পৃথিবী হল এই মহাবিশ্বের এক মাত্র মানুষের বাসস্থল, পৃথিবীর আলো বাতাস আর এর বৈচিত্রময়তা পৃথিবীতে মানুষের বসবাসের উপযোগী করেছে। কিন্তু মাঝে মাঝেই পৃথিবীর বৈরী রুপ ধারন করে। যা সামলানো মানুষের পক্ষে কঠিন হয়ে যায়। না আজ আমরা ঝড়, বৃষ্টি,দাবানল কিংবা ভুমিকম্পের কথা বলবো না এই নিয়ে প্রায় সবাই জানেন। আজ আমরা কথা বলবো পৃথিবীতে ঘটা মহামারী নিয়ে। পৃথিবী যার মুল্য চুকিয়েছিল লক্ষ প্রানের বিনিময়ে।
আপনারা সবাই জানেন বর্তমানে পৃথিবী একটি প্যান্ডমিক টাইমের ভিতর দিয়ে যাচ্ছে। আর এই প্যান্ডমিক টাইমের জন্য দায়ী হল কোভিড ১৯ নামক ভাইরাস। যাকে আমরা করনা নামে চিনি, বর্তমানে করোনা মহামারি আতঙ্কে ভীত পুরো বিশ্ব। এরই মধ্যে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে লাখ লাখ মানুষ করোনার থাবায় মৃত্যুবরণ করছে! আমাদের দেশ বাংলাদেশেও করোনা তার থাবা বসিয়েছে। সেই সুবাদে দিন দিন বেড়েই চলছে করনার সংক্রমণ। সেই সাথে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। ২০২০-২০২১ সাল টি শুধু আমাদের দেশ নয় গোটা বিশ্ববাসীর কাছে চরম দুর্বিসহের বছর। এখন পর্যন্ত সারা বিশ্বে করনায় আক্রান্ত হয়েছে ১৬ কোটি ১১ লাখ মানুষ,কেড়ে নিয়েছে ৩৩ লাখ ৫০ হাজার তাজা প্রান।
তবে জানেন কি, অতীতেও এমনই কিছু ভয়াবহ মহামারী দেখেছে বিশ্ববাসী। সেই সব মহামারী গুলোও কেড়ে নিয়েছে লক্ষ লক্ষ তাজা প্রান। আজকের বিশ্ব জুড়ে আতঙ্ক করোনা ভাইরাসের মহামারীর মত অতীতে ভয়াবহ কয়েকটি মহামারির সম্মুখীন হয়েছে বিশ্ব। সৃজনশীল ব্লগ কালাক্ষর এর আজকের আয়োজন সেগুলো নিয়েই –
ব্ল্যাক ডেথ: মহামারীর ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ মহামারির নাম হল বিউবোনিক প্লেগ। বিশ্বে ১৩৪৬ সালের দিকে সর্ব প্রথম প্লেগের এই প্রার্দুভাব ছড়াতে শুরু করে। এই মহামারির নাম দেওয়া হয় ব্ল্যাক ডেথ নামে পরিচিতি পায়। মহামারিটি কয়েক বছরের ভিতরে ইউরোপের প্রায় আড়াই কোটি মানুষের জীবন কেড়ে নেয়। বিশ্ব জুড়ে ব্ল্যাক ডেথ নামক প্লেগে মারা যায় ২০ কোটি মানুষ।
এক পর্যবেক্ষকের দেওয়া তথ্য অনুসারে, ব্ল্যাক ডেথের প্রাদুর্ভাবের দরুন এত মানুষ মারা গিয়েছিল যা ঐ সময় পৃথিবীতে বাস করা জীবিত মানুষের চেয়ে সংখ্যায় মৃতদেহের দ্বিগুণ ছিল। এ কারণেই ব্ল্যাক ডেথে আক্রান্ত মৃতদের কবর দেবার তেমন সুস্থ মানুষও ছিল না। ‘ব্ল্যাক ডেথ’ ঠেকাতে এরপর কোয়ারেন্টাইনের ব্যাবস্থা করা হয়।
স্প্যানিশ ফ্লু: প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের যাবোনিকা টানার কিছু দিনের ভিতর এক প্রান ঘাতি মহামারী আসে। এটি স্প্যানিশ ফ্লু নামে নামকরন করা হয়। বর্তমানের আতঙ্ক করোনা ভাইরাসের মতোই ১৯১৮ সালে আসা স্প্যানিশ ফ্লু নামক মহামারী থেকে বাঁচতে মানুষ মাস্ক পরা শুরু করে। ফ্লুজাতীয় এ ভাইরাসও কেড়েছিল প্রায় ৫ কোটি মানুষের প্রাণ। মাত্র ৩ বছরের ব্যবধানে কোটি কোটি মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়েছিল ছোঁয়াচে এই ভাইরাস ।
স্প্যানিশ ফ্লুর ব্যাপ্তিকাল ছিল ১৯১৮ জানুয়ারি থেকে ১৯২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। যদিও এর নাম দেওয়া হয় স্প্যানিশ ফ্লু; তবে এর সঙ্গে স্প্যানের কোনো সম্পর্ক ছিল না। ধারণা করা হয়, ফ্রান্সের ব্রিটিশ সেনা ঘাঁটি থেকে অথবা যুক্তরাষ্ট্রের মার্কিন সেনাদের শরীরে প্রথম ধরা পরে ভাইরাসটি। এরপর চীনা শ্রমিকদের মাধ্যমে ইউরোপে স্প্যানিশ ফ্লু ছড়িয়ে পড়ে।
এইডস: HIV নামক প্রান ঘাতি ভাইরাসের আক্রমনে এখনো অনেক দেশের মানুষই মৃত্যুবরণ করে থাকেন। ১৯৮০ সালের দিকে এইচআইভি এইডস মহামারি আকারে প্রথম ছড়িয়েছিল। এইডস সংক্রমনের প্রথম দিন থেকে আজ অব্ধি পৃথিবী জ্ঞ্যান বিজ্ঞানে অনেক এগিয়ে গিয়েছে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় আজও পর্যন্ত এইডস নামক ঘাতক ব্যাধির বিপক্ষে সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়ার ওষুধ আবিষ্কৃত হয়নি। এইডস এখন পর্যন্ত দিনিয়াতে প্রাণহানি ঘটিয়েছে প্রায় চার কোটি মানুষের।
ব্ল্যাক ডেথ বা প্লেগ রোগের চিকিৎসকের পোশাক। ইমেজ সোর্স – গুগল
প্লেগ রোগ: ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ মহামারিগুলোর মধ্যে তিনটিই ভিন্ন ব্যাকটেরিয়ার কারণে ঘটেছিল। ইয়েরসিনিয়া পেস্টিস নামক মারাত্মক ব্যাকটেরিয়ার কারণে প্লেগ রোগের সংক্রমণ ঘটে। এতে প্রায় ৫০ মিলিয়ন মানুষের প্রাণ যায়। প্লেগ রোগটি ছড়িয়ে পড়ার অন্যতম কারণ ছিল খাদ্যশষ্য।
সেই সময় বিশ্বের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক মানুষই না-কি মারা যায় প্লেগে আক্রান্ত হয়ে। প্রতিদিন গড়ে পাঁচ হাজার মানুষ মারা যেত! আর এই মহামারির প্রকপ চলে প্রায় ৫০ বছর অব্ধি। সে সময় এই মহামারী মোকাবেলার কোন রুপ চিকিৎসা ব্যবস্থাও ছিল না।
স্মলপক্স: পৃথিবীতে ১২৫ শতাব্দির দিকে গুটিবসন্ত রোগটি দাবানলের ছড়িয়ে পড়ে। ইউরোপ, এশিয়া ও আরব এলাকায় সংক্রমণ বাড়তে বাড়তে একসময় এলাকা গুলোকে মৃত্যু পুরী বানিয়ে ফেলে। তখন প্রায় ১০ লাখেরও বেশি মানুষ এই গুটিবসন্ত মহামারীতে মারা যায়।
অষ্টাদশ শতাব্দীতে অ্যাডওয়ার্ড জেনার নামক ব্রিটিশ ডাক্তারের আবিষ্কৃত ওষুধে গুটিবসন্তের প্রাদুর্ভাব দমন করা সম্ভব হয়। ১৯৮০ সালের দিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য কর্তৃক জানানো হয়, স্মলপক্সের ভাইরাসটি বিশ্ব থেকে একেবারেই মুছে গেছে।
কলেরা: এক সময় কলেরা মহামারি আকার ধারণ করে। ১৯ শতকের শুরুতে প্রথমে ইংল্যান্ডব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে কলেরা। বাতাসের মাপধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছিল এই রোগের জীবাণু। পানি দূষণের কারণেই মূলত কলেরা রোগটি তখন মহামারি আকার ধারণা করেছিল।
বিগত ২০০ বছরে মোট সাতবার কলেরায় আক্রান্ত হয়েছে ভারতসহ গোটা বিশ্ব। ১৮১৭ থেকে ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দ অবধি কলেরা-অতিমারিতে ভারতে প্রাণ হারিয়েছেন দেড় কোটির বেশি মানুষ।
১৮৬৫ থেকে ১৯১৭ অবধি এই পরিসংখ্যান ছিল দুই কোটি ৩০ লাখ। দূষিত পানি পান করার মাধ্যমে এই রোগের জীবাণু শরীরে প্রবেশ করে থাকে। এই রোগে এখনও অনেক মানুষই মারা যায়।
Leave a Reply