1. sjranabd1@gmail.com : Rana : S Jewel
  2. solaimanjewel@hotmail.com : kalakkhor : kal akkhor
মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের মূল স্তম্ভ সমহ - কালাক্ষর
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৬:৩৮ পূর্বাহ্ন

মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের মূল স্তম্ভ সমহ

  • Update Time : শুক্রবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০

মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ বিশ্বব্যাপী একচেটিয়া আধিপত্য বিস্তারের লক্ষে পাঁচটি সেক্টরকে তাদের মূল স্তম্ভ হিসাবে নির্ধারণ করেছে। প্রখ্যাত লেখক আজফার হোসেন তার মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের সামপ্রতিক ব্যাকরণ প্রবন্ধে এ সম্পর্কে বিস্তরিত বর্ণ না করেছেন। সেখানে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের পাচঁটি স্তম্ভ এর কথা বলা হয়েছে।সেগুলো হলোঃ

(ক্যাপিটালিজম্ ইন দ্য এজ অব গ্লোবালাইজেশান্, পৃ ৪-৫) । এগুলোকে তিনি আবার মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের পঞ্চবলয়ও বলেছেন। কারণ, বিভিন্ন জাতি-রাষ্ট্রের সঙ্গে বিভিন্ন মাত্রার যোগসাজশে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ওই পরস্পর-সম্পর্কিত পাঁচটি বলয়ে তার প্রায় একচেটিয়া আধিপত্য জারি রেখেছে, যদিও এই আধিপত্য সব ক্ষেত্রে যান্ত্রিকভাবে একই ধরনের নয়। বিভিন্ন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ওই আধিপত্যের হেরফেরও ঘটে। এই পাঁচটি বলয় নিয়ে এখন সংক্ষেপে আলোচনা করব।

প্রযুক্তিগত আধিপত্য

প্রথমেই আসি প্রযুক্তি প্রসঙ্গে। মার্কিন কর্পোরেশনগুলো-ধনবান রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সহযোগিতার ভিত্তিতে প্রযুক্তিগতআধিপত্য বিস্তার করে চলেছে। আর এ-ধরনের আধিপত্য বিশাল ব্যয়ভার বহন ব্যতিরেকে অসম্ভবই বটে। সনির আমিন ঠিকই বলেন, বিশেষ করে সামরিক খরচাপাতির ভেতর দিয়ে রাষ্ট্রের সাহায্য ও সহযোগিতা ছাড়া আধিপত্যের বলয়ের অধিকাংশই টিকে থাকতো না (ক্যাপিটালিজম্ ইন দ্য এজ অব গ্লোবালাইজেশান, পৃ ৪)। আর মিশেল বড্ তো মনে করেন যে, সাম্প্রপ্রতিক কর্পোরেট পুঁজিবাদ তথা মার্কিন সাম্রাজ্যবাদকে আসলে মূলত চেনা যায় তার প্রযুক্তিগত আধিপত্যের ভেতর দিয়েই। বড্ বলেন, পুঁজিবাদ আগের যে-কোনো সময়ের চেয়ে বেশী শক্তিশালী হয়েছে আর আমরা দেখছি পুঁজিবাদের এক নতুন যুগের সূচনাকে। এ-যুগে নতুন পণ্য আর প্রকল্পের উদ্ভাবনে বানেজ্যিক  কর্পোরেশনগুলো অভাবনীয় মাত্রায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে তাদের কর্তিত্ব বাড়িয়ে চলছে । (এ হিস্ট্রি অব ক্যাপিটালিজম্, পৃ ৩০২) এর বড্ ‘মহাপ্রযুক্তিময় পুঁজিবাদ’-এর কথাও বলেছেন।

মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ

ইমেজ সোর্স – bbc.com

কালাক্ষর ব্লগে আমার লেখা পুরাতন পোষ্ট গুলো পড়ার অনুরোধ রইল 

এ পুঁজিবাদেই আমরা প্রত্যক্ষ করছি কিভাবে টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্কগুলোকে বেঁধে ফেলেছে কম্পিউটার, ফোন এবং টেলিভিশন এর মাধ্যমে । আমরা এও দেখছি কিভাবে সাইবার স্পেস উঁচুপ্রযুক্তির নমুনা হিসেবে হাজির হয়েছে। এছাড়া তো রয়েছেই কম্পিউটারায়িত শেয়ার বাজার। এভাবে হয়ত অসংখ্য উদাহরণ জড়ো করা সম্ভব। তবে বোধ করি বিষয়টি এর মধ্যেই পরিষ্কার হয়েছে যে, বাজার থেকে যুদ্ধের ময়দান পর্যন্ত প্রায় সব ক্ষেত্রেরই উন্নত ও অগ্রসর প্রযুক্তির ব্যবহার করা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কর্পোরেশনগুলোর পক্ষে যতোটা সম্ভব, অন্যদের পক্ষে ততোটা নয়।আর তাদের জন্য প্রযুক্তি কেবল ব্যবহারেই সীমাবদ্ধ নয়, তা নিয়ে তাদের বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য বিস্তৃত হয়েছে অভাবনীয় মাত্রায়। 

বিশ্বব্যাপী ফাইন্যান্স বাজারের নিয়ন্ত্রণ

প্রযুক্তির পরে আসে বিশ্বব্যাপী ফাইন্যান্স বাজারের নিয়ন্ত্রণ। সমির আমিন এ-বলয়ের নাম দিয়েছেন অর্থের বাজারের আর্থিক নিয়ন্ত্রণ। বিশ্বব্যাপী ফাইন্যান্স পুঁজির আনাগোনা বা আমদানী-রফতানী একচেটিয়া পুঁজিবাদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। বিদেশী মুদ্রার লেনদেনের বৈশ্বিক বাজার পর্যবেক্ষণে নিয়োজিত ব্যাংক ফর ইন্টারন্যাশনাল সেটেলমেন্টস্-এর পরিসংখ্যান মোতাবেক পৃথিবীতে প্রতিদিন গড়ে যে-পরিমাণ অর্থ বিনিময় করা হয়, তার অংক ১,৪৯০,০০০,০০০,০০০ ডলার। শূন্যের এই অব্যাহত মিছিল কোনো পরাবাস্তববাদী প্রপঞ্চকে নির্দেশ করে না; বরঞ্চ তা নির্দেশ করে বিশ্বায়িত ফাইন্যান্স পুঁজির বাজারের বৈভব ও বিস্তার, গতি ও শক্তিকেই। এই বাজারের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে যাকে রাজনৈতিক-অর্থনীতির পরিভাষায় বলা হয় ফো বা প্রবহ। ওই বাজারের মোট আটটি প্রবহকে অনায়াশেই শনাক্ত করা যায় :

  • ক. দেশ থেকে দেশে নিট দীর্ঘমেয়াদী সম্পদের প্রবহ;
  • খ. প্রাতিষ্ঠানিক প্রবহ ;
  • গ . প্রাইভেট প্রবহ;
  • ঘ. প্রাইভেট ঋণ প্রবহ;
  • উম.বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রবহ;
  • চ. বন্ডের প্রবহ;
  • ছ. পোর্টফোলিও ইকুইটির প্রবহ; এবং
  • জ. সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগের প্রবহ।

এ-সব প্রবহই অর্থের বাজারের চেহারাকে তুলে ধরে। আর মিশেল বড্ ও সমির আমিনের মতে এ-প্রবহের ওপর প্রায় একচেটিয়া আধিপত্য করছে মার্কিন কর্পোরেশনগুলোই। এখানে বলা দরকার যে, অর্থের বাজারকে গতিশীল করার ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ভূমিকা আগের যে-কোনো সময়ের চেয়ে বেড়েছে অনেক।

মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ

usa map – source by worldisavillage.com

প্রযুক্তির কারণেই ল্য করছি ভারচুয়াল শেয়ার বাজারের অভূতপূর্ব বিস্তৃতি। আর প্রযুক্তির কারণেই তো উদ্ভাবিত হয়েছে যাকে বলা হচ্ছে ইলেকট্রনিক । হ্যাঁ, ওই প্রযুক্তির কারণেই অভাবনীয় অংকের টাকা বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে স্থানান্তরিত হয় মাত্র কয়েক সেকেন্ডেই। উড়ে-উড়ে ঘুরে-বেড়ানো এবং জুড়ে-বসা পুঁজির আরেক নাম ওই মার্কিন সাম্রাজ্যবাদই। আর এই পুঁজির দুনিয়া-সফরকে অবাধ করার ক্ষেত্রের সহায়কের ভূমিকায় থাকে আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো-ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, আই.এম.এফ. এবং ডাব্লিউ.টি.ও.।

তবে অর্থের বাজারের সঙ্গে পণ্যের বাজার যুক্ত থাকে বটে। বস্তুত, অর্থের বাজার পণ্যের বাজারকেও গতিশীল করে। সাম্প্রতিক কালে পশ্চিমা মুলুকের কিছু কিছু রাজনৈতিক অর্থনীতিবিদ ও সংস্কৃতি-তাত্ত্বিক পুঁজির নতুন চেহারাকে বোঝার জন্য জল্পনামূলক পুঁজির ওপর জোর দিয়েছেন। এঁদের ভাষ্য অনুসারে বর্তমানের কর্পোরেশনগুলো পণ্যোৎপাদনের চেয়ে জল্পনামূলক পুঁজিতে বেশি আগ্রহী।

অর্থাৎ উৎপাদন খাতে বিনিয়োগের চেয়ে অর্থ দিয়ে অর্থ আনার বিষয়টিতে বেশী আগ্রহী হয়ে উঠেছে আজকের কর্পোরেশনগুলো। কিন্তু এর অর্থ আবার এও নয় যে, পুঁজিবাদী অর্থনীতিতে এখন উৎপাদন ও পণ্যের মৃত্যু ঘটেছে। মিশেল বড্ আমাদের জানাচ্ছেন যে, ১৯৯০ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত এই দশ বছরে পণ্যোৎপাদনের পরিমাণ ভয়াবহভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। অবশ্যই লক্ষ্য করা যাবে বিশ্বব্যাপী মার্কিন পণ্যের ছড়াছড়ি-গাড়ি ও অস্ত্র থেকে টুথব্রাশ ও দাঁতের খিলাল পর্যন্ত। পুঁজিবাদের সেই পুরনো সংজ্ঞার্থটা এখনো কার্যকর ঠেকে : পুঁজিবাদ হচ্ছে সাধারণীকৃত পণ্যোৎপাদনের বৈশ্বিক ব্যবস্থা, যে-ব্যবস্থার বিকশিত রূপ আজ আমরা প্রত্যক্ষ করি ওই মার্কিন সাম্রাজ্যবাদেই।

পৃথিবীর তাবৎ প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর আধিপত্য

ফাইন্যান্স বাজারের নিয়ন্ত্রণের পরেই আসে প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর আধিপত্যের বিষয়টি। বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বের প্রাকৃতিক সম্পদ শোষণ ও লুণ্ঠন করার ক্ষেত্রেও ওই মার্কিন কর্পোরেশনগুলো (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক শক্তির সহযোগিতায়) সবচাইতে এগিয়ে আছে। এখানেও কোনো জাতি-রাষ্ট্রের সাহায্য-সহযোগিতা ছাড়া এবং ক্ষেত্রবিশেষে এমনকি জাতি-রাষ্ট্রের বিভিন্ন দমনমূলক হাতিয়ার (যেমন সেনাবাহিনী) ব্যবহার করা ছাড়া পুঁজিবাদী কর্পোরেশনগুলো তৃতীয় বিশ্বের প্রাকৃতিক সম্পদকে নিজেদের আয়ত্তে আনতে পারে না।

অসংখ্য উদাহরণ দেয়া সম্ভব। তবে একটি পুরাতন কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ এখানে উপস্থিত করা যায়। নাইজেরিয়ার কথাই ধরা যাক। এই দেশের তেলসম্পদের প্রায় অর্ধেকটা চলে যায় ইঙ্গ-ডাচ কোম্পানী শেল-এর কাছে আর বাকি অর্ধেকের বেশীটা নিয়ে নেয় মার্কিন কোম্পানী শেভরন। এদুয়ার্দো গ্যালিয়ানো তাঁর আপসাইড ডাউন গ্রন্থে আমাদের জানাচ্ছেন যে, তেলসম্পদ লুটপাট করতে গিয়ে শেল ও শেভরন নাইজেরিয়ার অগোনি জনসম্প্রদায়ের ভূমি ও নদী-নালা সহ তাদের সমগ্র পরিবেশকেই ধ্বংস করে ফেলেছে।

মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ

ইমেজ সোর্স – https://wallpapercave.com

নাইজেরিয়ার এ-অবস্থাকে চিত্রায়িত করতে গিয়ে নাইজেরিয়ার লড়াকু লেখক কেন্ সারো উইয়া নিজেই বলেছিলেন মার্কিন কর্পোরেট সাম্রাজ্যবাদ-এর কথা। তিনি এ-কথা বলেই ক্ষান্ত হন নি। অগোনি জনসম্প্রদায়ের পক্ষে এবং সঙ্গে থেকেই সারো উইয়া লড়েছেন ওইসব কোম্পানীর বিরুদ্ধে; তাঁর লেখায় কর্পোরেশনগুলোর নগ্ন অপতৎপরতার বিভিন্ন দিক তিনি তুলে ধরেছেন এবং এও বলেছেন যে, তাদের প্রাকৃতিক সম্পদ লুটপাট এবং ভূমি-ও-পরিবেশ-ধ্বংসের আরেক নাম গণহত্যা।

সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধ যেমন মানুষকে নির্দ্বিধায় হত্যা করে, কর্পোরেট পুঁজির প্রাকৃতিক সম্পদ লুটপাটও ভূমি এবং পরিবেশকে ধ্বংস করার ভেতর দিয়েই মানুষকে হত্যা করে। এ-ধরনের অবস্থান থেকে টগবগে ভাষায় সাম্রাজ্যবাদবিরোধী লেখালেখির জন্যই নাইজেরিয়ার লেখক কেন্ সারো উইয়াকে প্রাণ দিতে হয়। নাইজেরিয়ার সামরিক সরকার-শেল ও শেভরনের সুপারিশেই-সারো উইয়াকে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝোলায়।

অবশ্যই নাইজেরিয়া একমাত্র উদাহরণ নয়, কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ নিঃসন্দেহে। পৃথিবীর তাবৎ প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর শুধুমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একচেটিয়া আধিপত্য প্রসঙ্গে মার্কিন ইতিহাসবিদ হাওয়ার্ড জিন তাঁর এ পিপলস্ হিস্ট্রি অব দ্য ইউনাইটেড স্টেটস্ নামের গ্রন্থে আমাদের জানান যে, পৃথিবীর প্রাকৃতিক সম্পদের শতকরা ষাট ভাগ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ তার কর্পোরেশনগুলো বিভিন্নভাবে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। মধ্যপ্রাচ্যের প্রায় ১১টি দেশের প্রাকৃতিক সম্পদে মার্কিন কর্পোরেশনগুলোর একচেটিয়া প্রবেশাধিকার রয়েছে।

বলার অপেক্ষা রাখে না যে, ইরাক এখন মার্কিন কর্পোরেশনগুলোর লুটপাটের একটি প্রধান ক্ষেত্র। আর ঐতিহাসিকভাবে লাতিন আমেরিকা তো রয়েছেই। বিনিয়োগের নামে মার্কিন কর্পোরেশন এই মহাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদ কিভাবে লুটপাট করেছে তার বোধ করি সবচাইতে বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া যাবে এদুয়ার্দো গ্যালিয়ানোর সাড়া-জাগানো গ্রন্থ ওপেন ভেইনস্ অব ল্যাটিন আমেরিকা-তে। গ্যালিয়ানো রাজনৈতিক অর্থনীতির একটি ইঙ্গিতজ্ঞাপক কূটাভাসকে চিহ্নিত করেন এই বলে যে, যে-দেশ প্রাকৃতিক সম্পদে যত সমৃদ্ধ, সে-দেশ তত দরিদ্র। (পৃ ৭৬) হ্যাঁ, বিভিন্ন সময়ে পুঁজিবাদী সাম্রাজ্যবাদ সেটাই প্রমাণ করেছে বটে। 

মিডিয়া ও যোগাযোগ ব্যবস্থার ওপর আধিপত্য

এবারে আসি কর্পোরেট পুঁজির একচেটিয়া আধিপত্যের চতুর্থ বলয়ে। এটি গণমাধ্যম ও যোগাযোগের বলয়। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের যুগে আজ পৃথিবীর সবচাইতে বড়ো গণমাধ্যমগুলোর স্বত্বাধিকারী হচ্ছে গুটিকয়েক কর্পোরেশন। গণমাধ্যমবিশারদ রবার্ট ম্যাকচেছনি তাঁর দ্য নিউ গ্লোবাল মিডিয়া গ্রন্থে আমাদের জানান, আটটি বহুজাতিক কর্পোরেশন এখন বৈশ্বিক গণমাধ্যমের বাজারকে শাসন করছে : জেনারেল ইলেকট্রিক (এন.বি.সি.র স্বত্বাধিকারী), এ.টিএ্যান্ডটি/ লিবার্টি মিডিয়া, ডিজনি, টাইম ওয়ারনার, সনি, নিউজ কর্পোরেশন, ভিয়াকম (সিবিএস-এর স্বত্বাধিকারী) এবং বার্তেলসমানসহ সি-গ্রাম। (পৃ ২২) এছাড়া তো এটা গত দশ বছরে বেশ পরিষ্কার হয়েছে যে, রূপার্ট মারডোক, সিলভিয়া বার্লুসকোনি এবং ওয়ারনার ভাতৃদয়সহ হেনরি লুচে মিডিয়া সম্রাট হিসেবে তাদের মিডিয়া-সাম্রাজ্য বিস্তৃত করে চলেছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ও মহাদেশে।

মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ

হলিউড এর এরিয়াল ভিউ। ইমেজ সোর্স- indianexpress.com

এরা বেতার-শিল্প, মুদ্রণ-শিল্প ও চলচ্চিত্র-উৎপাদনের ওপর তাদের একচেটিয়া কর্তৃত্ব জারি রেখেছে, যেমন তারা নিয়ন্ত্রণ করে চলেছে স্যাটেলাইট ও কেব্ল নেটওয়ার্কগুলো। হ্যাঁ, বইপত্র এবং পত্রপত্রিকা থেকে শুরু করে ভিডিও এবং খেলনাসহ টেলিভিশন প্রোগ্রাম এবং চলচ্চিত্র পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের মিডিয়া-পণ্যের উৎপাদন, বিনিময়, বণ্টন ও ভোগের বিষয়টি গণমাধ্যম ও যোগাযোগের রাজনৈতিক অর্থনীতিকেই সামনে আনে। আর এই রাজনৈতিক অর্থনীতির ওপর আবারো ওই মার্কিন কর্পোরেশনগুলোর প্রায় একচেটিয়া আধিপত্য জারি রয়েছে। নোম চমস্কি ও এডওয়ার্ড হারমান তাঁদের গ্রন্থ ম্যানুফ্যাকচারিং কনসেন্ট-এ বর্তমান বিশ্বের মিডিয়া-সাম্রাজ্যবাদকে মার্কিন আধিপত্য দিয়েই বিচার করেছেন। তাঁরা বলেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সব চাইতে উঁচু পর্যায়ের ২৪টি বৃহৎ মিডিয়া-সংস্থার আধিপত্যের কথা।

চমস্কি ও হারমান আরো বলেন এই চব্বিশটি মিডিয়া-সংস্থা নিজেরাই বড়ো আকারের মুনাফাভিত্তিক কর্পোরেশন। এদের মালিকানা এবং নিয়ন্ত্রণ একচ্ছত্র ভাবে ধনবান ব্যক্তিদের হাতেই।…একটি বাদে উঁচু পর্যায়ের সকল কোম্পানীরই সম্পদের পরিমাণ ১ বিলিয়ন ডলারের চেয়েও বেশি…এই বৃহৎ মিডিয়া-সংস্থাগুলোর প্রায় তিন-চতুর্থাংশের কর-পরবর্তী মুনাফার পরিমাণ ১০০ মিলিয়ন ডলারকেও ছাড়িয়ে যায় এবং তাদের গড় মুনাফা দাঁড়ায় ১৮৩ মিলিয়ন ডলারে। (পৃ ৪) তাহলে দেখা যাচ্ছে যে, বর্তমান বিশ্বের মিডিয়া-সাম্রাজ্যবাদ রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক দিক থেকে একচেটিয়া কর্পোরেট পুঁজির সাম্প্রতিকতম স্তর মার্কিন সাম্রাজ্যবাদেরই একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

কিন্তু মিডিয়া-সাম্রাজ্যবাদ কেবল রাজনৈতিক অর্থনীতির বিষয় নয়; তা সাংস্কৃতিকও বটে। প্রকৃতপক্ষে মিডিয়া-সাম্রাজ্যবাদ আধিপত্যবাদী সংস্কৃতির উৎপাদন-বিনিময়-ভোগ-বন্টনের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। মার্কিন মিডিয়া-সংস্থাগুলো ব্যবসায় করার পাশাপাশি এবং ব্যবসার স্বার্থেই বাজারের মতাদর্শ ও পুঁজিবাদী মূল্যবোধ বিভিন্নভাবেই বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে থাকে। হ্যাঁ, সত্য, মিডিয়া তো কেবল প্রযুক্তি ও প্রতিষ্ঠানই নয়, তা আখ্যানও বটে, যে-সব আখ্যানের পুনরাবৃত্ত প্রাত্যহিকতায় মগজ ও মনোজগতেরও বাজারায়ন ঘটে চলেছে এমনি এক মাত্রায় যে, মানুষের চিন্তা ও জ্ঞানের মূল্যও নির্ধারিত হয় বিনিময়-মূল্যের নিরিখে।

সবার ওপরে বাজার ও বিনিময়-মূল্য সত্য, তাহার ওপরে নাই-এই মতাদর্শটাকে আধিপত্যবাদী এবং এমনকি একচেটিয়া করার ক্ষেত্রে মার্কিন মিডিয়া-সাম্রাজ্যবাদের আগ্রাসন গত দশ বছরে অভূতপূর্ব তীব্রতা লাভ করেছে, যে-কথাটি আমাদের জানাচ্ছেন মিডিয়া-নৃতাত্ত্বিক কেলি আসকিউ ও রিচার্ড উইলক্। তাঁরা আরো বলেন যে, মানুষের জন্য বিশ্বের সংস্কৃতিকে সংজ্ঞায়িত করার কাজ নিয়েছে এখন মার্কিন মিডিয়া-সাম্রাজ্যবাদ। এবারে আসকিউ ও উইলক্ থেকে একটি উদ্ধৃতি : পৃথিবীর অধিকাংশ জনগোষ্ঠীর সামনে এখন সংস্কৃতিকে উপস্থাপন করে সি.এন.এন., হলিউড ও এম.টি.ভিসহ অন্যান্য ক্ষমতাবান বৈশ্বিক মিডিয়া।

আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়া থেকে আফ্রিকা পর্যন্ত পৃথিবীর প্রায় সর্বত্রই স্থানীয় জনগণ মুদ্রিত চিত্রকল্পে কিংবা টেলিভিশনের পর্দায় কিংবা চলচ্চিত্রে দূর-দেশের জীবনাচরণকে দৃশ্যমান দেখে। বেতার-সম্প্রচার, সঙ্গীত-ভিডিও এবং গণহারে উৎপাদিত ক্যাসেটের মাধ্যমে স্থানীয় জনগণ অপরিচিত গান-বাজনা এবং ভাষা শোনার অভিজ্ঞতা অর্জন করে। (পৃ ১) অভিজ্ঞতা অর্জনের ভেতর দিয়ে বিভিন্ন সংস্কৃতির সঙ্গে সম্পর্কিত হওয়া তো ভালো কথা, কিন্তু সম্পর্কিত হওয়ার অর্থ যদি দাঁড়ায় অসম বা বৈষম্যমূলক উৎপাদন-সম্পর্কের ও ক্ষমতা-সম্পর্কের বিস্তার ও আগ্রাসন, তাহলে তো প্রশ্ন থাকবেই।

মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ

মার্কিন সম্রাজ্যবাদের ইতিহাস – teachingamericanhistory.org

এখানে মার্কিন মিডিয়া-সাম্রাজ্যবাদের আরেকটি আগ্রাসী চেহারার দিকে তাকানো যাক। হলিউডের চলচ্চিত্র, ম্যাকডোনাল্ডের বার্গার, লেভি-স্ট্রাউস কোম্পানির জিনস্, নাইকি কোম্পানীর জুতো, কোকা-কোলা কোম্পানীর পানীয়সহ অন্যান্য পণ্যকে জনগণের আফিমে রূপান্তরিত করার মাধ্যমে। তৃতীয় বিশ্বে মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানীর কার্যকলাপ সাংস্কৃতিক ও মতাদর্শিক শক্তি অর্জন করে। তাহলে এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্পষ্ট হয়ে ওঠে: মার্কিন মিডিয়া-সাম্রাজ্যবাদ নিজেই সংস্কৃতিকে রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক-অর্থনীতিকে সাংস্কৃতিক করে তুলেছে। প্রকৃত প্রস্তাবে, একচেটিয়া পুঁজিবাদের সাম্প্রতিকতম স্তরে সংস্কৃতির আলোচনা রাজনৈতিক অর্থনীতিকে বাদ দিয়ে এবং রাজনৈতিক অর্থনীতির আলোচনা সংস্কৃতিকে বাদ দিয়ে সবসময়ই অপর্যাপ্ত থেকে যায়। 

গণবিধ্বংসী অস্ত্রের ওপর আধিপত্য

এবারে আসা যাক আধিপত্যের পঞ্চম ও শেষ বলয়ে। এবারে ফেরা যাক একচেটিয়া আধিপত্যের আরেকটি বলয়ে-গণবিধ্বংসী যুদ্ধাস্ত্র প্রসঙ্গে। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বর্তমান সময়ে যেমন, পুঁজিবাদের আগের পর্বেও তেমনি স্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হয়েছে যে, অস্ত্রের বিষয়টি একই সঙ্গে সামরিক ও রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক তাৎপর্য বহন করে। মার্কিন পুঁজিবাদের প্রধান মুখপত্র ফরচ্যুন পত্রিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রচ্ছদের উদাহরণ ব্যবহার করা যাক। ২০০১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বরের কিছু দিন পরে প্রকাশিত ফরচ্যুন পত্রিকাটির একটি বিশেষ সংখ্যার প্রচ্ছদে একটি ছবি ছাপা হয়। সে-ছবিটি ফোর্ড কোম্পানীর একজন হিসাব-ব্যবস্থাপকের। কিন্তু ছবিতে সেই ব্যবস্থাপককে দেখা যায় সামরিক পোশাকে। আর ছবির নিচে বেশ বড়ো হরফে লেখা আছে বাণিজ্য যুদ্ধে যায়।

হ্যাঁ, যেখানেই যুদ্ধ, সেখানেই তো অস্ত্রের ব্যবসায় জমে ওঠে। আর যুদ্ধ কেবল অস্ত্রের ব্যবসায়কেই আকৃষ্ট ও ত্বরান্বিত করে না; তা একই সঙ্গে যুদ্ধকালীন পণ্যের উৎপাদন-বিতরণ-বিনিময়-ভোগের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক প্রক্রিয়াকেও চালু রাখে। আর এভাবেই তো কর্পোরেশনগুলো মুনাফা লোটে। এদুয়ার্দো গ্যালিয়ানো তাঁর আপসাইড ডাউন গ্রন্থে লেখেন, আমরা জানি যে, সন্ত্রাস উস্কে দেয় সন্ত্রাসকে, কিন্তু সন্ত্রাস আবার কোম্পানীগুলোর মুনাফাকেও বৃদ্ধি করে, যে-কোম্পানীগুলো সন্ত্রাসকে পণ্যে রূপান্তরিত করে তাকে পরে দৃশ্যকল্প হিসেবে বিক্রি করে। (পৃ ২৭১) এ-প্রসঙ্গে অবশ্যই বলা দরকার বেলজিয়ামের প্রভাবশালী রাজনৈতিক অর্থনীতিবিদ আর্নেস্ট ম্যান্ডেল-এর লেট ক্যাপিটালিজম গ্রন্থটির কথা।

যুদ্ধের সঙ্গে পুঁজিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের সম্পর্ককে তিনি তত্ত্বায়িত করেছেন রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকেই। লেট ক্যাপিটালিজম্-এ ম্যান্ডেল লেখেন, তিরিশের দশকের শেষ দিক থেকেই সাম্রাজ্যবাদী অর্থনীতিতে অস্ত্রের উৎপাদন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।…অদূর ভবিষ্যতে এমন কোনো সম্ভাবনা নেই যে, চিরস্থায়ী অস্ত্রের অর্থনীতির ঊর্ধ্বগতি কোনোভাবে হ্রাস পাবে। আর এভাবেই তো আমার লক্ষ্য করি সাম্প্রতিকতম পুঁজিবাদের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হিসেবে চিরস্থায়ী অস্ত্র অর্থনীতিকে। (পৃ ২৭৩-৭৪) হ্যাঁ, অস্ত্র অর্থনীতির চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত নিঃসন্দেহে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের অনিবার্য সামরিকায়িত চেহারাকেই নির্দেশ ও নির্দিষ্ট করে।

আর ঊনিশ শতক থেকে আজ পর্যন্ত মার্কিন সামরিক আগ্রাসনের ইতিহাস একই সঙ্গে মার্কিন পুঁজিবাদের ইতিহাসও বটে। মার্কিন সামরিক ইতিহাসবিদ উইলিয়াম ব্লাম আমাদেরকে জানান যে, ১৯৪৫ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত তৃতীয় বিশ্বের ৬৯টি দেশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সামরিক যুদ্ধ পরিচালিত করেছে বা সামরিক হামলা চালিয়েছে। এবং ১৯৪৫ সাল থেকেই সারা পৃথিবীব্যাপী যুদ্ধ-অর্থনীতির ওপর একচ্ছত্র আধিপত্য বজায় রেখেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই। এছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ-এর পরিসংখ্যান মোতাবেক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই অস্ত্র-ব্যবসায় পয়লা স্থান অধিকার করে আছে।

মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ

সিলিকন ভ্যালি। ইমেজ সোর্স – Wikimedia.com

অস্ত্রের ব্যবসায় থেকে কিভাবে মার্কিন কর্পোরেশনগুলো মুনাফা লোটে তার অনেক উদাহরণ জড়ো করা সম্ভব। তবে এখানে শুধু বোয়িং কোম্পানীর কথা উল্লেখ করাটাই যথেষ্ট হবে। বোয়িং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম রপ্তানীকারী পুঁজিবাদী প্রতিষ্ঠান, দ্বিতীয় বৃহত্তম অস্ত্র-উৎপাদক এবং জাতীয় মিসাইল প্রতিরা প্রকল্পের বৃহত্তম ঠিকাদার। কেভিন মার্টিন ও তাঁর দলের একটি সমীক্ষা অনুসারে বোয়িং-এর বার্ষিক আয় ২০০০ সালে গিয়ে দাঁড়িয়েছিল মোট ৫১.৩ বিলিয়ন ডলারে (বোয়িং কর্পোরেশন,পৃ ৩৪)।

ওই সমীক্ষা থেকে একটি উদ্ধৃতি : বোয়িং-এর এ-এইচ-৬৪/এ আপাচে বিক্রি করা হয়েছে মিশর, গ্রীস, ইজরায়েল, সৌদি আরব এবং যুক্ত আরব আমিরাতের কাছে। ফিলিস্তিনীদের বিরুদ্ধে ইজরায়েল ব্যবহার করেছে বোয়িং-এরই তৈরী করা হেলিকপ্টার। বোয়িং-এর এফ-১৫ ঈগল বিক্রি করা হয়েছে ইজরায়েল, জাপান এবং সৌদি আরবের কাছে। আর অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ফিনল্যান্ড, কুয়েত, মালয়েশিয়া, স্পেন এবং সুইজারল্যান্ডের কাছে বিক্রি করা হয়েছে বোয়িং-এর এফ/এ-১৮ হর্নেট। ইরাকের বিরুদ্ধে ১১ বছর ধরে বোমাবাজি অভিযানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজেই ব্যবহার করেছে বোয়িং-এর এফ-। বোয়িং তার নিজস্ব যুদ্ধ-বিমানের চাহিদাকে চিরস্থায়ী করার জন্যই কৌশলে অস্ত্র রপ্তানী করে থাকে।

মার্কিন সামরিক বাহিনীর জন্য আবার বোয়িং নিজেই নতুন নতুন অস্ত্র উদ্ভাবন ও উৎপাদন করে। একই অস্ত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রশক্তিদের কাছেও বিক্রি করে থাকে বোয়িং। অস্ত্রের রপ্তানী আবার নিজেই উন্নততর ও ব্যয়বহুল প্রযুক্তির উদ্ভাবন দাবি করে, যাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক আধিপত্যকে সবসময়ই নিশ্চিত করা সম্ভব হয়। (বোয়িং কর্পোরেশন পৃ ৩) ওপরে উদ্ধৃত আখ্যানটি চিরস্থায়ী অস্ত্র-অর্থনীতির চেহারাকেই তুলে ধরে। এই অর্থনীতির সঙ্গে পৃথিবীব্যাপী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি সামরিক উপস্থিতির বিষয়টিও যুক্ত বটে।

জন বেলামি ফস্টার তাঁর ইম্পিরিয়ালিজম এ্যান্ড এম্পায়ার নামের প্রবন্ধে জানান, পৃথিবীর ৬৯টি দেশে এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটি আছে; এ-সংখ্যা কেবলই বাড়ছে। (পৃ ৫) হ্যাঁ, এভাবেই মার্কিন কর্পোরেশন, চিরস্থায়ী অস্ত্র-অর্থনীতি এবং পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায়-বিশেষ করে এশিয়া-আফ্রিকা-লাতিন আমেরিকায়-মার্কিন সামরিক বাহিনীর সরাসরি উপস্থিতি ও হামলা গভীর ভাবে পরস্পর-সম্পর্কিত হয়ে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের সামপ্রতিক ব্যাকরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিককেই নির্দেশ করে। আগের অংশে আলোচিত আধিপত্যের পাঁচটি বলয়-যা আসলে পরস্পর-সম্পর্কিত-মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের সামপ্রতিক ব্যাকরণকেই নির্দেশ করে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

More News Of This Category
©2021 All rights reserved © kalakkhor.com
Customized By BlogTheme
error: Content is protected !!

Discover more from কালাক্ষর

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading