আপনাদের আজ আমার নিজের একটা সিক্রেট বলবো। আমি আমার জাবিত জীবনে খুব বেশি ভয়ের সাথে আমার জীবন অতিবাহিত করিনি। মার কাট বলুন কিংবা অন্ধকারে কোথাও গিয়ে থাকতে বলুন। এমনো হইছে আমি আমাদের চলন বিলের (বাংলাদেশের সব চেয়ে বড় বিল) মাঝে আমাদের যে জমি আছে সেই খানে একা গিয়ে রাত্রে থেকেছি। যে খানে দুই/তিন মাইলেই ভিতর কোন মানুষ থাকতো না। আর যে জায়গায় গিয়ে থাকতাম ঐ খানের সাথেই ছিল ছোট্র একটা ডোবার মত ছিল আর সেই খানে ভুতের আড্ডা ছিল বলে আমাদের গ্রামে জনশ্রুতি আছে। কিন্তু তার পরেও আমি সেই খানে গিয়ে থেকেছি আর আমার এক ফোটা ভয় লাগেনি। তাই আমি মোটা মুটি সাহসী তা সবাই জানে, কিন্তু হাস্যকর তথ্য এই যে আমি মাঠে গিয়ে রাত্রে থাকতে ভয় না পেলেও ভয় পাই লিফটে চড়তে, মিথ্যা বলবো না এই লিফটে চড়তে ভয় পাবার কারনে অনেক সময় আমি সিড়ি বেয়ে দশ বারো তলা উঠে যাই। কিন্তু যে খানে তা উঠতে পারি না সেই খানে লিফটে চড়তেই হয়। আর আমার বুকের ভিতর ফর পাকর শুরু হয়। মনে হয় যদি লিফট ছিড়ে নিচে পড়ি? কত বার যে সৃষ্টিকর্তার নাম জপি তার হিসেব নাই। আর যদি এন টিভি আর টিভি তে জাই । ওদের লিফট তো- যারা এন টিভি আর টিভি এর লিফটে চড়েছেন তারা জানে। আমি যাস্ট আমার জিব্বার কাছে আমার প্রান বায়ু দেখতে পাই। মনে হয় এই তো গেল। লিফটে ওঠার ভয়ের উপর “অপঘাত” নামে আমি একটা নাটক ও বানিয়েছিলাম আর তা ঐ সময় বেশ জন প্রিয়তাও পেয়ে ছিল। আপনি কি জানেন আমার এই লিফটে ওঠার ভয় কে মনস্তাত্বিক ভাষায় একটা রোগ বলে? মনোবিজ্ঞানী রা যার নাম দিয়েছেন ক্লস্ট্রোফোবিয়া (Claustrophobia)। ক্লস্ট্রোফোবিয়া (Claustrophobia) হল কোন বদ্ধ জায়গা বা স্থান এর ভিতি। যদি কোন মানুষ কোন বদ্ধ কোন জায়গা তে যেতে ভয় করে আর এই ভয় পাবার নাম কে ক্লস্ট্রোফোবিয়া (Claustrophobia) বলা হয়।
ক্লস্ট্রোফোবিয়া (Claustrophobia) শব্দটি টি গ্রীক ও ল্যাটিন দুইটি শব্দের সমন্ময়ে গঠিত। “ফোবস”(Phobos) যার অর্থ ভয়, এবং লাতিন শব্দ, “ক্লাস্ট্রাম,”(Claustrum) যার অর্থ “একটি বদ্ধ স্থান”। তাই ক্লস্ট্রোফোবিয়া (Claustrophobia) এর মিনিং দাঁড়ায় ছোট কোন আবদ্ধ জায়গা কিংবা সীমাবদ্ধ জায়গাগুলির প্রতি কাজ করা ভয়। ক্লস্ট্রোফোবিয়া (Claustrophobia) হতে পারে কোন লিফট ,বদ্ধ রুম, ছোট কোন ঘর , লকযুক্ত রুম বা এমনকি ছোট কোন গাড়ি ইত্যাদি স্থান। মোট কথা, আবদ্ধ কোন স্থানের প্রতি কোন মানুষের ভয় পাওয়ার রোগকেই ক্লস্ট্রোফোবিয়া(Claustrophobia) বলে। ক্লস্ট্রোফোবিয়া(Claustrophobia) খুবই সাধারণ। জরীপে দেখা যায়, পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার প্রায় ৭% বা ১০% মানুষই ক্লাস্ট্রোফোবিয়াতে আক্রান্ত।
মডেল – শাকিলা আক্তার । ছবি – কালাক্ষর ডেক্স
গবেষকদের মতে,ক্লস্ট্রোফোবিয়া (Claustrophobia) হ’ল এক প্রকারের অ্যাগ্রোফোবিয়া। অ্যাগ্রোফোবিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা এমন পরিস্থিতিতে উদ্বেগিত হন যেখানে হতে বাঁচার সহায়তা পাওয়ার সহজ উপায় নেই। মনোবিজ্ঞানী রা ক্লস্ট্রোফোবিয়া (Claustrophobia) কে একটি মানসিক ব্যাধি হিসেবে স্বীকৃত এবং প্রায় এক ধরনের উদ্বেগ ব্যাধি হিসাবে বিবেচিত হয়। ক্লস্ট্রোফোবিয়া (Claustrophobia) শব্দটি সাধারণত ব্যবহৃত হয় এমন উদ্বেগজনক অস্বস্তিকে বোঝাতে যা তারা যখন কোনও ঘেরে থাকা অবস্থায় থাকে কিংবা আবদ্ধ স্থানে থাকে তখন অনুভব করে।
ক্লস্ট্রোফোবিয়ার লক্ষন সবার জন্য এক রকম হয় না। মানুষ ও পরিবেশে ভেদে একেক জনের মাঝে ক্লস্ট্রোফোবিয়া (Claustrophobia) এর লক্ষণ এর ভিন্নতা দেখা যায়। কিন্তু লক্ষণের ভিন্নতা হলেও সবার ক্ষেত্রে কমন যে জিনিসটি থাকে তা হল উদ্বেগ অনুভব করা বা ভয় পাওয়া। যা আপনার হউক আর যে কোন মানুষের হউক তা সবার স্বাভাবিক জীবন যাপনের ক্ষমতা প্রভাবিত করার জন্য এটি যথেষ্ট গুরুতর হয়ে দেখা দিতে পারে। ক্লস্ট্রোফোবিয়া (Claustrophobia) তে আক্রান্ত হলে এই লক্ষণগুলো দেখা যায়-
মডেল – মৌসুমি হামিদ । ছবি – কালাক্ষর ডেক্স
ক্লস্ট্রোফোবিয়া (Claustrophobia) এর এই লক্ষণগুলি যত সময় যায় তত বেশি খারাপ হয়ে দেখা দেয়। কখনো কখনো প্যানিক ডিসর্ডার থেকেও তীব্র এবং ৫ থেকে ৩০ মিনিট ধরে চলতে পারে। ক্লস্ট্রোফোবিয়া (Claustrophobia) নামক এই মানসিক রোগে আক্রান্ত ব্যাক্তির শ্বাসকষ্ট এবং ঘাম হওয়া বেড়ে যেতে পারে। আর তা কিছু সময় এতটাই খারাপ অবস্থা হয়ে পরে যে ডাক্তার এর চিকিৎসার শরাপন্ন হওয়া জরুরি হয়ে পরে। তেমন হলে দেরি করা একদমই উচিত না। কারণ অনেক সময় এই লক্ষণ গুলো মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি এনে দেয়, যাতে রোগীর হার্ট অ্যাটাক হয়ে যায়। এছাড়াও গুরুতর ক্লাস্ট্রোফোবিয়া রোগীর অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, নিয়ন্ত্রণ হারাতে বা মারা যাওয়ার ভয় দেখা দিতে পারে। তাই সবারই ক্লস্ট্রোফোবিয়া (Claustrophobia) নিয়ে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।
ক্লস্ট্রোফোবিয়া (Claustrophobia) নামক এই রোগটি চিকিৎসা ছাড়াই অনেকের সেরে যাওয়ার নজির আছে। তবে সেই জন্য এই রোগ কে মোটেও অবহেলা করা উচিৎ নয়। কারণ এর কারনে আপনার জীবনে অনেক ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। তাই আমার রিকোয়েস্ট আপনি যদি আপনার ভিতরে ক্লস্ট্রোফোবিয়া এর কোনও লক্ষণ অনুভব করেন তবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কোন মানসিক স্বাস্থ্য পেশাদার যাকে আমরা সাইক্রিয়াটিস্ট বলি তাদের সাথে যোগাযোগ করা উচিৎ তা সম্ভব না হলে অন্তত আপনার পরিবার চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করা অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ। চিকিৎসার সহায়তা, আপনি এই ভয় বা ফোবিয়া থেকে নিজেকে মুক্ত করে নিজের জীবনকে আরো বেশি উপভোগ্য করতে পারেন।
It’s a bangle article describe the Claustrophobia. All the necessary references are hyperlinked within the article.
আপনাদের লেখা পরে খুব ভালো লাগলো
ধন্যবাদ আপনাকে। ধর্য্য ধরে লেখাটি পড়ার জন্য