1. sjranabd1@gmail.com : Rana : S Jewel
  2. solaimanjewel@hotmail.com : kalakkhor : kal akkhor
দ্য ম্যাগপাই ইফেক্ট: চাকচিক্যপূর্ণ বিলাসদ্রব্যের প্রতি কেন মানুষ দুর্নিবারভাবে আকর্ষিত হয় - কালাক্ষর
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ১০:৪৯ পূর্বাহ্ন

দ্য ম্যাগপাই ইফেক্ট: চাকচিক্যপূর্ণ বিলাসদ্রব্যের প্রতি কেন মানুষ দুর্নিবারভাবে আকর্ষিত হয়

  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ২৪ জুন, ২০২১
দ্য ম্যাগপাই ইফেক্ট চাকচিক্যপূর্ণ বিলাসদ্রব্যের প্রতি কেন মানুষ দুর্নিবার আকর্ষিত হয়
সামিরা খান মাহি। ছবি - ফেসবুক

সৃজনশীল ব্লগ কালাক্ষর এ আমার আলোচনার বিষয় বস্তু হল “গরীবের ঘোড়া রোগ” কি একটু অবাক হলেন তাই না? অবাক হবারই কথা, কারণ দ্য ম্যাগপাই ইফেক্ট নিয়ে  আমি আজ আপনাদের যা বলতে যাচ্ছি তার পুরো লেখাটি যদি পড়েন তবে এক অর্থে নয় পুরো অর্থে আমার মত আপনি ও মেনে নিতে বাধ্য হবেন, এটা গরীবের ঘোড়া রোগ না হয়ে পারেই না।  বিষয়টি বোঝাতে রিমি নামের আমার এক বন্ধুর ঘটনা আপনাকে উদাহরণ  সরূপ দেই।

মাস শেষে বেতনে টাকাটা হাতে পেয়ে বসুন্ধরা সিটিতে এসেছিল রিমি। কর্মজীবি হোস্টেলে থাকা রিমি শপিং মলে ঢোকার আগে পই পই করে নিজেকে প্রবোধ দিয়েছিল, “সাবধান রিমি, একদম অহেতুক টাকা নষ্ট করবি না! সামান্য ক’টা টাকা, এ দিয়েই তোকে সারা মাস চলতে হবে। “ তার ইচ্ছে ছিল, দুইটা জিন্স কিনবে, অন্য কিছুর দিকে ফিরেও তাকাবে না।

কিন্তু না, শেষ পর্যন্ত তা আর হলো কই? অন্য আর পাঁচটা গড়পড়তা মানুষের মতোই রিমির নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ খুবই কম। মন আর মস্তিষ্কের লড়াইয়ে তার মনই সব সময় জিতে যায়, গো-হারা হেরে বসে তার মস্তিষ্ক। এবারও তার ব্যতিক্রম কিছু হলো না। যখনই একেকটা আকর্ষণীয় কয়েকটি ড্রেস, মোবাইলের কভার, জুতো, পারফিউম ইত্যাদির উপর তার চোখ পড়তে লাগল,কয়টাকে এড়াবে সে? এক পর্যায়ে আর নিজের লোভ  সামলাতে পারল না। 

দ্য ম্যাগপাই ইফেক্ট: চাকচিক্যপূর্ণ বিলাসদ্রব্যের প্রতি কেন মানুষ দুর্নিবার আকর্ষিত হয়

সামিরা খান মাহি। ছবি – ফেসবুক

রিমি অন্য দিন না হয় পকেটে টাকা নেই ভেবে নিজের মনকে প্রবোধ দিত। কিন্তু আজ যেহেতু ভ্যানেটি ব্যাগে কড়কড়ে ২০ টা এক হাজার টাকার নোট, তাই কোনোভাবেই রিমি আর নিজের মনকে বশে রাখতে পারল না।

নেশার মত একটার পর একটা জিনিস কিনে, দুই হাতে শপিং ব্যাগের সংখ্যা ভাড়ি করে যখন সে বাসায় ফিরল তখন রিমি আবিষ্কার করল, তার সকল শপথ, সকল অঙ্গীকারকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে, নিজের কাছে থাকা মোট টাকার অর্ধেকের বেশি টাকা রিমি আজই খরচ করে ফেলেছে। তা-ও আবার এমন সব জিনিস কিনে সে টাকা খরচ করেছে যেগুলো নেহাতই বিলাসদ্রব্য হিসেবে ধরা হয়; তার এমনিতে অনেক গুলো ড্রেস, নতুন ড্রেস গুলো অনেক লোভনীয় ছিল বটে, কিন্তু বাসায় ফিরে অবশিস্ট টাকার নোট গুলো গুনতে গুনতে এখন মনে হচ্ছে: এগুলো কেনার আদৌ কোনো প্রয়োজন কি?

সত্যিই তা-ই। রিমি লোভে পড়ে এমন সব জিনিস কিনেছে, যেগুলোর বাস্তব কার্যকারিতা খুবই কম। ড্রেস, মোবাইলের কভার, জুতো, পারফিউম থেকে শুরু করে আর যা যা সে কিনেছে, তার কোনোটিই তার জন্য অপরিহার্য ছিল না। এই মুহূর্তে সেগুলোর মালিকানা লাভ না করলেও তার একদমই ক্ষতি হয়ে যেত না। কিন্তু হায়, কয়েক মুহূর্তের লোভে পড়ে সে নিজের রক্ত জল করা উপার্জনের সিংহভাগই জলাঞ্জলী দিল। এখন বাকি সারাটা মাস তাকে প্রচণ্ড কষ্টে দিনাতিপাত করতে হবে, বাসা ভাড়া আর খাবার বিল দেবার পর হয়ত হাত খরচের জন্য কিছুই থাকবে না। এই সব ভাবছে আর নিজেকে নিজেই উজবুক বলে গালি দিচ্ছে।

এই জাতীয় সমস্যায় শুরু রিমি নয় সম্ভবত আপনি, আমি, আমরা সকলেই পড়ি। আমাদের ভিতর এমন মানুষ খুব কমই আছে, যারা মুহূর্তের জন্য নিজেদের হিতাহিত জ্ঞান ভুলে, কোনো আকর্ষণীয় জিনিসের প্রলোভনে কাড়ি কাড়ি টাকা খরচ করার স্বভাব ত্যাগ করতে পাড়ি না। আজকাল তো অনলাইনেই বিভিন্ন পণ্য অর্ডারের সুযোগ তৈরি হওয়ায় এমন কাজের হার তো আরো বেড়েছে। আর আমাদের এই ক্ষতিকর ও আত্মবিনাশী প্রবণতাকে আমরা কথায় কথায় গরিবের ঘোড়া রোগ বললেও, এর কিন্তু বেশ গালভরা একটি নামও আছে। আর তা হলো: দ্য ম্যাগপাই ইফেক্ট।

দ্য ম্যাগপাই ইফেক্ট চাকচিক্যপূর্ণ বিলাসদ্রব্যের প্রতি কেন মানুষ দুর্নিবার আকর্ষিত হয়

দ্যা ম্যাগপাই ইফেক্ট
Image source – goodreads.com

কি? আপনি হয়তো মনে মনে ভাবছেন, এত কিছু থাকতে ম্যাগপাই? কেন ম্যাগপাই নামই হলো কেন! তার কারণ আছে জনাব। ম্যাগপাই বা দোয়েল পাখির মধ্যেও যে এমন প্রবণতা খুব প্রকট আকারে লক্ষ্য করা যায়। কোনো চকচকে বা আকর্ষণীয় বস্তুর উপর চোখ পড়লেই  ম্যাগপাই বা দোয়েল পাখির মধ্যেও  অনেক লোভ হয়। যদি সম্ভব হয় তো চকচকে বস্তুটিকে নিজের বাসা পর্যন্তও সে নিয়ে যায় । এতে যদি তার অনেক পরিশ্রম বা কষ্ট হয়, সেদিকে একদমই তার ভ্রুক্ষেপ থাকে না। কারণ ঐ  ওই মুহূর্তে চকচকে বস্তুটিকে নিজের করে পাওয়াই ম্যাগপাই বা দোয়েল পাখিটির ধ্যান-জ্ঞান হয়ে দাঁড়ায়।

সুতরাং বুঝতেই পারছেন, ম্যাগপাই ইফেক্ট নামকরণের কার্যকারিতা। ম্যাগপাই ইফেক্টের কিন্তু চলনসই একটি সংজ্ঞাও রয়েছে: “স্রেফ বাহ্যিক চাকচিক্যের উপর ভিত্তি করে কোনো দ্রব্য ক্রয়ের প্রতি একজন মানুষের দুর্বার আকর্ষণ, বাস্তবিক যে দ্রব্যটির হয়তো কোনো বিশেষ উপযোগই তার কাছে নেই, কিংবা দ্রব্যটির মূল্য তার ক্রয়ক্ষমতার বাইরে কিন্তু যে ভাবে হউক তা পাবার ব্যাকুলতা কে ম্যাগপাই ইফেক্ট বলে।“

হয়ত ভাবছেন আমি উদাহরণ হিসেবে একটা মেয়ের নাম বলেছি তাই এই সমস্যায় কেবল নারীরাই ফেস করে। ভুল আমি কেবল উদাহরণ হিসেবে মেয়ের নাম বলেছি। নারী কিংবা পুরুষ, কোনো বিশেষ লিঙ্গের উপরই ম্যাগপাই ইফেক্টের দোষ একক ভাবে চাপিয়ে দেবার অবকাশ নেই। কেননা নারীদের মন যেমন জুতো, ব্যাগ, জামাকাপড়, সাজের সরঞ্জাম প্রভৃতির প্রতি দুর্বল হয়ে থাকে, তেমনই পুরুষদের মন গাড়ি, ঘড়ি, বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ডিভাইসের প্রতি বাড়তি আকর্ষণ অনুভব করে। এবং উভয় ক্ষেত্রেই, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলে তথাকথিত শখ মেটাতে নিজেদের ক্রয়ক্ষমতার থেকে অনেক বেশি অর্থ খরচ করে ফেলে।

আর মনোবিজ্ঞানীরা মানব মনে এমন প্রবণতাকে কম্পালসিভ বায়িং ডিসঅর্ডার নামে অভিহিত করে থাকেন । তাদের মতে এটি এমন একটি কন্ডিশন, যা মানুষকে বাধ্য করে নিজেদের মালিকানাধীন বস্তু বা দ্রব্যের মতো করে নিজেদের ব্যক্তিত্ব গড়ে তুলতে। আজকালর ট্রেনড এমন হয়ে দারিয়েছে যে, আপনি যা পরবেন, আপনি যে গ্যাজেট বহন করবেন,আপনি যে বাড়িতে থাকবেন কিংবা আপনি যে গাড়ি চালাবেন,আপনি যে ব্যান্ডের ফোন ব্যাবহার করবেন, এমনি কি যে ব্যান্ডের সিগারেট খাবেন, সেগুলোই অন্যদের কাছে আপনার ব্যক্তিত্বের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে বিবেচিত হবে। এমনকি তার সাথে আপনার প্রকৃত আবেগীয় বৈশিষ্ট্য কিংবা মানুষ হিসেবে আসলে আপনি কেমন? আপনার সাথে তার কোনো সাদৃশ্য না থাকলেও।

দ্য ম্যাগপাই ইফেক্ট চাকচিক্যপূর্ণ বিলাসদ্রব্যের প্রতি কেন মানুষ দুর্নিবার আকর্ষিত হয়

সামিরা খান মাহি। ছবি – ফেসবুক

উদাহরণ হিসেবে আইফোনের নাম বলা বলি। আইফোনকে আভিজাত্যের প্রতীক হিসেবে মনে করা হয় । যারা আইফোন ব্যবহার করে, তাদেরকে সমাজে অনেকেই একটু ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখে, খুব হোমড়াচোমড়া কেউ বলে মনে করে। মানুষের মাঝে এমন ভাবনার গজাবার শুরুতে এর কারণ ছিল আইফোনের উচ্চমূল্য। তখন হাতে একটি আইফোন থাকলেই সমাজে নিজের ‘স্ট্যাটাস’ বেড়ে যায়, এই জন্য অনেকেই আগ্রহী হতো আইফোন কেনার জন্য। আইফোন কিনেই যেন তারা সমাজে অন্যদের থেকে আলাদা হয়ে যেত। কিন্তু এখন দৃশ্যপট পালটে গিয়েছে, এখন বাজারে আইফোনের থেকেও বেশি দামি অনেক মোবাইল এসেছে । কিন্তু তার খবর অধিকাংশ মানুষ জানে না, তাই এখনো বাজারে আসা দামি মোবাইলের চেয়ে একজন আইফোনের মালিককেই বেশির ভাগ মানুষ বেশি অভিজাত শ্রেণীর বলে ধরে ন্যায়।

এভাবে একটি ইলেকট্রনিক ডিভাইস যেমন কোনো ব্যক্তি সম্পর্কে সমাজের অন্যান্য মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করে দিতে পারে, তেমনটা আজকাল পরিলক্ষিত হয় প্রায় সকল ক্ষেত্রেই। মনে করুন, আপনি খুব দামি কোনো দোকান থেকে, অনেক টাকা খরচ করে, অনেক ভালো মানের একটি পাঞ্জাবি কিনেছেন। অপর দিকে আপনার এক বন্ধু দেশের সবচেয়ে নামকরা ব্যান্ডের পাঞ্জাবি কিনেছে। সেটি হয়তো গুণগত মানের দিক থেকে আপনার পাঞ্জাবির ধারেকাছেও নেই। কিন্তু তবু আপনারা দুজন পাঞ্জাবি পরে লোকসম্মুখে গেলে, বেশিরভাগ মানুষ আপনার বন্ধুর পাঞ্জাবিকেই বাহবা দেবে। কারণ সেটিতে যে একটি নামকরা ব্র্যান্ডের সিল রয়েছে।

পুজিবাদি বনিকেরা “নামকরা ব্র্যান্ড” তৈরি করে এভাবেই আমাদের সমাজে তার প্রভাব ছড়িয়ে দিচ্ছে। সাধারণ মানুষ এই নামকরা ব্র্যান্ডের প্রতি এতটাই ঝুঁকে পড়েছে যে, সকল ক্ষেত্রেই তারা একে বেশি প্রাধান্য দিয়ে ফেলে। আর সেই সুযোগটি লুটতে পিছপা হয় না নামকরা ব্র্যান্ডগুলো। তারা জানে, তাদের পণ্যের মানের চেয়ে নাম বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাই তারা চাইলেই ৫০০ টাকার একটি পণ্যের গায়ে দুই হাজার টাকা মূল্যমানের প্রাইস ট্যাগ সেঁটে দিতে পারে,মানুষ কিন্তু এই সব ঘাটতে যায় না। তাই চোখ বুঝে তারা বেশি দাম হলেও সেই ট্যাগ ওয়ালা পণ্য টিই কিনে ন্যায়। অথচ লোকটি যদি অন্য কোনো দোকানে যেত তবে ঐ পণ্য কিনতে এত টাকা লাগত না।

মানব মনের প্রভাব বিস্তার কারি এমন পরিস্থিতির পেছনেও ম্যাগপাই ইফেক্টের অনেক বড় দায় রয়েছে। একটা সময় মানুষ কোনো পণ্যের গুণগতমান কতটা তা বিবেচনা করত। কিন্তু এখন মানুষ পণ্যের গুনগত মান নয় বাহ্যিক চাকচিক্য বা ব্রান্ড এর নামকে প্রাধান্য দেয়, এবং কোনো নামকরা ব্র্যান্ডের সিল কিন্তু ওই বাহ্যিক চাকচিক্যেরই একটি অংশ হিসেবে ধরে ন্যায়। এর ফলে মানুষ প্রয়োজনের তুলনায় বহুগুণ বেশি অর্থ খরচ করে হলেও ব্র্যান্ডের জিনিসটি কিনতে চায়। আর এতেই বাজার ব্যবস্থায় অসাম্যের সৃষ্টি হয়। উৎপাদনের ক্ষেত্রে প্রায় সমান খরচ করেও একটি সাধারণ ব্র্যান্ড যে পরিমাণ লাভ করে,তার চেয়ে কয়েক গুন বেশি লাভ করে নামকরা ব্র্যান্ড গুলো। আর বাজার ব্যাবস্থার এই “ব্র্যান্ড ভ্যালু” নামক অসমনজস্যতার জন্য সমান বিশিষ্টের গুনগত মান সম্পন্ন হয়েও সাধারণ ব্র্যান্ডটি ক্রমাগত পিছিয়ে পড়তে থাকে,তার পর একসময় প্রতিযোগিতা থেকে হাল ছেড়ে দিতেও বাধ্য হয়। আর এই ভাবে  নামকরা ব্র্যান্ডের আধিপত্যের কারণে সাধারণ ব্র্যান্ডগুলো মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে না। একটা ভাল উদাহরণ দেই ইন্ডিয়ান ডোভ সাবানের আধিপত্যের কাছে আমাদের মেরিল সাবানের অবস্থান কিছুই না। অথচ সত্য কি জানেন? ইউরোপে সাবানের একটা পরিক্ষা করা হয়েছিল যে খানে মেরিলের গুনগত মান ছিল ডোভের তুলনায় হাজার গুন ভাল। অথচ পাচ গুন বেশি টাকা দিয়ে আমরা ডোভ সাবান কিনি আর মেরিল সাবান দোকানের ময়লায় পড়ে থাকে। ব্যাপার টা বুঝলে ভাল না বুঝলে আমার আর কিছু বলার নাই।  

দ্য ম্যাগপাই ইফেক্ট চাকচিক্যপূর্ণ বিলাসদ্রব্যের প্রতি কেন মানুষ দুর্নিবার আকর্ষিত হয়

সামিরা খান মাহি। ছবি – ফেসবুক

এর ফলে কি হয় জানেন? মেরিলের মত সাবান গুলো হারিয়ে যায়, আর চাহিদা অনুযায়ি নামকরা ব্র্যান্ডগুলো তাদের পণ্যের দাম কমানোর বদলে ক্রমাগত বাড়াতে থাকে, এর পেছনেও যুক্তিসঙ্গত কিছু কারণ আছে। বিষয়টি নিয়ে বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ থরস্টেইন ভেবলেন একটি তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন বিলাসদ্রব্যের দাম যদি কমানো হয়, এবং সেগুলো যদি সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার ভেতরে চলে আসে, তাহলে সেগুলো আর “এক্সক্লুসিভ” থাকে না, ধনশালীরা নিজেদের “স্ট্যাটাস” প্রদর্শনের জন্য আর সেগুলো কিনতে উৎসাহী হয় না। বোঝেন অবস্থা?

বিষয় টির এ পর্যন্ত সবই ঠিক ছিল। সমাজে ধনীদের হাতে অঢেল টাকা আছে, তারা তাদের “স্ট্যাটাস” প্রদর্শনের জন্য দুই হাতে সে টাকা ওড়াবে,  এতে আমাদের কী বলার আছে! কিন্তু সমস্যাটা করেছে ম্যাগপাই ইফেক্ট। এর ফলে আমাদের মত যাদের খুব বেশি খরচ করার সামর্থ্য নেই, তারাও চায় বেশি বেশি টাকা খরচ করে কোনো নামকরা ব্র্যান্ডের বিলাসদ্রব্য কিনে নিজেদের তথাকথিত “স্ট্যাটাস” জাহির করতে। ফলে যে মানুষটি ঈদ উপলক্ষ্যে কেনাকাটা করতে গিয়ে তার ক্রয়ক্ষমতার ভিতর নিউ মার্কেট গিয়ে সেখান কার খুব ভালো ভালো জামাকাপড় খুব কম দামে কিনতে পারত,কিন্তু “স্ট্যাটাস”-এর সন্ধানে সেই মানুষটি চলে যায় বড় বড় ব্র্যান্ডের পসরা সাজিয়ে রাখা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত শো-রুম গুলোতে, আর সেখানে মূল দামের কয়েকগুণ বেশি দিয়ে একেকটা জামাকাপড় কিনে সে আদতে নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মারতে ছাড়ে না।

এখন আপনি প্রশ্ন করতেই পারেন, ধনাঢ্য ব্যক্তিদের পাশাপাশি সমাজের সাধারণ মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষও যখন নামকরা ব্র্যান্ডগুলোর ক্রেতা হচ্ছে, সেক্ষেত্রে নামকরা ব্র্যান্ডগুলোর কি তাদের পণ্যের দাম কমাবে? নাকি দাম কমাবার কোনো সম্ভাবনা আছে? না, অবশ্যই নেই। আজ থেকে প্রায় শত বছর পূর্বে, ১৯২০ সালেই ব্রিটিশ অর্থনৈতিক ইতিহাসবিদ আর এইচ টনি তার “The Acquisitive Society” নামক বইয়ে সে সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে গেছেন। আর এইচ টনির মতে, সমাজের গুটিকতক মানুষের হাতে যতদিন বিপুল পরিমাণ অর্থ থাকবে আর তুচ্ছাতিতুচ্ছ পণ্য কিনতে গিয়ে তারা কাড়ি কাড়ি টাকা খরচ করবে, ততদিন পর্যন্ত এই অসামঞ্জস্যতা দূর হবার নয়।

শেষের কথা

সুতরাং চোখ বুজে বলা যায়, পুজিবাদিদের এর প্রমোট করা আমাদের সমাজ ব্যাবস্থার সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবকাঠামো এমন ভাবে গড়া যে, আগামী কয়েক দশকেও বাজারে নিতান্ত মামুলি বিলাসদ্রব্যও মূল দামের দশ-পনেরো-বিশ এমনকি একশো গুণ বেশি দামেও বিক্রি হওয়া বন্ধের কোনো সম্ভাবনা নেই। বরং ধনবানদের জন্য সাজিয়ে বসা সেসব পণ্যের পসরায় যখন সামর্থ্যহীন মধ্যবিত্তদের চোখ পড়বে, সেটি হবে ম্যাগপাই ইফেক্ট, কিংবা সহজ বাংলায়: গরিবের ঘোড়া রোগ!

 

It’s a bangali  article describe the Magpie Effect . All the necessary references are hyperlinked within the article.

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

More News Of This Category
©2021 All rights reserved © kalakkhor.com
Customized By BlogTheme
error: Content is protected !!

Discover more from কালাক্ষর

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading