1. sjranabd1@gmail.com : Rana : S Jewel
  2. solaimanjewel@hotmail.com : kalakkhor : kal akkhor
সেলফ সারভিং বায়াস: নিজের ব্যর্থতার দায়ভার অন্যকে দিতে যখন আমরা অযুহাতের দারস্ত হই (পর্ব - দুই) ) - কালাক্ষর
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ০৩:২৯ অপরাহ্ন

সেলফ সারভিং বায়াস: নিজের ব্যর্থতার দায়ভার অন্যকে দিতে যখন আমরা অযুহাতের দারস্ত হই (পর্ব – দুই) )

  • Update Time : সোমবার, ৭ জুন, ২০২১
সেলফ সারভিং বায়াস: নিজের ব্যর্থতার দায়ভার অন্যকে দিতে যখন আমরা অযুহাতের দারস্ত হই (পর্ব - দুই) )
মডেল - শবনম ফারিয়া। ছবি - কালাক্ষর ডেক্স

আচ্ছা আপনার কি কখনো মনে হইছে? আমরা কেন অজুহাত তৈরির মাধ্যমে নিজের দোষের দায়ভার অন্যের ঘাড়ে চাপাতে চাই? আমাদের বহুল চর্চিত “অজুহাত” টি আদতে কি? কেনই বা আমরা স্রস্টা প্রদত্ত দুইটি হাত রেখে অজুহাত এর দারস্ত হই? আচ্ছা,অজুহাত সৃষ্টির সময় মানুষের মনে কি ধরণের প্রভাবক কাজ করে? অজুহাত সৃষ্টির জন্য আমার বন্ধু মহলে যারা খুব বেশি পারদর্শী তাদের অনেককেই আমি “অজুহাত” নিয়ে এই জাতীয় প্রশ্ন করেছিলাম কিন্তু হাসব না কাদবো? আমার প্রিয় বন্ধুগন কেন সব কিছুতেই তারা এত “অজুহাত” বানায়? এর উত্তর দিতে আর একটি অজুহাত ব্যাবহার করেছিল, আমি জানি আমার মত আপনাদের মনও সদা কৌতুহলী, আপনার ও জানতে ইচ্ছে করে আমরা কেন “অজুহাত” বানাই? মানুষ কেন নিজের ব্যার্থতার ক্রেডিট নিজে না নিয়ে অযুহাতের উপর ছেড়ে দ্যায়? তাদের জন্য ই সৃজনশীল ব্লগ “কালাক্ষর” এর আজকের আয়োজনটি যদি পড়তে চান তবে “অজুহাত” নিয়ে আমার লেখা প্রথম পর্বটি পড়ে আসুন। নইলে মাথা মুন্ডু কিছু না বুঝে আমাকেই অযুহাতের কাঠ গড়ায় দাঁড় করাবেন। যা আমার জন্য খুব বেদনা দায়ক হবে। 

যে কোনো কিছুতে সফল হলে আমরা আমাদের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়াগুলো এক রকম হয়ে থাকে। সাফল্যের জন্যে নিজের দক্ষতা নিয়ে আমরা গর্ববোধ করে থাকি। কিন্তু ব্যর্থ হলে, যেসব ঘটনা আমাদের পক্ষে কাজ করেনি, বা আমাদের সফলতার পথে যে সব ঘটনা পথ আগলে রেখেছে সেগুলো খুঁজে বের করি এবং সেগুলোকে দোষারোপ করি। কিন্তু আমরা এতটাই সার্থপর যে আমাদের সাফল্যের সময়ে যে সকল নিয়ামকগুলো আমাদের সাফল্য পাবার পক্ষে কাজ করেছে, সেগুলোকে আমরা প্রায়শয় নয় বেশির ভাগ সময়েই এড়িয়ে যাই। মানুষের এই অভ্যাস টি মানুষের জীবন কে সুন্দর করে তোলার ক্ষেত্রে অক্ষতিকর হিসেবে দেখা দেওয়া এই অভ্যাসটি আমাদের জীবনে যথেষ্ট পরিমাণ প্রভাব ফেলে এবং সেই অনুযায়ী আমাদের আচরণ গড়ে তোলে। আমরা হয়ত নিজেরাও জানি না আমাদের এই খারাপ অভ্যাস টি আমাদের এক ধরনের চিন্তাগত ত্রুটি, মনোবিজ্ঞানে যাকে ‘সেলফ সারভিং বায়াস’ (Self-Serving Bias) বলা হয়।  ‘সেলফ সারভিং বায়াস’ (Self-Serving Bias) অনেক দশক ধরেই গবেষকদেরকে আকর্ষণ করেছে এবং তারা এ সম্পর্কে আরো বিষদ ভাবে জানতে অনেক ধরনের গবেষণাও চালিয়েছেন।

সেলফ সারভিং বায়াস (Self-Serving Bias) এবং আমাদের জীবনে এই চিন্তা গত ভ্রান্তির প্রভাব সম্পর্কে প্রতিটি মানুষেরই সচেতন থাকা গুরুত্বপূর্ণ। যার ফলে আমাদের নিজেদের ভুল থেকে শেখা এবং যে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া উন্নত করার পথে সহায়ক হবে। সেলফ সারভিং বায়াস (Self-Serving Bias)  ব্যর্থতার পেছনে আমাদের নিজেদের ভূমিকাগুলো অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়। ফলে, অতীতের ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার পথে আমরা নিজেরাই প্রধান তম বাঁধা হয়ে দাঁড়াই। এই কথা সবাই স্বীকার করবেন যে, মানুষের জীবনে সফল হওয়া এবং লক্ষ্য অর্জনের পথে একটি বড় উপাদান হচ্ছে, ভুল সিদ্ধান্ত নেয়া এবং সেই সিদ্ধান্ত থেকে শিখে পাপ্ত জ্ঞ্যানের মাধ্যমে পরবর্তীতে উন্নতি করা। কিন্তু যদি কেউ নিজের ভুলগুলো সেলফ সারভিং বায়াস (Self-Serving Bias) এর প্রভাবের  কারণে চিহ্নিত ই করতে না পারে, তাহলে তার উন্নতি করাটা তার জন্য খুব কঠিন একটি ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে।

কার্নেগি মেলন বিশ্ববিদ্যালয়ে করা একটি গবেষণায়,পৃথিবীর জলবায়ু পরিবর্তন নীতিমালাগুলোর ব্যাপারে সাধারণ মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি কেমন? বিষয় গুলো তারা কি ভাবে মূল্যায়ন করে সেই ব্যাপারে একটি জরিপ চালানো হয়েছিল। চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের মধ্যে চালানো এই জরিপে গবেষকরা দেখতে পেলেন, জরিপে অংশ নেওয়া বেশির ভাগ ছাত্রই জাতীয়তাবাদ সেলফ সারভিং বায়াস (Self-Serving Bias) ধারণ করে। গ্রিন হাউজ গ্যাস অপসারণে ব্যর্থতার জন্যে তারা  নিজ নিজ দেশ কে ইতিবাচক অবস্থানে রেখে অন্য সব দেশ গুলোকে নেতিবাচক অবস্থানে ঠাই দিচ্ছিল।

সেলফ সারভিং বায়াস (Self-Serving Bias) এর উপর কার্নেগি মেলন বিশ্ববিদ্যালয়ের করা এই গবেষণা থেকে পাওয়া ফলাফল এটাই প্রমাণ করে যে, বর্তমানে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের গ্লোবাল ওয়ার্মিং বা কার্বন অপসারণ নীতি তে একমত না হতে পারার পেছনে সেলফ সারভিং বায়াস (Self-Serving Bias) এর অনেক বড় একটি ভূমিকা রয়েছে। সেলফ সারভিং বায়াস (Self-Serving Bias) কোন দেশের সরকারের নেওয়া অনেক সিদ্ধান্তে  ভুল ফলাফল বয়ে নিয়ে আসতে পারে। তাই নীতি নির্ধারকদের মধ্যে কগনিটিভ বায়াসগুলো কমানো গেলে সিদ্ধান্তগুলো তারা নিরপেক্ষভাবে নিতে পারবেন এবং তাতে জনগণের জন্যে সর্বোচ্চ সুবিধা নিশ্চিত করা যাবে।

বহু কাল আগে থেকে শুরু হলেও সর্বপ্রথম ১৯৬০-এর দশকের শেষের দিকে সেলফ সারভিং বায়াস (Self-Serving Bias)  নিয়ে উল্লেখযোগ্য কাজ হয়েছিল । গবেষক গন এট্রিবিউশন বায়াস নামে  আরেকটি বায়াসের ব্যাপারে গবেষণা করতে গিয়ে সেলফ সারভিং বায়াস সম্পর্কে একটি থিওরি দাঁড়া করানো হয়েছিল। এই গবেষণার সময়ে অস্ট্রিয়ার মনোবিজ্ঞানী ফ্রিৎজ হাইডার লক্ষ করেন যে, যে সব ঘটনার পেছনে সুনির্দিষ্ট কারণ খুঁজে পাওয়া সহজ নয়, সেখানে মানুষ আত্মমর্যাদাবোধ বজায় রাখতে সেলফ সারভিং বায়াস (Self-Serving Bias) এর শিকার হয়। 

সেলফ সারভিং বায়াস: নিজের ব্যর্থতার দায়ভার অন্যকে দিতে যখন আমরা অযুহাতের দারস্ত হই (পর্ব - দুই) )

ফাইল ফটো

বর্তমান কালে সেলফ সারভিং বায়াস (Self-Serving Bias) টি নিয়ে বিশেষ করে মানব জীবনে এর প্রভাব নিয়ে বিভিন্ন ভাবে পরীক্ষা করা হচ্ছে। এই সেলফ সারভিং বায়াস (Self-Serving Bias) টির কারণ অনুসন্ধানের জন্যে ল্যাবরেটরি টেস্টিং, নিউরাল এক্সপেরিমেন্ট, ন্যাচারালিস্টিক ইনভেস্টিগেশন সহ নানান পন্থা ব্যবহার করা হচ্ছে। মানুষের কাজের ক্ষেত্র, মানুষের ব্যক্তিগত সম্পর্ক, খেলাধুলার পারফরম্যান্স, ক্রেতা বা ভোক্তার সিদ্ধান্ত এবং কম্পিউটার প্রযুক্তি প্রায় সব জায়গাতেই  সেলফ সারভিং বায়াস (Self-Serving Bias) এর গবেষণা টি করা হচ্ছে। বর্তমান গবেষণাগুলোতে শারীরবৃত্তীয় বিভিন্ন কারণও খুঁজে দেখা হচ্ছে, জৈবিক প্রক্রিয়াগুলো কিভাবে সেলফ সারভিং বায়াসে অবদান রাখে তা বুঝার জন্যে।

মানুষের ডিপ্রেশনের সাথে সেলফ সারভিং বায়াস (Self-Serving Bias) এর সম্পর্ক নিয়েও আজকাল গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা হচ্ছে। এতে দেখা যায় হতাশ কিংবা ক্লিনিক্যালি ডিপ্রেসড মানুষেদের ভিতর সাধারণ মানুষের তুলনায় সেলফ সারভিং বায়াস (Self-Serving Bias) কম প্রভাব বিস্তার করে। যে হুতু হতাশ এবং ডিপ্রেশান এ ভোগা মানুষ গুলোর ভিতর মুই কি হনু রে এই জাতীয় অহমিকা খুব কম কাজ করে তাই তারা অপ্রত্যাশিত ফলাফলগুলোকে নিজেদের দোষ এবং তাদের চরিত্রের উপরে নিয়ে ন্যায়। শুধু তাই নয় এই জাতীয় লোক জন যদি সাফল্য পায় তবে তার ক্রেডিট ও নিজে নিতে চায় না, বরং তারা তাদের সাফল্যের অবদান গুলো বাইরের নিয়ামকগুলোকে নয়ত নিজেদের ভাগ্যকে দিয়ে থাকে। মানুষের মাথা থেকে সেলফ সারভিং বায়াস (Self-Serving Bias) এর ভুত তাড়াবার পেছনে  মানুষের প্রধান করনীয় হল, নিজেদের নেতিবাচক আবেগ চিহ্নিত করা এবং একি সাথে নিজের কার্যক্রম ও অবদানের প্রতি  গঠন মূলক ভাবে যন্তবান হওয়া।

মানুষের জীবনে সেলফ সারভিং বায়াস (Self-Serving Bias) এর ঘটনা কেন ঘটে তার  কয়েকটি কারণ বের করা যায়। এর ভিতর সব চেয়ে স্টং একটি কারণ হল,মানুষের সহজাত আত্মমর্যাদাবোধ। মানুষের মনে আত্মমর্যাদাবোধ বজায় রাখা এবং বৃদ্ধি করার সাথে সেলফ সারভিং বায়াস (Self-Serving Bias) এর খুব ভালো একটি সম্পর্ক বিদ্যমান। যদি মানুষের স্বভাবের সাথে তার সাফল্যকে একাত্ম করা যায়, এবং তার ব্যর্থতার দায়ভার যদি অন্য কারো ঘাড়ে চাপানো যায়, তবে তাকে নিয়ে যদি সত্যই কোন সমালোচনার সুযোগ থেকেও থাকে তা থেকে নিজেকে নিরাপদ রাখা যায়। সেলফ সারভিং বায়াস (Self-Serving Bias) মানুষকে তার সত্যিকারের ব্যক্তিত্ব এবং  কঠিন আবরনে ঢাকা বাস্তবতাকে সোজা পথে নয় বরং একটি তির্যক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে বাধ্য করে। তারা তখন ভাবে এভাবে হয়ত নিজেদের আত্মমর্যাদাবোধ নিরাপদ রাখা যাবে। 

সেলফ প্রেজেন্টেশন বলতে আমরা নিজের তথ্যগুলো অন্যের কাছে কীভাবে প্রকাশ করা হচ্ছে বা প্রকাশ পাচ্ছে সেই প্রক্রিয়াগত ব্যাপারটিকে বুঝে থাকি। মানুষের নিজেকে এরকম ভাবে প্রকাশের পেছনে প্রধারণত দুইটি কারণ কাজ করে। নিজের ব্যক্তিগত যে প্রতিচ্ছবি যা আমরা নিজেরা নিজের মনের মধ্যে ধারণ করি সেটা অন্যের সাথে মেলানো এবং অন্য কারণটি হল, অন্য কারো পছন্দ ও প্রত্যাশার সাথে নিজের প্রতিচ্ছবি মেলানোর জন্যে। মূলত এই কাজটি মানুষ নিজের আত্মমর্যাদাবোধ ধরে রাখার জন্যে করে থাকে, কারণ অন্যেরা তার সম্পর্কে কী ভাবছে তা তাকে প্রভাবিত করে। ফলে নিজের আত্মমর্যাদাবোধ বৃদ্ধির প্রয়াশে মানুষ তার নিজের পছন্দশই প্রতিচ্ছবি অন্যের কাছে সক্রিয়ভাবে বর্ণনা করে। 

সেলফ প্রেজেন্টেশন এর ক্ষেত্রে মানুষের মনে সেলফ সারভিং বায়াস (Self-Serving Bias) বায়াসটির প্রভাব প্রকট আকারে দেখা যাবার কারণ হল, মানুষ সহজাত ভাবে আশাবাদী স্বভাবের হয়ে থাকে। কিন্ত যখন মানুষ কোন নেতিবাচক ফলাফলের ভিতর দিয়ে যায়, সেই নেতিবাচক ফলাফলটি মানুষের মনে আশাবাদী প্রত্যাশার জায়গায় এক ধরনে ক্ষতের সৃষ্টি করে। যা মানুষ মেনে নিতে চায় না। আর এই কারণেই মানুষ তার নেতিবাচক ফলাফল গুলোর নিজের ঘাড়ে না চাপিয়ে পরিস্থিতিগত বা বাইরের ফ্যাক্টরগুলোর উপরে চাপায়। যাকে আমরা অজুহাত বলে থাকি। আমাদের আশাবাদী মনোভাবের পাশাপাশি আমরা আরেক রকম ভুলের শিকার হয়ে থাকি, মনোবিজ্ঞানীরা যাকে ‘এট্রিবিউশন ইফেক্ট’ নামে চিহ্নিত করেন। এই ইফেক্টের প্রভাবে আমাদের আশে পাশে অন্যেদের করা ভুল গুলোর জন্য, আমরা ব্যক্তিগতভাবে সেই মানুষটিকেই দায়ী করি কিন্তু নিজেরা সেই একি ভুল করলে, বিভিন্ন অজুহাত সৃষ্টির মাধ্যমে পরিস্থিতিকে দায়ী করার প্রবণতা দেখাই।

সেলফ সারভিং বায়াস (Self-Serving Bias) বিভিন্ন বয়স ও সংস্কৃতির মানুষের মধ্যে বিভিন্নভাবে দেখা যায়। বিশেষ করে কম বয়সী এবং বৃদ্ধদের মধ্যে সেলফ সারভিং বায়াস (Self-Serving Bias) টির প্রভাব সব বেশি দেখা যায়। সংস্কৃতিগত দৃষ্টিকোণ থেকে, এই বায়াসে মিশ্র সংস্কৃতির প্রভাবের ব্যাপারে যদিও গবেষকরা এখনো একমত হতে পারেননি। তবে তারা বিশেষ ভাবে পাশ্চাত্য এবং প্রাচ্যের সংস্কৃতির সাথে সেলফ সারভিং বায়াসের ভিন্নতা কীভাবে জড়িত, সেই ব্যাপার নিয়ে কাজ করছেন। যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের মতো ব্যক্তিবাদী সংস্কৃতি অনুশীলন করা হয়, সাফল্য ও আত্মমর্যাদার উপরে সেখানে প্রচণ্ড গুরুত্বারোপ করা হয়। তাই নিজেকে ব্যর্থতার দায় থেকে মুক্ত করার জন্যে বায়াসের প্রবণতা বেশি দেখা যায়। 

সেলফ সারভিং বায়াস (Self-Serving Bias) এর প্রভাব আমাদের কর্মক্ষেত্রে অনেক ভাবে দেখতে পাওয়া যায়। আপনি যদি কোন অফিসে চাকুরী করেন তবে ঠিক ই দেখেছেন যে, আপনার যেসব সহকর্মীর সাথে আপনার সম্পর্ক বন্ধুত্ব পুর্ণ নয় কিংবা যাদের সাথে আপনার খুব বেশি মেশা হয় না, কোন কাজের নেতিবাচক ফলাফলের সময়ে তাদের আপনার কিংবা আপনার মত মানুষের উপর দোষ চাপানোর প্রবণতা দেখা যাবে। অন্যদিকে, প্রেমজনিত কিংবা ঘনিষ্ঠ সম্পর্কগুলোতে একে অপরকে দোষ দেয়ার প্রবণতা কম দেখা যায়। আবার, চাকরি পেলে কিংবা তা হারালে সেখানেও এই বায়াসের দেখা মেলে। কেউ চাকরি পেলে, সাধারণত নিজেদের দক্ষতা ও জ্ঞানকে এর পেছনে কারণ হিসেবে চিহ্নিত করে। অন্যদিকে, চাকরি হারালে বা ইন্টারভিউতে না টিকলে বাইরের নিয়ামকগুলোকে দায়ী করে। 

১৯৮৭ সালের একটি গবেষণায়, ব্যক্তিগত ও দলীয় খেলার খেলোয়াড়দের মধ্যে সেলফ সারভিং বায়াস তুলনা করে দেখা হয়েছে। এই গবেষণায় টেনিস, গল্ফ, বেজবল, ফুটবল এবং বাস্কেটবল খেলোয়াড়দের থেকে ৫৪৯টি বিবৃতি জড়ো করা হয়েছিল। দেখা গেল, ব্যক্তিগত খেলোয়াড়েরা সেলফ সারভিং বায়াস বেশি প্রদর্শন করছে। গবেষণাটি উপসংহার টানে, ব্যক্তিগত স্পোর্টসে খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স তাদের আত্মমর্যাদার উপরে অনেক বেশি অর্থপূর্ণ প্রভাব ফেলে। তাই, সেলফ সারভিং বায়াস তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সাহায্য করে। অবচেতনভাবেই তারা তখন এর আশ্রয় নেয়।

সৃজনশীল ব্লগ কালাক্ষর এ আমার লেখা পুরাতন পোষ্ট গুলো পড়তে চাইলে নিচের লিংক গুলোতে ক্লিক করুন 

যদিও সেলফ সারভিং বায়াস অনেক বেশি সহজাত, তবুও এটা এড়ানোর কিছু উপায় রয়েছে। যার মাধ্যমে আমাদের প্রতিদিনের নেয়া সিদ্ধান্তগুলো আরেকটু শুদ্ধ করা যায়। সচেতনতা এইক্ষেত্রে সবচেয়ে প্রথম ধাপ। একজন ব্যক্তি যখন কগনিটিভ বায়াসগুলি সম্পর্কে জেনে থাকে, এগুলো চিহ্নিত করা তার জন্যে সহজ হয়। এর ফলে নিজেকে সেগুলো থেকে এড়ানো এবং আত্মশুদ্ধির জন্যে কাজ করা সহজ হয়। 

যদি আপনি আপনি আপনার নিজের প্রতি সহানুভূতি ধারণ করেন তবে এই বায়াসটির প্রভাব আপনি নিজেই কমাতে পারবেন। আত্ম-সহানুভূতি মানুষকে নিজের দূর্বলতাগুলো চিহ্নিত করে তা অপসারণের সক্ষমতা দেয়। আত্মসহানুভূতিশীল মানুষ নিজের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হ্রাস করে আত্মউন্নতির জন্যে সমালোচনার সুযোগ দেয়। মনোবিজ্ঞানীদের মতে, আত্মসহানুভূতির ফলে একজন ব্যক্তি ব্যর্থতার সম্মুখীন হলে নিজের প্রতি উদারতা দেখায়। এর ফলে, ব্যক্তিটি তার অন্তর্হিত মানবতা উপলদ্ধি করতে পারে। যেকোনো মানুষকেই কোনো না কোনো সময়ে ব্যর্থতা কিংবা নেতিবাচক অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয়। এই ব্যাপারটি প্রতিটি মানুষের জন্যে সত্য এবং এটাই আমাদের সবাইকে মানবিক করে তোলে। আত্মসহানুভূতিশীল মানুষ নিজের অস্বস্তিকর ভাবনাগুলো কঠোরভাবে বিচার না করে চিহ্নিত করতে পারে। এই গুণটি তার আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করে ও সুস্থ, স্বাভাবিকভাবে নিজের ভুলগুলো শোধরাতে সাহায্য করে। নিজের আত্মমর্যাদা অক্ষুন্ন রেখেই এরকম সহানুভূতি তাদেরকে বাস্তবিকভাবে আত্মমূল্যায়নের সুযোগ দেয়। 

Its a Bangla article is about a specific cognitive bias called the Self-Serving Bias. I describe that when we attribute positive events and successes to our own character or actions, but blame negative results to external factors unrelated to our character. 

References
1. How the Self-Serving Bias Protects Self-Esteem
2. Why do we blame external factors for our own mistakes?
3. Self-Serving Bias: Definition and Examples

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

More News Of This Category
©2021 All rights reserved © kalakkhor.com
Customized By BlogTheme
error: Content is protected !!

Discover more from কালাক্ষর

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading