কালাক্ষর ডেক্সঃ বাংলাদেশের পররাষ্ট নীতি হল শান্তিতে সহবস্থান – এক কথায় এর মানে আমরা মিলে মিশে সবার সাথে থাকতে চাই,আরো সহজ ভাবে বললে বলা যায় আমরা কোন দেশের সাথে নিজ ইচ্ছায় যুদ্ধে জরারতে যবো না, কিন্তু যদি কেউ আমাদের ভুখন্ডে এসে আঙ্গুল বাজি করতে চায়, কিংবা আমাদের দেশের কোন এলাকা দখল বাজি করতে চায় তবে তাকে ছেড়ে কথা বলবো না,এর প্রমান আমরা অতীতে বেশ করেয় বার দিয়েছি।
আঞ্চলিক শক্তি ভারত আমাদের কিছু অঞ্চল দখল করতে গাইবান্ধার বর্ডার এলাকায় আগ্রাসন চালিয়েছিল তা যেমন আমরা খুব ভাল ভাবে প্রতিহত করে তাদের আক্রমনের সুমচিন জবাব দিয়েছিলাম, তেমনি পাশের দেশ মায়ানমার যখন আমাদের দেশের সীমার মদ্ধ্যে নাফ নদীর গতিপথ পাল্টে দিয়ে আমাদের টেকনাফের পুরো অঞ্চল নাফ নদীতে বিলিন করার মাধ্য তা দখল করতে চেয়েছিল-
কিন্তু বাংলার কৃতি সন্তান তৎকালীন বিডিআর মহাপরিচালক আ ল ম ফজলুর রহমানের নেতৃত্বে মায়ানমারের এই কুট চাল ভন্ডুল করা হয় এক ক্ষনস্থায়ী যুদ্ধের মাধ্যমে। নাফ নদী নিয়ে ২০০০ সালে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে যে যুদ্ধ সংগঠিত হয় তাকেই ‘নাফ যুদ্ধ’ বলে । বলে রাখা ভাল মায়ানমারের সাথে সংগঠিত এই সীমান্ত যুদ্ধে বাংলাদেশের একজন জওয়ানেরও মৃত্যু হয়নি, অপরদিকে মিয়ানমারের ৬০০+ সৈন্য নিহত হয়েছিলো। শেষ পর্যন্ত পরাজয় মেনে নিয়ে মিয়ানমার শান্তিচুক্তি করতে বাধ্য হয়েছিলো।
নাফ হচ্ছে বাংলাদেশ ও মায়ানমারের বিভক্তিকারী নদী। প্রকৃতপক্ষে এটি ১২ টি শাখায় বিভক্ত। ১৯৬৬ সালে তৎকালীন পাকিস্তান এবং বার্মা সরকার এই মর্মে চুক্তি স্বাক্ষর করে যে, তারা কেউই নদীর কিংবা এর শাখাগুলোর স্বাভাবিক প্রবাহে হস্তক্ষেপ করবে না। তাছাড়া প্রাকৃতিক কারণে নদীর গভীরতায় তারতম্য তৈরী হলে সেই অনুপাতে দু’দেশের সীমান্তও পরিবর্তিত হবে। কিন্তু বাংলাদেশের মূল ভূখন্ডের ২৮০০ একর জায়গা মিয়ায়ানমার কর্তৃক নদীতে অবৈধভাবে দখল হয়ে যায়।
.
মিয়ানমার ১৯৬৬ সালে সাক্ষরিত চুক্তির অবৈধ অপব্যাবহারের উদ্দেশ্যে নাফ নদীর স্বাভাবিক প্রবাহে বিঘ্ন সৃষ্টি করে বাঁধ নির্মান করে। হঠাৎই তারা নাফ নদীর সর্বশেষ শাখাটিতেও বাঁধ নির্মাণ আরম্ভ করে দেই এবং যদি তারা একাজে সফল হত তবে পুরো টেকনাফ অঞ্চলটিই বঙ্গোপসাগরে বিলীন হয়ে যেত।
বিডিআর কতৃক সতর্ক বার্তা পাঠানো হয় মিয়ানমারকে। কিন্তু মিয়ানমার সতর্কবার্তা আমলে না নিয়ে তাদের অবৈধ কাজ অব্যাহত রাখে। তারা তাদের স্থাপনা (৯বাঁধ) রক্ষার্থে বার্মিজ সেনা ও নৌবাহিনী হতে একজন একজন করে মোট দুজন মেজর জেনারেলের নেতৃত্বে দুই ডিভিশন সৈন্য মোতায়েন করে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিডিআর এর প্রায় ২৫০০ জওয়ানকে প্রস্তুত করেন সরাসরি ফজলুর রহমান সাহেব নিজেই।
.
প্রায় পঁচিশ লক্ষ পরিমাণ যুদ্ধ সামগ্রী (রাইফেল, গুলি, বোমা, গান পাউডার) কক্সবাজারে প্রেরণ করা হয় যার অর্ধেক কক্সবাজারেই মজুদ রাখা হয় এবং বাকি অর্ধেক টেকনাফে প্রেরণ করা হয়। ২০০০ সালের পয়লা জানুয়ারি দুপুর ০২:৩০ বিডিআর জওয়ানদেরকে প্রতিপক্ষকে আক্রমণ করার নির্দেশ দেন মহাপরিচালক এবং তারাও (মিয়ানমার) পাল্টা আক্রমণ আরম্ভ করল।
মিয়ানমার এর তরফ থেকে মিয়ানমার নাসাকা, সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনী এই যুদ্ধে অংশ নেয়। এই যুদ্ধ তিন দিনব্যাপী স্থায়ী ছিলো, যাতে প্রায় ৬০০ বার্মিজ নাকবুচা সেনা নিহত হয়। এই যুদ্ধটি একুশে টেলিভিশনে সাংবাদিক জ.ই. মামুন আর সুপন রায় কর্তৃক সরাসরি সম্প্রচারিত হয়। ৪ জানুয়ারি তারিখে মিয়ানমারের রাষ্ট্রপ্রধান জেনারেল থান সুই রাজধানী রেঙ্গুনে কূটনীতিকদের ডেকে বলেন যে তারা বাংলাদেশের সাথে আর যুদ্ধ চায় না।
.
আক্রমণ বন্ধের অনুরোধ জানিয়ে বাংলাদেশের কাছে মিয়ানমার একটি চিঠি পাঠায় যাতে লেখা ছিল, “ আমরা আর যুদ্ধ চাই না আমরা চাই বাংলাদেশ ও আমরা আমাদের কোনোরূপ পূর্বশর্ত ব্যাতিরেকে দুই দেশের প্রতিনিধিদের সমন্ময়ে আলোচনায় বসতে,এবং আমাদের বিবাদমান বিষয়গুলোর নিষ্পত্তি করতে।”
অতঃপর মিয়ানমারের মংডুতে এ নিয়ে সচিব পর্যায়ে আলোচনা শুরু হয় (রাজনৈতিক ব্যাপার) যাতে বাংলাদেশের হয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন স্বরাষ্ট্র সচিব জানিবুল হক। দ্বিপাক্ষিক আলোচনা চলাকালীন মিয়ানমার পক্ষ এতটাই বিমর্ষ/উত্তেজিত ছিলো যে তারা টাইপ রাইটার পর্যন্ত সরবরাহ করেনি এবং চুক্তিটি শেষ পর্যন্ত হাতেই লিখতে হয়েছিলো। অবশেষে মিয়ানমার নদী থেকে বাঁধ সরিয়ে নিতে বাধ্য হলো।
ফলশ্রুতিতে বিডিআর জওয়ানরা টেকনাফকে বঙ্গপসাগরে বিলীন হওয়া থেকে রক্ষা করতে পেরেছিল। তো এভাবেই বাংলাদেশের পক্ষ হতে কোন প্রাণহানী ছাড়াই আমরা মিয়ানমার বাহিনীকে পরাজিত করেছিলাম।
Leave a Reply