মানুষ মৃত্যু কে ভয় পায়। তাই দুনিয়ার সব মানুষই চায় দীর্ঘদিন বেঁচে থাকতে। তাই এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে যাওয়ার কথা হয়তো কেউ কল্পনা করতেও পারেন না! কল্পনা করুক আর না করুক জন্ম হলে মৃত্যু হবেই। আজ অথবা কাল কিংবা পরশু সবার জন্যই মৃত্যু অনিবার্য। এক দিন না এক দিন সবাইকে এ সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হবে।
দুনিয়াতে মানুষ কেউ বাঁচে ৫০ বছর, আবার কেউ ১০০ বছর। এর কারন পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে মানুষের গড় আয়ু এর তার তম্য এর ফলে হয়। তবে ১০০ বছরের বেশি জীবন লাভ করা ব্যক্তির সংখ্যা হাতে গোনা কয়েকজন। তাই বিশ্বের প্রবীণতম ব্যক্তিদের সম্পর্কে জানার কৌতূহল সবার মনেই কমবেশি থাকে। সৃজনশীল ব্লগ কালাক্ষর এর অবাক পৃথিবী বিভাগে আজ আমরা দুনিয়াতে বেচে থাকা সব চেয়ে দির্ঘ জীবন লাভ কারী মানুষের ব্যাপারে জানার চেষ্টা করবো- আজ আমরা জানার চেষ্টা করবো বিশ্বের সবচেয়ে প্রবীণতম ব্যক্তি কত বছর বেঁচে ছিলেন? তার নাম কি ছিল আর তিনি কোন দেশের অধিবাসী ছিলেন?
ইতিহাসের পাতা ঘাটলে দেখা যায় পৃথিবীর সব চেয়ে প্রবীণ ব্যাক্তিটি ছিলেন একজন ইংরেজ। তিনি বেচে ছিলেন, ১৫২ বছর। তার নাম টমাস ‘ওল্ড টম’ পার। ট্মাস ‘ওল্ড টম’ পার জন্ম গ্রহন করেন ১৪৮২ সালে আর মৃত্যুবরণ করেন ১৬৩৫ সালে।
ইংল্যান্ডের শ্রিউসবারি জাদুঘর এবং আর্ট গ্যালারিতে পৃথিবীর দির্ঘ জীবী মানব টমাসের একটি প্রতিকৃতি আছে। আর্ট গেলারীর শিলালিপিতে, ‘টমাস ১৫২ বছর ৯ মাস বয়সে মারা যান এই তথ্য দেওয়া আছে। এতো বছর এক জন মানুষ বাঁচার কথা হয়তো কেউ কল্পনাও করতে পারবেন না। আপনার মনে প্রশ্ন উঠতে বাধ্য যে কীভাবে টমাস ১৫২ বছর বেঁচে ছিলেন? তাই না? আর এই প্রশ্নের উত্তর জানতে উইলিউয়াম হার্ভে নামক এক চিকিৎসক এবং গবেষক যাকে আমরা মানব দেহের রক্ত সঞ্চালন আবিষ্কারক হিসেবে জানি সেই উইলিয়াম হার্ভে টমাসের দির্ঘ জীবন নিয়ে বিস্তর গবেষণা করেছিলেন। পরে তিনি এই নিয়ে ‘দে অর্তু এট নাটুর সাঙ্গুইনিস’ নামে একটি বই বের করেন। সেখানে তিনি টমাসের দীর্ঘায়ু ও তার গবেষণার বিষয়টি প্রকাশ করেন।
চিকিৎসক ও গবেষক “উইলিয়াম হার্ভে” এর মতে, টমাসের দীর্ঘায়ু লাভের কারণ হতে পারে ট্মাসের নিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস। ট্মাস পনির, দুধ, শক্ত রুটি, পানীয় ছিল টমাসের খাদ্য তালিকায়। ট্মাস দীর্ঘ জীবী হলেও তার ভাগ্যের শিকে ঠিক মত খুলতে পারেন নি, তাই সমৃদ্ধশালী না হয়ে তাকে সারাজীবন খুবই হতদরিদ্র ভাবে জীবন যাপন করতে হয় । খামারে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ হত । প্রথম জীবনে টমাস দুইটি কন্যা সন্তান ছিল। যদিও তারা শৈশবেই মারা যায়।
টমাসের প্রথম স্ত্রীর নাম ছিল জন টেলর। জন টেইলরের মৃত্যুর পর ১০০ বছরেরও বেশি বয়সে টমাস নতুন করে এক বিধবার সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়ান এবং বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। এই বয়সে তিনি এক সন্তানের পিতাও হন। যদিও এই সন্তানের জন্য টমাস দিন-রাত গির্জার সামনে বসে প্রার্থনা করতেন সৃষ্টিকর্তার কাছে। টমাসের যখন ১১০ বছর বয়স; তখন তিনি জেন লয়েড নামে এক বিধবা নারীকে বিবাহ করেন। তারা ১২ বছর সংসার করেছিলেন। এরপর তার দ্বিতীয় স্ত্রীও মারা যান।
রাজা প্রথম চার্লস একবার বিশ্বের এই প্রবীণতম ব্যক্তির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন লন্ডনে। এই সময়ের দিকে টমাস অন্ধ এবং শারীরিকভাবেও দূর্বল ছিলেন। চার্লস তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, অন্য মানুষের চেয়ে তার দীর্ঘায়ু হওয়ার রহস্য কী? অন্য কারো কথা বলতে পারবো না, তবে আমি ১০০ বছর বয়স থেকেই তপস্যা করছি, এই ছিল টমাসের উত্তর।
টমাস এরপর থেকে রাজার অনুগ্রহেই লন্ডনে থাকেন। তবে সেখানকার খাবারও এবং পরিবেশের কারণে কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই ১৬৩৫ সালে টমাস মারা যান। রাজা প্রথম চার্লস তাকে ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে কবর দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।
উইলিয়াম হার্ভে পরবর্তীতে টমাসের মৃত দেহের ময়নাতদন্ত করেছিলেন। এবং ময়না তদন্ত করতে গিয়ে উইলিয়াম হার্ভে টমাসের দেহের সব অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলোকে নিখুঁত অবস্থায় দেখতে পান হার্ভে। তাই উইলিয়াম হার্ভে টমাসে মৃত্যুর কোনো কোন সুনির্দিস্টহ কারণ নির্ধারণ করতে পারেননি। তখন উইলিয়াম হার্ভে ধারণা করেছিলেন, খুব বেশি খাওয়ানোর প্রভাবেই মারা গিয়েছিলেন টমাস।
Leave a Reply