প্রেমে পড়া মানুষের স্বাভাবিক স্বভাব গুলোর একটি। আর তাই মানুষের কৈশোর কাটে গার্লস স্কুলের গেটের সামনে। কলেজ লাইফ কাটে মেয়েদের রেস্ট রুম/ কমন রুমের সামনে আর বিশ্ব বিদ্যালয় কাটে মেয়েদের হোস্টেলের সামনে। আর এই জায়গা গুলো মানুষের অতি আকর্শনীয় স্পট গুলোর একটি হয়ে যায়। নানান ফন্দি ফিকির করে মানুষ বিপরীত লিঙ্গ ধারীদের নিজের প্রতি এট্রেকশান বাড়াতে চায়। এতক্ষন ছেলেদের কথা কথা বললাম কিন্তু মেয়েরা? মেয়েরা ও চায় ছেলেরা তার প্রতি আকর্ষিত হউক। সুন্দর পোষাক নানান কসমেটিক্স কিংবা চলন বলনের স্টাইল সব টাই ছেলেদের এটেনশান বাড়াতেই মেয়েরা করে থাকে। একশ মেয়ে যদি কোন একটি মেয়েকে সুন্দর বলে তাতে মেয়েটি যতটা খুশি হয় তার চেয়ে একটা ছেলে যদি তাকে সুন্দরী বলে সেই খুশি ই ঐ একশ মেয়ের সুন্দরী বলার চেয়ে বেশি বলে মনে হয়। আর কেন এমন হয় তার কারণ খুজতে ফিলোসফারের কাছে যেতে হয়না মাথায় একটু ঘিলু থাকলেই যে কোন মানুষের তা বোঝার কথা। কথায় আছে মেয়েদের যদি ছেলেদের নিজের প্রতি এট্রাকশান বাড়াবার কৌশল কমে যেত বা ছেলেদের যদি মেয়েদের প্রতি তাদের আকর্শন কমে যেত তবে কোন কোন দেশের বিষেশ করে যে সব দেশের কম্পানী গুলো কসমেটেক্স বাজার জাত করে সেই দেশ ফতুর হয়ে যেত। আর এর কারণ সবার ই জানা। যাই হোক প্রেমে পড়া, বা প্রেম করা মানুষের স্বহজাত স্বভাব। কিন্ত আমাদের মাঝে কিছু সংখ্যাক মানুষ আছে এই তারা প্রেম পড়া কে খুব ভয়ের চোখে দেখে, আর সেই জন্য তারা রীতিমত ভয়ে কুকড়ে থাকে। আর একে মনবিজ্ঞানীরা একটা মানষিক রোগ হিসাবে বর্নণা করে নাম নাম দিয়েছেন ফিলোফবিয়া (Philophobia)।
ফিলোফোবিয়া (Philophobia) শব্দটির উৎপত্তি গ্রিক শব্দ Philos“ফিলোস” ও “ফোবোস” Phobos থেকে। “ফিলোস/ফিলিয়া” অর্থ আসক্তি বা, ভালোবাসা; আর “ফোবোস” অর্থ ভয় বা, আতঙ্ক। সহজ ভাষায় ফিলোফোবিয়া (Philophobia) মানে প্রেমে পড়ার ভয়! মনোবিজ্ঞানীরা ফিলোফোবিয়া (Philophobia) কে সংজ্ঞায়িত করেছেন এভাবেঃ “the irrational and unwarranted fear of falling in love.”
ফিলোফোবিয়া (Philophobia) আক্রান্ত মানুষ কে ফিলোফোবিক নামে আখ্যায়িত করা হয়। ফিলোফোবিয়া (Philophobia) তে আক্রান্ত ফিলোফবিক ব্যক্তি যখন বুঝতে পারে সে প্রেমে পড়ে যাচ্ছে, তখন সে রীতিমত আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। সেই সাথে সে নিজের জেগে ওঠা প্রেমের অনুভূতিকে দমন করার আপ্রাণ চেষ্টা করে। ফলে ফিলোফোবিয়া (Philophobia) তে আক্রান্ত ফিলোফবিক ব্যক্তিটি যার প্রতি সে আকৃষ্ট হয়, তাকে এড়িয়ে চলতে শুরু করে। এছাড়াও সে রোমান্টিক নাটক, সিনেমা, গান ইত্যাদি পুরোপুরি বর্জন করে। এ সময় সে প্রেম ও বিবাহসম্পর্কিত যেকোনো আলাপচারিতা এড়িয়ে যায়। বিয়ের অনুষ্ঠান কিংবা কাপলদের দেখা পাওয়া যায় এমন জায়গা যেমনঃ পার্ক, রেস্তোরাঁ, সিনেমা হল ইত্যাদি এড়িয়ে চলে। এভাবে এক সময় ফিলোফোবিয়া (Philophobia) তে আক্রান্ত ফিলোফবিক ব্যক্তিটি নিজের অজান্তেই চারপাশের জগত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
মজার ব্যাপার হল ফিলোফোবিয়া (Philophobia) তে আক্রান্ত ফিলোফোবিক ব্যক্তিটি নিজেও জানে যে, তার এ ভয়টি সম্পূর্ণ ভ্রান্ত ও অমূলক। কিন্তু অতীতের কোন ব্যার্থ প্রেমের অভিজ্ঞতা যা সে নিজে পেয়েছিল বা কাউকে পেতে দেখেছিল সেই ট্রমার কারণে ভয়ের বৃত্ত থেকে নিজেকে সহজে বের হতে পারে না। ফলে ক্রমাগত মানসিক দ্বন্দ্বের শিকার হয়ে চরম অস্থিরতায় দিন কাটায়।
মডেল – তাঞ্জিন তিশা। ছবি – কালাক্ষর ডেক্স
ফিলোফোবিয়া (Philophobia) তে মানুষের উদাহরণ হয়ত আপনার আসে পাশেই আছে তার পরেও একটা উদাহরণ দেই, ইংল্যান্ডের রাণী প্রথম এলিজাবেথ (Elizabeth I)-এর নাম প্রায় সবাই জানি, তার সময়ে ইংরেজ সম্রাজ্যে সুর্য অস্ত যেত না। এত বড় সম্রাজ্যের মালিক বা অধিপতি হলেও তিনি বিয়ে করেন নি বলে মানুষ তাকে “ভার্জিন কুইন“ নামে ডাকে। তার চিরকুমারী থাকার কারণ তিনি প্রেমে পড়তে কিংবা বিয়ে করতে ভয় পেতেন। যদিও ঐ সময়ের সম্ভ্রান্ত অনেক ডিউক ও ব্যারন তাকে বিয়ে করতে এক পায়ে খাড়া ছিলেন। কিন্তু তিনি সবাই কে নিরাশ করে আজীবন চির কুমারী থেকে যান। যদিও ব্যারন থমাস সিম্যুরের সাথে তাঁর কিছু দিন ঘনিষ্টতা ছিলো বলে যায়। কিন্তু তা কিছুদিনের ভিতর ভেঙ্গে যায়। এর পর কখনো প্রেমেও পড়েন নি শুধু তাই নয় শত চেষ্টা করেও তাকে বিয়ের পিঁড়িতে বসানো যায়নি। একবার বিয়ে নিয়ে কুইন এলিজাবেথকে প্রশ্ন করলে তিনি বলেছিলেন “I would rather be a beggar and single than a queen and married.”
চির কুমারী মহারানীর সম্পর্কে ঐতিহাসিকদের ধারণা, তাঁর চিরকুমারী থাকার মূল কারণ ছিলো ভয়। হ্যাঁ, ভয় ! রানী এলিজাবেথ পরকীয়ার অভিযোগে শৈশবে নিজের মায়ের মৃত্যুদন্ড কার্যকর হতে দেখেছিলেন। যদিও তা প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। কিন্তু সেই মৃত্যুদন্ডের রায় দিয়েছিলেন স্বয়ং এলিজাবেথের পিতা রাজা অষ্টম হেনরি! ধারণা করা হয় মহারানী এলিজাবেথ এর শৈশবে পাওয়া সেই দুঃসহ স্মৃতি থেকেই তাঁর মনে প্রেম-ভালোবাসার প্রতি একটি গভীর ভীতি তৈরি হয়েছিলো। আর এই অযাচিত ভয়ের কারণেই তিনি আজীবন নিঃসঙ্গ জীবন যাপন করেছেন। আর আধুনিক কালের মনোবিজ্ঞানীরা মানুষের প্রেমে পড়া/বিয়ে করতে ভয় পাবার রোগের নাম দিয়েছেন ফিলোফোবিয়া (Philophobia)।
ফিলোফোবিয়া (Philophobia) নামক প্রেমে ভয় পাবার সংকটময় অবস্থা থেকে উদ্ধারের জন্য মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা বেশ কিছু কার্যকরী উপায় বের করেছেন। যেমনঃ কগনিটিভ বিহেভিয়ারাল থেরাপি, হিপনোথেরাপি, এক্সপোজার থেরাপি বা সিস্টেমিক ডিসেন্সিটাইজেশন,এন্টিডিপ্রেসেন্ট ড্রাগ ইত্যাদি। এগুলোর যেকোনো এক কিংবা একাধিক পদ্ধতি অনুসরণ করে ফিলোফোবিয়া (Philophobia) নামক প্রেম অথবা বিয়ে করার অস্বস্তিকর ভীতি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
It’s a bangle article describe the Philophobia. All the necessary references are hyperlinked within the article.
Leave a Reply