আচ্ছা আপনি ভাল না মন্দ? ভাল হলে কতটা ভাল? আর খারাপ হলে কতটা খারাপ? আপনি কেন আপনার পরিচিত কেউ ভাল কিছু করেছে বা ভাল কিছু করতে যাচ্ছে এই খবর শুনে হিংসায় জ্বলেন? কেন আপনি মানুষের সাথে গায়ে পড়ে বিবাদ করতে যান? কিংবা আপনার সাথে কেন মানুষ গায়ে পড়ে ঝগড়া বাড়ায়? এই প্রশ্নের উত্তর আমি দশ মিনিটের ভিতর দিতে পারি। কিন্তু তাই বলে ভাববেন না আমি মহামানব জাতীয় কেউ কিংবা নিদেন পক্ষে অতী পন্ডিত জাতীয় কেউ। এইটা আমি পারি কারণ আমি জানি মানুষের সাইকোলজিক্যাল কিছু ভাবের আদান প্রদান এর কিছু যোগসুত্র আর মানুষের মস্তিস্কের কিছু কার্যকারিতা যোগফল, যা মানুষের হরমোনাল কারণে হয়ে থাকে। আর এসবের গাঠনিক ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া এর যোগফল সম্পর্কে কিঞ্চিত জ্ঞ্যান রাখি বলে খুব সহজেই এক জন মানুষের সম্পর্কে কিঞ্চিত মূল্যায়ন করতে পারি যা অন্য সব নরলাম মানুষের চেয়ে কার্যকারী বা ভাল ফলদায়ক হয়।
শুধু মাত্র এই বিদ্যা জানি বলেই সারা দুনিয়ার মানুষ যখন নিজেকে সুন্দরের পুজারী বলে দাবী করে। সব সময় সুন্দর মানুষ (সেইটা সুন্দর মনের কিংবা সুন্দর দেখতে) খুজতে থাকে। তা দেখে আমি মিটমিটিয়ে হাসি। যখন কোন মানুষ সুন্দর কোন জিনিসের প্রসংসা করে তা দেখেও হাসি। আপনাদের মনে হয়ত প্রশ্ন আসতে পারে আমি কেন হাসি? আমি হয়ত পাগল? আমি একে বারে আনকালচার্ড কেউ নইলে কেন আমি মানুষের মন ভুলানো এই সব সুন্দর কথায় হাসবো? এর কারণ হল আমি জানি সেই লোক মিথ্যা কথা বলতেছে। হয়ত সে কিছুটা জেনে বুঝেই বলতেছে (ভন্ড লোক জনের স্বভাব) নয়ত সে জানেই না সে যে মিথ্যা বলতেছে। আসল সত্য হল মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি ভিতর একটা গুন খুব ভাল ভাবে বিল্ড আপ করা আছে- তা হল মানুষ বেশি সুন্দর কোনো বস্তু কে সহ্য করতে পারেনা।
মডেল – সামিয়া সিকদার। ছবি- কালাক্ষর ডেক্স
কেন সহ্য করতে পারে না? তার সুন্দর একটা সাইন্টেফিক ব্যাখ্যা আছে ক্রিমিনাল সাইকোলজি তে। তা হল, মানুষ যখন অধিক সুন্দর কোনো জিনিস দেখে, তখন ডোপামিন এবং সেরেটনিন নামক নিউরোট্রান্সমিটার দুটির অস্বাভাবিক ক্ষরণের ফলে তার মনের ভিতর যে প্রভাব সৃষ্টি হয়, তা মানুষ সহ্য করতে পারেনা। ফলে,মানুষ সেই বস্তুটিকে ধ্বংস করে ফেলতে চায়। উদহারণ স্বরূপ:-মিষ্টি বাচ্চার জোরে গাল টিপে ধরা অথবা গাছে,সুন্দর ফুল ফুঁটে থাকা দেখলে,তা ছিঁড়ে ফেলে তার সুঘ্রাণ গ্রহণ করার প্রবনতা ইত্যাদি। একে,”cute aggression” বলা হয়।
এর কারণ কি জানেন? ,অত্যাধিক সুন্দর কিছু দেখলে মস্তিকে ডোপামিন এবং সেরেটনিন নামক নিউরোট্রান্সমিটার দুটির অস্বাভাবিক ক্ষরণের ফলে এক ধরণের “শট্-সার্কিট্” তৈরি হয়। তাই,আমরা তাকে মেরে ফেলতে চাই, বা নষ্ট কর ফেলতে চাই। আর এটি সব চেয়ে বেশি শিশুদের ক্ষেত্রে কাজ করে। স্যার সিগমুন্ড ফ্রয়েড একে “প্লেসার প্রিন্সিপাল” দিয়ে ব্যাখ্যা করেছেন। এখানে তিনি দেখিয়েছেন,শিশুরা শুধুমাত্র তাদের আনন্দটাই বোঝে। যেমনটা,ক্রিমিনালদের মানসিকতার ভিতর দেখা যায়। কিন্তু শিশুটি বড়ো হবার সাথে সাথে, তাদের মনের এই মানসিকতাটি কেটে যায়।
অন্যভাবে যদি বলতে জাই তবে বলতে হয়, অনৈতিক কাজ করা ব্যাক্তির মনের অবস্থা শিশুদের মনের অবস্থায় থাকে। আর সেই কারণে,সে নীতি এবং দুর্নীতির মাঝের ফারাকটা বুঝে উঠতে পারেনা ।
যারা এত দিন মেয়েদের ভিতর একে অন্যকে নিয়ে জেলাসির কারণ খুঁজে বেরাতেন তার সাথে এই হরমোনাল লোচা মিলিয়ে দেখতে পারেন। আমাদের ব্যাক্তি জীবন কিংবা কর্ম ক্ষত্র কোন জায়াগাতেই আমরা কারো উন্নতি সয্য করতে পারি না, কেন পারি না? এর উত্তর টাও এই হরমোনাল লোচার সাথে মিলিয়ে দেখতে পারেন।
সিরিয়াল কিলারদের মধ্যে,এর প্রবণতা বেশি হলেও,আমাদের প্রত্যেকের মধ্যে এর প্রভাব রয়েছে। অর্থাৎ,আমাদের প্রত্যেকের মস্তিষ্কে একটি খুনির প্রভাব রয়েছে। আপনি জানলে অবাক হবেন, প্রত্যেক শিশুর মানসিকতা আর একটি খুনির মানসিকতার সমান হয়। কেন সমান হয় তা সিগমুন্ড ফ্রয়েডের একটি নিরিক্ষা ধর্মি লেখা পরলেই বুঝতে পারবেন,
স্যার সিগমুন্ড ফ্রয়েড, তাঁর সাইকো-এনালাইসিস সম্পর্কিত গবেষণা থেকে মানুষের বেড়ে ওঠার জীবন চক্রকে,”ইড”,”ইগো” এবং “সুপার ইগো” নামক তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত করেছিলেন। ফ্রয়েডের ভাষ্যমতে মানুষের শৈশব কাল বা শিশু কাল ,”ইড” নামক এক স্বভাবের মধ্যে দিয়ে যায়। এক্ষেত্রে,তার মনে “প্লেসার প্রিন্সিপাল” অথবা “আনন্দের নিয়ম” কাজ করে। অর্থাৎ,সে যা করে আনন্দ পাবে,সে তাই করবে। এরকম সময়,শিশুরা অত্যন্ত পাশবিক হয়ে ওঠে।পিঁপড়ে কে পিষে মেরে ফেলে,ফড়িঙের পা ছিঁড়ে দিয়ে,প্রজাপতির পাখনা অথবা ডানা ছিঁড়ে দিয়ে অথবা কুকুর অথবা বেড়ালের দিকে ঢিল ছুঁড়ে মেরে তারা একপ্রকার পাশবিক আনন্দ পায়। যে রকম আনন্দ,প্রধানত সিরিয়াল কিলাররা পায়। এটাকে আরেক ভাবে বলা যায় যে সকল সিরিয়াল কিলারের মস্তিস্ক এবং একটি অপরিনিত শিশুর মস্তিস্ক সম্পূর্ন একই প্রকারের। এখন নিশ্চই বুঝতে পেরেছেন কেন বলেছিলাম এক জন খুনির মস্তিস্ক শিশুর মস্তিস্কের মত হয়?
“যে অস্ত্র দিয়ে খুন করা হয়েছে। সেই অস্ত্রের ভিতর যদি প্রাণ প্রতিষ্ঠা করলে সেই অস্ত্রটি আরোও রক্ত পান করতে চাইবে।”
হিমু সিরিজের (হুমায়ন আহমেদ) কোনো এক উপন্যাসে লাইনটি পড়েছিলাম, যদিও সেই উপন্যাসের নাম টা মনে নেই। কিন্তু, লাইনগুলি আমাকে এখনো ভাবায়। সত্যিই তো, যেই হাত একবার খুন করেছে, সেই হাত বারবার খুন করার জন্য উদ্দত হয়। ক্রিমিনাল সাইকোলজি বলে যে খুন করাটি একটি নেশা করার মতে। সহজে এর মাদকতা মন থেকে চলে যেতে চায়না। পৃথিবীর সবথেকে নিকৃষ্ট মানের সিরিয়াল কিলার “টেড বান্ডি”,খুন করাটাকে একটি অত্যন্ত গর্বের কাজ বলে মনে করতো যাস্ট এই কারণে । সে খুন করাকে খেলার মতো দেখতো। মৃত্তুর ভয়ে মানুষ ছটফট করছে, এই দৃশ্যটি দেখে সে আনন্দ পেতো। অপরাধ একটি নেশার মত। কেউ,একবার করলে,বারবার করতে চাইবে।
জানলে অবাক হবেন মানুষকে অপরাধ করার দিকে আকৃষ্ট করার জন্য দায়ি এড্রোনালিন,ডোপামিন এবং সেরেটোনিন, প্রধানত এই তিনটি মাত্র নিউরোট্রান্সমিটার। আপনি যদি এই তিনটি নিউরোট্রান্সমিটারের কার্যকারীতা আর এর গানিতিক হিসাব বের করতে পারেন তবে বুকে হাত দিয়ে বলতে পারি আপনি কোন খুনির গায়ে হাত না দিয়ে শুধু মাত্র তার সাথে কিছু কথা আর কিছু পরিক্ষার মাধ্যমেই বুঝতে পারবেন কে খুনি খুন টা কেন করেছে? এর জন্য সাত থেকে দশ দিনের রিমান্ডের কোন দরকার পড়বে না।
আপনি হয়ত জানেন না, প্রচন্ড ইমোশনাল কিংবা একবারে ইমোশনবিহীন হওয়া দুটোই মানব সভ্যতার ক্ষেত্রে হানিকারক ,কারণ এই দুই স্বভাব ই মানুষকে অপরাধ করার জন্য তারিত করে। তাই আমাদের সবার উচিৎ এই ইমোশনের ব্যাপারে একটু সজাগ হওয়া। মানব মস্তিস্কের “এমিগডালা” এবং “প্রি-ফ্রন্টাল কোর্টেক্স”,অপরাধীদের মস্তিকস্কে অস্বাভাবিক ভাবে কাজ করে।”প্রি-ফ্রন্টাল কোর্টেক্স” প্রধানত বিচার-বিবেচনা করতে সাহায্য করে।
“প্রি-ফ্রন্টাল কোর্টেক্স ইমেজ সোর্স – quora.com
জীবনে প্রথম বার এক জন চুরান্ত লেভেলের অপরাধ করে ফেলা মানুষ কে যদি প্রশ্ন করেন, কেন সে এত বড় ভুল করেছে? ( কাউকে মেরেছে, খুন করেছে, কিংবা ঝোকের বসে কোন বড় অপরাধ করে ফেসে গেছে ) সে তখন যা বলবে তা হলো, আমি বুঝতে পারি নাই কি থেকে কি হয়ে গেল? এই কথা বলার কারণ ঐ লোক টির তখন বুদ্ধি এবং বিচার-বিবেচনা কাজ করে নাই। আর এর এক মাত্র কারণ তার মস্তিস্কের “প্রি-ফ্রন্টাল কোর্টেক্স” এর অস্বাভাবিক আচরণ।
আপনার মনে প্রশ্ন যদি আসে আমি কেন এতক্ষন এই বেহুদা প্যাচাল পাড়লাম? এর কারণ হল আপনাকে সতর্ক করা। আপনি চাইলেই আপনার এই হরমোনাল লোচা মানে আপনার পিটুইটারী গ্লান্ডের এড্রোনালিন,ডোপামিন এবং সেরেটোনিন, নামক হরমোন ক্ষরনের নিউরোট্রান্সমিটারের কার্যকালাপ কে নিয়ন্ত্রন করতে পারেন। আর এই জন্য আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দেওয়ার মত অসাধ্য কোন কর্ম করতে হবে না, খুব সহজেই আপনি তা করতে পারেন। আর তা করতে পারলে আপনার ভিতর জেলাসী নামক ফ্যালাসীর কোন অস্তিত্ব থাকবে না। আর তা হলে আপনার ভিতর ৯০% অপরাধ প্রবনতা কমে যাবে। কারো ভাল করা দেখলে তখন আপনার গা জ্বলবে না, হিংসার বদলে তখন আপনার তাকে এপ্রিশিয়েট করতে মন চাইবে। আর তার দেখা দেখি আপনিও ভাল করতে চাইবেন। তাতে সুদ্ধ প্রতিযোগীতা হবে। নিজেও করবো না অন্যকেও করতে দিবো না এমন টেন্ডেন্সি আর থাকবে না।
আর যদি নিজে নিজে তা করতে না পারেন। আমায় তো চিনেন। ডাইরেক্ট আমায় নক দিয়েন। সাত দিনের ভিতর আপনার মাথার সব হরমোনাল লোচা ঠিক করে দিতে পারবো ইনশা আল্লাহ্। ভাল থাকবেন। ধন্যবাদ –
নাট্যকার/ প্রযোজক/ পরিচালক
Leave a Reply