1. sjranabd1@gmail.com : Rana : S Jewel
  2. solaimanjewel@hotmail.com : kalakkhor : kal akkhor
ঘরে ভালবেসে বিয়ে করা বউ – তবু কেন মানুষ পরকিয়াতে জড়ায়? - কালাক্ষর
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:২১ পূর্বাহ্ন

ঘরে ভালবেসে বিয়ে করা বউ – তবু কেন মানুষ পরকিয়াতে জড়ায়?

  • Update Time : সোমবার, ২০ জুন, ২০২২
আদর
আদর

পরকিয়ার কারনে পত্রিকার পাতা জুড়ে ইদানিং কেবল একের পর এক বিচ্ছেদের কথাই দেখা যায়। মিডিয়ার কার বিয়ে হল এর চাইতে বেশি ছাপা হয় বিচ্ছেদের ক্যারিকাচাল। শুধু কি মিডিয়া পাড়া? আমাদের চেনা পরিচিত মহলেও তাকালে, দেখা যাবে সেখানেও  সম্পর্কের প্রতি খুব তাড়াতাড়ি আস্থা হারাচ্ছেন যুগলরা। রোজ কারো না কারো সম্পর্ক ভেঙে যাচ্ছে। সাজানো গোছানো জীবন তচনচ হয়ে যাচ্ছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই বিচ্ছেদের অন্যতম কারণ, একজন সঙ্গী অন্যজন সঙ্গীকে প্রতারণা (Cheating on Partner) করছেন বা ঠকাচ্ছেন। বিবাহিত সম্পর্কের ক্ষেত্রেও তার অন্যথা হচ্ছে না। বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ছেন স্বামী বা স্ত্রী। এখন অনেক মহিলাই এই প্রশ্ন করেন যে, দীর্ঘ বছরের সম্পর্কের পরেও কেন তাঁদের স্বামীরা তাঁদের ঠকাচ্ছেন বা ঘরে সুন্দরী স্ত্রী থাকার পরেও স্বামী অন্য মহিলার সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছে। ঠিক কী কারণে এমন হয়ে থাকে?

আমরা আজ এই লেখার শুতেই জেনে নেব আমার পরিচিত দু’জন মহিলার অভিজ্ঞতার কথা, যাঁদের স্বামীরা তাঁদের ঠকিয়েছেন। কেন একটা সুন্দর সম্পর্কে থাকার পরেও মানুষের মধ্য়ে প্রতারণা করার মনোভাব আসে, তা নিয়ে তা নিজে আজ আমার অভিজ্ঞতা শেয়ার করব। নারী নাকি পুরুষদের প্রতারণা করার প্রবণতা বেশি? এই নিয়ে নানান সমীক্ষার রিপোর্টে কি তথ্য দেখা যায়,তা নিয়েও বিষদ আলোচনা করব। আলোচনার আগে চলুন প্রথমে আমার পরিচিত দু’জন মহিলার অভিজ্ঞতা জেনে আসি ।
অভিজ্ঞতা ১:

“আপনার সঙ্গী আপনাকে ঠকানোর পরে তাঁকে খুব সহজেই ছেড়ে চলে যাওয়া সম্ভব হয় না। আমার স্বামীর সঙ্গে কলেজে আলাপ হয়। প্রায় ২০ বছরের বেশি সময় আমরা একসঙ্গে আছি। সেই সঙ্গী আপনাকে ঠকাচ্ছে এই কথা ভাবতেও কষ্ট হয়। সে আমায় জানিয়েছে, সে আর আমায় ঠকাচ্ছে না। কিন্তু আমি ওকে আর বিশ্বাস করি না। আমি সম্পর্ক ছেড়ে বেরোতে চাই, কিন্তু ভয় পাই যে আমি একা হয়ে যাব।”

তানিয়া (ছদ্দ নাম),

বয়স ৪২ বছর

অভিজ্ঞতা ২:

“আমার প্রচণ্ড খারাপ লেগেছিল। আমি ওর সঙ্গে কথা বলাও বন্ধ করে দিয়েছিলাম। শুধুমাত্র মেসেজে কথা বলতাম। কারণ সেই মানুষটার সঙ্গে কথা বলতে আমার বাধত যে আমায় ঠকিয়েছে। তারপর আমরা দুজনেই কাপল থেরাপি নেওয়ার কথা ভাবি। ধীরে ধীরে আমি তাঁকে ক্ষমা করে দিই। এখন আমরা আগের থেকে ভালো আছি। ”

কলি (ছদ্দ নাম),

৪০ বছর

মানুষ কেন বহুগামী?

মনোরোগ বিদ্যায় মানুষের বহুগামিতার কারণ প্রসঙ্গে কয়েকটি বিষয়ে আলোকপাত করা যায়। বহুগামিতার এই প্রবণতা স্বামী ও স্ত্রী দুজনের মধ্য়েই রয়েছে। এই কারণে স্বামী ও স্ত্রী সঙ্গীকে জীবনের কোনও এক সময়ে গিয়ে ঠকাতে পারেন।

এই ক্ষেত্রে আমার ব্যাক্তিগত মত হল-  আসলে মানুষ স্বভাবে বহুগামী(Polygamous)। আদিমযুগে পশুর মতোই আচরণ করত। কিন্তু ধীরে ধীরে তাঁর স্বভাবে পরিবর্তন হয়। মানুষের মস্তিষ্ক উন্নত হয়। সে জন্যই আজ আমরা এতটা উন্নত। আমাদের মস্তিষ্কের সামনের অংশে রয়েছে প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স। যা আমাদের নীতিবোধকে নিয়ন্ত্রণ করে। কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়ে বিচক্ষণ হতে সাহায্য করে। তাই এখন মানুষ সম্পর্কের মূল্যবোধ দিতে শিখেছেন।

একজন সঙ্গীর প্রতি লয়্যাল থাকতে শিখেছেন। কিন্তু স্বভাবগত দিক থেকে তো তার কোনও পরিবর্তন হয়নি। একজন মানুষ সারাজীবন এক সঙ্গীর সঙ্গে থাকতে পারেন। কিন্তু বিচক্ষণতার অভাবে যখন তাঁর প্রাকৃতিক চরিত্র তাঁকে ডমিনেট করে, সেই সময়েই অন্য মানুষের প্রতি দুর্বল হয়ে যাওয়ার প্রবণতা থেকে যায়। মানুষ সঙ্গীকে ঠকায়। তাই আমি সঙ্গীকে প্রতারণা করব নাকি সম্পর্কে লয়্যাল থাকব, এটি আমাদের নিয়ন্ত্রণেই থাকে।

তাৎক্ষণিক পরিতৃপ্তি

এই বিষয়টি খুবই খারাপ। ইদানীং এই বিষয়টি বাড়ছে বলে মনে করছেন চিকিৎসক দেবাঞ্জনবাবু। কারণ এখন মানুষ খুব চটজলদি পরিতৃপ্তি পেতে চান। অর্থাৎ, যে সম্পর্কে আমার আরও এফোর্ট দেওয়ার প্রয়োজন, তাতে এফর্ট না দিয়ে অন্য কারও কাছ থেকে পরিতৃপ্তি খুঁজে নেওয়ার চেষ্টা করে চলেছি আমরা।

তা শারীরিক বা মানসিক দুই হতে পারে। ঠিক একই কারণে রান্না করে খাওয়ার পরিবর্তে ইনস্ট্যান্ট ফুড পছন্দ করি। শ্রম না দিয়েই পরিতৃপ্তি পাওয়ার বেশি। কারণ, আমরা কষ্ট করতে চাইছি না। এখানেই লুকিয়ে ভয়ঙ্কর সর্বনাশের বীজ।

গরমে চরম মেজাজ

গরমের উদাসীনতার প্রভাব আছে

সম্পর্ককে যথেষ্ট সময় না দেওয়া

দাম্পত্য খুব সহজেই পালন করা সম্ভব নয়। প্রথমে দুজন মানুষ দুজনের প্রতি আকর্ষিত হয়। সেই সময় আমাদের অনুভূতিগুলো অ্যাড্রিনালিন হরমোন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। কিন্তু এই স্টেজ খুব বেশিদিন থাকে না। তাই এই দাম্পত্য মজবুত করার জন্য আমাদের এফর্ট দেওয়া প্রয়োজন। কিন্তু আমাদের জগৎ এখন খুব বেশি আমিত্বে ভরপুর। তাই বিবাহিত সম্পর্কের ভিতর স্বামী-স্ত্রী একে অপরের থেকে যা দাবি করেন, তা পরিপূরণ হয় না।

আমরা তার দিকে মন দেওয়ার কথা ভাবিও না। সেই সময়ে মনের মধ্য়ে অন্য ভাবনা আসতে শুরু করে। যে সম্পর্ক তৈরি হয়ে আছে তাকে মজবুত করার চেয়ে আমরা তাৎক্ষণিক পরিতৃপ্তি পাওয়ার চেষ্টা করি। মূল্যবোধের শিক্ষা ছোট থেকে না থাকলে এই ভুল বেশি হওয়ার প্রবণতা থাকে।

আমাদের কাছে অপশন বেশি

মানুষের জীবন চক্রে বৈবাহিক বা রোম্যান্টিক সম্পর্ক তিনটি ধাপের মধ্য়ে দিয়ে যায়। প্রথমদিকে একে অপেরর প্রতি দুই সঙ্গীর একটি আকর্ষণ কাজ করে। শারীরিক ও মানসিক পরিতৃপ্তি পান বিপরীতের মানুষের থেকে। এই ধাপে অ্যাড্রিনালিন হরমোন কার্যকরী হয় বেশি। এরপর ধীরে ধীরে সঙ্গীর প্রতি আমাদের চাহিদা তৈরি হয়। তা শারীরিক ও মানসিক হতে পারে। এই সময়ে সঙ্গী যদি আমাদের মন ভালো রাখতে পারেন, তাহলে সঙ্গীর প্রতি আরও বেশি করে আমরা নির্ভরশীল হয়ে পড়ি। এই ধাপে ডোপামিন হরমোনের কার্যকারিতা থাকে বেশি।

তবে সারাজীবন সম্পর্ক ধরে রাখার জন্য সম্পর্কে এফর্ট দেওয়ার প্রয়োজন অনেক বেশি। এই ধাপে অক্সিটোসিন হরমোন প্রধান ভূমিকা পালন করে থাকে। একে অপরের সঙ্গে বাঁধন মজবুত করার জন্য এই হরমোন খুবই কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। কিন্তু ঠিক এই সময়েই আমরা বাঁধন মজবুত করার চেষ্টা করি না। সম্পর্কে শ্রম কম দিই ও তাৎক্ষণিক পরিতৃপ্তির দিকে ছুটি। আমাদের কাছে এখন অপশন অনেক বেশি। কয়েক দশক আগেও মানুষ যেরকম জীবন ভাবতে পারতেন না।

আরও পড়ুন:

হিউম্যান সাইকোলজি

হিউম্যান সাইকোলজি

পুরুষদের মধ্যে কি প্রতারণার প্রবণতা বেশি?

২০১৮ সালের এক সমীক্ষায় উঠে এসেছে সেরকম তথ্যই প্রাথমিকভাবে দেখতে গেলে সেই কথাই সত্যি। ২০১৮ সালে জেনেরাল সোশ্যাল সার্ভে থেকে একটি সমীক্ষা চালানো হয়। সেখানে রিপোর্টে দেখা যায়, বিবাহিত হওয়ার পরেও অন্য মানুষের সঙ্গী শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছেন অনেকেই। তাঁদের মধ্যে ২০ শতাংশ পুরুষ এবং ১৩ শতাংশ মহিলা।

আমরা নিজেদের সম্পর্ক নিজেরাই ঠিক রাখতে পারি। হরমোন ও প্রাকৃতিক স্বভাবগত কারণে বিপরীত বা সমলিঙ্গের মানুষের প্রতি আকর্ষণ বোধ করা খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু আমরা সঙ্গীর উপর লয়্যাল থাকব কিনা, সেই সিদ্ধান্ত নিতে পারি নিজেরাই। তাই যে সম্পর্কটা স্বামী ও স্ত্রী মিলে খুব যত্ন করে তৈরি করেছেন, সেই সম্পর্ক যত্ন করে লালন-পালন করুন। তাৎক্ষণিক পরিতৃপ্তি না খুঁজে সম্পর্কের গাছকেই সুন্দর করে বাড়তে দিন। সেই গাছই দুঃসময়ে আপনাদের ছায়া দেবে।

 

 

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

More News Of This Category
©2021 All rights reserved © kalakkhor.com
Customized By BlogTheme
error: Content is protected !!

Discover more from কালাক্ষর

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading