হেলিকপ্টার কি? হেলিকপ্টার এর ব্যাবহার কেন আর কি জন্য হয় সবাই জানেন। কিন্তু হেলিকাপ্টার প্যারেন্ট বা অভিভাবক সমন্ধে আপনারা কতটা জানেন? না জানলেও অসুবিধা নেই কারন আজকের লেখায় আমরা এর বিষদ আলোচনা করবো। হেলিকাপ্টার প্যারেন্টস বলতে সেইসব মা-বাবাকে বোঝানো হয় যারা সন্তানদের সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করেন থাকেন তাদের সন্তানেরা যেন জীবনে সফলতা পায়। আক্ষরিক অর্থে সন্তানের উপর হেলিকপ্টারের মতো ঘুরতে থাকা স্বভাবের জন্য ই এমন উদ্ভট নাম করন করা হয়েছে । ড. হাইম গিনট ১৯৬৯ সালে প্রথম এই বিশ্লেষণটি ব্যবহার করেন। পরবর্তীতে এতটাই জনপ্রিয় হয় যে ২০১১ সালে এটা ডিকশনারিতে অন্তর্ভূক্ত হয়।
এখন দেখা যাক সন্তান লালন-পালনের ক্ষেত্রে অভিভাবকদের অতি সচেতনতা বা ‘over protective parenting’ কি ভাল না খারাপ? গবেষণা কিন্তু বলে যেসব মায়েরা মাত্রাতিরিক্ত কঠোরভাবে সন্তানের জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করেন তাদের অসুখী হওয়ার প্রবণতা খুব বেশি। আমেরিকার মেরি ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় দেখা যায় ’হেলিকপ্টার মায়েরা’ বিষন্নতায় ভোগার ঝুঁকিতে থাকেন। অতিসচেতন এই অভিভাবকরা হন সমাজের উচ্চশিক্ষিত মধ্যবিত্ত বা ধনী। নিম্নমধ্যবিত্ত বা অশিক্ষিত পরিবারে এমনটা দেখা যায় না।
এখনকার প্রেক্ষাপটে বেশিরভাগ ছেলেমেয়েই শৈশবে স্বাধীনভাবে বেড়ে উঠতে পারে না। অভিভাবকরা ঠিক করে দেন সন্তান কোন পোশাক পড়বে, কোন বিষয়ে পড়াশুনা করবে। এমনকি স্কুলে বাচ্চার বন্ধুটা কে হবে সেটাও মা-বাবার পছন্দনীয় হতে হয়। এসব ক্ষেত্রে অকাট্য যুক্তি হচ্ছে- নিশ্চিত একটা ভবিষ্যতের জন্য এছাড়া কোন উপায় নেই, তাছাড়া সব মা-বাবাই তো সন্তানের মঙ্গল চান। কিন্তু আদতে নিজের অজান্তেই তারা সন্তানের অন্যতম যে ক্ষতিগুলো করে থাকেন-
সন্তান বড় হয়ে দুঃশ্চিন্তাগ্রস্ত রোগ (Anxiety disorder) এ ভুগে।
আত্মবিশ্বাসের অভাব থাকে যা তাদের ক্যারিয়ারকেও প্রভাবিত করে।
মানিয়ে নেয়ার দক্ষতা গড়ে উঠে না। আর তাই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে অল্পতেই মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে।
জীবনে চলার পথে ব্যর্থতা এবং অনিশ্চয়তাকে যথাযথ ভাবে মোকাবেলা করতে পারে না।
মডেল – বাধন ও তার মেয়ে। ছবি – কালাক্ষর ডেক্স
প্রশ্ন হচ্ছে অভিভাবকরা কেন এমনটা করে থাকেন? শুধুই কি সন্তানের সুন্দর, মসৃণ একটা জীবন নিশ্চিত করা, নাকি এর পিছনে আর কোন মনস্তত্ত্ব আছে?
যেসব অভিভাবকের নিজের শৈশব ছিল ভালবাসাহীন বা অবহেলায় ভরা, অনেক সময় তারা নিজের সন্তানের প্রতি মাত্রাতিরিক্ত সচেতনতা দেখিয়ে থাকেন। সাইকোলজির ভাষায় একে বলে ‘কম্পেনসেশন’।
অন্য “সচেতন” অভিভাবকদের দেখে আত্মগ্লানিতে ভোগা। ইংরেজীতে যাকে বলে “peer pressure”. হয়ত ভাবছেন সন্তানকে নিজেদের সর্বোচ্চটা দিতে পারছেন না।
মজার ব্যাপার হচ্ছে জর্জিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর রিচার্ড মুলেনডর মোবাইল ফোনকে অন্যতম কারণ হিসাবে চিহ্নিত করেছেন। তিনি একে অভিহিত করেছেন পৃথিবীর দীর্ঘতম “Umbilical cord” হিসাবে।
বয়স অনুযায়ী ছেলেমেয়েকে নিজের কাজ নিজে করতে দিন। চার-পাঁচ বছরের বাচ্চার ব্যাগ গুছিয়ে দেয়ার দরকার আছে, কিন্তু দশ বছরের একটা বাচ্চা নিজের স্কুলের ব্যাগ নিজেই গুছাতে পারে।
তাদের নিজেদের অভিজ্ঞতা থেকে শিখতে দিন। সন্তানকে অবশ্যই সুরক্ষা দিবেন। কিন্তু কিছু বিষয় তাদের নিজেদের উপর ছেড়ে দেয়াই ভালো। ভুল থেকেই শিক্ষা নেবে। নিজের জীবনের দায়িত্ব নেয়ার মানসিকতা তৈরী হবে।
ব্যর্থতাকে মেনে নিতে শেখান। অঙ্কে ১০০ তে ৬০ পেলে ক্লাসের অন্য বাচ্চার সাথে তুলনা করে অভিভাবক হিসাবে নিজে ভেঙ্গে পড়বেন না!
অনেক মা-বাবা আছেন বাচ্চার স্কুলের হোমওয়ার্ক করে দেন। যা আপনার সন্তান নিজে করতে পারে অভিভাবক হিসাবে তা করে দেবেন না।
জীবনের সর্বক্ষেত্রে আপনি হয়ত তার সাথে থাকতে পারবেন না। তাই সন্তানকে জীবন যুদ্ধে জয়ী হওয়ার জন্য স্বাবলম্বী হতে সাহায্য করুন ছোটবেলা থেকেই।
Leave a Reply