ডিজিটাল এবং নিউট্রিশন এই দুটি শব্দের সঙ্গে সবাই কম বেশি পরিচিত। কিন্ত ডিজিটাল নিউট্রিশন (digital nutrition) বা ডিজিটাল পুষ্টি কী ? এবং তা কোন কাজে ব্যাবহার করা হয়? বা ঠিক কোন অর্থে ব্যাবহার করা হয়? তা যদি কাউকে জিজ্ঞেস করা হয় তার সঠিক উত্তর দেওয়ার মানুষের সংখ্যা খুবই হতাশা ব্যাঞ্জক হবে । কেননা ডিজিটাল হেলথ কিংবা ডিজিটাল নিউট্রিশন সম্পর্কে এর আগে খুব বেশি আলোচনা হয় নি। কারন এই শব্দের প্রয়োগ শুরুই হয়েছে যাস্ট কিছু দিন আগে। তাই সৃজন শীল ব্লগ কালাক্ষর এর আজকের আয়োজন সাজিয়েছি এই ডিজিটাল নিউট্রিশন নিয়েই।
বর্তমান কালে আমাদের এই সমাজ ব্যাবস্থায় আট থেকে আশি সকলেই প্রায় কোনো না কোনো ডিজিটাল মাধ্যমের সঙ্গে যুক্ত । কারন তথ্য প্রযুক্তির মুহুর্মুহ উন্নতির কারনে নাগরিক সমাজ এখন ডিজিটাল মাধ্যমের সাথে এমন ভাবে জরিয়ে গিয়েছেন যে এর অস্তিস্ত অস্বীকার করা আর মানুষ জন কে আদীম সমাজে নির্বাসন দেওয়া একই মনে হতে বাধ্য।
কিন্তু সব কিছুরই তো একটা লিমিট আছে, খাবার যতই ভাল হউক বেশি খেলে যেমন বদ হজম হয়। তেমনি আমাদের জীবন ধারনের জন্য ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যাবহার সে যতই জীবন কে সহজ করুক না কেন এর বেশি ব্যাবহার তেমনি মানুষের জীবনে নানান সমস্যা ডেকে আনে। ডিজিটাল প্রযুক্তি গুলো তখন ভালর চেয়ে তখন খারাপ গুন গুলোকেই প্রকাশ করে।
জোসলিন ব্রিউয়ার ২০১৩ সালে সর্ব প্রথম ডিজিটাল নিউট্রিশন নামক শব্দটিকে বিশ্ববাসীর পরিচিত করান । জোসলিন ব্রিউয়ার ডিজিটাল নিউট্রিশন শব্দের ব্যাখ্যা হিসেবে মানুষকে প্রযুক্তি যা ইন্টারনেটের ব্যবহার, অতিব্যবহার সম্পর্কে সচেতন করা সহ এর বিকল্প পথ সরবরাহের চেষ্টা করাকে বুঝিয়েছেন ।
ইন্টার্নেট এর ডিভাইজ গুলোতে যে সব অ্যাপস গুলো মানুষ ব্যবহার করে সেই সব অ্যাপস গুলোর মাধ্যমে মানুষের জীবনে সামাজিক এবং মানসিক প্রভাব ( ইতিবাচক এবং নেতিবাচক উভয়) মানুষের শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের উপর কিভাবে প্রভাব ফেলে সেই প্রসঙ্গ নিয়ে মানুষকে সচেতন করে।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়। আপনি একটা ফোন কিনেছিলেন মানুষের সাথে দরকারী কথা বলতে। কিন্তু সারাক্ষন ফোনে কথা বলাই যখন আপনার নেশা হয়ে যায় তখন তা কি ভাল কিছু বয়ে আনে? কিংবা একটা এন্ড্রোয়েড ফোন বা কম্পিউটার আছে আপনার, দিন নাই রাত নাই সব কাজ বাদ দিয়ে নেট ঘাটাঘাটি শুরু করে দিলেন, আর এইটা আপনার নরমাল লাইফ স্টাইল কে ব্যাহত করে দিল। ব্যাস তখন কি হবে?
জোসলিন ব্রিউয়ার এর উল্লেখিত ডিজিটাল নিউট্রিশন নামক থিউরী কে আরো আরো সহজ ভাবে বুঝাতে গেলে বলতে হয়, আমরা সবাই যে সকল অ্যাপস ব্যবহার করি তা আমাদের বাস্তবিক জীবনের উপর ঠিক কীরকম প্রভাব ফেলছে তা নিয়ে সু স্পস্ট ভাবে আলোচনা করে এবং একটি সুনির্ষ্ট রোড ম্যাপ প্রনোয়ন করে।
ডিজিটাল পুষ্টি তে বলা হয় আমাদের সকলকে একটি হেলদি রুটিন চার্ট তৈরী করতে হবে । আমরা কতটা সময় ইন্টারনেট ব্যাবহার করছি? কোন অ্যাপ গুলি ব্যবহার করছি। ব্যবহারের পর আমরা খুশি হলাম না উদ্বিগ্ন হলাম গ্রাফ আকারে তা লিখে রাখতে হবে। এই চার্ট অনুযায়ী বোঝা যাবে আমাদের জীবনে সেই অ্যাপস গুলির প্রভাব ইতিবাচক না নেতিবাচক।
ডিজিটাল পুষ্টি হ’ল ডিজিটাল ওয়েলবিইং এবং ডিজিটাল নাগরিকত্বের একটি দিক,এটি শিক্ষাগত প্রযুক্তি এবং গেমস ভিত্তিক শেখার থেকে শুরু করে স্ক্রিন-সময় সীমা, স্বাস্থ্যকর প্রযুক্তি অভ্যাস এবং ডিজিটাল সুস্থতার জন্য নীতিগুলি বিবেচনা করে।
হয়ত অনেকেই প্রশ্ন করতে পারেন যে, ডিজিটাল নিউট্রিশন নামক এই ব্যাবস্থা টি কোন দিক গুলি বিবেচনা করে আবার কোন কোন দিক গুলি করে না ? ”ডিজিটাল স্বাস্থ্য এবং কল্যাণ,ডিজিটাল পুষ্টি বা নিউট্রিশন,“ডিজিটাল নাগরিকত্ব”সামাজিক এবং সংবেদনশীল শিক্ষা”,”প্যারেন্টিং প্লাগ”,”সাইবার সাইকোলজি” ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করে এবং আমাদের সচেতন করে।চিকিৎসা/মানসিক স্বাস্থ্য সমাধান””সাইবার সুরক্ষা”,”সাইবারবুলিং”, ইত্যাদি ডিজিটাল পুষ্টির আওতায় পড়ে না।
ডিজিটাল নিউট্রিশন কে আমরা ডিজিটাল অ্যালার্ম ও বলা যেতে পারে। যা আমাদের ইন্টারনেটের ব্যবহারে কতটুকু দরকার আর কতটুকু দরকার নয় তা নিয়ে সচেতন করে।আবার এর বিকল্প পথও বেছে দেওয়ার চেষ্টা করে।তাই এই ডিজিটাল যুগে দাঁড়িয়ে ডিজিটাল নিউট্রিশনের দরকার।
Leave a Reply