কারপাল টানেল সিনড্রোম (carpal tunnel syndrome) এক প্রকারের কব্জির প্রদাহজনিত রোগ। কারপাল টানেল অর্থাৎ কব্জির হাড়গুলির ও সংশ্লিষ্ট কব্জি ভাজকরার পেশীগুলির সংযোগকারী টেন্ডন সমূহের মধ্যবর্তী সুড়ঙ্গে মিডিয়ান স্নায়ুর নিষ্পেষণ/পীড়ন জনিত কারণে এই প্রদাহ হয়ে থাকে। সাধারণত কব্জির উপর ক্রমাগত চাপ পড়ার ফলে এই রোগ হয়ে থাকে। যেমন – অনেকক্ষণ ধরে টাইপ করা, কম্পিউটারের মাউসের অতিরিক্ত ব্যবহার ইত্যাদি। সাধারণত এই ধরনের কাজে এ রোগ হয়ে থাকে।
কারপাল টানেল সিনড্রোম অনেক কারণেই হয়ে হতে পারে। যে হাড়গুলো একত্র হয়ে আমাদের কব্জি গঠন করে, সেই হাড়গুলোকে মেডিকেলের পরিভাষায় কারপাল বোনস বলা হয়। কব্জিতে সেই হাড়গুলোর মধ্যে কারপাল টানেল নামক একটি ছোট্ট টানেলের মধ্য দিয়ে বিভিন্ন শিরা ও স্নায়ু হাতে প্রবেশ করে। যার ভিতর অন্যতম হলো মিডিয়ান নার্ভ। যদি কোনো কারণে এ টানেলের মধ্যকার নাভর্টি চাপ খায় তবে এ ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। এ ছাড়াও ফুলে যাওয়া, পানি জমা ইত্যাদি কারণেও এমন হতে পারে। স্থূলতা, থাইরয়েডের সমস্যা, ডায়াবেটিস, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস ও এসএলই ইত্যাদি রোগ এ রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। এছাড়া একই ধরনের হাতের কাজ বারবার করার কারণে টানেলের ওপর চাপ পড়ে। যেমন— সেলাই করা, টাইপ করা, মাউস ব্যবহার, লেখালেখি করা, টেনিস খেলা, গলফ খেলা, গিটার বাজানো বা বেহালা বাজানো ইত্যাদি। এছাড়াও- হাতের কব্জি থেকে হাতের তালু ও আঙুলগুলো অবশ হয়ে আসা, ঝিনঝিন করা, আবার কখনো ব্যথা হওয়া বা ফুলে যাওয়া—এই সমস্যাগুলো সাধারণত যে রোগের কারণে দেখা যায়, তার মধ্যে অন্যতম কারণ হলো কারপাল টানেল সিনড্রোম।
কারপাল টানেল সিনড্রোম থেকে কিছু উপায়ে মুক্ত হতে পারেন। স্নায়ুর ব্যথা কমানোর ওষুধ ও পাশাপাশি রিহেব-ফিজিও চিকিৎসা এবং হাতের বিশ্রামের জন্য স্ল্পিন্ট ব্যবহার খুবই কার্যকরী । এই রোগে রিহেব-ফিজিও চিকিৎসা খুবই উপকারী এবং খুব অল্প সময়ের মধ্যে সুস্থ হওয়া সম্ভব। ওষুধ ও রিহেব-ফিজিও চিকিৎসায় সম্পূর্ণ নিরাময় না হলে কখনো কখনো সার্জারির প্রয়োজন হতে পারে। যদি কাজ করার সময় আপনার হাতগুলি বেশি ব্যবহার করা হয়ে থাকে তবে প্রতি ঘণ্টায় ১০ থেকে ১৫ মিনিটের জন্য বিরতি নিন এবং আপনার হাত প্রসারিত করুন, হাতের ভঙ্গিতে মনোযোগ দিন পরিবর্তণ করুন। এগুলি ছাড়াও এমন কিছু ক্রিয়াকলাপ এড়িয়ে চলুন যা আপনার কব্জিকে এই সিন্ড্রোমের দিকে ঠেলে দেয়। পরামর্শ পরামর্শ গুলো সব সময় মনে রাখবেন যে যাঁরা টেবিলে বসে দীর্ঘক্ষণ কাজ করেন, লেখেন কিংবা কম্পিউটারে টাইপ করেন, তাঁরা প্রতি ৩০ মিনিট পরপর সামান্য বিরতি নিতে পারেন। হাতের বাহু যেন কাজের সময় বিশ্রামে থাকে। টেবিল ও হাতের ব্যবধান ঠিক করে নিন, যাতে হাত টেবিলের সমান্তরালে থাকে। মাঝেমধ্যে টাইপ করা বা লেখার বিরতিতে রিহেব-ফিজিও বিশেষজ্ঞের নির্দেশিত হাতের ব্যায়ামগুলো করুন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, কারপাল টানেল সিন্ড্রোম সময়ের সাথে সাথে আরো খারাপ দিকে যায়, স্নায়ুর ক্ষতি করে। মেয়েদের মধ্যে এই সমস্যার প্রবণতা বেশি হয়। বিশেষ করে, গর্ভাবস্থায় প্রায়ই এই সমস্যা প্রকট আকারে দেখা দেয়। কারপাল টানেল সিনড্রোমের কারণ এটি মিডিয়ান স্নায়ুতে চাপের কারণে ঘটে এবং অতিরিক্ত প্রদাহের কারণে ফুলে যায়।
Leave a Reply