রিভার্স সাইকোলজি (Reverse Psychology): বাংলায় একটা কথা আছে অতি চালাক আর ধুর্ত জাতীয় লোক জন পাতলা পায়খানা কুতে হাগে। মানে হল কিছু মানুষ আছে যা নরমাল তাদের কাছে সেইটা এবনমাল। এদের ভাল ভাবে কথা বলবেন এরা শুনবে না। সর্বদা নিয়ম ভাঙ্গা আর নিশিদ্ধ কোন কিছুর প্রতি এদের দুর্বার আকর্ষন। কর্পোরেট দুনিয়া সব সময় ভোক্তা তৈরি করতে চায়। পজেটিভ মানুষ কে পজেটিভ আর নেগেটিভ মানুষ কে নেগেটিভ কথা বলে তাদের মনোযোগ আকর্ষন করে তাদের প্রশার বাড়াতে চায়। আর এই কর্পোরেট দুনিয়া যখন দেখলো কিছু মানুষ আছে যারা সহজ ভাবে প্রচারিত বিজ্ঞাপনী কথা শুনে তাদের প্রডাক্ট এর প্রতি আগ্রহ দেখাবে না- তখন তারা সেই টাইপের মানুষদের ভাষায় ই তাদের মনোযোগ আকর্ষন করতে উঠে পড়ে লেগে যায়। আর এর জন্য তারা যে সাইকোলজি এর ট্রাম ব্যাবহার করে তার নাম ই রিভার্স সাইকোলজি “Reverse Psychology”।
লেখাটিতে আরো যা জানতে পারবেন
উদাহরন সরুপ দেখবেন কোন কোন সিনেমার প্রচারনায় লেখা থাকে 18 plus ফিল্ম। তার মানে এই সিনেমা বানানো হয়েছে আঠারো বছরের বেশি বয়সি মানুষ দের জন্য। কিন্ত এই সিনেমার ভিউয়ার যদি খুজতে জান দেখবেন আঠারো বছরের কম ছেলে মেয়েই এই ছবি দেখেছে। তার মানে কি দাড়ালো? এই “আঠারো প্লাস” ট্যাগ লাইন টি দেওয়াই হয়েছে আঠারো প্লাস এর কম মানুষের মনযোগ আকর্ষন করার জন্য। এইটা ফিল্ম প্লাস ফিল্মের ফিল্মের ডিস্টিবিউটর রা জেনে বুঝেই করেছে। আর এইটাই হল রিভার্স সাইকোলজি “Reverse Psychology” মজিজা।
আমরা হরহামেশা বিভিন্ন জায়গায় সাইনবোর্ড দেখি, এই যেমন ধরুনঃ-
– তবুও দেখবেন ঐ স্থানেই কিছু মানুষ গাড়ি পার্কিং করে রেখে দিয়েছে । কিংবা সেখানেই প্রস্রাব করতেছে যেখানে প্রস্রাব করতে নিষেধ করা হয়েছে।
সৃজনশীল ব্লগ কালাক্ষর এ হিউম্যান সাইকোলজী নিয়ে নিরীক্ষাধর্মী লেখাগুলো পড়ে ফেলার অনুরোধ রইল
এরকম যতই লেখা থাকুক না কেন আমাদের কৌতূহল মন চায় যেন, সেই কাজটাই বেশি করি যেটাতে নিষেধ আছে। আমাদের এরকম মনোবৃত্তির নামই “Reverse Psychology”.।
“Reverse psychology is a technique involving the assertion of a believe or behavior that is opposite to the one desired, with the expectation that is approach will encourage the subject of the persuasion to do what actually is desired.”
মডেল – প্রভা। ছবি – কালাক্ষর ডেক্স
রিভার্স সাইকোলজি হলো মানুষের মন কে আকৃষ্ট করার সাময়িক অবস্থা বা কৌশল যখন কাউকে এমন কিছু না করতে বলা, যা আপনি চান সে অবশ্যই করুক, অর্থাৎ আপনি চাচ্ছেন একটি কিন্তু ভং করছেন তার উল্টো টা।
ছোট বাচ্চাদের ক্ষেত্রে দেখবেন আপনি যে কাজটি করতে নিষেধ করবেন, বাচ্চারা সেই কাজটিই বেশি করে করতে চাইবে। তার ঐ কাজটির প্রতি বেশি আকর্ষণ কাজ করে। রিভার্স সাইকোলজি শুরুটা মানব সৃষ্টির শুরু থেকেই।
রিভার্স সাইকোলজি অনেক সময় অনেকে ব্যবহার করে থাকে আর তখন আমরা তাদেরকে বলে থাকি তারা ডাবল ক্রস করছে।
বাচ্চাদের উপর “রিভার্স সাইকোলজি“ বেশি কাজ করে। সুতরাং বাচ্চাদের সাথে বুঝে শুনে আচরন করা উচিত বা শিখানো উচিত। তাছাড়া রিভার্স সাইকোলজি বেশি কাজ করে, খুব অল্পতেই রেগে যাওয়া, egoistic, emotional, stubborn, self-centric, confused for taking decision-এভোগা মানুষদের উপর। এবং দৈনন্দিন জীবনে তারা রিভার্স সাইকোলজির ফাঁদে পড়ে বিপদগ্রস্থ হয় প্রায়ই। অন্যদিকে মেন্টালি স্টেবল মানুষদের এ নিয়ে খুব বেশি ভুগতে হয় না রিয়েল লাইফে। তারা হুট করে ডিসিশন নিয়ে নেয় না।
According to Reactance Theory, মানুষ যখন চিন্তা করে তার কোন অধিকার ছিনিয়ে নেওয়া হচ্ছে তখন সে চেষ্টা করে সেটার প্রতিরোধ করতে। এ কারনেই তখন ব্যক্তিকে যা করতে বলা হয় তখন সেই মানুষ নিষেধ করা কাজ টি ই সবার আগে করার ট্রাই করে।
মানুষের স্বভাবতই প্রকৃতি হচ্ছে স্বাধীনভাবে যে কোন কাজ করা যখনই তার এ স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা হয় তখনই তার Subconscious mind (অবচেতন মনে) এর বিরুদ্ধে যাওয়ার চেষ্টা করে আর এটাই স্বাভাবিক।
রিভার্স সাইকোলজির (Reverse Psychology) ব্যবহার অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় । ছোটবেলায় আপনার শিক্ষা জীবনে অনেক শিক্ষক তার ছাত্র/ছাত্রীকে বলতে শুনেছেন- “তোমাকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না। এইটা তোমার কাজ নয়। তুমি পারবে না। তোমার দ্বারা কাজটি সম্ভব না।” যদি ধরে নেওয়া যায় যে, যাকে উদ্দেশ্য করে কথা টি বলা সে সত্যিই কাজটি পারত না, তার পরেও সে জীদের বসেই হউক আর তার যোগ্যতা যাচাইয়ের বসেই হউক কিংবা তার উদ্দেশ্য বলা ব্যাক্তিটির ধারনা ভুল প্রমান করতেই হউক সেই ছেলে/মেয়েটি কিন্তু ঠিকই আর একবার ট্রাই করবে আর নিজের বেস্ট চেষ্টাটাই ঢেলে দেবে যাতে কাজটি করতে পারে। বিভিন্ন কোম্পানির মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে রিভার্স সাইকোলজি ব্যবহার করা হয়।
“বিনা অনুমতিতে প্রবেশ নিষেধ”! এরকম লেখা দেখলেই কিন্তু আমাদের ইচ্ছে করে? আমার ধারণা বেশির ভাগ মানুষের মনেই আসে যে, ঢুকেই দেখা হউক, কী আছে এর ভিতরে?
“বাস থামানো নিষেধ”! সাইন বোর্ড দেখবেন ঠিক সেখানেই বাস এসে দাঁড়াবে, অথচ একটু সামনেই হয়ত বাস স্ট্যান্ড।
”ফুল ছেড়া নিষেধ”! যেখানে লেখা দেখা যায় যে , ওখান থেকেই মানুষ ফুল ছিড়বে ।”
সিগারেটের প্যাকেট এর গায়ে লেখা থাকে, “ধূমপান মৃত্যুর কারণ“। তার পরও কি সিগারেট খাওয়া কমেছে? মানুষ আসলে নিষেধ শুনতে চায় না। নিষেধ ভাঙাই মানুষের কাছে বেশী প্রিয়।
মানুষের সাইকোলজিই (Reverse Psychology) এমনই। আমাদেরকে যেই কাজটা করতে নিষেধ করা হয়,সেই কাজের প্রতি আমাদের কিউরেসী এতটাই বেড়ে যায় যে, সেই কাজ টি আমাদের করা লাগবেই। মানুষের মনে এইরকম অদ্ভুত মনোবৃত্তির বাসনার কথা জেনেই রিভার্স সাইকোলজি এর প্রয়োগ করা হয় ।
সাইকোলজি নিয়ে আমার লেখা পুরাতন পোস্ট গুলো পড়ে আসতে পারেন
১৯৮২ সালে উইলসন আর ল্যাসিস্টার একটা পরীক্ষা করেন। তারা একদল বাচ্চাকে অনেকগুলো খেলনা দেন , এবং তারা বসে বসে তাদের লক্ষ্য করতে লাগলেন। দেখা গেল, যে সব গুলো খেলনার মধ্যে কিছু খেলনা যে গুলো শিশুদের বেশী পছন্দ হয়েছে , সেগুলা নিয়েই তারা বেশি খেলা করছে । আবার এর ভিতর কিছু খেলনা আছে যা বাচ্চাদের পছন্দ হয় নি। সেগুলো স্বভাবতই পড়ে আছে। এখন তার মধ্য থেকে উইলসন আর ল্যাসিস্টার নামক একটি খেলনা খুঁজে বের করলেন, যেটা বাচ্চারা কেউ নেয় নি হাত ই দেয় নি ।
তারপর বাচ্চাদের দুইটা গ্রুপে তারা ভাগ করলেন। প্রথম গ্রুপকে আগের মতই যেকোন খেলনা নিয়ে খেলার অনুমতি দিলেন। দিতীয় গ্রুপকে বলে দিলেন, “তোমরা সব খেলনা নিয়েই খেলতে পার, তবে এই উইলসন আর ল্যাসিস্টার নামক খেলনাটা বাদে।” একটু পর দেখা গেল ২য় গ্রুপের বাচ্চারা সেই খেলনা নিয়েই উঠে পড়ে লেগেছে। তারা আগের চেয়ে ৩ গুণ বেশী সময় নিয়ে সেই খেলনা দিয়ে খেলছে। যেটা তাদের নিষেধ করা হয়েছে তারা সেটাই করছে।
হিউম্যান ব্রেইন চায় স্বাধীনতা। আর এই স্বাধীনতায় যখন হস্তক্ষেপ আসে তখন হিউম্যান ব্রেইন তার প্রতিক্রিয়া হিসেবে বিদ্রোহ করে বসে। উপরের কাজগুলোতে যে গুলো বনর্না করেছি সেগুলো খেয়াল করে দেখেন,সবগুলোতেই কিন্তু নিষেধাজ্ঞা আছে। আর এই নিষেধাজ্ঞাই মানুষের স্বাধীনভাবে কাজকর্ম করার পথে বাধা সৃষ্টি করে। তাই নিষেধাজ্ঞার বিপরীতে মানুষ প্রতিক্রিয়া দেখাতে চায়। যেটা করতে মানা করা হয় বা হচ্ছে তার প্রতি উল্টো আগ্রহী হয়ে উঠে। এটাকে মানুষের ব্রেইন বিদ্রোহী আচরণ (rebellious behavior) করছে বলে ধরে নেওয়া হয় ।
মডেল – বহ্নি হাসান – ছবি – কালাক্ষর ডেক্স
আর এই পুরো প্রক্রিয়াটি নির্ভর করে কিভাবে আমরা রিয়েক্ট করছি সেই বিষয়ের উপর। একে বলে “রিয়্যাকটেন্স থিওরি“, এ থিওরি অনুযায়ী, আমাদের সমাজে বাস করা যেসব মানুষ মনে করে যে তাদের স্বাধীনতা হুমকির মুখে বা তাদের নিজস্ব কন্ট্রোল আর নিজের উপর থাকছে না, তখন তারা এর প্রতিক্রিয়াস্বরূপ তাদের কন্ট্রোল, স্বাধীনতা ফেরত পাওয়ার জন্য বিদ্রোহী হয়ে ওঠে।আর তারা তখন সেই কাজটাই করে যেটা তাদের করতে মানা করা হয়েছে। এর কারনেই নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি মানুষ বেশি আকৃষ্ট হয়। এভাবেই রিভার্স সাইকোলজি (Reverse Psychology) আমাদের ব্যক্তিগত কাজে প্রভাব ফেলে।
রিভার্স সাইকোলজির(Reverse Psychology) সুবিধা এটাই যে আপনি আপনার কাঙ্ক্ষিত কাজটি খুব সহজেই করিয়ে নিতে পারবেন কোন ব্যক্তির কাছ থেকে যদিও সে পূর্বে এটি করতে চাইত না।
অনেকেই হয়ত ভেবে থাকে রিভার্স সাইকোলজিতে (Reverse Psychology) এত সুবিধা বা আমিতো অনেক আগে থেকেই ব্যবহার করে আসছি রিভার্স সাইকোলজি। গবেষনায় দেখা গিয়েছে, “রিভার্স সাইকোলজি” ব্যবহারে অনেক অসুবিধাও আছে। যদি ব্যক্তি বুঝতে পারে আপনার আসল উদ্দেশ্য কি তাহলে ব্যক্তি আপনাকে আর বিশ্বাস করবে না আপনাকে খারাপ ভাবে দেখবে। আপনি হয়ত মানুষটি থেকে দূরে সরে যেতে পারে।
It’s a bangle article describe the Reverse Psychology. All the necessary references are hyperlinked within the article.
Leave a Reply