1. sjranabd1@gmail.com : Rana : S Jewel
  2. solaimanjewel@hotmail.com : kalakkhor : kal akkhor
ডিকয় ইফেক্ট: যার মাধ্যমে ব্যাবসায়ীরা ক্রেতার মন নিয়ে খেলে ক্রেতাকে বেশি খরচ করতে বাধ্য করায় - কালাক্ষর
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৪:৫৭ পূর্বাহ্ন

ডিকয় ইফেক্ট: যার মাধ্যমে ব্যাবসায়ীরা ক্রেতার মন নিয়ে খেলে ক্রেতাকে বেশি খরচ করতে বাধ্য করায়

  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ১৭ জুন, ২০২১
ডিকয় ইফেক্ট
ডিকয় ইফেক্ট। সোর্স - theconversation.com

সৃজনশীল ব্লগ “কালাক্ষর” এ এর আগে আমি একটি আর্টকেলে লিখেছিলাম কেন আমরা সেই জিনিসগুলো চাই যেগুলোর বস্তুত কোন দরকার নেই। দ্য ডিডেরো ইফেক্ট নামে এক ধরণের মনস্তাত্তিক ক্রিয়ার কারণে আমরা মার্কেটে একটা জিনিস কিনতে গিয়ে অপ্রয়োজনীয় অনেক কিছুই কিনে ফেলি। আপনারা চাইলে এখানে ক্লিক করে তা পড়ে আসতে পারেন। দ্য ডিডেরো ইফেক্ট এর সাবজেক্ট সাথে আজকের টপিক ডিকয় ইফেক্ট এর সাথে সাদৃশ্য পুর্ন। ডিকয় ইফেক্ট মূলত কোন ব্যাবসায়ী প্রদত্ত মনস্তাত্তিক ক্রিয়া যা ক্রেতা কে তিনি কোন জিনিস কিনবেন তা দোকানী আগে থেকেই নির্ধারন করে দ্যায়। আর নিজের আখের গোছায়। কি বুঝ বুঝতেছেন না তাই না? বুঝতে হলে আ[পনাকে আমার লেখাটির পুরোটা পরার অনুরোধ রইল –  

রোজ আমাদের কেনাকাটা করতে মুদি দোকান, কাঁচাবাজার, স্টেশনারি দোকান কিংবা মার্কেটিং করতে বড় বড় শপিং মল গুলোতে যেতে হয়।  আমাদের সকলের ক্ষেত্রেই এমন ঘটনা ঘটতে দেখা যে, একটি সুনির্দিষ্ট জিনিস কেনার উদ্দেশ্যে দোকানে গিয়েও দ্য ডিডেরো ইফেক্ট এর প্রভাবে একাধিক জিনিস কিনে বাড়ি ফিরতে হয়। এমনকি বেশির  ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় বাড়তি কেনা পণ্যটি হয়তো সেই অর্থে ততটা আমাদের কেনার আবশ্যক ছিল না।

এবার একটু বর্তমানের বাজার ব্যবস্থার আরেকটু স্মার্ট ঘরানায় যাওয়া যাক। মানে, আপনি কি হাল আমলের সুপার শপ বা রিটেইল চেইন শপগুলোতে পণ্য সাজানোর বিষয়টি কখনও খেয়াল করে দেখেছেন? একই সারিতে একই শ্রেণীর পণ্য, দামের বিন্যাসে সাজানোর একটি কুখ্যাত পন্থা পুরো পৃথিবী জুড়ে স্বীকৃত, যাকে বলা হয় ডিকয় ইফেক্ট। অসংখ্য কগনিটিভ বায়াসের অন্যতম এই ডিকয় ইফেক্ট ক্রেতাদেরকে অবশ্যম্ভাবীভাবে বেশি খরচ করতে উৎসাহী করে তোলে।

উদাহরণ হিসেবে ধরা যাক, আপনি একটি কফি শপে গেলেন। আপনার সামনে তিনটি ভিন্ন সার্ভিং অপশন হিসেবে স্মল, মিডিয়াম ও লার্জ অপশন দেওয়া হল। তবে এখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, মিডিয়াম ও লার্জ সার্ভিং এর পার্থক্য মোটেও উল্লেখযোগ্য নয়। কিন্তু তার পরেও আপনার কাছে যদি টাকা থাকে তবে দামের সামান্য বৃদ্ধি হলেও আপনার লার্জ সার্ভিংটিই নেওয়ার সম্ভাবনা বেশি হবে। আর যদি টাকা না থাকে তবে আপনার মনে একটা আফসোস হবে টাকা থাকলেই নিতে পারতাম। তাই না? এই বিষয়টিকেই ডিকয় ইফেক্ট বলে। 

আমার লেখা পুর্বের নিরীক্ষা ধর্মী ব্লগ পোষ্ট গুলো পরতে নিচের লিংক গুলতে ক্লিক করুন- 

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইকোলজির অধ্যাপক সাইকোলজিস্ট লিন্ডা চ্যাং এর মতে, 

কোন বিপনি বিতানে একটি সুনির্দিষ্ট ধারায় পণ্য বা সেবাসমূহকে বিন্যস্ত করলে, আপনি প্রায় সব ক্ষেত্রেই ভোক্তাদেরকে উচ্চ মূল্যের পণ্যটি কিনতে উৎসাহী করতে পারেন।

ডিকয় ইফেক্ট

দুইটি ক্ষেত্রেই আপনার পছন্দ হবে কোনটি ভেবে দেখুন তো; Image Source: theuijunkie.com

ডিকয় ইফেক্ট নিয়ে সর্বপ্রথম ১৯৮২ সালে বিজ্ঞানীরা যখন প্রথমবারের মতো  গবেষণা শুরু করেন তখন গবেষকরা এটিকে শুধু মাত্র পণ্য বিপণনের একটি পন্থা হিসেবেই অভিহিত করেন। তবে কালের পরিক্রমায় এটি এখন একটি পরীক্ষিত সত্য হিসেবে স্বাস্থ্যখাত, রাজনীতি, নিয়োগ, বাণিজ্যসহ আরও বেশ কিছু ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হচ্ছে। এটি আমাদেরকে এটিই প্রমাণ করে দেয় যে তথ্যসমূহের উপস্থাপনের বিশেষ ভঙ্গিমা আমাদের অন্তর্নিহিত সচেতন সিদ্ধান্তকে কীভাবে একনিমিষে বরবাদ করে দেয়- এমনকি বিকল্প সিদ্ধান্তটির কোনো অর্থবহ ভূমিকা না থাকলেও। ডিকয় ইফেক্ট নিয়ে দুটি উদাহরণ দেখে নেওয়া যাক। 

ধরুন, আপনি যাত্রী বিমান ভ্রমণের উদ্দেশ্যে টিকেট কাটতে গেছেন। আপনার সামনে  রয়েছে তিনটি ভিন্ন ভিন্ন পছন্দ এর সেবা।

  • ফ্লাইট এ ৪৫০ ডলার, ট্রানজিটের ব্যপ্তি ৭০ মিনিট।
  • ফ্লাইট বি ৩৭০ ডলার, ট্রানজিটের ব্যপ্তি ১২০ মিনিট।
  • ফ্লাইট সি ৪৮৫ ডলার, ট্রানজিটের ব্যপ্তি ৭০ মিনিট।

শুধু আপনি নন অধিকাংশ মানুষ ‘ফ্লাইট এ’ পছন্দ করে ফেলবে যেহেতু এই ক্ষেত্রে তূলনামূলকভাবে ফ্লাইট সি এর চেয়ে খরচ কম এবং স্টপওভার টাইম উভয় ক্ষেত্রেই একই। এমনকি তারা সর্বনিম্ন খরচের বিনিময়ে কিছুক্ষণ বেশি সময় অপেক্ষা করতে ইচ্ছুক নন। অর্থাৎ তারা ফ্লাইট বি এর মাধ্যমে ভ্রমণে অনাগ্রহী। এবারে তথ্যের ব্যতিক্রমধর্মী উপস্থাপন করা যাক ।

  • ফ্লাইট A ৩০০ ডলার, ট্রানজিটের ব্যপ্তি ৬০ মিনিট।
  • ফ্লাইট B ২৩০ ডলার, ট্রানজিটের ব্যপ্তি ১৫০ মিনিট।
  • ফ্লাইট C ২৩০ ডলার, ট্রানজিটের ব্যপ্তি ১৯৫ মিনিট।

এই ক্ষেত্রে যাত্রীদের প্রথম পছন্দ ‘ফ্লাইট B’ হবে। যৌক্তিকভাবে যদি চিন্তা করেন তবে দেখতে পারবেন, ফ্লাইট B দামে ও স্টপ ওভার টাইমের বিচারে আগে যা ছিল, এবারও তা-ই আছে। কিন্তু এক্ষেত্রে যাত্রীদের ‘ফ্লাইট B‘ বেছে নেওয়ার ব্যাখ্যা হলো, স্বল্প মূল্যে যাত্রীরা বেশ অনেকটা সময় অপেক্ষা করতেও রাজি। উভয় চিত্রেই ব্যক্তির সিদ্ধান্ত নির্ধারণের ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা পালন করেছে তৃতীয় ও সর্বশেষ অপশনটি যাকে বলা হয় ডিকয়। এই ডিকয় অপশনটির উপর ভিত্তি করেই যাত্রীরা অপর দুটির মাঝে যে কোনো একটিকে বেছে নেবেন।

ডিকয় ইফেক্ট

ডিকয় ইফেক্ট। ইমেজ সোর্স – thebehavioursagency.com

দ্য ইকোনমিস্ট এর কলাম লেখক ড্যান অ্যারিলি তার প্রেডিক্টেবলি ইর‍্যাশনাল বইয়ে দেখিয়েছেন বিশ্বের এই প্রথম সারির পত্রিকাটির বিপননের পদ্ধতি। পাঠকের সুবিধার্থে এখানে বলে রাখা ভালো যে পত্রিকাটির সাবস্ক্রিপশনের তিনটি পদ্ধতি রয়েছে। 

  • অপশন (১) ডিজিটাল বা অনলাইন সংস্করণ ৭৯ ডলার।
  • অপশন (২)মুদ্রিত সংস্করণ ১৩৫ ডলার।
  • অপশন (৩) অনলাইন ও প্রিন্ট সংস্করণ যুগপৎ ১৩৫ ডলার।

এখানে স্পষ্টভাবে বোঝা যায় যে, তৃতীয় অপশনটি এখানে ডিকয় হিসেবে কাজ করছে। লেখক ড্যান তার গবেষণালব্ধ ফলাফলানুযায়ী দেখিয়েছেন, পাঠকদের মাঝে তৃতীয় অপশনটি বেছে নেওয়ার প্রবণতাই অধিক, যদিও এর অর্ধেকেরও কম মূল্যে তারা শুধু ডিজিটাল সংস্করণটি পড়তে পারতেন। আবার এই একই মূল্য তালিকা থেকে গৃহীত সিদ্ধান্ত পাল্টে যায় যদি তৃতীয় অর্থাৎ ডিকয় অপশনটিকে উঠিয়ে নেওয়া হয়। সেক্ষেত্রে পাঠকদের প্রথম অপশনটি বেছে নেওয়ার প্রবণতা ৫২% বৃদ্ধি পায়।

ইউনিভার্সিটি অফ ব্রিটিশ কলম্বিয়ার এক দল গবেষকের পরিচালিত এক গবেষণা থেকে এই কথা প্রমাণিত হয়েছে যে,যদি সুনির্দিষ্টভাবে ডিকয় ইফেক্ট আরোপ করা যায় তবে হীরার ব্যবসায়ীদের লাভের পরিমাণ ২১.৪% পর্যন্ত বাড়ানো সম্ভব । ডিকয় ইফেক্ট এর ব্যাবহার শুধু যে ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রেই প্রমাণিত সত্য না কিন্তু নয়। গবেষক ড্যান অ্যারিলির মতে, একজন ব্যক্তি কি অবস্থায় বিরাজ করছেন তার উপরও তার পছন্দ বা সিদ্ধান্ত অনেকাংশেই নির্ভর করে। 

ধরা যাক, আপনি একটি অনলাইন ডেটিং সাইটে ইউজার হিসেবে প্রবেশ করলেন। এখানে দেখা যায় আপনি সঙ্গী বা সঙ্গিনী হিসেবে কাকে বেছে নেবেন তা কিন্তু পুরোপুরি আপনার একক সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করে না। আপনি কোন ক্রমে সাইটে থাকা মানুষদেরকে দেখে যাচ্ছেন তার উপরও নির্ভর করবে আপনি আপনার পরবর্তী ডেটে কাকে পাচ্ছেন। বিষয়টিকে খোলাসা করলে দাঁড়ায় এই যে, সঙ্গী নির্বাচনের ক্ষেত্রে শুধু ওই ব্যক্তিটির সৌন্দর্য, ফিগার একমাত্র নিয়ামক নন।

ডিকয় ইফেক্ট

নুশরাত ফারিয়া। ছবি – ফেসবুক

আপনি যখন আপনার আশে পাশের অন্যান্য মানুষদের সাথে আপনি নিজের অজান্তেই তাকে তুলনা করে ফেলেন কিংবা আপনার অতীত অভিজ্ঞতাও আপনাকে তাৎক্ষণিক মুহূর্তের সিদ্ধান্ত নিতে অনেকাংশে প্রভাবিত করে থাকে। আলোচনাটা কী একেবারেই একপেশে হয়ে যাচ্ছে? অর্থাৎ কেবলই ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গি, লাভ, লোকসান এসব নিয়ে মাতামাতি মনে হচ্ছে? তাহলে চলুন স্বাস্থ্যখাতে ডিকয় ইফেক্টের অনবদ্য ভূমিকা জেনে নিই।

ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের ক্রিশ্চিয়ান ভন ওয়াগনার নামের এক শিক্ষার্থী  ডিকয় ইফেক্ট নিয়ে একটি পরীক্ষা করেন।  মানুষের কোলন ক্যান্সার স্ক্রিনিং একটি অস্বস্তিকর কিন্তু অতীব প্রয়োজনীয় টেস্ট। এই টেস্টে অংশগ্রহণকারীদের প্রথমে স্রেফ দুটি অপশন দেওয়া হয়। তারা চাইলে স্ক্রিনিং করাতে পারেন অথবা না-ও পারেন। আশানুরূপভাবে অধিকাংশ ব্যক্তিই স্ক্রিনিং এড়িয়ে যান। এবার ডিকয় হিসেবে তৃতীয় একটি অপশন দেওয়া হলো, অপেক্ষাকৃত কম সুবিধাজনক হাসপাতালে কিছুটা সময় বাড়তি অপেক্ষা করেও চাইলে তারা স্ক্রিনিং করাতে পারেন। এবার দাবার চাল উল্টে গেল। অংশগ্রহণকারীদের মাঝে স্ক্রিনিং করানোর প্রবণতা বেড়ে গেল। এই ফলাফলকে আরও ভ্যালিডেট করার জন্য নতুনভাবে নকশা করা হলো পরীক্ষাটিকে। নারীদের জন্য দুটি নতুন অপশন দেওয়া হলো, তাদের টেস্ট নারীরাই করবেন (প্রেফারেন্স) বনাম পুরুষরা (ডিকয়) করবেন। এক্ষেত্রেও ডিকয়ের দরুন স্ক্রিনিং এর হার বেড়ে যায়।

ডিকয় ইফেক্ট

পপকর্ণ এর প্যাকেটের ভিতর কোন টি আপনি নেবেন তা দোকানী আগে থেকেই জানেন

এবার আপনাদের একটি চমকপ্রদ তথ্য দিয়ে আজকের লেখা শেষ করার পালা। আপনি কি জানেন? পুরুষদের যৌন হরমোন টেস্টোস্টেরন ডিকয় ইফেক্টকে বাড়িয়ে দেয়। বিষয় টি নিয়ে ৬৩ জন তরুণকে নিয়ে পরিচালিত এক পরীক্ষা থেকে এই তথ্য দ্ব্যর্থহীনভাবে প্রমাণিত হইয়েছিল। পরিক্ষাটি একটি ডাবল ব্লাইন্ড, প্লাসিবো কন্ট্রোল্ড স্টাডি ছিল, অর্থাৎ পরীক্ষক এবং পরীক্ষাধীন ব্যক্তি কেউই জানবেন না কে টেস্টোস্টেরন জেল পাচ্ছেন আর কে প্লাসিবো জেল পাচ্ছেন।

পরিক্ষার্থীদের জেল ব্যবহারের ১৮০ মিনিট পর তাদেরকে একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ পরীক্ষায় অংশ নিতে বলা হইয়েছিল আর সেখান থেকে প্রাপ্ত ফলাফল এই বলে যে, যারা টেস্টোস্টেরন জেল পেয়েছিলেন তারা কনসিসটেন্ট ডিসিশন (ব্যক্তির সচেতন) ও টার্গেট ডিসিশন (ডিকয়) নেওয়ার ক্ষেত্রে যথাক্রমে পিছিয়ে ও এগিয়ে আছেন। আবার ঠিক এর বিপরীত চিত্র দেখা যায় যারা প্লাসিবো (হাইড্রোঅ্যালকোহলিক) জেল পেয়েছিলেন অর্থাৎ এই দলের সদস্যরা সচেতনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পূর্বোক্ত দলের চেয়ে বেশি সমর্থ এবং স্বাভাবিকভাবেই টার্গেট ডিসিশন তারা কম নেন অর্থাৎ ডিকয় ইফেক্ট তাদের ক্ষেত্রে কম কার্যকর।

It’s a bangle  article describe the decoy effect. All the necessary references are hyperlinked within the article. 

REFERENCE:

  • www.behavioraleconomics.com
  • thedecisionlab.com

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

More News Of This Category
©2021 All rights reserved © kalakkhor.com
Customized By BlogTheme
error: Content is protected !!

Discover more from কালাক্ষর

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading