আসাদুজ্জামান সবুজঃ ঈদ মানে খুশি, ঈদ হচ্ছে আনন্দ। দীর্ঘ একমাস রোজা রাখার পর মুসলমানদের ঘরে ঘরে আসে ঈদ। আর ঈদের আনন্দ একধাপ এগিয়ে রাখে বিভিন্ন খাবার। আর মুখরোচক সব খাবারের পর মিষ্টিমুখ না হলে চলেই না। তাই প্রত্যেকেই সারা মাস রোজা রাখার পর মিষ্টি জাতীয় কিছু খাবার ঈদে অবশ্যই খেয়ে থাকেন। তাছাড়া ঈদের দিনে মেহমান বা অতিথি আপ্যায়নেও মিষ্টি খাবার ছাড়া চলেই না। আর তা ঘরে বসে তৈরি করতে পারেন। তাই ঈদে পছন্দের কিছু মিস্টিময় খাবার তৈরি করার রেসিপি দেওয়া হলো।
উপকরণঃ ১ কাপ বাসমতী চাল আধা চা চামচ জর্দার রং ২টি কমলার খোসা আধা কাপ ঘি ১ টুকরা দারুচিনি ৬টি লবঙ্গ ৩টি এলাচ কয়েকটি পেস্তা বাদাম ও কাঠবাদাম ১২টি কিশমিশ স্বাদ মতো চিনি আধা কাপ মোরব্বা ১ চা চামচ কেওড়া জল ১০-১৫টি ছোট মিষ্টি ।
প্রস্তুত প্রণালিঃ চাল ভালো করে ধুয়ে ভিজিয়ে রাখুন আধা ঘণ্টা। বাসমতী চালের বদলে পোলাওয়ের চালও ব্যবহার করতে পারেন।চুলায় একটি প্যান ৬ কাপ পানি দিন। জর্দার রং গুলে নিন পানিতে। জর্দার রং না থাকলে ফুড কালার ব্যবহার করতে পারেন। পানিতে ভিজিয়ে রাখা চাল ঝাঁঝরির সাহায্যে ছেঁকে নিন। পানি ফুটে উঠলে কমলার খোসা ছোট ছোট টুকরা করে দিয়ে দিন। এবার চাল দিয়ে নেড়ে নিন। মাঝারি আঁচে প্যান রেখে দিন চুলায়। চাল প্রায় আশি শতাংশ সেদ্ধ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। চুলা থেকে নামিয়ে চালের পানি ঝরিয়ে নিন। কমলার খোসার টুকরাগুলো খুঁজে ফেলে দিন। মাঝারি আঁচে চুলায় আরেকটি প্যান বসিয়ে ঘি দিয়ে দিন। দারুচিনি ভেঙে দিন। এলাচ ও লবঙ্গ দিন। বাদাম ভেঙে দিন ও কিশমিশ দিন। এবার চিনি ও পৌনে এক কাপ পানি দিয়ে নেড়েচেড়ে নিন। চিনি গলে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। ফুটে উঠলে সেদ্ধ করে রাখা চাল দিয়ে হালকা করে নেড়ে নিন। আবারও ফুটে উঠলে মোরব্বার টুকরা দিয়ে দিন। নাড়াচাড়া করে ঢেকে দিন। চুলার আঁচ কমিয়ে দমে রাখুন। ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর ঢাকনা তুলে একবার নেড়ে দিন। আরও ১০ মিনিট রেখে রাখুন চুলায়। পানি পুরোপুরি শুকিয়ে গেলে চুলা থেকে নামিয়ে কেওড়া জল ছিটিয়ে নেড়ে নিন। ঠাণ্ডা হলে ছোট ছোট মিষ্টি দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করুন মজাদার শাহি জর্দা।
আম দিয়ে যেসব ডেজার্ট তৈরি করা যায় তার মধ্যে ম্যাঙ্গো ক্যারামেল পুডিং অন্যতম। অল্প উপকরণ দিয়ে সহজে তৈরি করা যায় বলে এটি অনেকের কাছেই পছন্দের। আর খেতেও দারুণ। চলুন তবে জেনে নেয়া যাক ম্যাঙ্গো ক্যারামেল পুডিং তৈরির নিয়ম ।
উপকরণ: ডিম ৩টি চিনি ১/২ কাপ ঘন দুধ ১ কাপ ম্যাঙ্গো অ্যাসেন্স ১/২ চা-চামচ আমের রস ১/২ কাপ।
প্রণালি: ডিমের সঙ্গে চিনি ও দুধ মিশিয়ে ভালো করে ফেটিয়ে নিন। এতে ভ্যানিলা অ্যাসেন্স দিয়ে নেড়ে ছাঁকনি দিয়ে ছেঁকে নিন। এবার আমের রস মিশিয়ে নিন। ক্যারামেল তৈরির জন্য পানি ও চিনি জ্বাল দিন মাঝারি আঁচে। গাঢ় বাদামি রং ধারণ করলে নামিয়ে যে পাত্রে পুডিং বানাবেন, সেই পাত্রে ঢেলে দিন। ঠান্ডা হওয়ার আগেই পাত্র নাড়াচাড়া করে। এবার পুডিংয়ের মিশ্রণ ঢেলে দিন। যে হাঁড়িতে পুডিংয়ের মিশ্রণসহ বাটিটি বসাবেন, সেখানে এমনভাবে পানি নিন যেন বাটির অর্ধেক অংশ ডুবে থাকে। পুডিংয়ের বাটি হাঁড়ির পানিতে দিয়ে বাটি ঢেকে দিন। চুলার আঁচ মাঝারির চেয়ে আরেকটু বাড়িয়ে হাঁড়িটিও ঢেকে দিন। পানি কমে গেলে পানি দিয়ে দিন। ২৫ থেকে ৩০ মিনিট পর ঢাকনা খুলে টুথপিক দিয়ে পরীক্ষা করে দেখো পুডিং হয়েছে কি না। যদি টুথপিকে কিছু লেগে না থাকে, তাহলে হয়ে গেছে পুডিং। বাটি উল্টো করে প্লেটে পুডিং ঢেলে নিন। পিস করে কেটে পরিবেশন করুন। ওভেনে করতে চাইলে একটি উঁচু ট্রেতে পানি দেবে এবং বাটিটা পানির ওপর বসিয়ে ১৬০ ডিগ্রিতে ৪০-৫০ মিনিট বেক করুন।
আসুন জেনে নেই কিভাবে তৈরি করবেন গাজরের হালুয়া।
উপকরণঃ গাজর ৪০০ গ্রাম, দুধ এক লিটার, চিনি আধাকাপ, গুঁড়ো দুধ আধাকাপ, ঘি আধাকাপ, বাদাম কুচি তিন টেবিল চামচ ও কিশমিশ সাজানোর জন্য।
প্রস্তুত প্রণালিঃ প্রথমে গাজর দুধের মধ্যে সিদ্ধ করে নিন। দুধ শুকিয়ে গেলে চুলা থেকে নামিয়ে ঠাণ্ডা করে ব্লেন্ডারে ভার করে ব্লেন্ড করে নিন। এবার একটি প্যানে ঘি দিয়ে তাতে ব্লেন্ড করা গাজর, গুঁড়ো দুধ, চিনি ও এলাচ একসঙ্গে মিশিয়ে নাড়তে থাকুন। হালুয়ার পানি শুকিয়ে গেলে চুলা থেকে নামিয়ে পাত্রে ঢেলে নিন। ঠাণ্ডা হলে বাদাম কুচি ও কিশমিশ দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করুন দারুণ সুস্বাদু গাজরের হালুয়া।
বাঙালির ঐতিহ্যবাহী খাবার। ঘন দুধের পায়েসের স্বাদ একবার খেলে বারবার খেতে ইচ্ছে করে। জেনে নিন পায়েস তৈরির সহজ রেসিপি-
উপকরণঃ দুধ ১ লিটার, সরু চাল ১০০ গ্রাম, দারচিনি ১ ইঞ্চি, এলাচ ৩টি, তেজপাতা ২টি, চিনি স্বাদমতো, বাদাম, লবণ সামান্য।
প্রস্তুত প্রণালীঃ দুধ ঘন করে জ্বাল দিয়ে নিতে হবে। এক লিটার দুধের জন্য ১০০ গ্রাম পোলওয়ের চাল নিতে হবে। চালটা ধুয়ে কিছুক্ষণ পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। অন্যদিকে দুধ জ্বাল দিতে হবে। দুধ যখন ফুটতে থাকে, তখন চাল ও লবণ দুধের মধ্যে দিয়ে দিতে হয়। এরপর চাল ভাল করে সিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে এবং একটু পর পর নেড়ে দিতে হবে যেন চাল হাঁড়ির তলায়ে লেগে পুড়ে না যায়। চাল সিদ্ধ হয়ে গেলে যেন চাল গুলোকে আধাভাঙ্গা করতে একটা ঘুটনি দিয়ে ভাল করে ঘুটে নিতে হবে । সব কিছু ভালোভাবে মিশে গেলে তা কোন পরিবেশন পাত্রে নামিয়ে কিসমিস ও বাদাম দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করতে হবে।
উপকরনঃ ফালুদা তৈরি করতে নুডুলস ১/২ প্যাকেট, সাগুদানা ১/২ কাপ, দুধ ১লিটার, চিনি ১ কাপ,মোরব্বা, পেস্তা বাদাম কুচি, ভ্যানিলা এসেন্স ২ চা চামচ সাজানোর জন্য, সুইট বল, বিভিন্ন ধরনের মৌসুমি ফল, আইসক্রিম।
প্রস্তুত প্রণালি : প্রথমে নুডুলস সিদ্ধ করে এ থেকে পানি ঝরিয়ে রাখতে হবে। এর পর সাগু ভিজিয়ে রাখুন। ফুলে উঠবে। এরপর ১ লিটার দুধ সামান্য জ্বাল দিয়ে এতে ভিজিয়ে রাখা সাগু গুলো দিন। এরপর ২-৩ মিনিট পরই নুডুলস দিয়ে সিদ্ধ হলে চিনি ও এসেন্স দিন। চিনি গলে যাওয়া পর্যন্ত নাড়তে থাকুন তারপর নামিয়ে রাখুন। ঠাণ্ডা হলে স্বচ্ছ গ্লাসে বা বাটিতে প্রথমে ফালুদা ঢালুন। এরপর আইসক্রিম দিন। এর উপর রুহআফজা, মোরব্বা পেস্তা বাদাম কুঁচি, সুইট-বল দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করুন মজাদার ফালুদা।
Leave a Reply