আপনি মানেন আর নাই বা মানেন, মানুষ মাত্রই হোক না সে রাজা কিংবা পথের ফকির- হোক না সে আভিজ্যাত্যের চরম শিখরে থাকা কেউ কিংবা নোংড়া ধুলি কনার মাঝে শুয়ে থাকা কেউ, লুকিয়ে অথবা প্রকাশ্যে, সবাই পাদে। মানে পাদতে হয়। নর্মালী প্রতিটি মানুষ রোজ হাফ লিটার থেকে দেড় লিটার বায়ু বিষর্জন করে। এক জন সুস্থা মানুষ মোটামুটি আটবার থেকে কুড়িবার অবধি পাদলে ক্লিনিক্যালী ধরে নেওয়া যায় যে, তার শরীরে ডাইজেস্টিভ তেমন কোনো গড়বড় নেই। ভাবতে পারেন? একটা ভাসিয়ে-দেওয়া ছোট্ট পাদ হতে পারে পাঁচ এম এল এর সম পরিমানের। তেমনি ভাবে এক একটা বজ্রনির্ঘোষ পৌনে চারশো মিলিলিটার পর্যন্ত পৌছায়। সাধারণভাবে মানুষ ঘুম থেকে উঠে প্রথম যে পাদটা ছাড়ে তার ভল্যুম বেশি হয়, পেটের ভিতর সারারাতের সঞ্চিত গ্যাস বলে কথা!
পাদের আর একটা এমব্যারাসিং সাইট হল পাদের এর শব্দ। হুট করে চাপতে গিয়ে পুঁই করে বেরিয়ে গেলে লজ্জাজনক পরিস্থিতির ভিতর পরতে হয়- মধ্য যুগীয় সমজা ব্যাবস্থায় যে খানে কোন রাষ্ট ব্যাবস্থা ছিল না- হুট করেই কেউ এক জন একটা এলাকা দখল করে নিজেকে রাজা দাবী করে ওই এলাকার দন্ড মুন্ড শাসক বনে যেত – সেই যুগে রাজার সামনে সভাসদদের জোরে পাদার অপরাধে প্রান দন্ড ভোগ করার কথাও শোনা যায় – অথচ যে রাজার সামনে জোরে পাদ দেওয়ার অপরাধে নিরীহ মানুষের প্রান যেত সেই রাজা জোরে পাদলে তার জন্য সভাসদ দের তোপদ্ধনী দেওয়ার নজিরের কথা ও শোনা যায় –
যারা ফিজিক্স পড়েছেন তারা জেনে থাকবেন- সমস্ত শব্দের উৎসই কম্পন। আর পাদের শব্দ পায়ুছিদ্রের পেশীর কম্পনই এই শব্দের কারণেই হয়ে থাকে। মানুষের পায়ু ছিদ্রের পেশীর সঙ্কোচন প্রসারণ কিছুটা মানুষের আয়ত্ত্বে থাকলেও পুরোটা থাকে না বলেই মানুষ অনিচ্ছা সত্তেও জোরে শব্দ করে পাদে। এ ক্ষেত্রে কোলনে সঞ্চিত গ্যাসের পরিমাণ এবং যে ব্যাক্তির শরীর থেকে এই গ্যাসটা বেরোচ্ছে সেই ব্যাক্তির শরীরের আয়তনও (বিশেষ করে পায়ু অঞ্চলে চর্বির আধিক্য কিনা অথবা চেপে বসে থাকার জন্যে স্বাভাবিকভাবে গ্যাসটা নির্গমনে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে কিনা, সেই অনুযায়ী কতটা চাপ দিতে হচ্ছে নির্দিষ্ট পেশীতে, ইত্যাদি) শব্দের কম্পাঙ্কের জন্য দায়ী।
পায়ুছিদ্রের কাছে কোলনস্থ কিছু স্নায়ু প্রান্ত নিউরনের মাধ্যমে আভ্যন্তরীণ আবহাওয়ার পূর্বাভাস মানুষের মস্তিষ্কে পাঠায়, মস্তিস্ক সেই সংকেত এর উপর নির্ভর করে ডিসাইড করে আন্ত্রিক যে নির্গমনটা আসতে চলেছে, সেটি পাদ না হাগা। কেউ কেউ পাদতে গিয়ে হেগে ফেলেন এর কারন হিসাবে জানা যায় কোলনের স্নায়ুর দেওয়া ভুল সংকেত, কখনও কখনও ডায়রিয়া বা অন্যান্য শারীরিক গোলযোগের ফলে কোলনের স্নায়ুর দেওয়া পূর্বাভাস ভুল হয়ে যায়, এর ফলেই মানুষ পাদতে গিয়ে হেগে ফেলার মত বিপর্যয় এর ভিতর পড়ে। ইনকন্টিনেন্স কি জানেন? স্নায়ুপ্রান্তের কাজকর্ম যদি নিরবচ্ছিন্নভাবে ব্যহত হতে থাকে, তাকে ডাক্তারি ভাষায় বলে ইনকন্টিনেন্স। এই পরিস্থিতিতে মানুষের মস্তিস্ক হাগা-পাদা পার্থক্য করা ছাড়াও এদের (হাগা ও পাদা) নির্গমনের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। আর তখন একটা বিতিকিচ্ছিরি অবস্থার সৃষ্টি হয় ।
যারা বয়েলের সূত্র জানেন, তারা জেনে থাকবেন, গ্যাসীয় পদার্থের চাপ ও আয়তনের সম্পর্ক। তাপমাত্রা বজায় রেখে চাপ যদি কমানো হয় তবে আয়তন বাড়ে। কেউ যদি পাহাড়ে চড়তে যায় কিংবা এমন কোন জায়গায় যায় যেখানে মধ্যাকর্ষন এর চাপ খুব কম, তার অবস্থাটা বোঝার চেষ্টা করতে পারেন । মানুষের পেটের মধ্যে যে পরিমান গ্যাস যার চাপ এক অ্যাটমস্ফিয়ার বা তার বেশি থাকে । আবার বাইরে বাতাসের চাপ এক অ্যাটমস্ফিয়ারের চেয়ে বেশ খানিকটা কম। সাধারণভাবেই পেট ফুলে উঠবে, গ্যাস মুক্তি পেতে চাইবে বেশি থেকে কম চাপের জায়গায়।
এর ফলে ফলে পর্বত অভিযাত্রীদের অনাহেতুক ইনকন্টিনেন্সের সমস্যা হতে পারে। এমন টা হতে পারে বিমানযাত্রীদের বিমান ভ্রমন কালেও । কারন প্লেন আকাশে উড়লে ওপরে বায়ুচাপ কমে যায়। যদিও এয়ারক্রাফটে বায়ুচাপ স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু আট হাজার ফুট ওপরে বায়ুচাপ ৫৬৫ মিমি পারদের চাপ (স্বাভাবিক বায়ুচাপ ৭৬০ মিমি পারদের চাপ) পর্যন্ত প্লেনের মধ্যে স্বাভাবিক বায়ুচাপ রাখা যায়, তার চেয়ে কমে গেলে একেবারে নর্মাল/ স্বাভাবিক থাকে না।
কাজেই বিমান ভ্রেমন কালে ভ্রমন যাত্রির শরীরের মধ্যে পাদের আয়তন বেড়ে যায়। আর এ কারনেই প্লেনে ওঠা লোক জন প্লেনভর্তি লোক সুযোগ বুঝে পাদতে থাকে। কীভাবে এর প্রতিরোধ করা যায়, সে নিয়ে গবেষণা করেছেন নিউজিল্যান্ড মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের ডাক্তাররা, যা পাব্লিশ হয়েছে দ্য নিউজিল্যান্ড মেডিক্যাল জার্নালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ সংখ্যায়। সে কথা গুলো নিয়ে আসছি পরের পর্বে—
Leave a Reply