1. sjranabd1@gmail.com : Rana : S Jewel
  2. solaimanjewel@hotmail.com : kalakkhor : kal akkhor
পাচটি অনুপ্রেরণার গল্প - কালাক্ষর
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ০৪:১৯ অপরাহ্ন

পাচটি অনুপ্রেরণার গল্প

  • Update Time : শুক্রবার, ১১ জুন, ২০২১
অনুপ্রেরণা
ফাইল ফটো

আমরা মানুষেরা যদি এক ঘেঁয়ে জীবন যাপনে অভ্যস্থ হতাম তবে পৃথিবীর রূপ হয়ত অন্য রকম হতো।মাথার বুদ্ধি খাটিয়ে সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষমতা মানুষকে সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে পৃথিবিতে প্রতিষ্ঠিত করেছে। মানুষের অতী জানার আগ্রহ থেকে মানুষ নতুন কিছু সৃষ্টির চেষ্টা করে চলায়। বুদ্ধিদীপ্ত মানুষ বুদ্ধি হওয়ার পর থেকে একটাই স্বপ্ন দেখে “জীবনে কিছু করতে/হতে হবে”। এই কিছু হওয়ার পিছনে অনেক কিছু করতে হয়। কিছু বিষয় এমন থাকে যা থেকে কখনো মানুষ শিক্ষা নেয় ,কখনোবা তা থেকে নেয় প্রেরণা। মানুষের জীবনে এই “কিছু” করার জন্য নিজের ইচ্ছাশক্তির পর সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন পড়ে তা হল “অনুপ্রেরণা”। এই অনুপ্রেরণা মানুষকে ভাল কাজের রসদ যোগায়,মানুষকে সফল হয়ে উঠতে সাহায্য করে।

দিন বদলের এই সময় টিতে সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে পালটে যাচ্ছে মানুষের জীবন যাপনের ধরণ। বদলে যাচ্ছে জীবনের উদ্দেশ্য অর্জনের নকশা। সেই বাড়ছে প্রতিযোগিতা আর তার সাথে হতাশা। তাই জীবনের লক্ষ অর্জনের পথে নেতিবাচক ফলাফল গুলোর সাথে হতাশাগুলো যখন মানুষের কাঁধে এসে ভর করে তা যেন নামতে চায় না। এই সময় যদি সাহস দেয়ার মত কিংবা অনুপ্রেরণা দেয়ার মত বা অনুপ্রেরণার গল্প শুনানোর মত একটা হাত অন্য কাঁধে পাওয়া যায়। তখন ‘হতাশা” নামক অশুভ শক্তি একটি স্বপ্নকে শেষ করতে না পারায় হতাশ হয়ে হাওয়ায় মিলিয়ে যায়। আর সেই সাথে স্বপ্নটিও উড়বে বলে ডানা ঝাপটিয়ে হয়ে যায় ভারমুক্ত।

০১। প্রত্যেকের জীবনে একটি গল্প থাকে

এক দিন ২৪ বছর বয়সী এক ছেলে তার বাবার সাথে ট্রেনে যাচ্ছিল, ছেলেটি বার বার ট্রেনের জানালা দিয়ে বাইরে তাকাচ্ছিল খুশিতে ডগমগ হয়ে চিৎকার করে তার বাবাকে বলতেছিল “দেখ বাবা বাবা দেখো,গাছগুলো সব পিছনের দিকে চলে যাচ্ছে”ছেলেটির কথা শুনে তার খুব বাবা হাসতেছিল। তাদের পাশের সিটে বসা এক দম্পত্তি ছেলেটির এমন বাচ্চা সুলভ আচরণ দেখে কৌতুহলি দৃষ্টি নিয়ে ছেলেটিকে আর তার বাবাকে দেখছিল।

ট্রেন টি যখন খোলা মাঠের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল তখন হঠাৎ ছেলেটি আবারও চেঁচিয়ে উঠে তার বাবাকে বলে উঠলো-

“বাবা, দেখো মেঘগুলো আমাদের সাথে দৌড়াচ্ছে” পাশের সিটে যে দম্পত্তি বসে ছিল তার ভিতর থেকে বউটি আর নিরব থাকতে পারল না, বৃদ্ধ বাবাকে বলে ফেলল-“আপনি আপনার ছেলেকে কেন কোন ডাক্তারকে দেখাচ্ছেন না”?

মহিলাটির প্রশ্ন শুনে ছেলেটির বাবা হেসে উত্তর দিলো-‘দেখিয়েছি,আর আমরা এখন হাসপাতাল থেকেই আসছি,আসলে আমার ছেলে জন্ম অন্ধ ছিল, আজকেই সে তার চোখের আলো ফিরে পেল,জীবনের প্রথম সে আজকেই সব দেখতে পারছে।

মোরালঃ পৃথিবীতে প্রতিটি ঘটনার পিছনে একটি গল্প থাকে।তাই ভালোভাবে না জেনে কারো সম্পর্কে কিছু ভেবে ফেলা ঠিক না। তাতে গল্পের মত আপনি চমকে যেতে পারেন।

০২। ঝেড়ে ফেলা

এক লোকের এক গাধা ছিল। একদিন গাধাটি খাড়া পাহাড়ের গভীর খাদে পড়ে যায়। লোকটি তার প্রিয় গাধাটিকে টেনে তোলার আপ্রান চেষ্টা করে ও যখন ব্যর্থ হয়। তখন সে বাধ্য হয়ে সিদ্ধান্ত নেয় গাধাকে জীবন্ত সমাহিত করার।

লোকটি গাধার উপর মাটি ঢালতে থাকেন। অপরদিকে ভার কমাতে গাধাটি গায়ে পড়া মাটি ঝেড়ে ফেলে দিতে থাকে। আর তার উপর দাড়াতে থাকে। যতো মাটি পড়তে থাকে , সে তত ঝাড়তে থাকে । এভাবে মাটি ঝেড়ে ফেলতে ফেলতে আর তার উপর দাড়াতে গিয়ে দুপুর নাগাদ সে অনেক খানি উপরে ঊঠে আসে।

মোরালঃ জীবনে সমস্যা আসবেই। কিন্তু সমস্যাকে থেকে শিক্ষা নিতে পারেন তবে সুদিন আসবেই।

০৩। হাতির দড়ি

এক দিন এক লোক হাতির পাশ দিয়ে হেটে যাচ্ছিল,কিন্তু একটি বিষয় তার মনে দ্বিধা তৈরী করায় তিনি থমকে যান। লোকটির মনে দ্বিধা তৈরি হবার কারণ লোকটি যখন দেখল হাতি এতো বড় প্রাণী। অথচ শুধুমাত্র সামনের পা যে ছোট্ট একটি পাটের দড়ি দ্বারা বাঁধা হয়েছে, এই দড়ি এতো বড় প্রাণীর পক্ষে ছেড়া খুব মামুলি ব্যাপার। যেকোন সময় হাতি চাইলেই এটি ছিড়ে চলে যেতে পারে কিন্তু বিশেষ কি কারণ? যে হাতি তা করে না। এটা ভেবেই লোকটির মনে দ্বিধা তৈরী হয় ।

দ্বিধা দূর করতে লোকটি হাতির প্রশিক্ষক এর কাছে গিয়ে এর উত্তর জানতে চান। কেন হাতি এভাবে দাঁড়িয়ে থাকছে, দূরে পালিয়ে যাবার কোন চেষ্টা কেন করছে না। তখন প্রশিক্ষক উত্তরে বললেন-যখন হাতিটি খুব ছোট ছিল, তখন হাতিটিকে প্রায় এই সাইজেরই দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হতো,বাচ্চা হাতিটিকে তখন বেঁধে রাখার জন্য ঐ সময়ে এই সাইজই যথেষ্ট ছিল। বড় হতে হতে হাতিটির মনে ধারনা জন্মাতে থাকে এই দড়িই তাকে নিয়ন্ত্রন করছে, সে চেষ্টা করলেও এটি থেকে বেরিয়ে যাওয়া যাবে না। এক সময় এটি জাতিটির মনের বিশ্বাসে পরিণত হয়, যেমন এখন,হাতিটির সাইজ দড়ির চেয়ে বহুগুন বড় হলেও হাতিটি বিশ্বাস করে যে এই দড়ি এখনো তাকে ধারণ করতে পারে। তাই সে তা ছিড়ে বাইরে যাবার কোন প্রচেষ্টা কোন দিন করে না।

প্রশিক্ষকের কথা শুনে লোকটি খুব অবাক হয়ে যায়। কারণ,এই প্রাণীটি চাইলেই তার বন্ধন থেকে বাইরে আসতে পারে কিন্তু শুধুমাত্র “সে পারবে না ” এই বিশ্বাসের কারণে হাতিটি সেখানেই আটকে থাকে ,যেখানে তাকে আটকে রাখা হয়।

হাতির মত,আমাদের অনেকেই হয়ত বিশ্বাস করে বসে আছেন যে জীবনে আপনি কিছু করতে পারবেন না।  জীবনে কোন এক সময় ব্যর্থ হয়েছিলেন শুধুমাত্র এই কারণে।

মোরালঃ ব্যর্থতা হল শেখার একটি অংশ মাত্র, মানুষের সংগ্রামী জীবনে ব্যার্থতা আসবেই। ব্যার্থতা এলে আমি পারবো না বা আমায় দিয়ে হবে না এমন ভেবে কখনো হাল ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়।

০৪। আলু, ডিম, কফি

একদিন এক মেয়ে তার বাবাকে তার নিজের জীবন নিয়ে হতাশার অভিযোগ করছিল। বলছিল সে আর পারছে না, সে জানে না কিভাবে কি করতে হবে ,লড়তে লড়তে সে আজ ক্লান্ত। তার জীবনে   একটি সমস্যা শেষ হলে আরেকটি হাজির হয়, তাই তার সমস্যা কোন দিন শেষ হবার নয়।

মেয়েটির বাবা ছিলেন পেশায় একজন রন্ধনশিল্পী। মেয়ের হতাশার কথা শুনে তিনি মেয়েকে রান্না ঘরে ডেকে আনলেন। তারপর তিনটি পাত্রে পানি ভর্তি করে তা আগুনের উপর বসিয়ে দিলেন। যখন পাত্র তিনটিতে বলক আসল, তখন তিনি একটিতে আলু, একটিতে ডিম আর অন্য একটিতে কফি ঢেলে দিলেন। এভাবে আরো কিছুক্ষন সিদ্ধ হতে থাকল, মেয়ের সাথে কোন কথা বললেন না। অপর দিকে মেয়ে অধৈর্য্য হয়ে দেখে যাচ্ছিল তার বাবা তাকে এই সব করে কি বুঝাতে চাচ্ছে তার উত্তর জানতে।

বিশ মিনিট পর মেয়েটির বাবা চুলা বন্ধ করে একে একে প্রথমে আলু উঠিয়ে নিয়ে একটি বাটিতে রাখলেন,তার পর ডিম রাখলেন আর শেষে কফি একটি কাপে ঢাললেন। এরপর লোকটি তার মেয়েকে জিজ্ঞেস করলেন” তুমি এখন কি দেখছো”?

মেয়ে তঝন তার বাবাকে উত্তর দিল ” আলু , ডিম আর কফি” বাবা,

মেয়েটির বাবা তখন মেয়েটিকে বললেন ভালো করে দেখো এবং ধরে দেখো।

মেয়ে বাবার কথা মত ধরে দেখলো আলু নরম হয়ে গেছে, ডিমের খোসা খুলে দেখা গেল সিদ্ধ হয়ে শক্ত হয়ে গেছে। অন্যদিকে কফির কাপ থেকে বের হয়ে আসা ঘ্রাণে তার মুখ হাসোউজ্জল হয়ে যায়।

‘এসবের অর্থ কি বাবা”? মেয়ে জানতে চাইল।

বাবা তার মেয়েকে ব্যাখ্যা করলেন-

আলু, ডিম, কফি বিন যদিও একই তাপমাত্রার ফুটন্ত পানিতে অর্থাৎ একই দৈব পরিবেশের সম্মুখীন হয়েছিল। কিন্তু নিজের মত করে অর্থাৎ ভিন্ন ভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখায়। শক্ত আলু নরম হয়ে যায়। পাতলা আবরণে সুরক্ষিত নরম ডিম শক্ত হয়ে যায়। আর কফিবিনগুলো ছিল সম্পূর্ণ অন্যরকম। ফুটন্ত পানিতে এরা নিজেরা নিজেদের মেলে ধরে পানিটাকেই পরিবর্তন করে ফেলে। এবং নতুন এক জিনিস সৃষ্টি করে।

এখন বলো এর ভিতরে ” তুমি কোনটা?” মেয়ের কাছে বাবা জানতে চাইলেন। প্রতিকুল পরিবেশ যদি কখনো তোমার দুয়ারে কড়া নাড়ে তবে ,মামনী এবার বলবে কি? তোমার প্রতিক্রিয়া তখন কিসের মত হবে?।

০৫। এক গ্লাস পানির ওজন কত

এক দিন এক অনুষ্ঠানে এক মনোবিজ্ঞানী স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট তার বক্তব্য দেবার সময় হল রুমের চারপাশে হাঁটতে হাঁটতে এক সময় শ্রাতাদের সামনে এক গ্লাস পানি উপর করে তুলে ধরলেন। উপস্থিত সবাই তখন ভেবে নিলো মনোবিজ্ঞানী টি হয়তোবা গ্লাস অর্ধেক খালি না অর্ধেক ভর্তি এই প্রশ্নটি সবাইকে করবেন। কিন্তু তিনি তা করলেন না। তিনি হাসিমুখে প্রশ্ন করলেন ” এই এক গ্লাস পানি কত ভারী”।  দর্শকদের ভিতর থেকে উত্তর আসল আট আউন্স থেকে বিশ আউন্সের ভেতর হবে।

মনোবিজ্ঞানীটি তখন বললেন এর আসল ওজন এখানে কোন ব্যাপার না। আসল ব্যাপার হলো আমরা এটাকে কতক্ষন ধরে রাখছি। ওজনটাও তার উপর নির্ভর করছে।

মনোবিজ্ঞানী আরো বললেন, যদি আমি একে এক মিনিটের জন্য ধরে রাখি, তবে কোন সমস্যা হবে না। যদি একে এক ঘন্টা ধরে রাখি তবে আমার হাতে ব্যাথা অনুভূত হবে। আর যদি এক দিনের জন্য এভাবে ধরে থাকি তবে আমি অসাড় এবং পক্ষঘাতগ্রস্থ বোধ করব। প্রতিটা ক্ষেত্রে এর আসল ওজনে কোন পরিবর্তন হয় না। কিন্তু ধরে রাখার সময় বাড়ার সাথে সাথে এটি ভারী থেকে ভারী লাগতে শুরু করে।

মনোবিজ্ঞানীটি আরো বিশদে গিয়ে সবার উদ্দেশ্যে বললেন, আমাদের জীবনের চাপ এবং উদ্বেগ গুলো এই গ্লাসের পানির মত। যা নিয়ে কিছুক্ষন ভাবলে তেমন কোন কিছু হবে না। কিন্তু এই চাপ আর উদ্বেগ যদি আমরা সারাদিনের জন্য ধরে রাখি, মনে রাখি ।তবে তা আমাদের কোন কিছু করার সামর্থ্যটা কেড়ে নিতে পারে। তাই চাপ কখনো সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত টানতে যাবেন না। এটাকে সব সময় ছেড়ে দিতে হবে। অর্থাৎ গ্লাস নামিয়ে রাখতে হবে মনে করে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

More News Of This Category
©2021 All rights reserved © kalakkhor.com
Customized By BlogTheme
error: Content is protected !!

Discover more from কালাক্ষর

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading