আধুনিক বিশ্বের জ্ঞ্যান বিজ্ঞানের চারণ ভুমি বলা হয় ইউরোপ মহাদেশ কে, বিজ্ঞানের নতুন নতুন আবিষ্কার সাথে প্রযুক্তি গত সমৃদ্ধি ইউরোপের কিছু দেশ কে চালকের আসনে বসিয়ে দ্যায়। পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠের মাত্র ২% ভুমি নিয়ে গঠিত হয়েছে বলে ইউরোপ মহাদেশ পৃথিবীর দ্বিতীয় ক্ষুদ্রতম মহাদেশ বলে বিবেচ্য। আবার যদি জনসংখ্যার দিক থেকে হিসেব করতে যান তবে ইউরোপ কে বিশ্বের তৃতীয় জনবহুল মহাদেশে ফেলতে হবে।
সুপ্রাচীন ইতিহাস ইতিহাস সমৃদ্ধ ইউরোপ মহাদেশে স্বাধীন দেশের সংখ্যা সর্ব মোট ৫০টি । গ্রীক মিথোলজি থেকে শুরু করে পৃথিবী জুড়ে ছড়ানো-ছিটানো অসংখ্য উপকথা আর রূপকথায় ইউরোপের সৃষ্টির কাহিনী রচিত হয়েছে । শুধুই কি রূপকথা? পৃথিবীর ইতিহাসে ইউরোপ মহাদেশে বাস করা মানুষ নিজেদের শ্রেষ্টত্ব জাহির করতে যুগে যুগে অসংখ্য রক্তাক্ত ঘটনাও ঘটিয়েছে সব চেয়ে বেশি মাত্রায় । মানবতা ধংস্বকারী দুই যুদ্ধ প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধ ইউরোপেই সংগঠিত হয়েছিল।
সারা পৃথিবীতে যত গুলো স্ম্রাজ্য এর উত্থান পতন দেখেছে বিশ্ববাসী তার সংখ্যা যোগ করলে হয়ত ইউরোপ মহাদেশে সংগঠিত সম্রাজ্য গুলোর সংখ্যাকে ছাড়িয়ে যেতে পারবে না। এই খানে কালের পরিক্রমায় ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে যেমন নতুন স্ম্রাজ্য তৈরি হয়েছে তেমনি অন্য স্ম্রাজ্য বিলিন হয়ে গেছে, আর এই সাম্রাজ্যের উত্থান আর পতনের খেলায় বিভিন্ন সময় ইউরোপ মহাদেশে এমন কিছু নেতার জন্ম হয়েছিল যারা পৃথিবীর ইতিহাস বদলে দিয়েছিল। ইতিহাস বদলে দেয়া এমন ১০ জন প্রভাবশালী ইউরোপিয়ান নেতাদের নিয়েই সৃজনশীল বাংলা ব্লগ কালাক্ষরের আজকের আয়োজন।
খ্রিষ্টপূর্ব ৩৫৬ সালে জন্ম নেওয়া মহাবীর আলেকজান্ডারের মৃত্যু হয়েছল খ্রিষ্টপূর্ব ৩২৩ সালে, মাত্র ৩২ বছরের ক্ষন জন্মা জীবনে আলেকজান্ডার দুনিয়ার ইতিহাসে এমন ভাবে তার নাম লিখে গেছেন যে এখনো তার নাম ইতিহাসের পাতায় সর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে। আলেকজান্ডার ৩৩৬ খ্রিষ্টপূর্বে মেসিডোনিয়ার সিংহাসনে আরোহণ করেন। কিন্তু সিংহাসন আরোহণের পূর্ব থেকেই আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট তার দেশের মানুষের কাছে একজন বীরযোদ্ধা হিসেবে ব্যাপক প্রশংসিত আর পরিচিতি লাভ করেছিলেন। । সিংহাসনে আরোহণ করে তিনি নিজের রাজ্য বড় করতে রাজ্য জয় করতে বের হন,একে একে অনেক স্ম্রাজ্য দখল করে ভারত বর্ষে চলে আসেন,আলেকজান্ডারের সাম্রাজ্যের পরিধি এতটাই বিশাল ছিল যে, তা ইউরোপ থেকে দক্ষিন এশিয়া মহাদেশ অবধি ছড়িয়ে পড়েছিল।
আলেকজান্ডার কেবল যুদ্ধ বিজয়ী ই ছিলেন না দখল করা রাজ্য সুমুহে তার সু শাসনের কথা জানান দেয় তিনি সুশাসক ও ছিলেন। পৃথিবীব্যাপী ছড়ানো-ছিটানো তার সাম্রাজ্য জুড়ে বহু শহরের গোড়াপত্তন হয়েছিল তার মাধ্যমেই। হেলেনীয় যুগের সুচনা করেছিলেন তিনি। গ্রীক ভাষা, সংস্কৃতি এবং গ্রীক চিন্তাধারাকে তিনি তার সাম্রাজ্য জুড়ে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। বিজ্ঞানের আবিষ্কারের প্রতি ছিল তার অসীম আগ্রহ। আর এই আবিষ্কারের নেশায়ই তার অভিযানগুলোকে উৎসাহ আর উদ্দীপন্না দিত। এত সবকিছু তিনি কেবল তার ১ যুগ বা ১২ বছরের সাম্রাজ্যকালে করেছিলেন। মাত্র ৩৩ বছরের ক্ষণজন্মা এই যুবক বিশ্বের ইতিহাসে পাতাত সর্বকালের সেরা বীর যোদ্ধা হিসেবে সবার উপরে নিজের নাম লিখিয়ে গিয়েছেন। আর তাই তার নামের শেষে দ্যা গ্রেট উপাধী দেওয়া হয়।
আসলাম দেখলাম এবং জয় করলাম এই কথার প্রবক্তা মহান সেনানায়ক এবং রাজনীতিবিদ জুলিয়াস সিজার নিজেও যদি নিজের বিজয়ের ইতিহাস না লিখে যেতেন, তাতেও কোনো সমস্যা ছিল না পৃথিবীর ইতিহাসের পাতায় ইতিহাসের সম্মানিত একজন বলে গণ্য তা আপনা আপনি ই লিপিবদ্ধ হয়ে যেত । তার জীবদ্দশায় তিনি গল (বর্তমান ফ্রান্স) জয় করেছিলেন। রোমান বিদ্রোহী কর্তৃক গৃহযুদ্ধে জয়লাভ করেছিলেন এবং রোমান প্রজাতন্ত্রের একজন স্বৈরশাসক হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন।
প্রায়শই জুলিয়াস সিজার কে প্রথম রোমান সম্রাট বলে অভিহিত করা হয় যদিও তা আদতে ভুল একটি ধারণা। অবশ্য তিনিই প্রথম রোমান সম্রাজ্যে পরিবর্তন নিয়ে এসেছিলেন; যা পরবর্তীতে সাম্রাজ্যর দিকেই পরিচালিত করেছিল। নিজের সাম্রাজ্যের পরিধি বাড়িয়ে ছিলেন, দক্ষ সেনাদল তৈরি করেছিলেন এবং নিজেকে ব্যাপক পরাক্রমশালী এক সম্রাট বলে নিজেই নিজেকে আখ্যা দিয়েছিলেন। কিন্তু আদতে তিনি তার সকল শত্রুকে দমন করতে পারেননি। সিনেটের এক আততায়ীর ছুরিকাঘাতে তার মৃত্যু হয়েছিল।
একজন সেনা কর্মকর্তার সন্তান হয়েও রোমান সাম্রাজ্যের একজন সম্রাট হয়েছিলেন কন্সট্যানটাইন দ্য গ্রেট। বিচ্ছিন্নভাবে থাকা পুরো রোমান সাম্রাজ্যকে পুনরায় একত্রিত করে ক্ষমতাশালী করেছিলেন তিনি। পূর্ব দিকে সাম্রাজ্যের নতুন একটি রাজধানী প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তিনি। রাজধানী শহরটির গোড়াপত্তন তার হাতেই হয়েছিল। আর তাই তারই নামানুসারে এই শহরের নাম রাখা হয় কন্সট্যান্টিনোপল। পরবর্তীতে এখানেই বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল।
কন্সট্যানটাইন দ্য গ্রেট সামরিক বিজয়ের মাধ্যমে সাম্রাজ্যের বিস্তার ঘটিয়েছিলেন তার এহেন কর্ম কান্ড তে হয়ত তার নাম আপনা আপনি ই ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকতো। তবে তার আরো একটি কাজ ইতিহাসের পাতায় সব চেয়ে বেশিবার উচ্চারিত হয়, তা হল ইউরোপ মহাদেশে খ্রিস্টান ধর্মের বিস্তারে সাহায্য করা। কন্সট্যানটাইন দ্য গ্রেট ই প্রথম রোমান সম্রাট, যিনি সেচ্ছায় খ্রিষ্টান ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন এবং তার বিশাল স্ম্রাজ্য জুড়ে খ্রিষ্টান ধর্ম প্রচারে পৃষ্ঠপোষকতা করেন, এর ফলে পরবর্তীতে তার সাম্রাজ্য জুড়ে খ্রিষ্ট ধর্মের ব্যাপক প্রচার বৃদ্ধি পায়। তাই পুরো ইউরোপে খ্রিষ্টধর্মের প্রচারে তার অবদান অনস্বীকার্য।
ইংল্যান্ডের রাজা এবং ফ্রান্স আর আয়ারল্যান্ড রাজ্যের শাসক, রাজা সপ্তম হেনরির পুত্র ও যোগ্য উত্তরসূরি এবং টিউডার রাজবংশের দ্বিতীয় রাজা ছিলেন রাজা অষ্টম হেনরি। চার্চ অফ ইংল্যান্ড এবং রোমান ক্যাথলিক চার্চের বিচ্ছিন্নতার ভূমিকার জন্য তিনি ইতিহাসে প্রসিদ্ধ হয়ে আছেন। মঠগুলোর বিলোপ সাধনের প্রক্রিয়ায় সফলতা অর্জন করে তিনি নিজেকে চার্চ অফ ইংল্যান্ডের সর্বোচ্চ প্রশাসনিক ব্যক্তি হিসেবে ঘোষনা করেন।
ইংল্যান্ড আর ওয়েলস অ্যাক্ট – আইন মঞ্জুরের মাধ্যমে তিনি ইংল্যান্ড আর ওয়েলসের শাসনতন্ত্র বৈধভাবে নিজের হাতে তুলে নেন। হাবসবার্গের রাজা সম্রাট পঞ্চম চার্লস এবং ফ্রান্সের প্রথম ফ্রান্সিস – উভয়ের সঙ্গে তার বিদ্বেষপূর্ণ সম্পর্ক ইতিহাসে খ্যাত হয়ে রয়ে গিয়েছে। তবে এসবকিছুকে ছাপিয়ে রাজা অষ্টম হেনরির ছয়টি বিবাহ তাঁকে আরো বেশী খ্যাতি দিয়েছে ইতিহাসের পাতায়। ইংল্যান্ডের সিংহাসনে বসা ক্যারিশমাটিক চরিত্রের রাজা হিসেবেই তাঁকে গণ্য করা হয়।
যুবক বয়সে রাজপ্রতিনিধির কাজ করা পিটার পরবর্তীতে রাশিয়ার অন্যতম সেরা এক মহান সম্রাটে পরিণত হয়েছিলেন। নিজের দেশকে আধুনিকীকরণ করার লক্ষ্যে তিনি ছদ্মবেশে অভিযানে নেমেছিলেন। তার এই অভিযান পশিমের দিকে হয়েছিল এবং সেখানে তিনি একটা শিপইয়ার্ডে ছুতার কাজ পর্যন্ত করেছিলেন। ফিরে আসার পূর্বে বাল্টিক এবং কাস্পিয়ান সমুদ্র তীরবর্তী রাশিয়ান সীমান্তগুলো জয় করেন এবং আভ্যন্তরীণভাবে দেশের সংস্কারে উদ্যোগী হয়ে উঠেন।
একদম শূন্য থেকে রাশিয়ার অন্যতম সেরা শহর সেইন্ট পিটার্সবার্গ গড়ে তুলেছিলেন তিনি নিজে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এই শহরটিই লেনিনগ্রাদ নামে সুপরিচিত ছিল। আধুনিক রীতির সৈন্যদলও তৈরি করেছিলেন তিনি। বিশ্বের দরবারে রাশিয়াকে এক মহান শক্তিশালী সাম্রাজ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা মাত্রই তার মৃত্যু হয়।
ফরাসী বিপ্লবটাকে কাজে লাগিয়ে যখন সামরিক অফিসার শ্রেণী নিজেদেরকে সুসংবদ্ধভাবে আর দক্ষভাবে গড়ে তুলছিল। তখন নেপোলিয়ন সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ফ্রান্সের প্রথম অধিনায়ক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেন এবং পরবর্তীতে সম্রাট উপাধিতে ভূষিত করেন নিজেকে। সমগ্র ইউরোপ জুড়ে যুদ্ধ করে একজন মহান সেনানায়কের খ্যাতি অর্জন করেছিলেন তিনি। ফরাসি আইন ব্যবস্থার সংস্কার করেছিলেন। উদারনৈতিক সংস্কার, ধর্মীয় সহনশীলতা এবং সামন্ততন্ত্রের অবসান করার মতো দারুণ কিছু সংস্কার ইউরোপ পেয়েছিল তার কাছ থেকেই।
নিজের জাতিকে আবারো পৃথিবীর বুকে এক ক্ষমতাশালী জাতিতে রূপান্তরিত করেছিলেন নেপোলিয়ন। নেপোলিয়ন কোড এবং যুদ্ধের সামরিক কৌশল অনেক রাষ্ট্রই সরাসরি গ্রহণ করেছিল তখনকার দিনে। এমনকি এখনও বিশ্বজুড়ে সামরিক একাডেমিগুলোতে তার যুদ্ধকৌশল আর রীতিসমূহ অধ্যয়ন করানো হয়ে থাকে। ফরাসী বিপ্লবের অন্যতম পথিকৃৎ ছিলেন তিনি। তার বিশাল আর দক্ষ সামরিক বাহিনীর মাধ্যমে সমগ্র ইউরোপের বেশীরভাগ অঞ্চলই দখল করে নিয়েছিলেন তিনি। তবে ভুল করেছিলেন রাশিয়া আক্রমণ করে। কেননা, সেটাই ছিল সবচাইতে বিপর্যয়কর একটা যুদ্ধ। ইউরোপিয়ান জোটের কাছে পরাজিত হয়ে সেন্ট হেলেনা দ্বীপে নির্বাসিত হন নেপোলিয়ন। আর সেখানেই মৃত্যুবরণ করেন এই মহান সেনানায়ক।
ভ্লাদিমির লেনিন ছিলেন রাশিয়ার বিপ্লবী রাজনীতিবিদ এবং তাত্ত্বিক। তিনি সোভিয়েত ফেডারেশন সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র দলের নেতা ছিলেন এবং ১৯২২ থেকে আমৃত্যু সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রধান হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। তার প্রশাসনের অধীনেই রাশিয়ান সাম্রাজ্য সোভিয়েত ইউনিয়নে রূপান্তরিত হয়েছিল। তিনি মার্কসবাদের চিন্তাধারায় প্রভাবিত ছিলেন এবং দেশের সকল সম্পদকে জাতীয়করণের অন্তর্ভূক্ত করেছিলেন; যার মধ্যে জমি, শিল্প এবং এমনকি ব্যবসা-বাণিজ্যও ছিল।
মার্কসবাদের উপর ভিত্তি করে দেয়া তার মতবাদকে লেনিনবাদ নামে অভিহিত করা হয়ে থাকে। ১৯১৭ সালের অক্টোবর বিপ্লবের অন্যতম শীর্ষ নেতা ছিলেন লেনিন। অস্থায়ী সরকারব্যবস্থার ধারণাকে ত্যাগ করে রাশিয়ান সমাজতান্ত্রিক ফেডারেশন সোভিয়েত প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার পেছনে তার অবদান অনস্বীকার্য। তার অক্টোবর বিপ্লবের মাধ্যমে রাশিয়া তথা সোভিয়েত ইউনিয়ন, পৃথিবীর বুকে নিজের শক্তিমত্তার পরিচয় দিতে সক্ষম হয়েছিল।
বিট্রিশ রাজনীতিবিদ উইনস্টন চার্চিল যুদ্ধকালীন সময়ের অন্যতম প্রভাবশালী নেতা হিসেবেই বিবেচিত। আর পরবর্তীতে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ১৯৪০ থেকে ১৯৪৫ এবং পুনরায় ১৯৫১ থেকে ১৯৫৫ পর্যন্ত নিযুক্ত ছিলেন। ১৯৪০ সালে নেভাইল চ্যাম্বারলাইনের পদত্যাগের পর চার্চিল প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন। রাজনীতির পাশাপাশি তিনি ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর সুদক্ষ অফিসার, একজন ইতিহাসবিদ, লেখক এবং প্রতিভাবান একজন শিল্পীও ছিলেন বটে। ১৯৫৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পাওয়া একমাত্র ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন উইনস্টন চার্চিল।
আবার তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সম্মানজনক নাগরিকত্ব দিয়েছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি বৃটেনের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন এবং যুদ্ধে নাৎসি বাহিনীর বিরুদ্ধে জয়লাভও করেছিলেন। ধারণা করা হয়, মিত্রপক্ষের যুদ্ধে জয়লাভে অন্যতম প্রধান কারণ ছিল চার্চিলের যুদ্ধ কৌশল এবং রাজনৈতিক চিন্তাধারা। ২০০২ সালে করা এক জরিপে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বৃটেনের অধিবাসী হিসেবে জায়গা করে নিয়েছিলেন তিনি। এবং যুক্তরাজ্যের সেরা প্রধানমন্ত্রী হিসেবেও তার নাম উচ্চারিত হয়ে থাকে।
সোভিয়েত ইউনিয়নের শীর্ষস্থানীয় নেতা ছিলেন জোসেফ স্তালিন। ১৯২০ এর দশকে লেনিনের প্রবর্তিত “এক দেশে সমাজতন্ত্র” ধারণাটির সংশোধন করেন এবং লেনিনের দেয়া নতুন অর্থনৈতিক নীতি প্রতিস্থাপনও করেন। রাশিয়াকে বিশ্বের বুকে এক বৃহৎ শিল্প শক্তি প্রতিষ্ঠার সময়ে তিনি লক্ষ লক্ষ বিরোধী আর বিদ্রোহীদের কারাবাস দিয়েছিলেন এবং অনেককে প্রত্যন্ত অঞ্চলে কারাবাসেও প্রেরণ করেছিলেন। পূর্ব ইউরোপের ক্ষমতা এবং রাজ্য পরিচালনা সংক্রান্ত বিষয়ে আগ্রাসন-বিরোধী একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেন স্তালিন নাৎসি বাহিনীর সঙ্গে ১৯৩৯ সালে।
পরবর্তীতে নাৎসি বাহিনী এই চুক্তি ভঙ্গ কর এবং ১৯৪১ সালে অপারেশান বারবাসো নামে সোভিয়েত ইউনিয়নের একটা বিশাল অংশে আক্রমণ করে বসে । মস্কো আর স্তালিনগ্রাদের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে স্তালিনের নের্তৃত্বে সোভিয়েত বাহিনী নাৎসি বাহিনীকে পরাজিত করতে সক্ষম হয় বটে। কিন্তু এতে তাদের আঞ্চলিক আর মানবিক শক্তির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। কিন্তু স্তালিন এতে দমে যান নি, অক্ষশক্তির মূল উতপাঠন করতে স্তালিনের বিখ্যাত লাল সেনাবাহিনী বার্লিন দখল করে ১৯৪৫ সালে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জয় করার পর স্তালিন সোভিয়েত ইউনিয়ন কে বিশ্বের বুকে একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
নাৎসি বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা অ্যাডলফ হিটলার ১৯৩৯ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত জার্মানির চ্যান্সেলর হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং হলোকাস্টের জন্য ইতিহাস তাকে সর্বদা স্মরণে রাখবে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অভিজ্ঞ এবং প্রবীণ একজন সদস্য হিসেবে অংশগ্রহণ শেষে ১৯১৯ সালে জার্মান ওয়ার্কার্স পার্টিতে যোগ দেন। তিন বছরের ব্যবধানে ১৯২১ সালে তিনি এই পার্টির একমাত্র এবং সর্বোচ্চ নেতায় পরিণত হন। বিয়ার হল পুচে বা মিউনিখ পুচে নামক বৈপ্লবিক অভ্যুত্থান ব্যর্থ হওয়ার পর তাকে ল্যান্ডসবার্গ কারাগারে পাঁচ বছরের জন্য কারাদণ্ড দেয়া হয় এবং সেখানেই তিনি মেইন ক্যাম্পফ নামে আত্মজীবনী লেখেন।
সমগ্র জার্মানি জাতি যখন মানসিকভাবে বিপর্যস্ত সেই দ্য গ্রেট ডিপ্রেশন সময়টাতে হিটলার কারাগার থেকে মুক্তি পায় এবং রাজনীতিতে নিজের যোগ্য অবস্থানটা স্থাপন করে নেয়। নাৎসি জার্মানির একমাত্র শাসক হবার পরপরই বৃটেনকে নিজেদের শত্রু বলে ঘোষণা দেন হিটলার। আর এরই সুবাদে ১৯৩৯ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে থাকেন। পৃথিবীর ইতিহাসের ভয়াবহ এক যুদ্ধ শেষে লাল সেনাবাহিনী এবং পশ্চিমা মিত্র বাহিনীর কাছে পরাজিত হয় হিটলার।
পাঠক, আমাদের লেখাটি ভাল লাগলে আপনি কমেন্টস বক্সে জানাবেন, এবং আমাদের ইনিস্প্যায়ার করতে পোষ্ট টি শেয়ার করবেন আপনাদের কাছে আমাদের এই প্রত্যাশা রইল । ধন্যবাদ
Leave a Reply