বাবার বিয়েঃ- অনেকক্ষণ ধরে খেয়াল করছি বাবা আমার রুমের সামনে আসে তারপর কি একটা চিন্তা করে আবার চলে যায় । আমার বাবার যে পার্সোনালীটি তাতে এমন টা করার কথা নয়- তবে কি বাবা কোন সমস্যা পরেছে? যা আমার সাথে শেয়ার করতে চেয়েও পারছে না? আমি কৌতূহলী হয়ে বাবাকে ডেকে আমার রুমে নিয়ে আসলাম। তারপর বাবার হাতটা ধরে বললাম, বাবা, কি হয়েছে বাবা? এনিথিং রঙ? আমার বাবা আমার কথা শুনে নিচের দিকে তাকালো তার পর বললো আচ্ছা আমি যদি তোর মত চুল কাটি, দাড়ি কাটি, তোর মত ফ্যাসানেবল হতে তুই যে সমস্ত কাপড় চোপড় পড়িস আমি যদি আজ থেকে সেগুলো পড়ি, যদি আমি তোর মত বাইক নিয়ে মাঝে মাঝে বের হই তুই কি বিরক্ত হবি? আমি আমি তো বাবার এই কথা শুনে পুরাই টাস্কি খেয়ে গেছি- যাই হোক কিউরেসি হাইড করে বললাম- না বাবা। মোটেও বিরক্ত হব না শুধু এইটা বলবা হুট করে তোমার কি হল যে জীবন চক্রের এতটা বছর পার করে এসে তোমায় এই সব করতে হবে?
বাবা এইবার আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বললো, দেখ সাঞ্জ,আমি আমার জীবনটা কোন দিন উপভোগ করতে পারি নি। ছোট বেলা থেকে খুব অভাব অনটনে বড় হয়েছি। খেয়ে না খেয়ে আমি আমার জীবনের প্আরথম ভাগ অতিবাহিত করেছি – নিজের উপার্জন করে সেই অর্থে আমি আমার ছাত্র জীবন পার করেছি। ভার্সিটি তে পড়ার টাইমে আমার বন্ধুরা যখন স্টুডেন্ট লাইফটা এনজয় করতো আমি তখন আমার পড়ার খরচ চালাতে টিউশনি করিয়ে নিজের আর নিজের পরিবারের খরচ চালাতাম। আর যখন পড়া লেখা শেষ করে ভালো একটা চাকরি পেলাম তখন ভাবলাম অনেক হয়েছে এইবার আমি আমার জীবনটা উপভোগ করবো কিন্তু আমি হয়ত সেই ভাগ্য নিয়ে জন্মাই নি নইলে হুট করেই কেন বাবা মা আমাকে বিয়ে করিয়ে দিবে? যাই হোক বিয়ের পর তোর মাকে দেখে মনে মনে হয়েছিল আজ থেকে আমার সুখের জীবন শুরু। কারন তোর মা ছিল এমন একজন মেয়ে যার ভাল গুন গুনে শেষ করা যাবে না- কিন্তু বিধাতা আমায় সেই সুখ আমার কপালে লিখে রাখেন নি বলেই তুই জন্মের ২ বছর পর হঠাৎ তোর মা মারা যায়।
এর পর অনেকেই আবার আমায় বিয়ে করার কথা বলেছে – তোর কথা ভেবে দ্বিতীয় বিয়ে করি নি। কারন আমি জানি যে যতই বলুক এক জন মায়ের দায়িত্ব কোন দিন সৎ মা নিতে পারে না- নিলে সেইটা কোটিতে এক দুই জন আমি তোর লাইফ টা দুর্বিশহ করে তুলতে চাইনি বলেই আবার বিয়ে করে ফেলতে পারিনি। নিজের কথা না ভেবে আমি তখন তোর ভবিষ্যতের কথা বেশি ভেবেছি- তোকে মানুষ করতে আর তোর ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে টাকার পিছনে ছুটতে ছুটতে কখন যে আমি বুড়ো হয়ে গেলাম নিজেও জানি না। কিন্তু আজ এত দিন পর যখন নিজের জীবনের কথা ভাবতে বসেছি – নিজের সুখ আল্লাদ পাওয়া না পাওয়ার হিসেব কষতে বসেছি তখন নিজেকে খুব অসহায় লাগছে- তাই ভাবছি নিজের জীবনটা একটু উপভোগ করবো। বাবার কথা গুলো শোনার পর আমি নিজের চোখের জল ধরে রাখা খুব কষ্ট সাধ্য ব্যাপার হয়ে দারিয়েছিল তার পর নিজের চোখের জলটা কোন রকমে লুকিয়ে বাবাকে বললাম,বাবা আমার কোন সমস্যা নেই। এই নাও বাইকের চাবি। আজ থেকে তুমি ২০ বছরের তরতাজা যুবকের মত নিজের জীবনটা উপভোগ করো, সেদিন দুপুরে অফিসে বসে কাজ করছি এমন সময় আমার বন্ধু পিয়াস আমায় ফোন দিয়ে বললো,
সাঞ্জ,আংকেল কি ঠিক আছে? আমি বললাম,মানে? পিয়াস তখন বললো,বন্ধু, কিছুক্ষণ আগে গলির মোরের দোকানটাতে বসে চা খাচ্ছিলাম। হঠাৎ কে যেনো আমার পিছনে থাপ্পড় মেরে বললো, হোয়াটস আপ ব্রো। তাকিয়ে দেখি তোর বাবা৷ গলায় মোটা চিইন, দাড়ি স্টাইল করে কাটা৷ চুল হাইলাইট করা। একটা টিশার্ট পড়েছে আর তাতে লেখা, “আহো ভাতিজা আহো” আর কাটাছেঁড়া জিন্স প্যান্ট। আমি তোর বাবাকে বললাম, আসসালামুয়ালাইকুম চাচা। কিন্তু তোর বাবা আমার ডানগালে থাপ্পড় মেরে বললো, আমাকে কি চাচার মত লাগে?আমি পিয়াসের কথা শুনে বিরক্ত হয়ে বললাম, দেখ আমার বাবা হলো মর্ডাণ বাবা। তোর বাবার মত ফকিন্নি বাবা না। আজ থেকে তকে আমি চাচা বলে ডাকবো আর তুই আমার বাবাকে ভাই বলে ডাকবি এই কথা বলে আমি ফোনটা রেখে কাজে মন দিলাম,
অফিস থেকে ফেরার পথে আমাদের পাশের বাসার করিম আংকেল আমায় ডেকে আমতা আমতা করে বললো,বাবা লজ্জার কথা তোমায় কিভাবে যে বলি। আমার বউ মানে তোমার চাচী একটু বাহিরে বের হয়েছিলো। তোমার বাবা রাস্তায় দাঁড়িয়ে আমার বউকে দেখে শিস বাজায় আবার চোখও মারে।আমি অবাক হয়ে বললাম,চাচা, চাচী কি বোরকা পরে বের হয় নি?চাচা মাথা চুলকাতে চুলকাতে বললো,না তো, শাড়ি পরে বের হয়েছিলো.আমি তখন বললাম,দেখেন চাচা, বোরকা না পরে বের হলে রাস্তাঘাটে বাচ্চা পোলপান একটু আধটু শিস বাজাবে চোখে ইশারা করবে এটাই স্বাভাবিক।করিম আংকেল আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে বললো,তোমার বাবা বাচ্চা পোলাপান?
আমি কিছুটা বিরক্ত হয়ে বললাম,বাচ্চা না তো আপনার মত বুইড়া না কি? আমার বাবার লুক দেখেছেন, স্টাইল দেখেছেন? আপনার তো এক পা কবরে আর আমার বাবাকে বুইড়া বলেনআজ বাবা কালো থ্রি কোয়াটার পড়েছে আর সাদা টিশার্ট। টিশার্টের উপর সুন্দর করে লেখা, “বুঝো না দুধু খাও”। আমি বাবাকে বললাম,বাবা, তোমায় জন আব্রাহামের মত লাগছে।বাবা মুচকি হেসে বললো,একজনকে আমার খুব ভালো লাগে রে। কিন্তু কিভাবে প্রপোজ করবো বুঝতে পারছি না।আমি বাবাকে তখন বললাম, তুমি মোটেও চিন্তা করো না। তোমার এই লাভার বয় ছেলে তোমাকে সব শিখিয়ে দিবেআমি সারারাত বাবাকে প্রেমের সকল নিয়ম কায়দা শিখালাম…কয়েকদিন পর কলিংবেলের আওয়াজ শুনে দরজা খুলে আমি পুরো অবাক হয়ে যায়। দেখি বাবা একটা মহিলাকে বিয়ে করে নিয়ে এসেছে। আমাকে দেখে বাবা বললো,পিয়াস, সালাম কর। আজ থেকে উনি তোর নতুন মা। আজকাল একা থাকতে ভালোলাগে না। তাই তোর দেওয়া বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে প্রেম করে বিয়ে করে ফেলি,আমি এই মুহূর্তে ঠিক কি বলবো বুঝতে পারছি না। এমন সময় আমার গার্লফ্রেন্ড শ্রাবণীর ফোন। আমি ফোন রিসিভ করতেই শ্রাবণী কাঁদতে কাঁদতে বললো,পিয়াস, মাকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।আমি গোমড়া মুখে বললাম,তোমার মা আমাদের বাসায়। তুমি তাড়াতাড়ি আসো-
ছাদের এককোণে চুপ করে বসে আছি। শ্রাবণী আমার কাছে এসে আমার পিঠে সমানে কিল ঘুষি মারতে লাগলো। তারপর কাঁদতে কাঁদতে বললো,৫ বছর প্রেম করে শেষমেষ ভাই বোন হয়ে গেলাম। আরো বাবাকে আধুনিক বানাও। তোমার বাবা দুনিয়াতে আর কোন মানুষ পেলো না শেষ পর্যন্ত আমার মাকেই খুঁজে পেলো?
আমি এইবার রেগে গিয়ে বললাম, তোমার মার কি আক্কেল বুদ্ধি নাই? এই বয়সে মেয়ের বিয়ে না দিয়ে নিজে বিয়ে করে ফেলেছে..শ্রাবণী আরো রেগে গিয়ে বললো,একদম আমার মা নিয়ে উল্টো পাল্টা কথা বলবে না।আমিও রেগে গিয়ে বললাম,তুমিও আমার বাবা নিয়ে কোন ফালতু কথা বলবে না,ঝগড়ার এক পর্যায়ে শ্রাবণী আমার চুল আর আমি শ্রাবণীর চুল ধরে টানতে লাগলাম। এমন সময় খেয়াল করি বাবা আর শ্রাবণীর মা আমাদের দেখে হাসছে আর বলছে,ভাই বোন ঝগড়া করবে এটাই তো স্বাভাবিক,আমি মনে মনে বলতে লাগলাম, হাইরে আমার বাবা, কি বাঁশটাই না দিলা.
Leave a Reply