারা প্রচলিত পদ্ধতির বাইরে গিয়েও সাফল্য পেয়েছে তাদেরকে খুব বেশি মহিমান্বিত করা হয়। কিন্তু বেশিরভাগ উদ্যোক্তার ক্ষেত্রেই, অতিরিক্ত ঝুঁকি নেওয়া ও প্রচলিত পদ্ধতিগুলো পরিহার করা একটি বাজে জুয়ার মতো সিদ্ধান্ত। অনেক বিলিওনিয়ারকে শুধুমাত্র এরকম নিয়ম ভাঙার কারণেই উদযাপন করা হয়। কিন্তু বেশিরভাগ আলোচনাতেই তাদের ব্যবসায় টাইমিংয়ের ভূমিকা, ভাগ্য, গুরুত্বপূর্ণ মানুষদের সাথে সম্পর্ক ও আর্থ-সামাজিক অবস্থাগুলোকে এড়িয়ে যাওয়া হয়। একটি ধনী পরিবারের সদস্যদের অনেক মূল্যবান মানুষের সাথে যোগাযোগ থাকে, যার সাথে টাইমিংকে একত্র করতে পারলে তার সফল হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়, এমনকি যদি সে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিও সম্পন্ন না করে। কিন্তু অন্যরকম একটি পরিবার থেকে উঠে আসার জন্যে তা অনেকবেশি কষ্টসাধ্য। 

সাধারণত অনেক স্টার্টআপ সংক্রান্ত আলোচনাই “৯০ শতাংশ স্টার্টআপ ব্যর্থ হয়” বাক্যটি দিয়ে শুরু করে। কিন্তু এই কথা টি খুব খুব কম মানুষ ই গুরুত্ব নিয়ে শোনে অথবা কথাটি নিয়ে ভাবার করার চেষ্টা করে যে বক্তা কথাটি বলে আসলে কি বোঝাতে চাচ্ছে। বরং সবার মনোযোগ থাকে এরকম একটি ধারণায়, যেখানে সাফল্যের পেছনে হয়ত গোপন কোন ফর্মুলা আছে এবং এর ফলে বিশ্বখ্যাত উদ্যোক্তাদের দিকে আমরা ফোকাস করি। সফল ব্যাক্তিদের জ্ঞান ও সফল হবার ফর্মুলা প্রয়োগ করতে পারলে আমাদের হাতেও সাফল্য ধরা দিতে বেশি সময় লাগবে না, এরকম একটা মানসিকতা সবার ভিতর তৈরি হয়। সত্যি বলতে, শুধুমাত্র সফল উদ্যোক্তাদের ফর্মুলা আমাদেরকে খুব বেশি কিছু শেখাতে পারে না। ব্যর্থদের গল্পগুলো আমাদেরকে ভুলগুলো চিহ্নিত করা শেখাতে পারে। এভাবে, ব্যর্থ হওয়ার কারণগুলো বিশ্লেষণ করে সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়। তাই সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে, সফল এবং ব্যর্থ উভয়ের থেকে শেখা।

বেশিরভাগ সময়েই আমরা এমন উদ্যোক্তাদের গল্প উপভোগ করি, যারা অনেক প্রতিকূলতা জয় করে সফল হয়েছে। কিন্তু এর আগে আরো অনেক উদ্যোক্তা যে একইপথে হেঁটেও ব্যর্থ হয়েছে, সে ব্যাপারে আমরা একরকম চিন্তাগত অন্ধত্ব বজায় রাখি। পেছনের দিকে প্রতিকূল দিনগুলোর দিকে তাকালে সফল উদ্যোক্তাদের মনে হয় যে, তাদের সবসময়েই একটি চমৎকার পরিকল্পনা ছিল। তারা তখনই জানতো যে, এই পরিকল্পনা একসময় ঠিকই কাজ করা শুরু করবে। এই সম্পর্কে বিখ্যাত মনোবিজ্ঞানী ড্যানিয়েল কাহনেম্যান বলেছেন,

A stupid decision that works out well becomes a brilliant decision in hindsight.

বাইরের কোনো পর্যবেক্ষক তার গল্প শোনার পরেও সেখান থেকে হয়তো সাফল্যের প্যাটার্ন খুঁজে বের করতে চাইবে। কিন্তু কাহনেম্যান যেমনটি বলেছেন, এই প্যাটার্নের মধ্যে একমাত্র সাদৃশ্য হচ্ছে ভাগ্য। কারণ একইপথে হাঁটা ব্যর্থ উদ্যোক্তারা, ভাগ্য যাদের পক্ষে কাজ করেনি, তাদের কাছে সবসময়েই একই পরিকল্পনাকে ভুল মনে হবে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কালে গণিতবিদ ওয়াল্ডের গল্পটি সারভাইভরশিপ বায়াস কাটিয়ে উঠার একটি ভালো উদাহরণ। এই উদাহরণ থেকে শিক্ষণীয় অংশটি হচ্ছে, আমাদের সামনে যেসব তথ্য রয়েছে শুধুমাত্র তার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে তা ভুলপথে ধাবিত করতে পারে। একই পথে শুরু করা সবগুলো ঘটনার কথা মাথায় রাখতে হবে, যেগুলো ব্যর্থ হয়েছে সেগুলোও। পত্রিকায় কোনো সফল গল্প পড়ার সময়ে একই প্যাটার্নের ব্যর্থ মানুষগুলোর ব্যাপারে সমানভাবে চিন্তা করতে হবে। অবশ্য, সারভাইভরশিপ বায়াস নতুন উদ্যোগ নেওয়ার বিপক্ষে কোনো অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করলে ভুল হবে। বরং এটা একটা টুল, যা পরিসংখ্যানগত ভ্রান্তিগুলো কেটে পৃথিবীর সত্যিকারের অবস্থা বুঝতে সাহায্য করে। ফলে, যে কোনো ক্ষেত্রেই আপনার ভাবনায় সম্পূর্ণ চিত্রটি থাকবে যা সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে।

 

It’s a bangle  article describe the surviovorship bios. All the necessary references are hyperlinked within the article.

References:
1. How ‘survivorship bias’ can cause you to make mistakes
2. How the Survivor Bias Distorts Reality
3. Why do we misjudge groups by only looking at specific group members?

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

More News Of This Category
©2021 All rights reserved © kalakkhor.com
Customized By BlogTheme
error: Content is protected !!

Discover more from কালাক্ষর

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading