যে কোন রিলেশান সেইটা কর্পোরেট হউক কিংবা একান্ত ব্যাক্তিগত সব রিলেশান এর শুরুর এক্সপ্রেশান/ ফাস্ট ইম্প্রেশন (First Impressions) উপর অনেক কিছুই নির্ভর করে। কারন প্রথম দেখার সময় একজন মানুষের অবয়ব আর এক জনের মনের ভিতর গেথে যায়। সেইটা ইতিবাচক হউক কিংবা নেতিবাচক আর তা একবার যদি কারো মনে গেথে যায় তা দূর করা শুধু কষ্টসাধ্য ই নয় এটি সময় সাধ্য ব্যাপার হয়ে যায়। সব চেয়ে বড় ব্যাপার মানুষের সম্পর্কে অন্য মানুষের ধারনা নেওয়ার ক্ষেত্রে মানুষ যে মানুষের উপর সিদ্ধান্ত ন্যায় তার চেয়ে পুর্বের অভিজ্ঞতা কিংবা কারো কাছ থেকে শুনে নেওয়া কোন ডিসিশন এর উপর নির্ভর করে। এটি আক্ষরিক অর্থে মানুষের মস্তিকের সতস্ফুর্ত চিন্তায় নেওয়া কোন সীদ্ধান্ত হয় না, হয় অবচেতন মনের নেওয়া সিদ্ধান্তর উপর।
একটি গবেষনায় নেওয়া তথ্য উপাত্ত ঘেটে একটা বিষয় জানা হয়ে গেছে যে এই ধরনের নেওয়া সিদ্ধান্ত গুলো বেশির ভাগ টাইমেই ভুল হয় কিংবা ভুলের কাছা কাছি হয় – তার পরেও মানুষের স্বহজাত প্রবৃত্তি বলে কথা। ঠিক কেন কি কারনে মানুষের অবচেতন মন মানুষের ব্যাপারে ডিসিশন ন্যায় তা নিয়ে আমার দুইটি লেখা আছে – দয়া করে পড়ে আসতে পারেন। তা হলে আপনার বুঝতে সুবিধা হবে বলে আশা রাখি –
যাই হউক, এবার মুল বিষয় ফাস্ট ইম্প্রেশন (First Impressions ) এর প্রসঙ্গে আসি । আমরা মূহুর্তের দেখায় মানুষকে বিচার করি- এবং আমাদের এই প্রথম দেখায় কারও সম্পর্কে যে ধারণা আমরা করি, তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু একই সঙ্গে এটি আবার বিভ্রান্তিকরও বটে। কাজেই প্রথম দেখায় ভাল লাগা/ ভাল বেসে ফেলা/ বা প্রেম বলে যে ব্যাপারটা নিয়ে আজকের ত্যানা প্যাচানো শুরু করেছি, সেটা কি আসলেই সত্যিকারের প্রেম হয়? নাকি যাস্ট মোহো হয়? নাকি যাস্ট আপনার অবচেতন মনের খোরাক হয়ে আপনার মনের কিউরেসি দূর করে? এর উত্তর ইতিবাচক কিংবা নেতিবাচক যা ই আসুক – এই কথা আপনাকে মানতেই হবে- ফাস্ট ইম্প্রেশন একটা সম্পর্ক কে সামনে দিকে অনেক টা পথ টেনে নিয়ে যায়।
প্রথম দেখার মূহুর্তে কোন কিছু সম্পর্কে আমাদের মনে যে ছাপ তৈরি হয়, সেটির বিজ্ঞান বেশ জটিল। তবে আমাদের মন যখন কোন কিছু সম্পর্কে একটা সিদ্ধান্ত নেয়, সেখানে এমন অনেক বিষয় আছে যা আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকে- যার নিয়েন্ত্রনের ভার থাকে আমার আগে উল্লেখ করা অবচেতন মনের উপর।
বিষয় টি এমন এক স্নায়বিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এটি সংগঠিত হয়, যা আমরা একেবারেই বুঝি না। এ ক্ষেত্রে অনেক ভুল ‘স্টিরিওটাইপ’ বা ‘গৎবাঁধা ধারণা’ এক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে। কোন কিছু সম্পর্কে আমাদের মনে ‘ফার্স্ট ইমপ্রেশন’ বা ‘প্রথম ছাপ’ কিভাবে তৈরি হয়, সেটা যদি আমরা বুঝতে পারি, তাহলে হয়তো আমরা আরও ভালোভাবে আমাদের মন কে নিয়ন্ত্রন করতে পারবো। যা আমাদের পছন্দের মানুষ/ব্যাবসায়ীক পার্টনার/ জীবনসঙ্গী খুঁজে পেতে সহায়ক ভুমিকা পালন করবে।
কেউ আকর্ষণীয় কিনা, সেই সিদ্ধান্ত আমরা কিন্তু নেই চোখের পলকে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, আমাদের এই বিচারটা একেবারে ভুলে ভরা অথবা একেবারে নির্ভুল। কিন্তু আমি হল্প করে বলতে পারি ফাস্ট ইম্প্রেশনে যখন আমরা মূহুর্তের বিচারে কিছু লোককে বাতিল করে দিচ্ছি, সেইটা মাস্টবি ভুল। তাদের মধ্যেই হয়তো আমাদের উপযুক্ত কেউ থাকতে পারে। কিন্তু ফাস্ট ইম্প্রেশন নেগেটিভ এসেছে তাই আমরা তাকে শুরুতেই ছুরে ফেলে দেই ।
মডেল – বহ্নি হাসান – ছবি – কালাক্ষর ডেক্স
কাউকে যখন আমরা পছন্দ করি, সেখানে আমাদের পরিবেশ, ব্যক্তিত্ব এবং আবেগ- অনেক কিছুই কিন্তু এক সঙ্গে কাজ করে। কাজেই কারও ব্যাপারে আমাদের মধ্যে যখন প্রথম কোন ‘রোমান্টিক ফার্স্ট ইমপ্রেশন’ বা প্রেমবোধ জাগ্রত হয়, তখন আসলে কী ঘটে? কারও মুখ দেখে তার সম্পর্কে একটা ধারণা তৈরি করতে আমাদের মস্তিস্কের সময় লাগে এক সেকেন্ডের দশ ভাগের এক ভাগ মাত্র। কারও সম্পর্কে আমাদের মনে এই প্রথম ছাপ বা ফাস্ট ইমপ্রেশন তৈরি করে কেবল মানুষটি কতটা আকর্ষণীয় সেই সম্পর্কেই নয়, তার চরিত্রের নানা বৈশিষ্ট্য যেমন লোকটি ক্যামন হতে পারে? সে সম্পর্কেও কিছু অনুমান ওই মুহুর্তের মধ্যেই তৈরি করে ফেলে।
যেমন ধরা যাক, কেবল মাত্র কোন রাজনীতিকের চেহারা দেখেই যখন মানুষ তার যোগ্যতা সম্পর্কে ধারণা তৈরি করে, তার মধ্যে নির্বাচনে এই রাজনীতিকের সফল হওয়ার সম্ভাবনা কতটা, সেটাও থাকে। যদিও সেই রাজনীতিক আসলে কে, কী, তার কোন কিছুই মানুষের জানা নেই।
এক সেকেন্ডের ভগ্নাংশের মধ্যেই কারও সম্পর্কে এরকম একটা ধারণা তৈরি করে ফেলা, আমরা বেশিরভাগ মানুষই কিন্তু তা করছি। কিন্তু তার মানে এই নয় যে লোকটি সম্পর্কে আমাদের এই ধারণা সঠিক।
“ফেস ভ্যালু: দ্য ইরেসিস্টেবেল ইনফ্লুয়েন্স অব ফার্স্ট ইমপ্রেশন” শিরনামে আলেক্সান্ডার টডোরভ নামক এক লেখক একটি বই লিখেছেন, তাঁর মতে “প্রথম মূহুর্তে তৈরি হওয়া ধারণা ভুল হতে পারে।”
“একজন মানুষ সম্পর্কে অল্প দেখাতেই ধারণা তৈরি করার এই চেষ্টা আসলে হাস্যকর। কেবলমাত্র অপরিচিতদের সম্পর্কেই আমরা ফার্স্ট ইমপ্রেশন তৈরি করি। কাজেই এধারণা আসলেই একেবারে ভাসা ভাসা।”
কিন্তু আমাদের ধারণা ভুল বা সঠিক যাই হোক, আমরা খুব দ্রুতই এই সিদ্ধান্ত নেই এবং তা আমাদের মনে গেঁথে থাকে। ধরা যাক, এ সেকেন্ডের দশ ভাগের এক ভাগ নয়, আরও অনেক লম্বা সময় ধরে আমরা কাউকে দেখলাম। কিন্তু তার পরও কিন্তু লোকটি কতটা আকর্ষণীয় সে সম্পর্কে প্রথম মূহুর্তে যে ধারণা আমাদের মনে তৈরি হয়েছিল, তা বদলানোর সম্ভাবনা কিন্তু কম।
এই যে কারও সম্পর্কে এক মূহুর্তের এই ছবি- তাতে লোকটির নানা বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে অনেক ধরণের অনুমান থাকে। কারও মুখ দেখে মানুষ মূহুর্তেই তিনটি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়—
মানুষের বিবর্তনের ইতিহাস যদি আমরা দেখি, তবে এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে মানুষ সর্ব প্রথম দেখে তার শারীরিক সৌন্দর্য । সঙ্গী খোঁজার সময় কেউ আকর্ষণীয় কিনা, সেই বিচার মানুষের পূর্বসুরীরাও করতো। আজ আমরা ও করি। এর পর দেখে বিশ্বাস যোগ্যতা। বিশ্বাসযোগ্যতার বিচারের দরকার হয় তার সঙ্গে সামাজিক মেলা-মেশা সম্ভব কীনা, তা জানতে। তার পর দেখে তার কর্তৃত্বপরায়নতা। লোকটি কর্তৃত্বপরায়ন কীনা, সেই বিচার দরকার হয় সংঘাত এড়াতে।
মডেল – বহ্নি হাসান – ছবি – কালাক্ষর ডেক্স
অধ্যাপক টডোরভ বলছেন, কর্তৃত্বপরায়ণের মতো চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য মূলত পুরুষালী ভাবের সঙ্গে সম্পর্কিত। ফার্স্ট ইমপ্রেশন তৈরির বেলায় পুরুষ আর নারীকে সমানভাবে বিচার করা হয় না। কোন নারীর মধ্যে যখন পুরুষালী ভাব দেখা যায়, তখন সেটিকে নেতিবাচকভাবে দেখা হয়। অন্যদিকে পুরুষদের বেলায় পুরুষালী ভাবকে দেখা হবে ইতিবাচক দৃষ্টিতে। এটা যে শুরু পুরুষরা করবে তা নয়, নারীরাও একজন পুরুষালী ভঙ্গীর নারীর ব্যাপারে নেতিবাচক ধারণা তৈরি করবে।
কারও চেহারা দেখে যে ধারণা তৈরি হয়, সেটি একেবারেই অগভীর বা ভাসা ভাসা, একেবারেই সাধারণ। এই ধারণা ভুলও হতে পারে। এছাড়াও ফাস্ট ইম্প্রেশান তৈরিতে যে সব গুনাবলি অবশ্যম্ভাবী হিসেবে দেখা হয় তা নিচে দেওয়া হল –
বাচন ভঙ্গী
আপনি যার সাথে দেখা করতে গেছেন কিংবা যার সাথে দেখা হয়েছে সে কিন্তু প্লান করেই এসেছে আপনার সাথে সে দেখা করতে আসবে- আর তার মাথায় এইটা বিল্ড আপ করা আছে আপনি কি কি পছন্দ করেন? বা করতে পারেন? হয়ত আপনি প্রথম দেখাতে তার কথায় ইম্রেস হয়ে গেলেন, কিন্তু তার পর সে কি তার আসল সরুপে ফিরে আসবে না? তার গ্যারান্টি আপনি হয়ত দিতে পারবেন না ? কিন্তু আপনি চান যার সাথে দেখা করতে গিয়েছেন তার বাচন ভঙ্গী যেন সুন্দর হয় ।
সম মনা
আপনি যে লোকের সাথে দেখা করতে যাবেন – আপনি মাস্ট বি চাইবেন সে লোক যেন আপনার সম মনা হয়। মানে এই নয় আপনি যাস্ট ঐ সময় সম মনা কাউকে খোজেন? আপনি সব সময় ই আপনার মত চিন্তা করার মানুষ কেই খোজেন। মতের মিল হলে সে ভাল আর অমিল হলে হলে আপনার কাছে সে হয়ে গেল খারাপ ।
পোষাক পরিচ্ছেদ
যার সাথে দেখা করতে যাচ্ছেন সেই মানুষ আপনার পোষাক পরিচ্ছেদ এর উপর আলাদা নজর দিবে এটাই স্বাভাবিক। কারন মানুষের ফাস্ট ইম্পেশন গ্রো আপ করতে পোষাক পরিচ্ছেদ একটি গুরুত্ব পুর্ন ভুমিকা পালন করে।
মডেল – প্রভা – ছবি – কালাক্ষর ডেক্স
আর্থিক সাবলম্বিতা ও সামাজিক অবস্থান
এক জন মানুষ কোন ভাবেই তার চেয়ে গরীব কিংবা একেবারে দিন হীন কাউকে পছন্দ করবে না। এমন নয় যে তার টাকায় সে চলবে এমন ধারনা নিয়ে সে এমন টা করে। আসলে সে দেখে অর্থের বিচারে সে তার সম কক্ষ কি না?
আমার আজকের পোস্ট টা আমার একান্ত ব্যাক্তিগত ভাবনা থেকে নেওয়া। কারন দুনিয়াতে খুব সম্ভবত আমি ই এক মাত্র মানুষ যে কোন দিন কাউকে ইম্রেস করতে পেরেছি বলে মনে হয় না। কারন আমি যেমন তেমন ভাবেই সবার সাথে মিশতে যাই। তাতে লাভের লাভ হয়েছে এই যে – সামাজিক কিংবা পেশাগত জীবনে কাউকে আমার উপর ভরসা করতে দেখিনি- যদিও ভরসা করার মত অনেক কিছুই ছিল। যাই হউক- আমার মত দুর্ভাগা যেন আপনারা বিষেষ করে আমার পাঠক কুল না হন- সেই জন্য ই এই পোস্ট টা করা। সাথে সেই সব পাঠক/পাঠিকা কুলের কাছে করজোড়ে অনুরোধ- আপনারা প্রথম দেখায় ভাল লেগেছে দেখে কাউকে যোগ্য ভাবলে ভাবতে পারেন। কিন্তু যাদের ভাল লাগে নি বা আপনাদের ফাস্ট ইম্প্রেশন পজেটিভ আসে নাই বলে তাদের একেবারে বাতিলের খাতায় ফেলে দিবেন না। কারন এই বাতিল মাল দের ভিতর থেকে অনেক যোগ্যতা সম্পন্ন কেউ বের হতে আসতে পারে। সরি যদিও জানি আপনারা প্রায় সব টাই জানেন – তার পরেও বলা, যদি কিছুটা উপকার হয় তাতেই নিজেকে ধন্য বলে মনে করবো। ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন –
Leave a Reply