1. sjranabd1@gmail.com : Rana : S Jewel
  2. solaimanjewel@hotmail.com : kalakkhor : kal akkhor
মোঙ্গল ডার্বি : দুর্ধষ মোঙ্গল বাহিনীর ক্ষিপ্রতার মূলে ছিল যে প্রানী - কালাক্ষর
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১১:৫৮ অপরাহ্ন

মোঙ্গল ডার্বি : দুর্ধষ মোঙ্গল বাহিনীর ক্ষিপ্রতার মূলে ছিল যে প্রানী

  • Update Time : বুধবার, ২ জুন, ২০২১
মোঙ্গল ডার্বি
মোঙ্গল ডার্বি । ছবি - equestrianists.com

আজ আমরা ইতিহাসের পাতা থেকে তুলে আনবো এমন এক প্রানীর কথা যা দিয়ে মঙ্গল বাহিনী দুনিয়াময় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। প্রাণীটিকে ঐতিহাসিক গন নাম দিয়েছেন মঙ্গল বাহিনীর অল ওয়েদার ভেহিকল হিসেবে । মানে হল যা কি শীত কি গরম সব যায়গায় সমান ভাবে মঙ্গল বাহীনি ব্যাবহার করতে পারতো। আর তা হল তাদের ঘোড়া যার নাম মোঙ্গল ডার্বি।  শূন্যের নিচে পয়তাল্লিশ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ই হউক আর শূন্যের ওপরে চল্লিশ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাই হউক এই ঘোড়ার সাহায্যে আরামসে পথ চলতে পারতো। মঙ্গল বাহিনীর এই ঘোড়া গুলোর পিঠে সওয়ার হয়েই মঙ্গল রা সারা দুনিয়াময় চষে বেরিয়েছে। যেখানে গিয়েছে সেখানের সব কিছু গুড়িয়ে দিয়েছে এক লহময়। 

মঙ্গলদের ঘোড়া (মোঙ্গল ডার্বি ) গুলো নিজের ওজনের সমান ভার সারাক্ষণই বহন করতে পারত। ঠান্ডা গরম সব আবহাওয়ায় অভিযোজিত হতে পারতো। এদের আলাদা  দেখা শোনার দরকার পরত না, এই মোঙ্গল ডার্বি নামক ঘোড়া গুলো মঙ্গলদের খাবার, পানীয় দুটোই যোগান দিতে পারত। সেইসঙ্গে সেটার বিভিন্ন অংশ দিয়ে মঙ্গল রা পোশাক, থাকার জায়গা আর অস্ত্র তৈরি করতে পারত। আপনি যদি মঙ্গল বাহিনীর ক্ষ্রিপ্র গতীর অগ্রযাত্রার পিছনের কারণ অনুসন্ধান করতে যান সবার আগে আসবে তাদের এই জাদুকরি বাহন ঘোড়া গুলোর নাম।  

মঙ্গলদের এই ঘোড়াগুলো (মোঙ্গল ডার্বি) আরবি বা তুর্কি ঘোড়ার চেয়ে আকারে অনেক ছোট ছিল। মঙ্গোলিয়ার কঠিন, রুক্ষ আর প্রচণ্ড ঠান্ডায় টিকে থাকার জন্য এই আকারে ছোট হওয়াটা খুবই প্রয়োজন ছিল। কারণ মোঙ্গল ঘোড়া প্রতি শীত ও বসন্তে নিজেদের শরীরের প্রায় ৩০ শতাংশ ওজন হারাত। কারণ হিসেবে এ সময় তারা খুব সামান্য খাবার খেয়েই টিকে থাকে। এই ওজন তারা গ্রীষ্মে জন্মানো তাজা ঘাস খেয়ে আবার পূরণ করে ফেলেতে পারতো। শীতের মধ্যে চলতে পারার কারণে যেখানে মধ্যযুগের যে কোনো বাহিনী শীতকালে চুপচাপ ঘরে বসে থাকতে বাধ্য হত, সেখানে মোঙ্গলরা ছুটে বেড়াত প্রচণ্ড ঠান্ডাতেও, প্রতিটি মোঙ্গল সৈনিকের সঙ্গে সব সময় তিন থেকে পাঁচটা ঘোড়া থাকত। যদি কোনো একটা ঘোড়া ক্লান্ত হয়ে যেত মঙ্গল রা সাথে সাথেই সেই ক্লান্ত ঘোড়া বদলে ফেলত। আর এভাবে পালা করে চার পাঁচটা ঘোড়ায় চড়ত বলে তারা অনায়াসে বিশাল দুরুত্ব কোথাও না থেমেই পার হয়ে যেত। একজন মোঙ্গল সওয়ার দৈনিক একশো বিশ মাইল পথ পাড়ি দিত, যা সেই সময়ের মানুষের কাছে ছিল অকল্পনীয়।

এই ঘোড়াগুলো ছোটোবেলা থেকেই বেড়ে উঠত মোঙ্গল স্তেপে, যেখানে ঘাস ছাড়া খাওয়ার আর তেমন কিছুই নেই। এদের আলাদাভাবে কোনো যত্ন নেওয়ার প্রয়োজন হতো না। আকারে ছোটা হওয়াতে খাবার লাগত তুলনামূলকভাবে কম। এরা পানি খেত খুবই কম, দিনে তিন থেকে চারবার মাত্র। প্রচণ্ড শীতের মধ্যে এরা বরফের গুড়ো খেয়ে টিকে থাকতে পারত। অন্যান্য জাতের চেয়ে এদের স্ট্যামিনাও হয় বেশি। একটা ২৫০ কেজি ওজনের মোঙ্গল ঘোড়া পিঠে ৩০০ কেজি ওজন নিয়ে দিনে ৬০ কিলোমিটার পথ চলতে পারে ক্লান্তি ছাড়াই। আর একজন সওয়ার নিয়ে ৬০ কিলোমিটার রেসে হারিয়ে দিতে পারে অন্য সব ঘোড়াকে।

মোঙ্গলদের প্রধান খাবার ছিল ঘোড়ার মাংস, বার্লি আর ঘোড়ার দুধ। তাদের জাতীয় পানীয় হলো ঘোড়ার দুধ দিয়ে বানানো এক রকম অ্যালকোহল, যার নাম আইরাগ। তাদের সবার কাছেই থাকত এক বড়ো ব্যাগ ভরা বোর্ট, (শুকনো ভেড়ার মাংসের গুড়া) যা তাদের জন্য দূরপাল্লার যাত্রায় দিনের পর দিন খাবারের যোগান দিত। শুকনো অবস্থায় বা স্যুপ হিসেবে খাওয়ার জন্য এটা ছিল খুবই কার্যকর একটি খাবার। প্রচণ্ড খাদ্যাভাবের সময় ঘোড়ার শিরা কেটে রক্ত পান করে বেঁচে থাকত মোঙ্গলরা। শুধু ঘোড়ার দুধ আর রক্ত পান করেই তারা টিকে থাকতে পারত পুরা এক মাস। এমন একটা বাহিনীর জন্য লজিস্টিক সাপ্লাইয়ের কোন দরকার পড়ত না। তাদের শুধু একটা জিনিসই খেয়াল রাখতে হতো, চলার পথে যেন ঘোড়াদের খাওয়ার জন্য প্রচুর ঘাস থাকে। এই সুবিধাগুলা মোঙ্গল সেনাবাহিনীকে পরিণত করেছিল তার সময়ের চেয়ে কয়েকশত বছর এগিয়ে থাকা এক যুদ্ধের মেশিনে।

সংখ্যা, শক্তি বা প্রযুক্তির চেয়ে মােঙ্গলরা অনেক বেশি এগিয়ে ছিল মানসিকতায়। অসভ্য এক সমাজে বেড়ে ওঠায় তারা ছিল অন্য যে কোন জাতির তুলনায় ভয় ডরহীন। নিজেদের যাযাবর ঐতিহ্য তাদের দিয়েছিল অবিরাম শত শত কিলোমিটার পথ চলার সামর্থ্য আর শিকারকে ধাওয়া করার প্রবৃত্তি। সেইসঙ্গে, তাদের নেতা ছিলেন মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধের সর্বকালের সেরা জেনারেল, চেঙ্গিজ খান। হালাকু খান। সেনাপতির দায়িত্বে ছিল কাবুয়াকা নামক পচন্ড যুদ্ধবাজ জেনারেল।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

More News Of This Category
©2021 All rights reserved © kalakkhor.com
Customized By BlogTheme
error: Content is protected !!

Discover more from কালাক্ষর

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading