1. sjranabd1@gmail.com : Rana : S Jewel
  2. solaimanjewel@hotmail.com : kalakkhor : kal akkhor
সেলফ সারভিং বায়াস: নিজের ব্যর্থতার দায়ভার অন্যকে দিতে কেন আমরা অযুহাতের দারস্ত হই (পর্ব - এক) - কালাক্ষর
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:৪৪ পূর্বাহ্ন

সেলফ সারভিং বায়াস: নিজের ব্যর্থতার দায়ভার অন্যকে দিতে কেন আমরা অযুহাতের দারস্ত হই (পর্ব – এক)

  • Update Time : সোমবার, ৭ জুন, ২০২১
সেলফ সারভিং বায়াস: নিজের ব্যর্থতার দায়ভার অন্যকে দিতে যখন আমরা অযুহাতের দারস্ত হই (পর্ব - এক)
ফাইল ফটো

বলুন তো বাংগালীর কয়টা হাত? আপনি যদি একটু সহজ সরল হন তবে আপনার উত্তর হবে। স্রষ্টা প্রদত্ত ডান ও বাম মিলে দুইটা হাত। কিন্তু আপনার মাথার আই কিউ লেবেল যদি একটু মোটা দাগের হয় তবে আমি নিশ্চত জানি আপনার উত্তর হবে তিন টা হাত। কারন স্রষ্টা আমাদের ডান ও বাম হাত তো দিয়েছেন ই এই দুই হাতের সাথে  আমরা আরো একটা হাত নিজেরাই পয়দা করেছি। এই হাত দেখা যায় না, ছোঁয়া ও যায়, স্পর্সের অনুভুতি ও পাওয়া যায় না, তবে যদি কখনো নিজের দোষ অন্যের ঘাড়ে চাপাবার প্রসঙ্গ আসে ঠিক তখন ই এর অস্তিস্ত টের পাওয়া যায়, যাকে আমরা আদর করে “অজুহাত” নামে ডাকি। কোন কাজ ঠিক ঠাক করতে পারলাম কি না পারলাম না তা নিয়ে আমাদের কোন মাথা বেথা থাকে না, কারন আমরা জানি, যে কোন ব্যার্থতা ঢাকতে আমরা আমাদের নিজেদের বানানো “অজুহাত” শব্দটির ব্যাবহার করতে সিদ্দ্ধ হস্ত। আমরা নিজের উপর অর্পিত দায়িত্ব অবহেলা করতে বেজায় পটু ই নয়, এই বিষয়ে আমরা নিজেরা নিজেদের কে ইতিমধ্যে বিশেষজ্ঞের পর্যায়ে নিয়ে এসেছি। আমাদের সব চেয়ে প্রিয় হাত এই “অজুহাত” এর প্রথম প্রয়োগ শুরু নিয়ে যদিওঅনেক বিতর্ক আছে তবে অফিশিয়ালি শুরু হয় আমাদের স্কুল  , কলেজ বা ইউনিভার্সিটিতে দেওয়া আমাদের রেজাল্ট শিট যখন বাপ মা দেখতে চায় তখন থেকে, বেশির ভাগ সময় পরীক্ষাগুলোর ভালো কিংবা খারাপ ফলাফলের উপরে নির্ভর করে আমাদের প্রতিক্রিয়া দুই রকমের হয়ে থাকে। যদি ফলাফল আশানুরূপ হয় তবে তার কৃতিত্ব নিজেরাই নিয়ে থাকি। আমরা আমাদের ভালো জ্ঞান ও দক্ষতার কারণেই পরিক্ষায় ভাল ফলাফল এসেছে বলে আমরা মনে করি এবং বুক ফুলিয়ে নিজেদের সফলতার গল্প ফেদে মানুষ কে শুনিয়ে বেড়াই। কিন্তু যদি পরিক্ষার রেজাল্ট আমাদের পছন্দ মতো না হয়, তখন?

তখন আর কি? আমাদের ব্যার্থতার ক্রেডিটগুলো নিজের মাথায় না নিয়ে বাইরের বিভিন্ন নিয়ামকের উপরে চাপাবার চেষ্টা করতে দারস্ত হই আমাদের সবার প্রিয় হাত “অজুহাত” এর, তাই না? ক্লাসে শিক্ষক ভালো পড়ায়নি, প্রশ্ন কঠিন এসেছিল কিংবা পরীক্ষার বিষয়টিই অনেক কঠিন ছিল, জর হইছিল, পড়ে গিয়ে হাত ব্যাথা পাইছি,কত শত বাহানা। আর এরকম ঘটনা যে শুধু পরীক্ষার সময়েই যে ঘটে তা কিন্তু নয়। দৈনন্দিন জীবনের আরো অনেক জায়গায় আমাদের প্রতিক্রিয়া এই রকম অজুহাত ময় হয়ে থাকে। যেমন: কোনো গাড়ি দূর্ঘটনার পরে উভয়পক্ষই একে অন্যকে দোষারোপ করতে থাকা। পড়ে গিয়ে গ্লাসে ভেংছে তার জন্য অজুহাত, আরো যে কত শত তা লিখতে গেলে সাত জন্ম লাগবে।

সেলফ সারভিং বায়াস: নিজের ব্যর্থতার দায়ভার অন্যকে দিতে যখন আমরা অযুহাতের দারস্ত হই (পর্ব - এক)

মডেল – তানজিন তিশা। ছবি – ফেসবুক

আচ্ছা আপনার কি কখনো মনে হইছে? আমরা কেন অজুহাত তৈরির মাধ্যমে নিজের দোষের দায়ভার অন্যের ঘাড়ে চাপাতে চাই? আমাদের বহুল চর্চিত “অজুহাত” টি আদতে কি? কেনই বা আমরা স্রস্টা প্রদত্ত দুইটি হাত রেখে অজুহাত এর দারস্ত হই? আচ্ছা,অজুহাত সৃষ্টির সময় মানুষের মনে কি ধরণের প্রভাবক কাজ করে? এর কারণ জানতে আমার বন্ধু মহলে যারা বিভিন্ন কারণে বিভিন্ন সময়ে অজুহাত সৃষ্টির জন্য বিশেষ ভাবে পরিচিত, তাদের প্রশ্ন করেছিলাম,কিন্তু অতীব দুক্ষের কথা, আমার সেই অজুহাত সৃষ্টি করার জন্য বিশেষ ভাবে পরিচিত বন্ধুগন, কেন সব কিছুতেই তারা এত “অজুহাত” বানায়? এর উত্তর দিতে আর একটি অজুহাত বানিয়ে তার আশ্রয় নিয়েছিলে। এখন বলেন হাসবো নাকি কাঁদবো। যাই হক, আমি জানি আমার মত আপনাদের মনও সদা কৌতুহলী, আপনার ও জানতে ইচ্ছে করে আমরা কেন “অজুহাত” বানাই? মানুষ কেন নিজের ব্যার্থতার ক্রেডিট নিজে না নিয়ে অযুহাতের উপর ছেড়ে দ্যায়? তাদের জন্য ই সৃজনশীল ব্লগ “কালাক্ষর” এর আজকের আয়োজন। 

যে কোনো কিছুতে সফল হলে আমরা আমাদের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়াগুলো এক রকম হয়ে থাকে। সাফল্যের জন্যে নিজের দক্ষতা নিয়ে আমরা গর্ববোধ করে থাকি। কিন্তু ব্যর্থ হলে, যেসব ঘটনা আমাদের পক্ষে কাজ করেনি, বা আমাদের সফলতার পথে যে সব ঘটনা পথ আগলে রেখেছে সেগুলো খুঁজে বের করি এবং সেগুলোকে দোষারোপ করি। কিন্তু আমরা এতটাই সার্থপর যে আমাদের সাফল্যের সময়ে যে সকল নিয়ামকগুলো আমাদের সাফল্য পাবার পক্ষে কাজ করেছে, সেগুলোকে আমরা প্রায়শয় নয় বেশির ভাগ সময়েই এড়িয়ে যাই। অথচ আমরা নিজেরাও জানি না সাফল্যের সব ক্রেডিট নিজে নেওয়া আর ব্যার্থ হলে অযুহাতের দারস্ত হবার এই অভ্যাস টি মানুষের জীবন কে সুন্দর করে তোলার ক্ষেত্রে অক্ষতিকর প্রভাবক হিসেবে কাজ করে। আমরা জানি না আমাদের এই বদ অভ্যাসটি আমাদের জীবনকে ব্যার্থতার চাদড়ে মুড়িয়ে ফেলতে কতটা বাজে ভাবে প্রভাব বিস্তার করে  আমাদের আচরণ গড়ে তোলে। আমরা হয়ত নিজেরাও জানি না আমাদের এই খারাপ অভ্যাস টি আমাদের এক ধরনের চিন্তাগত ত্রুটি, মনোবিজ্ঞানে যাকে ‘সেলফ সারভিং বায়াস’ (Self-Serving Bias) বলা হয়।  ‘সেলফ সারভিং বায়াস‘ (Self-Serving Bias) অনেক দশক ধরেই গবেষকদেরকে আকর্ষণ করেছে এবং তারা এ সম্পর্কে আরো বিষদ ভাবে জানতে অনেক ধরনের গবেষণাও চালিয়েছেন।

সেলফ সারভিং বায়াস (Self-Serving Bias) এবং আমাদের জীবনে এই চিন্তা গত ভ্রান্তির প্রভাব সম্পর্কে প্রতিটি মানুষেরই সচেতন থাকা গুরুত্বপূর্ণ। যার ফলে আমাদের নিজেদের ভুল থেকে শেখা এবং যে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া উন্নত করার পথে সহায়ক হবে। সেলফ সারভিং বায়াস (Self-Serving Bias)  ব্যর্থতার পেছনে আমাদের নিজেদের ভূমিকাগুলো অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়। ফলে, অতীতের ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার পথে আমরা নিজেরাই প্রধান তম বাঁধা হয়ে দাঁড়াই। এই কথা সবাই স্বীকার করবেন যে, মানুষের জীবনে সফল হওয়া এবং লক্ষ্য অর্জনের পথে একটি বড় উপাদান হচ্ছে, ভুল সিদ্ধান্ত নেয়া এবং সেই সিদ্ধান্ত থেকে শিখে পাপ্ত জ্ঞ্যানের মাধ্যমে পরবর্তীতে উন্নতি করা। কিন্তু যদি কেউ নিজের ভুলগুলো সেলফ সারভিং বায়াস (Self-Serving Bias) এর প্রভাবের  কারণে চিহ্নিত ই করতে না পারে, তাহলে তার উন্নতি করাটা তার জন্য খুব কঠিন একটি ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে।

সৃজনশীল ব্লগ কালাক্ষর এ আমার লেখা পুরাতন পোষ্ট গুলো পড়তে চাইলে নিচের লিংক গুলোতে ক্লিক করুন 

যদি আমাদের সমাজ অথবা দেশের দিকে সামগ্রিক ভাবে নজর দেওয়া যায়, সেলফ সারভিং বায়াস সেখানে অনেক বড় প্রভাব লক্ষ করতে পারবো। কোন রাজনীতি বিদ কে জীবনে কোন দিন দেখিনাই নিজের ভুল স্বীকার করতে, কোন আমলা কে দেখি নাই তার কোন ভুল কে স্বীকার করে অনুতপ্ত হতে, ডাক্তার কে দেখি নাই, ড্রাইভার কে দেখি নাই, এমন কি আমার বাসার কাজের বুয়াও কোন দিন নিজের ভুল স্বীকার করে না।

আর যদি প্রেমিকা সম্প্রদায়ের কথা বলি, ওরে আল্লাহ্‌ খাইছে আমারে, জীবনে যতবার স্যাকা খাইছি কেবল মাত্র প্রেমিকার করা ভুল গুলো তে সে অনুতপ্ত কিংবা ভুল সীকার করবে না জেনেও জোরা জুরি করার ফলে। ভুল স্বীকার করলে কেউ ছোট হয় না, বরং বড় হয় এটা নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা নীতিবাক্য ঝেড়েও কোন লাভ হয় নি। কারন তাদের মনে সেলফ সারভিং বায়াস (Self-Serving Bias) এর প্রভাব এতটাই মারাত্বক ভাবে বিস্তার লাভ করেছে যে তারা ভুল করলে তা তাদের কাছে কিছুই মনে হবে না। কোন একটা দায়সারা অজুহাত যদি বা দয়া করে দ্যায় কিন্তু নিজের করা ভুলের জন্য অনুতপ্ত হওয়া কিংবা অনুতপ্ত হয়ে তা স্বীকার করার ব্যাপার টি তারা কল্পণা ও আনতে পারে না।  হয়ত বলবেন আমি কেন তাদের ভুল স্বীকার করতে এত প্যাড়া দিতাম? যেহুতু তাদের জন্য আমার মনে ভালবাসা ছিল আমি একটু তাদের ছাড় দিতে তো পারতাম ই তাই নয় কি?

আমি আসলে সেই চেষ্টা ও করেছি, একটা ভুল করেছে যদি চুপ চাপ তা সয্য করেছি দেখা গেছে কয়েক দিন পর আগের চেয়েও বড় ভুল করেছে। হৃদয়ে রক্ত ক্ষরণ হয়েছে প্রচুর তার পরেও আমি চুপ চাপ থেকেছি, কিন্তু কত দিন আর সয্য করা যায়? তাই তাদের কাছে তাদের করা ভুল গুলোর যুক্তি যুক্ত ব্যাখ্যা দিয়ে তাদের ভুল গুলো যে তাদের সেচ্ছাচারীতার জন্য হচ্ছে তা স্বীকার করতে বলতাম। যাতে তারা অনুতপ্ত হয় আর এই সব কিছু না করে। বাট আমরা বাঙ্গালীরা সহজাত ভাবে কোলে নিলে ঘাড়ে চড়তে চাই, আর ঘাড়ে চড়ালে মাথায়। তাই গান্ধিবাদের ধারক হিসেবে তাদের সাথে আমার ব্রেক আপ করা টাই যুক্তি যুক্ত মনে হত।  

সেলফ সারভিং বায়াস: নিজের ব্যর্থতার দায়ভার অন্যকে দিতে যখন আমরা অযুহাতের দারস্ত হই (পর্ব - এক)

মডেল – প্রভা। ছবি – কালাক্ষর ডেক্স

 

কার্নেগি মেলন বিশ্ববিদ্যালয়ে করা একটি গবেষণায়,পৃথিবীর জলবায়ু পরিবর্তন নীতিমালাগুলোর ব্যাপারে সাধারণ মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি কেমন? বিষয় গুলো তারা কি ভাবে মূল্যায়ন করে সেই ব্যাপারে একটি জরিপ চালানো হয়েছিল। চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের মধ্যে চালানো এই জরিপে গবেষকরা দেখতে পেলেন, জরিপে অংশ নেওয়া বেশির ভাগ ছাত্রই জাতীয়তাবাদ সেলফ সারভিং বায়াস (Self-Serving Bias) ধারণ করে। গ্রিন হাউজ গ্যাস অপসারণে ব্যর্থতার জন্যে তারা  নিজ নিজ দেশ কে ইতিবাচক অবস্থানে রেখে অন্য সব দেশ গুলোকে নেতিবাচক অবস্থানে ঠাই দিচ্ছিল।

সেলফ সারভিং বায়াস (Self-Serving Bias) এর উপর কার্নেগি মেলন বিশ্ববিদ্যালয়ের করা এই গবেষণা থেকে পাওয়া ফলাফল এটাই প্রমাণ করে যে, বর্তমানে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের গ্লোবাল ওয়ার্মিং বা কার্বন অপসারণ নীতি তে একমত না হতে পারার পেছনে সেলফ সারভিং বায়াস (Self-Serving Bias) এর অনেক বড় একটি ভূমিকা রয়েছে। সেলফ সারভিং বায়াস (Self-Serving Bias) কোন দেশের সরকারের নেওয়া অনেক সিদ্ধান্তে  ভুল ফলাফল বয়ে নিয়ে আসতে পারে। তাই নীতি নির্ধারকদের মধ্যে কগনিটিভ বায়াসগুলো কমানো গেলে সিদ্ধান্তগুলো তারা নিরপেক্ষভাবে নিতে পারবেন এবং তাতে জনগণের জন্যে সর্বোচ্চ সুবিধা নিশ্চিত করা যাবে।

মানুষের মনে “অজুহাত” নামক বিষয়টি কেন সৃষ্টি হয়? কেন মানুষ নিজের ব্যার্থতা ঢাকতে অন্যের উপর তার দায়ভার চাপায় তার গঠন মূলক ব্যাখ্যাটিকে  আমরা দুইটি পর্বে ভাগ করেছি – তাই অযুহাতের উপর লেখা আজকের প্রথম পর্ব টি পডে থাকেন। তবে আপনাদের সেকেন্ড পর্বটি পরতে অনুরোধ করা গেল।

It’s a Bangla article is about a specific cognitive bias called the Self-Serving Bias. I describe that when we attribute positive events and successes to our own character or actions but blame negative results on external factors unrelated to our character.

References
1. How the Self-Serving Bias Protects Self-Esteem
2. Why do we blame external factors for our own mistakes?
3. Self-Serving Bias: Definition and Examples

 

 

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

More News Of This Category
©2021 All rights reserved © kalakkhor.com
Customized By BlogTheme
error: Content is protected !!

Discover more from কালাক্ষর

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading