1. sjranabd1@gmail.com : Rana : S Jewel
  2. solaimanjewel@hotmail.com : kalakkhor : kal akkhor
তাস খেলার ইতিহাসঃ (শেষ পর্ব) - কালাক্ষর
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ০৪:৫৯ অপরাহ্ন

তাস খেলার ইতিহাসঃ (শেষ পর্ব)

  • Update Time : শনিবার, ২৪ অক্টোবর, ২০২০

কালাক্ষর ডেক্সঃ সৃজনশীল ব্লগ “কালাক্ষর” এ বিশ্বের সব চেয়ে জন প্রিয় খেলা গুলোর অন্য তম খেলা তাস খেলার ইতিহাস, বিবর্তনের উপর যে ধারাবাহি্ক প্রতিবেদন লেখা হচ্ছিল, আজ থাকছে দ্বিতীয় ও শেষ পর্ব। যারা প্রথম পর্ব পড়েন নি তাদের তাস খেলার ইতিহাস (প্রথম পর্ব) টি পড়ে আসতে বিনিত অনুরোধ করা হল। 

ফ্রান্সে ১৪৮০ সালে যখন তাস খেলার প্রচলন ঘটে, তখন ফ্রান্সে খেলা তাসগুলো ছিল ইশকাপন, হরতন, রুহিতন এবং চিড়িতন। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল তরবারি ধারী রাজা এবং এক চক্ষু বিশিষ্ট রানী। বর্তমানে বহুল প্রচলিত শব্দ ট্রাম শব্দটি কোথায় থেকে এসেছে জানেন? তাস খেলা যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম প্রবেশ করে তখন তাড়া প্রচলিত পন্থায় কিছু দিন তাস খেলার পর নিজেরা একটি তাস খেলার মধ্যে নিজেদের একটি নতুন নিয়ম সংযোজন করে,এবং এর নাম দেয় ট্রয়নকি। ট্রাম শব্দটি মুলত এই ট্রয়নিক শব্দের সংক্ষিপ্ত রুপ।

তাস খেলার তাসের চারটি প্রতীক পঞ্চদশ শতক মানব সমাজের বিশেষ করে ইউরোপের সমাজ ব্যাবস্থার বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের পরিচয় বহন করার সাক্ষ্য দেয় । সে কারনেই এই তাস খেলায় ব্যাবহ্রত তাসের গায়ে সাটা ছবিগুলোতে পঞ্চাদশ শতকের ঐতিহাসিক নানা ব্যক্তিত্বের ছবি ও উপস্থাপিত হতে দেখা যায় ।

যাই হোক প্রথম দিকে যে তাস খেলা হত সেই তাসের প্যাকেটে সর্ব মোট ৭৮ টি তাস থাকত। কিন্তু পরবর্তিতে এতগুলো তাস নিয়ে খেলা জটিল ও কষ্টকর হয়ে ওঠায় অনেক চিন্তা ভাবনা করে তাসের সংখ্যা কমিয়ে আনা হয়। যদিও বর্তমান কালে তাসের অন্যতম জন প্রিয় খেলা রামী তে দুই সেট তাস এমন কি প্লেয়ার সংখ্যা বেশী হলে তিন সেট তাস ব্যাবহার করা হয়- এই রামী খেলা সম্পর্কে বাংলাদেশ রামী এসোসিয়েশন এর প্রতিষ্টাতা সভাপতি জনাব আমিরুল ইসলাম সুমন বলেন রামী খেলা মুলত দুই জন থেকে সাত জন খেলতে পারে,প্লেয়ার সংখ্যা দুই থেকে পাঁচ জন হলে দুই সেট এবং প্লেয়ার সংখ্যা পাঁচ এর অধিক মানে ছয় বা সাত জন হলে তিন সেট তাস ব্যাবহার করা হয়, তবে কোন ভাবেই সাত জনের অধিক প্লেয়ার রামী খেলায় অংশ গ্রহন করতে পারে না।

যাই হোক পুর্বতন ৭৮ টি তাসের মধ্যে হ্রাসকৃত সংখ্যার যে তাসটি এখনো সগৌরবে টিকে আছে তা হলো জোকার। খেলুড়েদের কাছে এই জোকার নামধারী তাসটি সুপার ট্রাম্প কার্ড হিসেবে বিবেচিত হয়। এখন প্রধান চারটি তাস কে কিসের প্রতীক বহন করে চলেছে সেটার সম্পর্কে জানা যাকঃ-

ডায়মন্ডস বা ডাইস যাকে আমরা রুহিতন হিসাবে ও জানি- এই রুহিতন হল ধনী শ্রেণীর প্রতীক। তখনকার সময়ে এরা ছিলো সমাজের শাসক শ্রেণী। ডায়মন্ডস দিয়ে তাদের ধনদৌলত-ঐশ্বর্য কে বোঝানো হয়।

স্পেডসের বা ইস্কাপন হলো সৈন্যের প্রতীক । স্প্যানিশ শব্দ স্পাডা থেকে স্পেড শব্দটি এসেছে । যার অর্থ তরবারি।

হার্টস বা হরতন হল পাদ্রিদের প্রতীক। আগে প্রতীকটির আকার ছিল পান পাতার মতো যা পরে ইস্কাপনের জন্য বরাদ্দ করা হয় এবং হার্টস বা হরতন কে হার্ট বা হৃৎপিণ্ডের আকার দেওয়া হয়।

ক্লাবস বা চিরাতন বলতে বোঝানো হতো গরিব মানুষদের। ইংরেজি ক্লাবের বাংলা প্রতি শব্দ হলো মুগুর। গরিব শ্রেণীর মানুষের জন্য মুগুরই সম্বল এরকম একটা আবেধানিক অর্থ বহন করে এই তাসটি।

তাসের গায়ের ছবিগুলোরও রয়েছে তার সম্পর্কে ঐতিহাসিক ব্যাখ্যাঃ-

ইস্কাপন বা স্প্রেডসঃ- কিং অব স্প্রেডস হলো রাজা ডেভিড এর মুখায়ব,তিনি গোলিয়াথের হত্যাকারী। বাইবেল এর বর্নানা অনুযায়ী রাজা ডেভিড ইসরাইল শাসন করেছিলেন। বাইবেলে আরো বলা হয়েছে যে, রাজা ডেভিড ছিলেন খ্রিষ্ট ধর্মের প্রবর্তক যিশু খ্রিষ্টের পূর্বপুরুষ। এই বিখ্যাত রাজার বৈশিষ্ট ছিল তিনি প্রচুর আবেগ প্রবন ছিলেন- তিনি নিজের সেই আবেগের বশবর্তী হয়ে কোন কাজ করেন না। তার সব কিছু তিনি তার বিচার-বুদ্ধি দিয়ে বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা করেন। রাজা ডেভিড এর মুখায়ব সম্বলিত ইস্কাপন তাসের রানী হলেন প্যালাস, প্যালেস কে গ্রিক যুদ্ধ দেবী বলা হয়। যার দুই হাতে ধরে রাখা হয়েছে তরবারি এবং ফুল।

হার্টস বা হরতনঃ- বিখ্যাত রাজা শার্লেমেন বা চার্লস এর মুখায়ব আকা আছে কিং অব হার্টস এর ছবি ছবিতে। বিখ্যাত রাজা শার্লেমেন বা চার্লস ৮০০ খ্রিস্টাব্দে অর্ধেক ইউরোপ জয় করেন । তাসে দেখা যায়, এই রাজা তার খাপ ছাড়া তলোয়ারটি নিজের মাথায় ঠেকিয়ে নিজেই নিজেকে হত্যা করতে উদ্যত হয়েছেন। একারনেই এই রাজাকে আত্মঘাতী রাজাও বলে থাকেন অনেকে। একটু খেয়াল করলে দেখবেন যে, ‘তাসের অন্য সব রাজাদের মধ্যে একমাত্র হার্টসের রাজারই যা রাজা শার্লেমেন বা চার্লস এর মুখায়ব দিয়ে আকা তার কোন গোঁফ নেই। একে নজর বন্ধী বাজিকর নামেও ডাকা হয়- কারন  রাজা শার্লেমেন বা চার্লস যে অর্ধেক ইউরোপ জয় করেছিলেন তার বেশির ভাগ ছিল বিনা যুদ্ধে বা ঠগ ও প্রতারণার মাধ্যমে, যাই হোক, রাজা শার্লেমেন বা চার্লস এর মুখায়ব নিয়ে আকা কিং অব হার্ট বা হরতন তাসের রানী হলেন বাইবেল উল্ল্যেখিত নায়িকা জুডিথ। যিনি রাজার তরবারির সাহায্য নিয়ে এক আঘাতে ই একজন আসিরিয়ান সেনাপতিকে হত্যা করেছিলেন।

ডায়মন্ডস বা রইতনঃ– রোমের বিখ্যাত শাসক, রাজনীতিবিদ এবং সাহিত্যিক রাজা জুলিয়াস সিজার এর মুখায়ব দিয়েই আকা হয়েছে কিং অব ডায়মন্ডস । রোম সম্রাজ্যের উত্থানে গুরুত্ব পুর্ণ ভূমিকা পালন করেন সম্রাট জুলিয়াস সিজার। রাজ কার্য পরিচালনায় জুলিয়াস সিজার খুবই দক্ষ এক জন রাজা ছিলেন। তার এই গুনের জন্য তিনি রোমের রাজনীতি, এবং অন্যান্য বিষয় যার ভিতর রাজ্য জয় যুদ্ধ ও পড়ে, তা তিনি দীর্ঘ সময় ধরে খুবই নীপুন হাতে সম্পাদন করে গেছেন। এখানে লক্ষনীয় যে ,তাসের সব রাজাদের মধ্যে সব রাজারই মুখ স্পষ্ট করে দেখা গেলেও শুধু মাত্র জুলিয়াস সিজারের মুখাবয় নিয়ে অঙ্কিত একমাত্র ডায়মন্ডস বা রইতনের রাজারই মুখ অর্ধেক দেখা যায়। কুইন অব ডায়মন্ডস হল তার স্ত্রী র্যাচেল।

ক্লাবস বা চিড়িতনঃ- কিং অব ক্লাবস হলেন দিগ্বিজয়ী আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট, বিশ্বজয়ী এই আলেকজান্ডার দ্যা গ্রেট যিনি ৩২৩ খ্রিস্টপূর্বে পৃথিবীর প্রায় পুরোটা দখল করে নিয়েছিলেন। যদিও আমাদের ইন্ডিয়ান উপমহাদেশে এসে তিনি সুবিধা করতে পারেন নি কিন্তু আজ এই প্রসঙ্গে যে হুতু আলোচনা করছি না তাই মূল কথায় ই থাকি, আধুনিক গ্রিসের মেসিডোনিয়ার রাজা ছিলেন আলেকজান্ডার। এখান থেকেই তার উত্থান শুরু হয়। অনেক আগে ক্লাবস বা চিড়িতন তাসে পৃথিবীর মানচিত্রের গোলক থাকত, কিন্তু পড়ে বাদ দিয়ে শুধু মাত্র রাজার পরনের আলখেল্লায় এই গোলকটি আঁকা হয়। যাই হোক কুইন অব ক্লাবস বা চিড়িতন এর রানীর মুখায়ব হিসাবে ব্রিটিশদের রানী প্রথম এলিজাবেথ মুখায়ব কে রাখা হয়। আর রাউন্ড টেবিলের বিখ্যাত নাইট, জনাব স্যার ল্যান্স লট এর মুখায়ব দিয়ে বানানো হয় চিড়াতন এর গোলাম এর মুখায়ব।

তাস খেলায় সব চেয়ে সেরা তাস হিসাবে ইস্কাপনের টেক্কা কে ধরা হয়। অনেকে একে ‘হেড অব দি প্যাক’ বলে থাকেন। শুনলে অবাক হবে ইংল্যাণ্ডে যখন প্রথম তাস খেলার প্রবর্তন হয় তখন এর জনপ্রিয়তা লক্ষ করে তাসের উপর দুর্দান্ত ট্যাক্স বসানো হয়েছিল। তাস প্রস্তুতকারক প্রত্যেকটি কোম্পানীকে এক কুড়ি ইস্কাপন টেক্কার তাস এক সঙ্গে ছাপা হয় এমন একটি প্লেট তৈরি করে ইংল্যান্ড সরকারকে কর দিতে হত।

আর এই কর নেওয়া প্লেটের সাহায্যে ইস্কাপন টেক্কার সব তাসই ব্রিটিশ রাজকীয় সরকারি ছাপাখানা অর্থাৎ সমারসেট হাউসে ছাপা হত। কোম্পানির নিজস্ব নাম ও মার্কা এই তাসের উপর লেখা থাকত। প্রত্যেক কুড়িটি টেক্কার সিটের জন্য তাস ব্যবসায়ীকে দিতে হত এক পাউণ্ড আর প্রতি একশো জোড়া তাসের জন্য ট্যাক্স লাগত পাঁচ পাউণ্ড। এর ফলে সেই সময় এক প্যাক তাস কিনতে অনেক বেশি গাটের টাকা খরচ হয়ে যেত। এর ফলে তাস খেলাটা ইংল্যান্ডের অত্যন্ত ধনী ব্যাক্তিদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকে যায়।

কেমন লাগলো আমার তাস খেলার উপরে লেখা? আপনার মতামত জানাতে কমেন্টস বক্সে কমেন্টস করুন। ধন্যবাদ 

সোলায়মান জুয়েল 

ব্লগার/চিত্রপরিচালক/ প্রযোজক 

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

More News Of This Category
©2021 All rights reserved © kalakkhor.com
Customized By BlogTheme
error: Content is protected !!

Discover more from কালাক্ষর

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading