1. sjranabd1@gmail.com : Rana : S Jewel
  2. solaimanjewel@hotmail.com : kalakkhor : kal akkhor
সিজোফ্রেনিয়া কি? সিজোফ্রেনিয়া রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার কি? - কালাক্ষর
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:১৫ পূর্বাহ্ন

সিজোফ্রেনিয়া কি? সিজোফ্রেনিয়া রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার কি?

  • Update Time : বুধবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২১
সিজোফ্রেনিয়া
সিজোফ্রেনিয়া

সিজোফ্রেনিয়া এক ধরনের গুরুতর মানসিক রোগ, কিশোর-কিশোরী, নারী-পুরুষ সবাই সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে । তবে সাধারণত ১৫-২৫ বয়সের মানুষ জনের সিজোফ্রেনিয়ায়   আক্রান্ত হবার লক্ষন সব চেয়ে বেশি হয়। রোগীরা বুঝতে পারে না কি তার সমস্যা, কেন ওষুধ খাচ্ছে, কেন ডাক্তারের কাছে যাচ্ছে। ১৮৮৭ সালে জার্মান মনোবিদ এমিল ক্রেপলিন প্রথম এই সিজোফ্রেনিয়া রোগের সন্ধান পান।  সিজোফ্রেনিয়া মূলত মানুষের চেতনাকে আক্রান্ত করে বলে ধারণা করা হয়। এটি একই সাথে আচরণ এবং আবেগগত দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা সৃষ্টি করে। ১৯১১ সালে ইউগেন ব্লুলেয়ার সর্ব প্রথম সিজোফ্রেনিয়া শব্দটি ব্যবহার করেন।

সিজোফ্রেনিয়ার প্রধান লক্ষণ :

  • চিন্তা ও ভাবনার মধ্যে অসংলগনতা।
  •  আচরণ গত সমস্যা।
  • অনুভূতির সমস্যা।

সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত রোগীর চিন্তার মধ্যে যে সব হরেক রকম অসংলগ্নতা দেখা  তা নিচে দেওয়া হল- 

  • অহেতুক সন্দেহ করা : রাস্তা দিয়ে মানুষ যাচ্ছে মনে হচ্ছে তার দিকে বিশেষ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, তাকে দেখে হাসছে, সমালোচনা করছে।
  • ভ্রান্ত বিশ্বাস করা : এই ভ্রান্ত বিশ্বাসের প্রকাশভঙ্গি বিভিন্নভাবে প্রকাশ পেতে পারে। এটা রোগীর বয়স, ধর্মীয় চেতনাবোধ, শিক্ষাগত যোগ্যতা, সামাজিক অবস্থার ওপর নির্ভর করছে। যেমন- আশপাশের লোকজন তার ভাল দেখতে পারে না সর্বদা ক্ষতি করছে বা ক্ষতি করার পায়তারা করছে, তাকে হয়ত কেউ খাবারে ও পানিতে বিষ মিশিয়ে তাকে হত্যা করার চেষ্টা করছে,তার চার পাশের মানুষ জন তাকে সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতি করার চেষ্টা করছে।
  •  রোগীর মনের গোপন কথা না বললেও আশপাশের লোকজন জেনে যায়- কেউ কেউ তারের মাধ্যমে, ফোনের মাধ্যমে, টেলিস্কোপের মাধ্যমে অথবা অন্য কোনো অজানা যন্ত্রের মাধ্যমে জেনে যায়।
  • রোগীর কাজকর্ম, চিন্তাচেতনা এগুলো তার নিজের না বাইরে থেকে কেউ নিয়ন্ত্রণ করছে।
  •  সদুর মঙ্গলগ্রহ কিংবা তার থেকে দুরের কেউ যেন তার সঙ্গে কথা বলছে।
  •  সে স্বপ্নের মধ্য দিয়ে উপর থেকে  অতি প্রাকৃতিক কোন বিশেষ ক্ষমতা লাভ করছে আর তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে মানুষের সেবা করার জন্য।
  • তার নিজের বিশেষ ক্ষমতা আছে, কারণ সে অমুক ফেরেস্তা কিন্তু রোগীর পোশাক-পরিচ্ছদ ও চালচলন ঐ রকম নয়।
  • অনেকে বলে আমার সঙ্গে পরীর যোগাযোগ আছে।
  •  এমনো দেখা গেছে নিজের বাবার নাম পরিবর্তন করে অন্য একজনের নাম বলে কিন্তু সুস্থ হওয়ার পর আবার নিজের বাবার নাম ঠিক বলছে। 
হেলো ইফেক্ট

পরিমনী। ছবি – ফেসবুক

সিজোফ্রেনিয়া আক্রান্ত রোগীর আচরণগত  সমস্যা :

  1.  এই হাসছে আবার কোনো কারণ ছাড়াই কাঁদছে।
  2. হঠাৎ উত্তেজিত হওয়া, মারতে উদ্যত হওয়া।
  3.  বকাবকি ও গালিগালাজ করা।
  4.  বাথরুমে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকা।
  5. মানুষের সঙ্গে মিশতে না চাওয়া।
  6.  একা ঘরের মধ্যে সীমাবদ্ধ জীবনযাপন করা।
  7.  হঠাৎ করে কাপড় বা অন্য কিছুতে আগুন ধরিয়ে দেয়া।
  8. বাইরে বাইরে ঘুরে বেড়ানো (দিনের পর দিন) অথচ আগে এমন আচরণ ছিল না ।
  9. হারিয়ে যাওয়া যেমন ব্রিজের নিচে, মাজারে, গোপন জায়গায় লুকিয়ে থাকা।
  10. আত্মহত্যার চেষ্টা করা।
  11.  উল্টাপাল্টা আচরণ করা ও কথা বলা।
  12. গায়ের কাপড়-চোপড় সবার সামনে খুলে ফেলা।
  13.  নিজের পায়খানা-প্রস্রাব মুখে দেয়া ও দেয়ালে লাগানো ।
  14.  নিজের খাওয়া দাওয়া ঘুম ও শরীরের প্রতি খেয়াল না রাখা। মডেল – অভিনেত্রী – বাধন। ছবি – কালাক্ষর ডেক্স

সিজফ্রেনিয়া রোগীর অনুভুতিগত সমস্যা :

  1. গায়েবি আওয়াজ শোনা : আশপাশে কোনো লোকজন নেই, অথচ রোগীরা কথা শুনতে পায় : কেউ কেউ একদম স্পষ্ট কথা শুনতে পায় ২/৩ জন লোক রোগীর উদ্দেশ্য করে কথা বলছে।
  2.  আবার কখন ফিসফিস আওয়াজ পাখির ডাকের মতো শব্দ শুনতে পায়। এই কথা শোনার কারণে অনেকে কানে তুলে বা আঙুল দিয়ে বসে থাকে।
  3.  নাকে বিশেষ কিছুর গন্ধ পাওয়া।
  4.  চামড়ার নিচে কি যেন হাঁটছে, এরকম অনুভূতি লাগা। 

হিউম্যান সাইকোলিজি নিয়ে আমার লেখা পুরাতন পোস্ট গুলো পড়ে আসতে পারেন 

মনোবিজ্ঞানীদের মতে, সিজোফ্রেনিয়ার সুনির্দিষ্ট কারণ এখনো আবিষ্কার করা সম্ভব হয়নি। তবে বিভিন্ন কারণে সিজোফ্রেনিয়া হতে পারে। একেক ব্যক্তির ক্ষেত্রে একেক কারণ বেশি কাজ করতে পারে। আবার কতগুলো কারণ একসাথেও কাজ করতে পারে। বংশে কারো থাকলে এ রোগ হওয়ার আশঙ্কা বেশি। বাবা মা দুজনের মধ্যে একজনের থাকলে সন্তানের এ রোগ হওয়ার আশঙ্কা ১৭ শতাংশ। যদি উভয়েরই থাকে তবে সন্তানের হওয়ার আশঙ্কা প্রায় ৪৬ শতাংশ। গবেষণায় দেখা যায়, মস্তিষ্কে এক ধরনের রাসায়নিক উপাদানের পরিমাণে ত্রুটি এবং নিউরোকেমিক্যাল উপাদান ভারসাম্যহীন হলে এ রোগ হয়। জন্মকালীন কোনো জটিলতা থাকলেও এ রোগ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। বঞ্চিত পরিবারে সিজোফ্রেনিয়া বেশি দেখা যায়। গর্ভকালীন মা ইনফ্লুয়েঞ্জা বা রুবেলা আক্রান্ত হলে শিশুর পরবর্তী জীবনে এ রোগ হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। সিজোফ্রেনিয়া আক্রান্ত অনেকের মধ্যেই আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়ে যায়। অন্যকে শারীরিকভাবে আঘাত করার প্রবণতা তৈরি হয়।

যুক্তরাষ্ট্র্রের ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক দের মতে, সিজোফ্রেনিয়া রোগটি মুলত একক কোনো রোগ নয়। বরং সর্ব মোট আটটি ভিন্ন ধরনের সমস্যার সমন্বিত রূপ। তাঁদের মতে, এই নতুন ধরনের ব্যাখ্যায় রোগটি ব্যাখ্যার নতুন দুয়ার খুলে গেছে। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানী ড্রাগান সভ্রাকিক বলেন, জিনগুলো আসলে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে না। বরং ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করে মস্তিষ্কে বিঘ্ন ঘটায়। ফলে সিজোফ্রেনিয়া হয়।

এ রোগ কীভাবে নির্ণয় করা হয় এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আক্রান্ত ব্যক্তির আচরণ ও অতীত কর্মকাণ্ড পযর্বেক্ষণের মাধ্যমে এই রোগ নির্ণয় করা হয়।

শেষের কথা 

গবেষণায় দেখা গেছে, সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্তদের মধ্যে শতকরা ২৫ ভাগ চিকিৎসার পর সম্পূর্ণ ভালো হয়ে যায়,আবার ৫০% ওষুধ ব্যবহারের মাধ্যমে সুস্থ জীবনযাপন করতে পারে। বাকি ২৫ ভাগ কখনোই ভালো হয় না। এক্ষেত্রে সবচেয়ে নিরাপদ পদ্ধতি হচ্ছে চিকিৎসক বা বিশেষজ্ঞদের পরামর্শমতো চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়া। কারণ নিয়মিত ওষুধ ও কতগুলো মনোবৈজ্ঞানিক কৌশল প্রয়োগ এবং উপদেশ মেনে চললে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এই রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। 

সিজোফ্রেনিয়ায় দুই ধরনের চিকিৎসা রয়েছে : ওষুধ প্রয়োগ ও সাইকোথেরাপি। এক্ষেত্রে ইনডিভিজুয়াল সাইকোথেরাপির মধ্যে রয়েছে হ্যালুসিনেশন নিয়ন্ত্রণ, ফ্যামিলি থেরাপি, যোগাযোগের প্রশিক্ষণ, মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের কৌশল ইত্যাদি। অনেক সময় ভালো হয়ে যাওয়ার পর ওষুধ বন্ধ করে দিলে পুনরায় রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়। এ জন্য মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা জরুরি।

সিজোফ্রেনিয়া নিয়েও একজন রোগী ভালোভাবে বাঁচতে পারে, যদি ঠিকমতো চিকিৎসা করা যায়। এক্ষেত্রে পরিবার ও সমাজের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।

 

It’s a bangle  article describe the schizophrenia . All the necessary references are hyperlinked within the article.

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

More News Of This Category
©2021 All rights reserved © kalakkhor.com
Customized By BlogTheme
error: Content is protected !!

Discover more from কালাক্ষর

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading