1. sjranabd1@gmail.com : Rana : S Jewel
  2. solaimanjewel@hotmail.com : kalakkhor : kal akkhor
ছাতাঃ মানব ইতিহাসে ছাতার আবিষ্কার ও বিবর্তনের ইতিবৃত্ব - কালাক্ষর
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৭:১৪ অপরাহ্ন

ছাতাঃ মানব ইতিহাসে ছাতার আবিষ্কার ও বিবর্তনের ইতিবৃত্ব

  • Update Time : মঙ্গলবার, ২ ফেব্রুয়ারী, ২০২১
ছাতা
ছাতার ইতিহাস । ছবি - blog.bestbuy.ca

কালাক্ষর ডেক্সঃ প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছে- আপনার বাইরে যেতে হবে- কিংবা প্রচন্ড রোদের ভিতর আপনাকে বাইরে যেতে হবে- আপনি তখন সর্ব প্রথম কোন জিনিস টার অভাব বোধ করবেন? আমি জানি আপনার মনে এখন ছাতার কথাই এসেছে- কারন আবিস্কারের বহু শতাব্দী ধরে এই ছাতা মানুষের মাথা কে রোদ বৃষ্টি  থেকে রক্ষা করে আসছে বলে মানব জীবনে এই ছাতার গুরুত্ব অপরিসীম- আর এই বাদলা দিনে ছাতার গুরুত্ব অনুধাবন পুর্বক বাংলা ভাষায় প্রকাশিত সব চেয়ে সৃজনশীল ব্লগ “কালাক্ষর” এ থাকছে এই ছাতার বিষয়েই পোস্ট মর্টেম- আজ আমরা ছাতার উৎপত্তি, বিকাশ, বিবর্তনসহ প্রায় সকল বিষয়েই আলোচনা করবো-    

মানব জীবনের অতীব গুরুত্ব পুর্ন ছাতা আবিষ্কারের সঠিক দিন ক্ষন সেই ভাবে জানা না গেলেও আজ হতে প্রায় চার হাজার বছর আগে থেকে ছাতার ব্যাবহার হয়ে আসছে বলে জানা জায় । তবে সু-নির্দিস্ট ভাবে ঠিক কখন, কোথায় আর কারা প্রথম ছাতা আবিষ্কার করেছিল এই নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে। কেউ কেউ বলে থাকেন মিশরীয়রা  সর্ব প্রথম ছাতা আবিস্কার করে, আবার কেউ কেউ বলে থাকেন সর্ব প্রথম চাইনিজরা এই ছাতার আবিস্কার করেছে। কারন প্রাচীন মিশর, গ্রীস এবং চীন দেশের প্রচীন চিত্রকর্ম গুলোতে ছাতার নিদর্শন পাওয়া যায়- যা থেকে ওই সব দেশে ছাতার ব্যাবহার প্রতিয়ন করা গেলেও সর্ব প্রথম কারা এর আবিস্কারক সেই বিষয়ে সুস্পষ্ট ভাবে দাবী করা যায় না ।

আমার পুর্বের  লেখা  গুলো পড়তে নিচের লিংক গুলোতে ক্লিক করুন 

তবে ছাতা প্রথমে ব্যবহৃত হত সুর্যের তাপ থেকে রক্ষা পাবার জন্য এবং মহিলারাই ছিল মুলত ছাতা ব্যবহারকারী জানা যায়। বৃষ্টি হাত থেকে নিজেকে প্রতিরোধ করার জন্য সর্ব প্রথম চাইনিজরা ছাতার ব্যবহার শুরু করে জানা যায়। ছাতা আবিষ্কারের কাহিনী অনেক পুরাতন আর বিতর্কিত বিষয় হলেও  অষ্টাদশ শতক পর্যন্ত ছাতার আকৃতি ছিল অনেক বড় এবং এর ওজনও ছিল বেশী তা নিয়ে কারো মত ভেদ পরিলক্ষিত করা যায় না। তার কারন ওই সময় ছাতার রডগুলো ছিল কাঠের বা তিমি মাছের কাঁটার তৈরী  এবং এর  হাতল গুলো ছিল প্রায় দেড় মিটার লম্বা এ কারনেই  ছাতার গড় ওজন বেশী ছিল, যার আনুমানিক ওজন ৪-৫কেজি এর কাছা কাছি বলে জানা যায়-

ছাতা

ইংল্যান্ডের ছাতা ব্যাবহার কারী – সোর্স – i0.wp.com                   

‘umbrella” ইংরেজী ( ছাতা) এর নাম করন ল্যাটিন শব্দ ”umbra” শব্দ থেকে এসেছে যার অর্থ দ্বারায়  shade বা shadow। আজ থেকে প্রায় চার হাজার বছর আগে ছাতা আবিস্কৃত হলেও ষোড়শ শতকের প্রথম দিকে উত্তর ইউরোপের বৃষ্টি প্রধান এলাকায়, বিশেষ করে লন্ডনে বসবাস কারী মহিলাদের ভিতর ছাতা ব্যাপক আকারে জনপ্রিয়তা লাভ করে । আর অন্য সব দেশের মত বিশেষ করে লন্ডনে শুধু মহিলারাই ছাতা ব্যবহার করত। তখন পুরুষদের মাঝে ছাতার ব্যবহার খুব একটা ছিল ছিলনা বললেই চলে।

পারস্য দেশীয় পর্যটক এবং লেখক জোনাস হ্যানওয়ে ছাতাকে জনপ্রিয় করতে ইংলান্ডের রাস্তায় একটানা ৩০ বছর ছাতাকে সঙ্গী চলা ফেরা করেন। মুলত তিনিই মানে জনাব জনাস হ্যানওয়ে ইংল্যান্ডে পুরুষদের মাঝে ছাতার ব্যবহার জনপ্রিয় করে তোলেন। যে কারণে ব্রিটিশ রা ছাতার আরেক নাম ’হ্যানওয়ে’ বলে থাকেন। আর এই জোনাস হ্যানওয়ের একান্ত প্রচেষ্টাতেই একটা সময় ইংল্যান্ডে নারী-পুরুষ এর ভিতর ছাতাকে নিত্যসঙ্গী মাধ্যম হিসাবে ব্যাবহারের প্রচলন করতে দেখা যায় ।

১৮৩০ সালে চালু হওয়া বিশ্বের প্রথম ছাতার দোকান ”জেমস স্মিত এ্যান্ড সন্স”  ইংল্যান্ডের রাজধানী লন্ডনের ৫৩ নিউ অক্সফোর্ড ষ্টিটে অবস্থিত । শুনলে অবাক হবেন সেই ছাতার দোকান আজ অব্ধি চালু আছে। স্যামুয়েল ফক্স নামক এক ব্যাক্তি ১৮৫২ সালে রাণী ভিক্টোরিয়ার জন্য  স্টিলের চিকন রড দিয়ে একটি ছাতা তৈরী করেন। ইংল্যান্ড বিশেষকরে লন্ডনে প্রতি বছর প্রচুর বৃষ্টি হয় এ কারনে লন্ডনে ব্যাপক ভাবে ছাতার ব্যবহার হয় বলে লন্ডন শহর কে ছাতার শহর হিসাবে পরিচিতি পেয়েছে ।

উপনোবেশিক আমলে বিশ্বের অনেক দেশ বৃটিশদের কলোনি ছিল। তারা সেই সময় তাদের কলনীয়াল দেশ গুলো থেকে থেকে কাঁচামাল সংগ্রহ করে অনেক কম খরচে ছাতা তৈরী করতে পারতো। এ সময় ব্রিটিশ দের ভিতর সোনা, রুপা, চামড়া, বিভিন্ন প্রানির শিং, বেত ও হাতির দাঁত দ্বারা ছাতার হাতল তৈরী করতে দেখা যায়।   মারিয়াস নামক এক পারস্যে নাগরিক ১৭১৫ সালে পকেট ছাতা আবিষ্কার করার কৃত্তিত্ব দাবি করেন। উনিশ শতকের দিকে ছাতা বিবর্তন খুব দ্রুত আকারে শুরু হয় তখন বিভিন্ন ডিজাইনের এবং সহজে বহনযোগ্য ছাতার আবিস্কার হয় । এর ধারাবাহিকতায় ১৮৫২ সালে স্বয়ংক্রিয় সুইসের সাহায্যে ছাতা খোলার পদ্ধতি আবিষ্কার করেন গেজ বা গেড নামক প্যারিসে বাস করা একজন ফরাসী নাগরিক ।  

ছাতা

ভিয়েতনামে ছাতার ব্যাবহার । ছবি- vietvisiontravel.com

জার্মানির বার্লিন শহরের হ্যানস হাপট নামক এক ব্যক্তি ১৯২০ সালে ছাতা তৈরীতে এক অভিনব পরিবর্তন আনেন । তিনি সে সময় খুব ছোট সাইজের সহজে পকেটে বহনযোগ্য এক প্রকারের ছাতা তৈরী করেন এবং তার নাম দেন লর্ড ও লেডি।  জার্মান জনগনের মাঝে এই লর্ড ও লেডি নামক ছাতার মডেল টি ব্যাপকভাবে সাড়া ফেলেছিল। ১৯৫০ সালের দিকে জার্মানির এই লর্ড ও লেডি মডেলের ছাতা তৈরী কারক কোম্পানী যার নাম ছিল “নিরিপস” তার আরো নতুন নতুন ডিজাইনের ছাতা বাজারে ছাড়তে থাকে এবং এই নতুন ডিজাইন করা ছাতা গুলো আকারে ছোট এবং ওজন খুব কম হওয়ায় তা ভ্রমনকারীদের মাঝে খুব সমাদৃত হয়েছিল।

১৯৬০ সালে পলেষ্টার কাপড় আবিস্কারের পর তা ছাতাতে ব্যাবহার করা শুরু হয়ে যায় এবং পৃথিবীজুড়ে ব্যাপক তা ব্যাপক ভাবে হৈ চৈ ফেলে দেয়। মুলত এই সময় থেকে উপহার সামগ্রী  হিসাবে ছাতার ব্যাবহার শুরু হয়ে যায়। বিংশ শতকের শেষের ভাগে ছাতা ডিজাইনে আরও এক ধরনের পরিবর্তন আসে। এক সময় ছাতার কমন কালার কালো থাকলেও এখন বাহারী রঙ্গের ছাতা হুডি ব্যাবহারের সাথে সাথে এ্যালুমিনিয়াম, ফাইবার গ্লাস ইত্যাদি ব্যবহার করার মাধ্যমে ছাতা কে আরো অনেক আকর্ষনীয় করে বাজারে ছাড়া হচ্ছে। যা ফ্যাশানে এনেছে অনেক নতুন নতুন চমক।

সোলায়মান জুয়েল

ব্লগার/নাট্য পরিচালক/ প্রযোজক

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

More News Of This Category
©2021 All rights reserved © kalakkhor.com
Customized By BlogTheme
error: Content is protected !!

Discover more from কালাক্ষর

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading