1. sjranabd1@gmail.com : Rana : S Jewel
  2. solaimanjewel@hotmail.com : kalakkhor : kal akkhor
বেন ফ্রাঙ্কলিন ইফেক্ট: যে অভিনব কৌশল ব্যাবহার করলে শত্রুকেও বন্ধু বানানো যায় - কালাক্ষর
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:১৫ অপরাহ্ন

বেন ফ্রাঙ্কলিন ইফেক্ট: যে অভিনব কৌশল ব্যাবহার করলে শত্রুকেও বন্ধু বানানো যায়

  • Update Time : রবিবার, ১৩ জুন, ২০২১
বেন ফ্রাঙ্কলিন ইফেক্ট
মডেল- মৌসুমি হামিদ ও অর্ষা। ছবি- কালাক্ষর ডেক্স

ইউনিভার্সিটি লাইফে মৌসুমি ও অর্ষা (ছদ্দ নাম) একই সাবেক্টে একই ফ্রেন্ড সার্কেলের অংশ হলেও একটি বিচিত্র কারণে তাদের মধ্যে খুব একটা ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠেনি। আর এই বিচিত্র কারণ হল তাদের সুন্দর্য্য।এরা দেখতে দুই জন ই অসাধারণ সুন্দর। আর মেয়েদের স্বভাব তো জানেন ই, এরা সব সয্য করতে রাজি আছে কিন্তু তুমি আমার চেয়ে দেখতে অনেক সুন্দর এইটা মেনে নেওয়া এদের কাছে মড়ে যাবার চেয়েও বেশি কষ্টকর। যারা দেখতে সুন্দর তারা সব সময় মানুষের ইনটেনশন পেতে পেতে অবস্থা এমন দাঁড়ায় যে কেউ তার উপস্থিত থাকা কালিন সময়ে অন্য কারো দিকে মুগ্ধতা নিয়ে তাকাবে,তা এরা মন থেকে মেনে নিতে চায় না। তাই খেয়াল করলে দেখতে পারবেন ইউনিভার্সিটি লাইফের বন্ধু মহলের যে সব ছোট ছোট গ্রুপ দেখা যায় তাতে সব সময় এক জন সুন্দরী ফ্রেন্ড থাকে, দুই জন নয়। তবে এই সব কারণে অন্য মেয়েদের মত মৌসুমি আর অর্ষার ভিতর অঘোষিত নিরব প্রতিযোগীতা শুরু না হলেও কেউ কারো ব্যাপারে কৌতূহল দেখাতে যায় না। পারত পক্ষে দুই জন দুই জন কে এড়িয়ে চলতে চায়, এটা তাদের ক্লাসে সবারই জানা হয়ে গেছে। 

যদিও বন্ধুবৎসল স্বভাবের মৌসুমি বেশ কয়েকবার স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে চেষ্টা করেছে অর্ষার সাথে একটি উষ্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য। তাই কিছু দিন যখনই অর্ষার কোনো দরকার হয়েছে, সে আগ বাড়িয়ে সাহায্য করতে চেয়েছে। কিংবা নিজে থেকেই অর্ষার সাথে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলেছে, রাত-বিরাতে তাকে মেসেঞ্জারে নকও দিয়েছে। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। তার কাছ থেকে সাহায্য নিতে সংকোচ বোধ করেছে অর্ষা। মেসেঞ্জারে হয়ত মাঝে মধ্যে উত্তর দিয়েছে কিন্তু বেশির ভাগ ই আনসীন থাকার অনেক পরে। আর তার উত্তর গুলো নেহায়েত উত্তর দিতে হয় তাই দিচ্ছি এমন টাইপের দায়সারা গোছের হত। যাতে আন্তরিকতার বিন্দুমাত্র রেশ ছিল না। এই সব কারণে মৌসুমির মনে বদ্ধমুল ধারণা জন্মে যায়, অর্শা তাকে সহ্যই করতে পারে না। অথচ সে এর পেছনে কোনো যৌক্তিক কারণ সে খুঁজে পায়নি। 

বেন ফ্রাঙ্কলিন ইফেক্ট

মডেল- মৌসুমি হামিদ। ছবি – কালাক্ষর ডেক্স

কিন্তু একদিন হুট করেই মৌসুমি আর অর্ষার কাহিনীতে আকস্মিকভাবে টুইস্ট চলে আসে। সে দিন খুব জ্বরে পড়ে গেলো মৌসুমি। অবস্থা এমন যে, কিছুতেই তার পক্ষে সম্ভব না ক্যাম্পাসে যাওয়া বা ক্লাস করা। অথচ এটেনডেন্স তার খুবই প্রয়োজন ছিল। নইলে সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা দিতে পারবে না। তাই সে কে কে অনলাইনে আছে তা দেখতে মেসেঞ্জারে ঢুকল। কিন্তু দুঃখজনকভাবে দেখলো, তাদের ফ্রেন্ড সার্কেলের কেউই অনলাইনে নেই, এক মাত্র অর্ষা ছাড়া!

উপায়ান্তর না দেখে মৌসুমি অর্ষাকে মেসেজ পাঠাল, “দোস্ত, একটা উপকার কর না প্লিজ। যেভাবেই হোক আজকের ক্লাসে আমার প্রক্সিটা দিয়ে দে প্লিজ আমার অনেক জ্বর, ক্যাম্পাসে যাওয়া সম্ভব না।”  এই ম্যাসেজ দেওয়ার প্রায় সাথে সাথে মৌসুমি দেখলো তার এই মেসেজের জবাবে অর্ষা লিখেছে,“হায় হায়, জ্বর বাঁধালি কীভাবে! আচ্ছা চিন্তা করিস না, দিয়ে দেব প্রক্সি। তুই রেস্ট নে।”

অর্ষা যে এত সহজেই রাজি হয়ে যাবে, তা ছিল মৌসুমির কল্পনারও বাইরে ছিল। কিন্তু তার জন্য আরো বড় বিস্ময় অপেক্ষা করছিলো। সেদিন সন্ধ্যায় অর্ষা নিজেই তাকে মেসেজ দিয়ে খোঁজ-খবর নিলো। জানালো, প্রক্সি দিয়েছে সে। শুধু তাই নয় মৌসুমি পুরোপুরি সেরে না ওঠা পর্যন্ত সে প্রতিদিনই দেবে। এ নিয়ে আর চিন্তার কিছু নেই। মৌসুমি যেন শুধু নিজের শরীরের খেয়াল রাখে।

আমার লেখা পুর্বের নিরীক্ষা ধর্মী ব্লগ পোষ্ট গুলো পরতে নিচের লিংক গুলতে ক্লিক করুন- 

তার পর থেকে পরের চার দিন সত্যি সত্যিই সব ক্লাসে অর্ষা মৌসুমির প্রক্সি দিয়ে দিল। নিয়মিত খোঁজও নিতে থাকল। অর্ষার এমন আমূল পরিবর্তনে মৌসুমি যারপর নাই অবাক। এর পর জ্বর সারার পর যেদিন মৌসুমি ক্যাম্পাসে ফিরলো, ফ্রেন্ড সার্কেলের অন্য সবার সামনে অর্ষাকে ধন্যবাদ জানালো । বললো, অর্ষার এই ঋণ আজীবন মনে রাখবে। জবাবে অর্ষা তার পিঠে চাপড় মেরে বলে দ্যায়, “আরে বোকা, আমরা আমরাই তো!”

বেন ফ্রাঙ্কলিন ইফেক্ট

মডেল – অর্ষা। ছবি- কালাক্ষর ডেক্স

এভাবেই ভার্সিটির দুই সুন্দরী মেয়ে অর্ষা এবং মৌসুমির ভিতর দারুণ এক বন্ধুত্ব গড়ে উঠলো। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরবর্তী কয়েকটা বছরে তারা পরিণত হলো হরিহর আত্মায়। সবাই তাদেরকে ডাকত ‘মাণিকজোড়’ বলে। মৌসুমি আর অর্ষার এই বন্ধুত্ব ভার্সিটি লাইফের ভিতরেই সীমাবদ্ধ থাকে নি, দুই জনের দুই জায়গায় বিয়ে হয়ে গেছে। দুই শহরে দুই জনের বাস। কিন্তু আজ ও রোজ তাদের কথা হয়। দুই জনের হাড়ীর খবর সবার আগে দুই জন দুই জন কে জানায়।  

আপনাদের অনেকের কাছেই হয়ত উপরক্ত কাহিনীটি অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে,হয়ত আপনারা ভাবছেন, এমনটা আবার কখনো হয় নাকি? তবে আমি ১০০% নিশ্চিত করে বলতে পারি, আমার এই লেখাটি যারা পড়ছেন, তাদের ভিতর এমন অনেকেই আছেন, যারা মৌসুমি আর অর্ষার কাহিনীর সাথে নিজেদের জীবনের কোনো ঘটনার মিল খুঁজে পেয়েছেন। কেননা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এমনই হয়, যে দু’জন ব্যক্তির মধ্যে ঘনিষ্ঠতা প্রাথমিকভাবে অসম্ভব মনে হলেও পরবর্তীতে তাদের ভিতরেই সব চেয়ে ভালো বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে।

আমরা জানি,ভালো বন্ধু হয়ে ওঠার পেছনে অসংখ্য কারণ থাকতে পারে। তবে অর্ষা এবং মউসুমির মধ্যে বন্ধুত্ব সৃষ্টির ক্ষেত্রে যে প্রভাবকটি কাজ করেছে, তার নাম বেন ফ্রাঙ্কলিন ইফেক্ট (Ben Franklin Effect)।

বেন ফ্রাঙ্কলিন ইফেক্ট কী?

বেন ফ্রাঙ্কলিন ইফেক্ট  কি তা যদি সহজ ভাষায় বলতে যাই,তবে বলতে হয়, বেন ফ্রাঙ্কলিন ইফেক্ট হলো মানুষের এমন এক ধরনের মানসিক অবস্থা, যার সারমর্ম দাঁড়ায়, কোনো ব্যক্তি যদি একবার অন্য কোনো ব্যক্তিকে সাহায্য করে থাকে, আর সেই সাহায্য পাওয়া ব্যাক্তিটি যদি তাকে সেই উপকারের জন্য কৃতজ্ঞতা দেখায়,তাহলে সে সেই ব্যক্তিকে পুনরায় সাহায্য করতে চাইবে। এমন কি সেই ব্যক্তিটিকে সে প্রাথমিকভাবে পছন্দ না করলেও।

অর্থাৎ,আপনি যদি একবার কোনো ব্যক্তিকে সাহায্য করেন,আর সেই ব্যাক্তিটি যদি আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ হয়, তবে আপনার মনে সেই ব্যক্তির প্রতি একধরনের ভালো লাগা জন্মাবে, এবং সেই ভালোলাগার সূত্র ধরে পরবর্তীতে আবারো আপনি তাকে সাহায্য করতে চাইবেন। এভাবে সেই ব্যক্তির সাথে আপনার সম্পর্ক ক্রমশ গভীর হতে থাকবে, এবং এক পর্যায়ে আপনি আর সেই ব্যাক্তি খুব ভালো বন্ধুতে পরিণত হবেন।

বেন ফ্রাঙ্কলিন ইফেক্টের নামকরণের ইতিহাস

বেন ফ্রাঙ্কলিন ইফেক্টের নামকরণ হয়েছে আমেরিকার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা জনকদের এক জন বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিনের নামানুসারে। জন বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন ছিলেন একাধারে একজন লেখক, চিত্রশিল্পী, রাজনীতিবিদ, রাজনীতিক, বিজ্ঞানী, সঙ্গীতজ্ঞ, উদ্ভাবক, রাষ্ট্রপ্রধান, কৌতুকবিদ, গণ আন্দোলনকারী এবং কূটনীতিক। বিজ্ঞান বিশেষ করে পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে তার অবদানসমূহ বেশ উল্লেখযোগ্য। তার ভিতর তড়িৎ সংক্রান্ত বিবিধ বিষয়ে জন বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিনের অবদান অনষিকার্য। জন বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন বজ্রনিরোধক দন্ড, বাইফোকাল লেন্স, ফ্রাঙ্কলিনের চুলা, অডোমিটার, ফ্রাঙ্কলিন হারমোনিকা ইত্যাদির উদ্ভাবক। যাই হউক জন বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিনের আত্মকথা থেকে আমরা বেন ফ্রাঙ্কলিন ইফেক্টের নেপথ্যের কাহিনী জানতে পারি।

ব্যাক্তি জীবনে জন বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিনের একজন ‘হেটার’ ছিলেন, অর্থাৎ যিনি ফ্লাংকলিনকে পছন্দ করতেন না। ফ্রাঙ্কলিনের ভাষ্যমতে, সেই ব্যক্তিটি ছিলেন খুবই ধনী ও উচ্চশিক্ষিত, এবং খুব সম্ভবত তৎকালীন সরকারের উপর সেই ব্যাক্তিটির যথেষ্ট প্রভাবও ছিল।

ফ্রাঙ্কলিন চাইতেন ওই ব্যক্তিকে তার নিজের দলে ভেড়াতে। এই জন্য তিনি অনেক চেষ্টাই করেন, কিন্তু ফ্রাঙ্কলিনের সব প্রচেষ্টা যখন ব্যর্থ হয়ে গেল, তখন ফ্রাঙ্কলিন  সিদ্ধান্ত নিলেন ওই ব্যক্তির কাছে কোনো ব্যাপারে সাহায্য চাইবেন। ফ্রাঙ্কলিন তার এমন ভাবনা থেকে, ওই ব্যক্তিকে অনুরোধ করে বসলেন, তিনি তার লাইব্রেরি থেকে তাকে (ফ্রাঙ্কলিন কে) কিছু দিনের জন্য একটি বই ধার দিতে পারবেন কিনা।

ফ্রাঙ্কলিনের এমন অনুরোধে ওই হেটার ব্যক্তিটি মনে মনে বেশ খুশি হলেন, এবং উদারতার পরিচয় দিয়ে ফ্রাঙ্কলিনকে বইটি ধার দিয়ে দিলেন। এর পর  ফ্রাঙ্কলিন এক সপ্তাহ বইটি নিজের কাছে রাখার পর যখন বইটি ফেরত দিলেন, তখন বইটির ভেতরে একটি চিরকুট লিখে রাখেন,যেখানে লেখা ছিল, “আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ।”

এই ঘটনার পর থেকে তাদের মধ্যে যখনই দেখা হতো, ওই ব্যক্তি ফ্রাঙ্কলিনের সাথে খুবই বন্ধুভাবাপন্ন আচরণ করতেন। এভাবেই তারা ক্রমশ সত্যিকারের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হয়ে যান, এবং তাদের ভিতর গড়ে ওঠা সেই বন্ধুত্ব মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বিদ্যমান ছিল। বেন ফ্রাঙ্কলিন এই ঘটনার কথা স্মরণ করে তার আত্মজীবনীতে লিখেছেন,

যিনি একবার আপনার প্রতি মহানুভবতা দেখিয়েছেন, তিনি আবার তা দেখাতে প্রস্তুত থাকবেন। কিন্তু যাদেরকে আপনি নিজেও ইতিপূর্বে মহানুভবতা দেখিয়েছেন, তাদের বেলায় এ শর্ত খাটবে না।

বেন ফ্রাঙ্কলিন ইফেক্ট

বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিনের বিখ্যাত উক্তি; Image Source: Steemit

বেন ফ্রাঙ্কলিন ইফেক্টের যৌক্তিকতা নিয়ে গবেষণা

বেন ফ্রাঙ্কলিনের আত্মজীবনীতে লেখা বক্তব্যটির ভিত্তি আসলে কতটুকু সত্য, তা যাচাই করার জন্য ১৯৬৯ সালে মনোবিদরা একটি গবেষণা চালান। গবেষণায় কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবী অংশ নেন,স্বেচ্ছাসেবীদেরকে বলা হয়েছিল যে তাদের লটারি জেতার সম্ভাবনা রয়েছে। এই জন্য তাদের প্রত্যেককে কিছু অর্থ প্রদান করা হয়। এরপর স্বেচ্ছাসেবীদেরকে মোট তিনটি দলে ভাগ করা হয়।

  • গবেষক দলের একজন গবেষক প্রথম দলের সদস্যদের কাছে গিয়ে বলেন, এই গবেষণার জন্য মনোবিজ্ঞান বিভাগ থেকে অনুদান দেয়া হয়েছিল। কিন্তু এখন তাদের অর্থ ফুরিয়ে গেছে। তাই তারা তাদেরকে দেওয়া অর্থ গুলো ফিরিয়ে দিতে পারবেন কি না।
  • দ্বিতীয় দলের কাছে এক জন গবেষক গিয়ে বলেন তাদের গবেষণার কাজে ব্যয়কৃত অর্থ তিনি নিজের পকেট থেকে খরচ করেছিলেন, কিন্তু এখন তিনি অর্থসংকটে পড়েছেন। তাই তাদের পক্ষে তাকে তাদের প্রাপ্ত অর্থ ফিরিয়ে দেয়া সম্ভব কি না?
  • তৃতীয় দলটিকে কিছুই জানানো হয় না, এবং তাদের কাছে অর্থ ফেরতও চাওয়া হয় না।

গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়, স্বেচ্ছাসেবীরা দ্বিতীয় দলের কাছে গিয়ে বলা গবেষককে সবচেয়ে বেশি পছন্দ করেছে, যখন তিনি নিজে তাদের কাছে সাহায্য চেয়েছেন, এবং তারা তাকে সাহায্য করেছে। অর্থাৎ দ্বিতীয় দলটি গবেষককে সবচেয়ে বেশি পছন্দ করেছে।

বেন ফ্রাঙ্কলিন ইফেক্টের যৌক্তিকতা নিয়ে সিদ্ধান্ত

এই গবেষণা থেকে প্রাপ্ত ফলাফল দেখে গবেষকরা সিদ্ধান্তে পৌঁছান যে, বেন ফ্রাঙ্কলিন ইফেক্ট আসলেই কাজ করে। যখন কেউ আমাদের কাছে নিজে থেকে কোনো কিছু সাহায্য চায়, তখন আমরা তাকে পছন্দ করতে শুরু করি। গবেষকদের অনুমান, এর পেছনে মূল কারণ হলো আমাদের ‘অবধারণগত অসঙ্গতি’। অর্থাৎ আমরা কাউকে সাহায্য করলাম, অথচ ওই ব্যক্তিকে আমরা পছন্দ করি না, আমরা এই বিষয়টি মন থেকে মেনে নিতে পারি না। তাই ওই ব্যক্তিকে সাহায্য করার পর আমাদের মন চায়, আমরা যেন তাকে পছন্দ করি, কারণ তখন আমাদের মন এটা ভেবে স্বস্তি পায় যে, আমরা তো তাকেই সাহায্য করেছি যাকে আমরা পছন্দ করেছি।”

হিউম্যান সাইকোলজিতে বেন ফ্রাঙ্কলিন ইফেক্টের প্রভাব

আপনি যদি কোনো ব্যক্তিকে সাহায্য করেন তবে দেখা যাবে সাহায্য করার পর ঐ ব্যাক্তি টি যদি আপনার প্রতি তার কৃতজ্ঞতা দেখায়, তবে তাকে আপনি পছন্দ করতে শুরু করবেন, এর পেছনে অবধারণগত অসঙ্গতি ছাড়াও আরো বেশ কিছু কারণ থাকতে আছে।

  • প্রথম কারণ, যখন কেউ নিজে থেকে আপনার কাছে সাহায্য চাইলো, তার মানে দাঁড়ালো যে আপনি ওই ব্যক্তির কাছে গুরুত্বপূর্ণ, এবং ওই ব্যক্তিটি বিশ্বাস করে আপনি তাকে সাহায্য করার যোগ্য। এমন ধারণা থেকে আপনার মনে ভালোলাগা সৃষ্টি হবে। এবং স্বাভাবিক ভাবেই, যাদের কাছে আপনার গুরুত্ব রয়েছে, তাদেরকে পছন্দ করেন। এমনকি সেই মানুষটি আপনার শত্রু বা অপছন্দের ব্যক্তি হলেও! 
  • দ্বিতীয়ত, যখন আপনি কাউকে সাহায্য করলেন আর তার জবাবে সে আপনাকে মন থেকে ধন্যবাদ জানালো, তখন আপনি বিশ্বাস করতে শুরু করবেন যে সে আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ,ফলে তার প্রতি আপনার মনে একটি ইতিবাচক ধারণার জন্ম নেবে। আপনি চাইবেন, এই ইতিবাচক ধারণা যেন সবসময় বজায় থাকে, অর্থাৎ তার কাছে আপনার ভাবমূর্তি কখনো যেন নষ্ট না হয়। এ কারণেই আপনি পুনরায় তাকে সাহায্য করতে চাইবেন, এবং পরবর্তীতে তার সাথে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ভালো ব্যবহার করতে শুরু করবেন।
বেন ফ্রাঙ্কলিন ইফেক্ট

প্রভা। ছবি- কালাক্ষর ডেক্স

উপকারের বিপরীত চিত্র

এই লেখার এতক্ষণ তো বেন ফ্রাঙ্কলিন ইফেক্ট নিয়ে কথা বলা হল কিন্তু  আপনি কি জানেন? এর সম্পূর্ণ বিপরীত মানসিক অবস্থাও আমাদের মাঝে বিদ্যমান আছে। যখন আমরা কারো ক্ষতি করি বা ক্ষতির কারণ হয়ে দাড়াই, তা সে ইচ্ছাকৃত হোক কিংবা অনিচ্ছাকৃত ভাবেই হোক, ক্ষতি করার পর থেকে আমাদের মনে ওই ব্যক্তিটির সম্পর্কে খারাপ ধারণা জন্মাতে শুরু করে। এর পেছনে মূল কারণও সেই অবধারণগত অসঙ্গতি। অনেক সময় দেখা যায়,কোনো কারণ ছাড়াই আমরা কোন ব্যক্তির ক্ষতি করে ফেলেছি, কিন্তু এ বিষয়টি আমাদের মন মানতে চায় না। তাই আমদের মনে ওই ব্যক্তির সম্পর্কে নেতিবাচক চিন্তা জন্মাতে শুরু করে, এবং তার মাধ্যমে নিজেদের মনকে প্রবোধ দিতে থাকি,এই ভেবে যে, “ওই মানুষটা তো আসলেই খারাপ। সুতরাং তার ক্ষতি করে বেশ করেছি,আর তাতে আমরাদের কোনো অন্যায় হয়নি!”

বেন ফ্রাঙ্কলিন ইফেক্ট নিয়ে শেষ কথা 

যারা এই লেখাটি এতক্ষণ ধর্য্য ধরে পরছেন, তারা নিশ্চয়ই জেনে গেছেন কারো সাথে বন্ধুত্ব গড়ে তোলার যে কয়টি প্রধান মূলমন্ত্র আছে তার অন্যতম মূলমন্ত্র সমন্ধে। আপনারা এতক্ষনে বুঝে গেছেন,কারো সাথে বন্ধুত্ব করতে চাইলে অযাচিতভাবে তার উপকার করে তাকে মুগ্ধ করার চেয়েও, নিজেই তার কাছে সাহায্য চাওয়াটি সব চেয়ে বেশি কার্যকর। আর এর মাধ্যমে শুধুমাত্র কেবল সাধারণ কারো বন্ধুত্বই নয়, ঘোর শত্রুর ও বন্ধুত্বও অর্জন করা সম্ভব!

 

 

It’s a bangle article describe the Ben Franklin Effect. . All the necessary references are hyperlinked within the article.

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

More News Of This Category
©2021 All rights reserved © kalakkhor.com
Customized By BlogTheme
error: Content is protected !!

Discover more from কালাক্ষর

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading