1. sjranabd1@gmail.com : Rana : S Jewel
  2. solaimanjewel@hotmail.com : kalakkhor : kal akkhor
বরিশাল গানঃ প্রকৃতি নাকি অপদেবতার খেলা - কালাক্ষর বরিশাল গানঃ প্রকৃতি নাকি অপদেবতার খেলা
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:২৪ অপরাহ্ন

বরিশাল গানঃ প্রকৃতি নাকি অপদেবতার খেলা

  • Update Time : শনিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২১

সোলায়মান জুয়েলঃ প্রকৃতির রন্ধে রন্ধে জরিয়ে আছে রহস্য । এই রহস্যের কতটাই বা আমরা ভেদ করতে পেরেছি? হয়ত ৫% নয়ত ১০%, কিন্তু এর বেশি হয়ত নয়। ভাবতে কষ্ট হয়, সভ্যতার উন্নতির সর্বচ্য শিখরে আরহন করে আমরা যতটা মানুষ মারার মারনাস্ত্র বানিয়ে আমাদের মুল্যবান অর্থ আর সময় নষ্ট করছি, ততটা প্রকৃতি কিংবা মানব কল্যানের কথা ভাবছি না বলেই হয়ত আজও আমারা প্রকৃতির রহস্যের ডালি খুব একটা উন্মচন করতে পারিনি – যদি পারতাম তবে হয়ত আমাদের আরো বেশি উপকার হত- সৃষ্টির সেরা জীবের যে মুকুট আমরা পড়ে আছি সেই মুকুট প্রাপ্তি আরো বেশি যুক্তি যুক্ত হত 

পাঠক – শিরোনাম দেখে হয়ত এতক্ষনে আপনার পাঠক মনে এই ধারনার জন্ম হয়েছে যে আমার আজকের পোস্ট টি রহস্যময় প্রকৃতির এক অজানা খেয়েল নিয়ে , আপনারা কি জানেন? গত পোনে দুই শত বছর ধরে আমাদের দেশ বাংলাদেশেই এমন একটা রহস্য ময় ঘটনা ঘটে ঘটে যাচ্ছে নির্দিস্ট কিছু দিন পর পর ই- যার কোন সু স্পষ্ট ব্যাখ্যা আজো কেউ দিতে পারেনি? যে ঘটনার জন্য একদা ইংরেজ শাসক সরকারের রাতের ঘুম হারাম হয়ে গিয়েছিল? তার পর কত শত লোক নিয়োগ করে- সে সময় কার দুনিয়ার বড় বড় বিজ্ঞানীকে নিয়োগ করেও এই ঘটনার সুস্পস্ট ব্যাখ্যা না পেয়ে এক সময় রনে ভংগ দিতে বাধ্য হয়েছে? কি বুঝতে পারছেন? কার কথা বলছি?

বরিশাল। আমাদের মনে বরিশালের কথা আসলেই নন বরিশালের মানুষ দের মনে -সর্ব প্রথমে এই অঞ্চলের মানুষের ধুর্ততা আর সার্থপরতার কথা মনে আসতে বাধ্য। কারন যারা বিশেষ করে ঢাকায় থাকেন তারা এই অঞ্চলের মানুষ এঁর কাছে ঠকেন নি তেমন মানুষের সংখ্যা খুব ই কম পাবেন। তার ফলে বরিশাল সমন্ধনীয় কোন খবর আপনার মনে অন্য সব এলাকার খবরের চেয়ে আলাদা ভাবে ধরা দিতে বাধ্য।

কিন্তু তাই বলে আমরা কতটাই বা জানি বরিশাল সমন্ধে? বরিশালের বুকে এক আব্জব ঘটনা ঘটে গিয়েছিল গত পোনে দুই শত বছর ধরে তার সমন্ধে কত টুকু জানেন? সত্যি বলতে কি আমি নিজেও কিছু দিন আগ পর্যন্ত জানতাম না- কিন্তু কিছু দিন আগে নিউ ওয়ার্কের এক ব্যান্ড দলের পার্ফর্মেন্স দেখতে গিয়ে দেখি ব্যান্ডটির নাম “বরিশাল গান” আমি তো তাজ্জব। যে দলের কেউ আজ অব্ধি বরিশাল এসেই নি, যাদের সদস্যদের কেউ বাংলাদেশ তো দূর উপমহাদেশের কোন দেশের ই নাই। তারা কি ভাবে বরিশাল এঁর নাম জুড়ে দ্যায় তাদের ব্যান্ড দলের নামের আগে ? তখন ই আমার কৌতূহলী মন খুজতে শুরু করে এর আদি পান্ত – যা নিয়েই আমার আজকের পোস্ট মর্টেম –

ঘটনার শুরু ১৮৭০ সালের দিকে – তখন ছিল ইংরেজ আমল – তৎকালীন বঙ্গ প্রদেশের পুর্ব ভাগ এর সমুদ্র উপুকুল বরিশালে এক বিকট শব্দ শোনা যেত মাঝে মাঝেই । শব্দ টা এত বিকট আকারে হত যে বরিশালের পাশবর্তি জেলা থেকেও এই শব্দ শুনতে পাওয়া যেত – ১৮৮৭ সালের কলকাতার এশিয়াটিক সোসাইটির তথ্য মতে এই শব্দ নোয়াখালি তো দূর সদুর নারায়ন গঞ্জ কিংবা খুলনাতেও শুনতে পাওয়া গেছে বলে যানা যায়। এই শব্দ এতটা বিকট ছিল যে যখন এই শব্দ শুরু হত তখন ওই অঞ্চলের মানুষ প্রান ভয়ে দিক বিদিক পালাতো- শব্দ গুলো পর পর দুই তিন বার হত। কবি সুফিয়া কামাল তার আত্ব জীবনীতে এই শব্দের কথা উল্লেখ করে গেছেন- তিনি নাকি তার পিতা মহের কাছ থেকে এই অদ্ভুত আর শরীরের রক্ত হীম করা শব্দের কথা প্রায়সই বলতেন- বিশেষ করে ভড়া বর্ষা মৌসুম অক্টোবর মাস থেকে ফেব্রুয়ারী মাস পর্যন্ত এই শব্দ শোনা যেত – যদিও ১৯৫০ সালের পর এই শব্দ খুব একটা শোনা যায় নি –

যাই হোক, এই ঘটনা ইংরেজ সরকারের কানে গেলে তারা বেশ নড়ে চড়ে বসে। নড়ে চড়ে বসার যুক্তি সংগত কারন ও ছিল । ওই সময় বরিশাল ছিল সশ্য ভান্ডার। ইংরেজরা ধারনা করেছিল তাদের প্রতিদন্দী রাস্টের কেউ হয়ত ওই ওঞ্চল দখল নিতে শুরু করেছে – তাই তাদের কামানের গোলার শব্দ শোনা যায় 

কিংবা কোন জল দস্যু দল যারা কামান দাগীয়ে এই অঞ্চলে লুটপাট চালতে চায় ,ব্যাস আর যায় কই- ইংরেজ রাজকীয় নৌ বাহীনি চলে আসে/ কিন্তু অত্র এলাকা তন্ন তন্ন করে খুজেও কারো টিকির ও সংবাদ পায় না- প্রথম বার কিছু না পেয়ে তারা চলে যায়, তাদের ইনডেক্স এ এই আজব আর রহস্য ঘেরা শব্দ কে “বরিশাল গান” নামে আখ্যা দ্যায়। এবং এই বরিশাল গান নিয়ে নানা তথ্য উপাত্ব সংগ্রহ করতে শুরু করে,

  1. কন্সপেরিসী থিউরীঃ মানুষের মনে কতটা প্রভাব ফেলে 

এখানেও ব্যার্থ হয়ে পরের বছর আবারো যখন এই বিকট শব্দ শুরু হয়, তখন তারা রাজকীয় নৌবাহীনি আর রাজকীয় স্থল বাহিনীর বেঙ্গল রেজিমেন্ট এর কয়েক প্লাটুন সন্য এক যোগে পাঠায় ,এবং এবারেও তারা এই শব্দের কোন রহস্যের ই কুল কিনারা করতে পারে না, এর পর তারা খোজ নিতে উচ্চ তর ভুমী জরিপ কারী দল কে পাঠায়- তারাও এক সময় ব্যার্থ হয়ে ফিরে যায়। সেই দলের ই এক সদস্য জি লাতুস পরে খোজ নিয়ে জানতে পারেন ভারতের গঙ্গা নদীর তীর, যুক্তরাষ্ট্র, বেলজিয়াম, স্কটল্যান্ড, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, জাপান, ফিলিপাইন, অস্ট্রেলিয়া, উত্তর সাগরসহ আরও কিছু এলাকায় এ ধরনের শব্দ শোনা গেছে।

যার ব্যাখ্যা ওই অঞ্চলের কেঊ ও দিতে পারে নী। তখন তারা মন গড়া এক কল্পনা প্রসুত ব্যাখ্যা যার করায় যে সমুদ্র উপকুল বর্তি অঞ্চলে খুব বড় বড় ঢেঊ যখন বাতাসের গতিবেগ পালটানোর কারন অন্য কোন বড় ঢেউ এঁর সাথে আঘাত করে তখন এমন শব্দ হতে পারে – যদিও এই যুক্তির পিছনে কো সুনির্দিস্ট ব্যাখ্যা তারা দিতে পারে নি- কিংবা আজ পর্যন্ত এঁর ব্যাখ্যা কেউ আবিস্কার ও করতে পারে নি- তাই এই শব্দ রহস্যময় ই থেকে গেছে- আজ অব্ধি কেউ বলতে পারে নি সমুদ্র উপকুল বর্তি অঞ্চল গুলোতে কেন এমন বিকট শব্দ হয়? আর কেনই বা এর শব্দ এত ভয়ংকর রকমের প্রকট হয়ে মানুষ এঁর মনে বিপদের ভয় জাগায় –

বরিশাল গান নিয়ে মিথ –
উপজাতি সম্রদায় মনে করে অদৃশ্য দেবতারা যারা এক সময় মানুষের বেশ ভুষা ধরে মানুষের কাছে আসতো- তারা এক সময় সারা দুনিয়া শাসন করতো – কিন্তু কোন এক অজানা কারনে তারা তাদের অদৃশ্য প্রাসাদের ভিতর থেকে আর বের হতে চায় না – কিন্তু মাঝে মাঝে যখন খুব বেশি দরকার হয় তখন তাদের প্রসাদের দরজা খুলে বাইরে বের হয় আর এই শব্দ গুলো তাদের প্রসাদের দরজা খোলার আর বন্ধ করার শব্দ –

সিলোন দ্বিপের মিথ 
সিলোন দ্বীপ ( বর্তমান কালের শ্রীলংকা) এ রাবনের প্রসাদের শব্দ – যে প্রসাদ এঁর দাড় রক্ষি ছিল রাক্ষস রা। রামের আক্রমণে ধংস হবে বলে রাক্ষস রা সেই প্রাসাদ চক্ষুর অন্তরালে অদৃশ্য করে রেখেছিল – এবং আজ অব্ধি তা আর মানুষের চোখে দেখা যায় না – সেই রাক্ষস রাই মাঝে মাঝে প্রসাদ থেকে তোপ দাগায়। যা এমন বিকট শব্দ হয়ে আমাদের কানে আসে –

পরিশেষ এ বলি – ভয় থেকেই ভক্তির শুরু। জগতের জাগতিক নিয়ম অনুসারে মানুষ এর মৃত্যু হয়। আর মরার পরে কি হয় তা সম্পর্কে কোন সু- স্পস্ট ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না- আর যেখান থেকে সুস্পস্ট ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না, সেখান থেকেই শুরু হয় কুসংস্কার- গোড়ামী, আর অন্ধ বিশ্বাস এর। মানুষ যদি মৃত্যু কে জয় করতে পারতো, তবে মানুষ এর ভিতর মৃত্যু ভয় থাকতো না- মরার পরের জীবনের ভয় থাকতো না, তবে হয়ত দুনিয়াতে ঈশ্বর ঈশ্বর খেলার ইতি ঘটতো। এত ধর্মীয় কনফ্লীক্ট হত না- এত খুন- দাংগা – যুদ্ধ হত না- কিন্তু মানুষ যে হুতু মরণশীল আর মড়ার পড়ে কেউ জীবত হয়ে এসে বলেনী যে মৃত্যুর পর কি ঘটে – সেই জন্য ই মানুষ ঈশ্বরের পুজা করে- কেউ আল্লাহ নামে- কেউ ভগবান – কেউ ঈশ্বর – আর সেই কথিত/দাবী কৃত ইশ্বরের ক্ষমতা কার বেশি কার কম? কে সত্য আর কে মিথ্যা এই টপিক নিয়ে দুনিয়াতে আদীকাল থেকে যত যুদ্ধ হয়েছে- দুনিয়ার মাটি মানুষের রক্তে যত বার রঞ্জিত হয়েছে – তা অন্য কোন টপিক নিয়ে হয় নি? তাই আমি ব্যাক্তি গত ভাবে চাই তথাকথিত বরিশাল গান – এর রহস্য দেরীতে হলেও উন্মচন হউক । এতে অন্তত কিছু মানুষের কাল্পনীক দাবী মিথ্যা বলে প্রমান হবে-

Sorce – 1. “Barisal Guns: Manifestations at Gnowan- gerup.“। The West Australian-

  1. Wikipidia –

ধন্যবাদ
সোলায়মান জুয়েল
ব্লগার/ নাট্য পরিচালক/ প্রযোজক

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

More News Of This Category
©2021 All rights reserved © kalakkhor.com
Customized By BlogTheme
error: Content is protected !!

Discover more from কালাক্ষর

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading