কালাক্ষর ডেক্সঃ সৃজনশীল ব্লগ কালাক্ষর এ আজকে আমরা একটি নতুন টপিক অথচ প্রায় সব মানুষের ভিতরে বর্তমান একটি সাইকোলজিক্যাল সিন্ড্রোম এর ব্যাপারে পোস্ট মর্টেম করবো- আচ্ছা আপনাদের মনে কি এমন কোন সংকল্প বা ইচ্ছা এসেছে যা পুরন করার শক্তি আপনার নেই বা যা পুরন করার ক্ষমতা আপনার ভিতর নেই তার পরেও আপনি ভেবেছেন আমি করবো- করে দেখাবো- বা আমি যদি এমন টা হতে পারতাম ? কি বুঝতেছেন না তাই না?
ধরুন আপনি একজন গবেট মার্কা শিক্ষার্থী-পরিক্ষার রেজাল্ট আনতে গিয়ে দেখলেন আপনি পরিক্ষায় ডাব্বা মেরেছেন – আপনি বাসায় আসতে আসতে নিজেকে এই বলে প্রবোধ দিলেন যে – এবারের পরীক্ষা তো খারাপ গেল, এ বছরটা তো খারাপ গেল, এই সম্পর্কটা তো টিকলো না-সামনের বার দেখিয়ে দিব। এমন করে বছরের পর বছর আমরা নিজেরা নিজেদের সান্তনা দেই। এবার না, আগামীবার-এভাবে ক্রমিক লক্ষ্য, এভাবে নিজেকে নিজে প্রবোদ দেয়াকে মনোবিজ্ঞানীরা একটা ডিজিজ এ ভাগ করেছেন – আর তার নাম দিয়েছেন ফলস হোপ সিনড্রোম।
ফলস হোপ বলতে নিজের ইচ্ছার বা কল্পনার উপর ভিত্তি করে অযৌক্তিক আশা তৈরি করার প্রবণতা বোঝায়, একই বিষয়ে পূর্বের ব্যর্থতার অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও। ফলস হোপ সিনড্রোম বলতে লক্ষ্য অর্জনে বারবার চেষ্টা ও ব্যর্থতার অভিজ্ঞতা বোঝায়, কারণ ব্যক্তিটি অযৌক্তিক বেশি ভাবে নিজের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন।
বারবার ব্যর্থতা চারটি কারণে হতে পারে। প্রথমত পরিমাণগত। যতটা অর্জন করা সম্ভব তার চেয়ে অস্বাভাবিক বেশি পরিমাণে লক্ষ্য নির্ধারণ করা। যেমন এক মাসে হয়ত ৬ কেজি ওজন কমানো সম্ভব। ফলস হোপ সিনড্রোমে আক্রান্ত ব্যক্তি হয়ত ১৫ কেজি ওজন কমানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করবেন এবং ব্যর্থ হবেন।
মডেল – বহ্নি হাসান – ছবি – কালাক্ষর ডেক্স
ব্যর্থতার দ্বিতীয় কারণ হতে পারে সময় সংক্রান্ত। এক্ষেত্রে যতটা সময়ে লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব ব্যক্তিটি মনে করে তার চেয়ে কম সময়ে সে এটি করতে পারবে। হয়ত ভালভাবে পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য ১৫ দিন সময় প্রয়োজন, কিন্তু এক্ষেত্রে ব্যক্তিটি মনে করে একরাত পরেই তা সম্ভব যদিও আগে কখনো তা সে করতে পারেনি।
ব্যর্থতার তৃতীয় দিকটি আসে কত সহজে লক্ষ্য অর্জন করা যায় এই সংক্রান্ত ভুল ধারনা থেকে। সিক্স প্যাক করতে যতটা চেষ্টার দরকার এই সিনড্রোমে আক্রান্ত ব্যক্তি হয়ত মনে করে তার চেয়ে কম চেষ্টায় সে তা অর্জন করতে পারবে এবং ব্যর্থ হয়।
সর্বশেষ ব্যর্থতা আসে ফলাফলগত দিক থেকে। কোন কিছু অর্জনের পরে তার ইমপ্যাক্ট কতটা হবে তার সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণার অভাব থেকে।যেমন একজন মনে করতে পারে ওজন কমালেই হয়ত তাকে লোকে বেশি পছন্দ করবে, চাকরিতে উন্নতি হবে ইত্যাদি।কিন্তু বাস্তবে হয়ত দেখা যাবে ওজনের সাথে লোকের পছন্দ-অপছন্দের কোন সম্পর্ক নেই।
ফলস হোপ সিনড্রোম কে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের সাথে সম্পর্কযুক্ত মনে করা হয়। এটা ধূমপায়ী, মাদকাসক্ত ব্যক্তি, যারা ওজন কমানোর চেষ্টা করছেন, জুয়াড়ি এবং টিন এজারদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। এই সিনড্রোমকে মস্তিষ্কের ডোপামিন লেভেল এর সাথে সম্পর্কিত ধরা হয়।
ফলস হোপে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে হতাশা এবং বিষণ্ণতার পরিমাণ বেশি দেখা যায়। বিশেষ করে তারা যখন বারবার লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হন অযৌক্তিকভাবে বড় লক্ষ্য নির্ধারণ করার ফলে। যৌক্তিক লক্ষ্য অর্জনের দিকে মনোযোগ দিলে অবশ্যই ব্যর্থতার পরিমাণ কমবে।
Leave a Reply