সোলায়মান জুয়েলঃ- প্রকৃতি নিজেকে রহস্য এ আবৃত করে রাখতে পছন্দ করে। এ কারনে সে নিজেকে নানান ধরনের রহস্য দিয়ে আবৃত করে রাখে- তার কিছু রহস্যের সমাধান মানুষ করতে পারে আর কিছু রহস্য অমীমাংসিতই থেকে যায়। জীবনধারাবিষয়ক ওয়েবসাইট কালাক্ষর এর সৌজন্যে আজ থাকছে সেইরকমই পাঁচটি রহস্যময় ঘটনা, এখনো যার কোনো কূল-কিনারা এখনো মানুষ রহস্য ভেদ করতে পারে নি ।
১৫১৮ সালের জুলাই মাসে এক অভুতপুর্ব ঘটনা ঘটে যায় । মিসেস ত্রোফফেয়া নামের এক জন নারী হঠাৎ নাচতে শুরু করেন। কোন কিছুতেই তাঁর এই নাচ থামছিল না। এক সপ্তাহ পর আরো ৩৪ জন ব্যক্তি তাঁর সঙ্গে এই পাগলা নাচন শুরু করে। এক মাস পর শত শত লোক এই অবিরাম নাচ যজ্ঞে যোগদান করে। এর ফলে ক্লান্তি, হার্ট অ্যাটাক ও উচ্চ রক্তচাপে প্রায় ৪০০ জন মানুষ প্রাণ হারায় । এভাবে এক মাস ধরে অবিরাম নাচতে পারা কোনো ব্যক্তির পক্ষেই সম্ভব নয়। এই ঘটনা কেন কি কারনে ঘটেছিল তার যথাযথ ব্যাখ্যাও বিজ্ঞানীরা আজ ও দিতে পারেননি।
২০০৩ সালে এন্ড্রু কার্লসসিন নামধারী একজন ব্যক্তিকে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির জন্য আটক করে। আন্ড্রু কার্লসসিন নামধারী এই ব্যক্তিটির বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল তিনি শেয়ারবাজারে ১২৬টি ঝুঁকিপূর্ণ লেনদেন করার মাধ্যমে যার আয় মাত্র ৮০০ মার্কিন ডলার ছিল তা থেকে ৩৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে নিয়ে যান- এফবিআইর হাতে আটক হওয়ার পর অ্যান্ড্রু একটি হাস্যকর দাবি করেন, তিনি বর্তমান কালের স্বাভাবিক মানুষ নন, তিনি একজন সময় ভ্রমণকারী। ২২৫৬ সালের পৃথিবী থেকে তিনি টাইম ট্রাভেল যানে চেপে ২০০৩ সালে পৌঁছেছেন। তাই তিনি অতীত থেকে যে তথ্য পেয়েছেন তার সুবাদেই শেয়ার বাজারে এত উন্নতি হয়েছে বা করতে পেরেছেন। অবশ্য আন্ড্রুর এই আত্ম সমর্থক বক্তব্য মার্কিন আদালতে ধোপে টিকেনি। ফলে তার আদালতের রায়ে জেল হয়। এর কিছুদিন পর নিজের কথার সত্যতা প্রমাণ দিয়ে এন্ড্রু জেলের কঠোর নজরদারির ভেদ করে জেল থেকে বেমালুম গায়েব হয়ে যান এই সময় ভ্রমণকারী।
কানাডার গোল্ড ব্রিজ থেকে ১৯৪১ সালে একটি ছবি তোলা হয়। এই ছবিতে একজন ব্যক্তিকে দেখা যায়,যে লোকটির পোশাক-আশাক মোটেও ১৯৪১ সালের মতো নয়;বরং তা ছিল বর্তমান সময়ের পোষাকের সাথে সাদৃশ্য পুর্ন। তিনি পরে ছিলেন ছিল একটি চেন লাগানো হুডি, টি-শার্ট এবং সব চেয়ে অবাক করা ব্যাপার এই যে ১৯৪১ সালের ওই ছবিতে ঐ লোকটির হাতে ছিল একটি হাল ফ্যাশানের ডিএসএলআর ক্যামেরা।
হলিউডের ফ্রোজেন চলচ্চিত্রের চরিত্র এলসা ও আন্নাকে নিশ্চয় আপনারা ভুলে যাননি। ফ্রোজেন চলচিত্রে এলসার কারণে বরফে জমে যাওয়া আন্নাকে ভালোবাসা দেওয়ার মাধ্যমে সারিয়ে তোলা হয়। কিন্তু শুনলে অবাক হবেন এই বার বাস্তবের আন্নাকেই খুঁজে পাওয়া গেছে। যার নাম জিন হিলিয়ার্ড। ১৯৮০ সালের ২০ ডিসেম্বর এই জিন হিলিয়ার্ড তাঁর প্রিয় গাড়িটি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটার লেংবাইয়ের তুষার পড়া রাস্তা দিয়ে গাড়ি চালিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। বাড়ির কাছাকাছি এসে হঠাৎ ই তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন যে, তুষার পড়া রাস্তায় একটু হেঁটে বেড়াবেন। ব্যাস গাড়ি গাড়ি চালানো থামিয়ে তিনি রাস্তায় নেমে পড়েন। এরপর বাড়ির লোকেরা যখন তাঁকে খুঁজে পায়, তখন দেখা যায় হিলিয়ার্ড অচেতন অবস্থায় ছয় ঘণ্টা ধরে তুষার পড়া রাস্তায় পড়ে আছেন। ওই সময় ওই জায়গার তাপমাত্রা ছিল মাইনাস ২২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ফারেনহাইটে হিসাব করলে দাঁড়ায় মাইনাস ৭.৬ ফারেনহাইট হবে। যখন তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হয়, তখন তাঁর মধ্যে বেঁচে থাকার কোনো লক্ষণ ছিল না। হিলিয়ার্ড তুষারে থাকতে থাকতে তাঁর শরীরের চামড়া এতটাই শক্ত হয়ে গিয়েছিল যে হিলিয়ার্ডের শরীরে চিকিৎসক রা ইনজেকশন দিতে পারছিলেন না। আর সবাই ভেবেছিলেন, জিন মারা গেছে। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে তিন দিন বাদে হাত-পা নাড়াতে শুরু করে জিন হিলিয়ার্ড। এর ছয় সপ্তাহ পড়ে সবাইকে অবাক করে দিয়ে সবার চোখের সামনে দিয়ে দিব্যি হেঁটে বাসায় ফিরেছেন জিন হিলিয়ার্ড।
১৯৮৩ সালের কথা বলছি। যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেনিয়ার স্ট্রাউডসবার্গ নিবাসী ডন ডেকারের দাদা সম্প্রতি ইহ জগত ত্যাগ করেছেন। তাঁর শেষকৃত্য অনুষ্ঠান শেষ করে দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে ডন বাড়ি ফিরে আসেন। তার বাড়ি ফিরে আসার সঙ্গে সঙ্গে তার বাড়ির ছাদ ও দেয়ালজুড়ে বৃষ্টির মতো পানি পড়া শুরু করে। অথচ অবাক করার মত ঘটনা যে তার বাড়ির ছাদ বা দেয়ালে কোনো পানির পাইপ সংযুক্ত ছিল না। এই অনাহেতু সমস্যা সমাধানের জন্য ডনের বন্ধু পুলিশ ডাকেন। পুলিশের সহায়তায় ডনকে তার বাড়ি থেকে নিয়ে যাওয়া হয় বাড়ির কাছের পিৎজা রেস্টুরেন্টে। অবাক করা বিষয় এই যে, ডন বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ির বৃষ্টি থেমে যায়। ডনের বন্ধু ও পুলিশ আরো অবাক হয় যখন তাঁরা দেখতে পায়, পিৎজার রেস্টুরেন্টে ডনের ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে সেখানকার দেয়াল ও ছাদজুড়ে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। এ ঘটনার ব্যাখ্যা আজও দিতে পারেননি বিজ্ঞানীরা।
প্রকৃতির খেয়ালে এমন হাজারো রহস্যময় ঘটনা আছে বা ঘটে যাচ্ছে অবিরত যা বিজ্ঞান আজও এর সঠিক ব্যাখ্যা দিতে পারেনি- সবাই ভাল থাকবেন- লেখাটি ভাল লাগলে লিংক টি শেয়ার করে সবাইকে পড়ার সুযোগ করে দিলে খুশি হব-
সোলায়মান জুয়েল
ব্লগার/নাট্য পরিচালক/ প্রযোজক
ভাল লেগেছে লেখাটা- এগিয়ে যান