1. sjranabd1@gmail.com : Rana : S Jewel
  2. solaimanjewel@hotmail.com : kalakkhor : kal akkhor
অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিসঅর্ডার (ওসিডি) বা শুচিবায়ু রোগ কি? কি আছে এই রোগের আদিপান্তে? - কালাক্ষর
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৫:৫৪ পূর্বাহ্ন

অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিসঅর্ডার (ওসিডি) বা শুচিবায়ু রোগ কি? কি আছে এই রোগের আদিপান্তে?

  • Update Time : মঙ্গলবার, ২৩ মার্চ, ২০২১
সেলফ সারভিং বায়াস: নিজের ব্যর্থতার দায়ভার অন্যকে দিতে যখন আমরা অযুহাতের দারস্ত হই (পর্ব - এক)
মডেল - প্রভা। ছবি - কালাক্ষর ডেক্স

অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিসঅর্ডার (ওসিডি) বা শুচি বায়ু রোগ হল একধরনের মানুষিক অসুস্থতা যা মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে। যা শিশু এবং প্রাপ্তবয়স্ক উভয়ের মধ্যেই ঘটার সম্ভাবনা দেখা যায়। এই সমস্যায় আক্রান্ত লোক জম যুক্তিহীন অবসেশন (অনর্থক চিন্তার পুনরাবৃত্তি) এবং কম্পালসনের (সেই চিন্তা অনুযায়ী কাজ করার অদম্য ইচ্ছা) এক চক্রের মধ্যে আটকে পড়েন।এবং তা থেকে বের হতে না পারার কারনে নিজের এবং তার চার পাশের মানুষের বিরম্বনার কারন হয়। এছাড়াও ওসিডির কারনে মানসিক চিত্র, বাসনা ও অবাঞ্ছিত চিন্তার সৃষ্টি হয় যা মানুষটির মানসিক যন্ত্রণার কারণ হতে পারে।

ও সি ডি যাকে মনরোগের পরিভাষায় সবচেয়ে জটিল ধরনের অ্যাংজাইটি নিউরোসিস বলা হয়ে থাকলেও খাটি বাংলা ভাষায় আমরা এই ধরনের রোগ কে শুচি বায়ু বলে থাকি। এই ধরনের রোগীরা নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে তার মনের ভিতর গেথে যাওয়া কোন বিশেষ কোনো চিন্তাকে বারংবার মনে আনাগোনা করতে দিতে বাধ্য থাকে। কোনো একই শব্দের বারবার উচ্চারণ বা কোনো ভাবনা-ধারণার বারবার মনের গহীনে আনাগোনার অভ্যাসকে বলে ও.সি.ডি.। বিশেষ বিশেষ ধরনের চিন্তা, ভাবনা, ফর্ম ও শব্দকে কেন্দ্র করে এই রোগের প্রকাশ হয়। 

মডেল - তানজিন তিশা - ছবি - কালাক্ষর ডেক্স

মডেল – তানজিন তিশা – ছবি – কালাক্ষর ডেক্স

সহজ ভাষায় ও সি ডি এর ব্যাখ্যাঃ

সুমি (নাম পরিবর্তিত) কিছুক্ষণ অন্তর অন্তরই বেসিনে গিয়ে হাত ধুয়ে আসেন। হাত একদম পরিষ্কার রয়েছে, এ কথা বলার পরেও তার অভ্যাসে বদল ঘটে না।কারন তার কেবলি মনে হয় তার হাতে জীবানু কিংবা অন্য কিছুর দাড়া সংক্রমিত হয়েছে। আবার, পার্থ (নাম পরিবর্তিত) কোনও কাজ নিখুঁত ভাবে করার পরেও খুঁতখুঁতানি যায় না। সে বার বার তার কাজ টির আরো বেশি পার্ফেকশান দিতে চায়। আমরা আমাদের পরিবারে, আশপাশে প্রায়শই এমন বাতিকগ্রস্ত মানুষদের দেখি। সাধারণ ভাবে এমন সমস্যাকে ‘শুচিবাই’ বলা হলেও চিকিৎসার পরিভাষায় একে ‘অবসেসিভ কম্পালশিভ ডিসঅর্ডার’ বা সংক্ষেপে ‘ওসিডি’ বলা হয়। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিশ্বে প্রতি একশো জনের মধ্যে দু’জন এই রোগের শিকার। মহিলাদের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা পুরুষদের তুলনায় দেড় গুণ বেশি। আর দেখা গিয়েছে, প্রায় ৬৫ শতাংশ ক্ষেত্রে ২৫ বছর বয়সের আগেই ‘ওসিডি’-র সমস্যা শুরু হয়।

‘অবসেশন’ শব্দের অর্থ হল একই চিন্তা, কোনও ছবি বা ইচ্ছা মনের মধ্যে বারবার ঘুরপাক খাওয়া। এ ক্ষেত্রে ব্যক্তিটি বুঝতে পারেন যে, তাঁর এই ভাবনা অমূলক, অর্থহীন, প্রয়োজনাতিরিক্ত। তবুও তিনি সেই চিন্তা বা ইচ্ছাকে আটকাতে পারেন না বা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না। স্বাভাবিক ভাবেই দেখা দেয় অস্বস্তি। যেমন—দরজায় তালা দিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে অফিসে পৌঁছনোর পরে কারও হঠাৎ খেয়াল হল, দরজায় তালা দিয়েছেন কি না তা মনে করতে পারছেন না। চিন্তাটা বারবার মনে আসতে থাকায় অস্বস্তি তৈরি হয়। 

ও.সি.ডি. রোগীর ব্যক্তিত্ব কেমন ধরনের হয়?

এরা জীবনে আত্মকেন্দ্রিক, অন্তর্মুখী ও নিজের সম্পর্কে সদা সজাগ থাকে। আনন্দ অনুষ্ঠানে যোগদান করতে এরা একদম পছন্দ করে না। এরা সব কাজ নিখুঁতভাবে করতে চায়। রোগের লক্ষনগুলির মাধ্যমে ও.সি.ডি. রোগীরা জীবনের ভুল-ত্রুটিগুলিকে প্রায়শ্চিত্ত করার চেষ্টা করে। জীবনে শৃঙ্খলাবোধ ও নিয়মানুবর্তিতাকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে ব্যাবহারিক জীবনে সামঞ্জস্য রেখে চলতে পারে না। মনের আবেগের বহিঃপ্রকাশের অভাবের জন্যে এদের রসকষহীন বলে হয়, এরা কাঠ খোট্টা কথা বাত্রা বলে বলে এদের জীবনে হাস্যরসের স্থান খুবই সীমিত হয়ে যায়।

ও.সি.ডি. রোগের লক্ষন কি কি?

১। অবসেসিভ থটস বা আবেশিক চিন্তা ভাবনা রোগীর মাথায় এমন ভাবে গেথে যায় যে সে বার বার কেবল একই কথা ঘুরে ফিরে চিন্তা করে। রোগীর মনের ভিতর একই বাক্য বা গানের সুর বারংবার তার অনিচ্ছা সত্ত্বেও ভেসে আসে, কোনোভাবেই তিনি তার থেকে বেরোতে পারেন না। রোগীর ভাবনা গুলো তাই একটি ট্রোমার ভিতর দিয়ে যায়।

২। রোগীর মধ্যে জটিল কিছু রোগ সম্পর্কে ভয়-মিশ্রিত চিন্তা বারবার দেখা দেয়। মোট কথা তার মাথায় যে কোন ভয় সেইটা রোগ কিংবা কোন মানুষের ক্ষতিকর কোন কিছু এক বার ঢুকে গেলে আর বের হতে চায় না। রোগী কেবল ভয় পেতে থাকেন, তাঁর হয়তো ক্যানসার, এইডস বা সিফিলিস হবে – যদিও এসব তাঁর অমূলক ভয়। তার পরেও সে ভয় পেতে থাকবে।

৩। দেবদেবী সম্বন্ধে অশ্লীল চিন্তা অনিচ্ছা সত্ত্বেও এদের মনে বাসা বাঁধে। চিঠি ডাকবাক্সে ফেলে কিছুক্ষণ পরে মনে হয়, চিঠি বোধ হয় ফেলা হয়নি।

৪। এই রোগী সংশয় ও সন্দেহের বশে বাধ্য হয়ে একই কাজ বারংবার করে। বাড়ীর বাইরে বেরনোর সময় হয়তো লাইট-ফ্যান বন্ধ করেছে – কিন্তু কিছুদূর গিয়ে তাদের মনে হয় আলো-পাখা বন্ধ করা হয়নি। আবার বাড়িতে ফিরে এসে পরীক্ষা করে দ্যাখে।

৫। কেউ কেউ এরা আবেশিক কর্মতাড়নায় অদ্ভুত ও মারাত্মক আচরণ করে বসে। অনেকের শিশুদের দেখলেই তাদের গলা টিপে দিতে ইচ্ছে হয়। অদ্ভুত ইচ্ছায় কেউ কেউ নিজেকে ট্রেনের তলায় ঝাঁপ দেবার কথা ভাবে, কেউ বা উঁচু বাড়ীর ছাদ থেকে ঝাঁপ দেওয়ার কথা ভাবে। যদিও বাস্তবে এ সব কাজ রোগী কখনোই করে না। অনেক রোগী আবার মনে করে রাস্তা দিয়ে তার সামনে যারা যাচ্ছে, তাদের প্রত্যেককে লাথি মারলে ভালো হয়। কেঊ কেঊ রাস্তা দিয়ে যাবার সময় দু-পাশের বাড়ীগুলোর দরজা-জানালায় লাঠি বা অন্য কিছু দিয়ে আঘাত না করে যেতে পারে না। 

মডেল - বহ্নি হাসান - ছবি - কালাক্ষর ডেক্স

মডেল – বহ্নি হাসান – ছবি – কালাক্ষর ডেক্স

ও.সি.ডি. রোগীদের কী ধরনের আতঙ্কের লক্ষণ থাকে?

বিভিন্ন ধরণের আতঙ্ক এই রোগীদের গ্রাস করে। এক একটি বিশেষ বস্তু বা অবস্থাকে কেন্দ্র করে তাঁর মনে মারাত্মক ভয় ও আতঙ্কগ্রস্ত ভাব দেখা যায়। অনেকের মধ্যে ক্ল্যসট্রোফোবিয়া বা বদ্ধ জায়গার ভয় প্রচণ্ড পরিমাণে থাকে। যার ফলে রোগী ভীড় ট্রেনে-বাসে উঠতে ভয় পায়। এছাড়া, ফাঁকা জায়গায় একা যেতে ভয় (অ্যাগোরাফোবিয়া), অন্ধকারের ভয় (নিক্কোফোবিয়া), কঠিন রোগ-ব্যাধির ভয় (প্যাথোফোবিয়া), একাকীত্বের ভয় (মোনোফোবিয়া), রক্ত দেখলে ভয় (হেমাটোফোবিয়া), ঊচ্চস্থানের ভয় (অ্যাক্রোফোবিয়া) ইত্যাদি বহুবিধ আতঙ্ক ও.সি.ডি. রোগীদের মধ্যে বর্তমান থাকে। এই ধরনের আতঙ্ক-জনিত উৎকণ্ঠার শারীরিক লক্ষণ হিসাবে দেখা দেয় দমবন্ধ ভাব, বুক-ধড়ফড়ানি, গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাওয়া প্রভৃতি। 

কি কারণে ও.সি.ডি. হয়?

১। মস্তিষ্কের টেম্পোরাল লোব ক্ষতিগ্রস্ত হলে বা বেসাল গ্যাংলিয়ার কার্যক্ষমতা বাধাপ্রাপ্ত হলে এই রোগে অদ্ভুত সব অবসেশন ও কম্পালশন দেখা যায়।

২। আমাদের অবদমিত অসামাজিক প্রবৃতিগুলো যখন অবদমনের বাধাকে অতিক্রম করে সজ্ঞানে বেরিয়ে আসতে চায়, তখন বিশেষ কিছু মানসিক প্রক্রিয়া তাদের বাধা দেয় – যার ফলশ্রুতিতে মনঃসমীক্ষার তত্ত্ব মেনে দেখা দেয় অবসেসিভ কম্পালসিভ নিউরোসিস।

৩। সাম্প্রতিক গবেষণায় উঠে এসেছে – মস্তিষ্কের স্নায়ু-রাসায়নিক সেরোটোনিন বা গ্লুটামেট-এর বিপাক ক্রিয়ার গোলযোগ থেকেও ও.সি.ডি. হতে পারে। 

ও.সি.ডি. রোগীদের জন্যে কিছু পরামর্শ?

১। নিয়মিত রিল্যাক্সেশন টেকনিক অভ্যাস করুন। যোগা, প্রাণায়াম, মাইণ্ডফুল মেডিটেশন, ডীপ-ব্রিদিং এক্সারসাইজ এই রোগীদের স্ট্রেস ও টেনশন কমানোর জন্যে কার্যকরী।

২। পর্যাপ্ত ঘুম ও ব্যায়ামচর্চা করতে হবে। অবশ্যই বর্জন করতে হবে অ্যালকোহল আর নিকোটিন।

৩। ও.সি.ডি. সাপোর্ট-গ্রুপের সদস্য হয়ে, তাদের পরামর্শ মেনে দিনযাপন করলে রোগের মারাত্মক কর্মতাড়না থেকে রেহাই মিলবে।

কি ধরনের খাবার ও.সি.ডি. রোগীদের জন্যে নিষিদ্ধ?

১। বেশি সুগার সম্রিদ্ধ ফুড ও.সি.ডি. রোগীদের জন্যে ক্ষতিকর হিসাবে ধরা হয়। সুগারি ড্রিঙ্ক, সোডা, ক্যান্ডি, অন্যান্য মিষ্টি এই রোগীদের খেতে তাই বারণ করা হয়। এতে উৎকণ্ঠা আর প্যানিক অ্যাটাক বাড়তে পারে।

২। এই রোগীদের কফি অ্যালকোহল খাওয়া একদম নিষেধ। দু’-এক কাপ চা চলতে পারে।

৩। সব ধরনের ফল ও.সি.ডি. রোগীদের জন্যে ভালো।

৪। ও.সি.ডি. যেহেতু সবচেয়ে কঠিন ধরনের অ্যাংজাইটি নিউরোসিস, এই রোগীদের খাদ্যতালিকায় প্রসেসড মীট ও ফিশ আর মিষ্টিযুক্ত ডেজার্ট রাখবেন না। এতে অ্যাংজাইটি অ্যাটাক বাড়তে পারে। অন্যান্য প্রসেসড ফুডও এদের খাদ্য তালিকা থেকে বর্জন করতে পারেন।

ও.সি.ডি. রোগের চিকিৎসা কিভাবে করা হয়?

রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে সাইকোলোজিক্যাল কাউন্সেলিং ও বিশেষ ধরনের সাইকোথেরাপি কার্যকরী। আবেশিক কর্মতাড়না যখন জটিল আকার ধারন করে তখন কনস্টিটিউশনাল হোমিওপ্যাথিক মেডিসিনের সাহায্যে চিকিৎসা-প্রক্রিয়া চালিয়ে যেতে হয়। দ্রুত রোগ-লক্ষন প্রশমনে থেরাপিউটিক হোমিওপ্যাথিক রেমিডিও খুবই ফলদায়ক।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

More News Of This Category
©2021 All rights reserved © kalakkhor.com
Customized By BlogTheme
error: Content is protected !!

Discover more from কালাক্ষর

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading