1. sjranabd1@gmail.com : Rana : S Jewel
  2. solaimanjewel@hotmail.com : kalakkhor : kal akkhor
অ্যাডমিরাল হাইরেদ্দীন বারবারোসাঃ যাকে নিয়ে তুর্কিরা এখনো গর্ব করে - কালাক্ষর
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০১:২৮ পূর্বাহ্ন

অ্যাডমিরাল হাইরেদ্দীন বারবারোসাঃ যাকে নিয়ে তুর্কিরা এখনো গর্ব করে

  • Update Time : মঙ্গলবার, ১ জুন, ২০২১
হাইরেদ্দীন বারবারোসা 
ছবি - হাইরেদ্দীন বারবারোসা । সোর্স - daily subbah

পরাক্রমশালী তুর্কি অটোমান সাম্রাজ্যের বয়স তখন শতবর্ষ পার হয়ে গিয়েছে। এতদিন তারা কেবল স্থলপথেই নিজেদের শক্তি বাড়িয়ে গেছে । হঠাৎ করেই মনে হলো, অ্যাজিয়ান সাগর, ভুমধ্য সাগর আর এই অঞ্চলের ছোট ছোট দ্বিপ গুলো যা তাদের নৌবাণিজ্যের পথ কে বারবার বাধা গ্রস্থ করেছে তা সুসঙ্গগত করতে স্থলপথের মতো জলপথেও তাদের শক্তিশালী হতে হবে। যদিও তাদের পুর্ব উত্তরসূরি সেলজুকরা একসময় নৌ-পরাশক্তি হতে চেয়েছিল। কিন্তু প্রতিদ্দন্ধি বাইজেন্টাইনদের হস্তক্ষেপ, মঙ্গোল আগ্রাসন এবং নিজেদের রাজনৈতিক উত্থান-পতনের ঝামেলার কারণে সেলজুক রা ঠিকমত সুবিধা করে উঠতে পারেনি। যদিও তারা নৌবাহিনী গঠন করেছিল কিন্তু ১০৯০ সালে সেলজুক নৌবাহিনী বাইজেন্টাইন নৌবাহিনীর হাতে পরাজিত হলে, সেলজুকদের আশার প্রদীপ অঙ্কুরেই নিভে যায়। 

সেলজুক দের প্রতিদন্ধি বাইজেন্টাইন্দের অস্তিত্ব বিলিন করে দেওয়ার ফলে অটোমানদের সেলজুকদের মত সমুদ্রজয়ে এত কাঠ-খড় পোড়াতে হয়নি। ১৪৬২ সালে অটোমানদের আনাতোলিয়ার (আনাতলিয়া প্রদেশ টিকে আমরা বর্তমানে তুরস্ক রাস্ট হিসেবে চিনি)  অ্যাজিয়ান সাগরের উপকূল জয় করার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে সমুদ্রে তাদের নৌসেনার উপস্থিতি জানান দেয় । এর পর সমস্ত উপকূল নিজেদের দখলে আনার পর অটোম্যান রা ভূমধ্যসাগরে তাদের প্রভাব বাড়তে শুরু করে। এই সময় নিজেদের নিয়মিত নৌবাহিনী গড়ে তোলার সঙ্গে-সঙ্গে সমুদ্রে চষে বেড়ানো ভাড়াটে বাহিনীদেরও কাজে লাগায় অটোমানরা। ঐ সময় এই সব ভাড়াটে  বাহিনীগুলোকে ‘প্রাইভেটিয়ার্স’ নামেও অভিহিত করা হতো। প্রাইভেটিয়ার্সরা ষোড়শ থেকে উনবিংশ শতাব্দী পর্যন্ত ভূমধ্যসাগরে বিভিন্ন যুদ্ধে অবদান রেখে গেছে। বিশেষ করে ইউরোপিয়ান এবং অটোমানদের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে যুদ্ধে যোগ দিতো তারা। কখনো কখনো নিজেরাও ভূমধ্যসাগর এবং পূর্ব আটলান্টিকের পণ্যবাহী জাহাজগুলোতে আক্রমণ চালাতো। তবে এসব কর্মকাণ্ডের জন্য কাউকে জবাবদিহিতা করতো না তারা। এভাবেই প্রাইভেটিয়ার্সদের ব্যবহার করে, ইউরোপীয় এবং অটোমানরা নিজেদের প্রক্সি যুদ্ধগুলো পরিচালিত করতো। আর এই সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করে শত্রু সেনার কাছে এক বিভীষিকা হিসেবে আবির্ভুত হওয়া ব্যাক্তিটির নাম হাইরেদ্দীন বারবারোসা বা বারবারোসা হাইরেদ্দীন পাশা যাকে ইউরোপিয়ান রা নাম দিয়েছিল লাল মুখো দাড়িওয়ালা। তদানন্তিন বিশ্বে যার হাত ধরেই তুর্কি অটোম্যান নৌবাহিনী এজিয়ান সাগর, ভুমধ্য সাগর ছেড়ে সদুর ইন্দোনেশিয়া পর্যন্ত প্রভাব বিস্তার করেছিল। সৃজনশীল বাংলা ব্লগ কালাক্ষর এ আমাদের আজকের আয়োজন এই অজেও এডমিরাল কে নিয়েই।

হাইরেদ্দীন বারবারোসা এর পরিচয়ঃ

হাইরেদ্দীন বারবারোসা বা বারবারোসা হাইরেদ্দীন পাশা। বারবাসা ল্যাটিন শব্দ যা ইউরোপিয়ান দের দেওয়া। ল্যাটিন ভাষায় বারবাসা এর অর্থ লালমুখো দাড়িওয়ালা। (তুর্কী: Barbaros Hayreddin (Hayrettin) Paşa এর জন্ম: খিজর বা খিদার, তুর্কী: Hızır; খ্রি. ১৪৭৮ – মৃত্যু ৪ জুলাই, ১৫৪৬)। বারবাসো হাইরুদ্ধিন ছিলেন উসমানীয় সাম্রাজ্যের একজন অ্যাডমিরাল অফ দ্য ফ্লিট। হাইরেদ্দীন বারবারোসা জন্মগ্রহণ করেন লেসবোস দ্বীপপুঞ্জের (বর্তমানে গ্রীসের অন্তর্গত) পালাইওকিপোস গ্রামে। এবং মৃত্যুবরণ করেন উসমানীয় সাম্রাজ্যের রাজধানী কন্সটান্টিনোপল বর্তমানে যার নাম ইস্তাম্বুলে।  

হাইরেদ্দীন বারবারোসার বাবা ইয়াকুপ ছিলেন একজন আলবেনীয় বংশোদ্ভূত ধর্মান্তরিত মুসলিম সিপাহী। অটোমান বাহিনী যখন লেসবোস দ্বীপ দখল করে সেই বাহিনীতে হাইরেদ্দীন বারবারোসা এর বাবা ইয়াকুপ ও ছিলেন। আর হাইরেদ্দীন বারবারোসা এর মা ছিলেন লেসবোসে বসবাসকারী একজন গ্রীক। সেই সময় অটোমানরা তাদের জয় করা অঞ্চলগুলোতে ধর্মীয় উদারতা দেখিয়েছিলো। যার ফলে অনেক স্থানীয় ব্যক্তি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলো।     

শৈশবে হাইরেদ্দীন বারবারোসার নাম ছিলো ‘খিজির’। চার ভাইয়ের বাকি ভাইদের নাম ছিল ইসহাক,ইলিয়াস এবং অরুচ। খিজির ছিল তার বাবা মায়ের তৃতীয় সন্তান। চার ভাইয়ের মধ্যে খিজির এবং অরুচের দাড়ির রং ছিল কমলা রঙের। এই কমলা রঙের দাড়ির কারণে ইউরোপীয়রা তাদের ‘বারবারোসা ভাতৃদ্বয়’ উপাধি দিয়েছিলো। আর অটোমান সুলতান সুলেইমান খিজিরকে ‘খয়ের আদ-দীন’ উপাধিতে ভূষিত করেন, যার অর্থ ‘ইসলামের শ্রেষ্ঠতম’। পরে সেটা ‘হাইরেদ্দীন’ হিসেবে বেশি পরিচিতি পায়।   

সৃজন শীল বাংলা ব্লগ কালাক্ষর এ আমার আগের লেখা গুলো পড়তে নিচের লিংক গুলোতে ক্লিক করুন 

চার ভাই একসময় খ্রিষ্টান জাহাজে আক্রমণকে পেশা হিসেবে নিলেও, তাদের শুরুটা হয়েছিলো ব্যবসায়ী হিসেবে। তারা বাবার কাছ থেকে নৌকা চালানো বিদ্যা শিখেছিলো। সেই দক্ষতা কাজে লাগিয়ে সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহণের ব্যবসা শুরু করে। বেশ কয়েক বছর একসঙ্গে কাজ করার পর ব্যাবসার প্রসার বেড়ে গেলে, চার ভাই ভূমধ্যসাগরের বিভিন্ন অংশে নিজেদের আলাদা ব্যবসা গড়ে তোলে। এবং তা নিয়ে তারা ব্যস্ত হয়ে পড়ে।

বারবাসো ভাইদের ব্যাবসা শুরুর পর এক তাদের ভাগ্যে এক আপদ এসে জোটে। ঐ সময় আটলান্টিক মহাসাগর ও ভূমধ্যসাগরে যেখানে একচ্ছত্র আধিপত্যবিস্তার করত ইউরোপিয়ানরা। সাথে ছিল রোডস দ্বীপভিত্তিক প্রাইভেটিয়ার্স বাহিনী ‘নাইট টেম্পলাররা’ তাদের ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষতি সাধন করতে থাকে। এরই চূড়ান্ত রূপ হিসেবে টেম্পলাররা মেঝ ভাই অরুচকে বন্দি করে এবং দাস হিসেবে রেখে দেয়। অরুচ দুই বছর বন্দি হিসেবে নিদারুণ কষ্টের জীবন কাটান। তারপর নিজের ঐকান্তিক চেষ্টায় টেম্পলারদের কাছ থেকে পালিয়ে ছোট ভাই খিজিরের সঙ্গে মিলিত হন। ভাইয়ের করুণ কষ্টকর দাস জীবনের কথা শুনে খিজির কঠিন এক সিদ্ধান্ত ন্যায়। খ্রিস্টান জলদস্যুদের শিক্ষা দিতে ভাই অরুচ কে সাথে নিয়ে সমুদ্রে একটি ‘পর্যবেক্ষক দল’ গড়ে তোলেন। একে একে তারা অসংখ্য খ্রিস্টান জলদস্যু জাহাজে আক্রমণ পরিচালনা করেন। আক্রমণগুলো সফল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিপুল অর্থ-সম্পদও হস্তগত করেন বারবারোসা ভাতৃদ্বয়। একসময় তারা নিজেদের শক্তির জায়গাটুকু বুঝতে পারেন। আর সেটা হলো সমুদ্রে নাইট টেম্পলারসহ অন্যান্য খ্রিস্টান জাহাজ লুট করা। এভাবেই তারা স্পেনীয়সহ অসংখ্য ইউরোপীয় রাজ্যের চোখের বালিতে পরিণত হন।   

হাইরেদ্দীন বারবারোসার শুরুর কথা

হাইরেদ্দীন বারবারোসা প্রথম জীবনে এরকম একটি ভাড়াটে সৈনিক দলের নেতা ছিলেন, যিনি ইউরোপীয়দের কাছে তার সময়ের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর এবং অভিজ্ঞ জলদস্যু হিসেবে পরিচিতি পান। ষোড়শ শতাব্দীর প্রথমার্ধ জুড়ে হাইরুদ্দিন বারবাসা ভূমধ্যসাগরের বুক চিরে নিজের রণতরী অবিরাম ছুটে চলেছেন। এই দীর্ঘ সময়ের চলার পথে হাইরুদ্দিন বারবাসা অসংখ্য শত্রু জাহাজে আক্রমণ করেছেন, এর ধারাবাহিকতায় অনেকগুলো নৌ-বন্দর তার প্রভাব বলয়ের আওতায় এসে যায়। জাহাজে আক্রমণ করে লুট করা সম্পদ এবং অধিকার করা বন্দর থেকে প্রাপ্ত বিপুল পরিমাণ সম্পদ বারবারোসার হস্তগত হয়ে পড়ে। বারবারোসা ছিলেন একজন দক্ষ যোদ্ধা, যিনি আরও বড় কিছু হওয়ার জন্যই জন্মেছিলেন। তার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা তাকে সেদিকেই ধাবিত করেছিলো। নিজের যোগ্যতা গুণে একসময়  অটোমানদের মিত্রতে পরিণত হন তিনি। নিজ বাহিনীর সাথে অটোম্যান বাহিনীর সংযোজনের ফলে তার যুদ্ধের ক্ষমতাও অনেকে বেড়ে যায়। সাথে সাথে বীরত্বের খবরে অটোম্যান সম্রজ্যে তাদের জনপ্রিয়তা রাতারাতি আকাশচুম্বী হয়ে যায়। আর প্রতিদন্দি খ্রিস্টান বাহিনীর কাছে হয়ে ওঠেন মুর্তমান আতঙ্ক। অটোমান সাম্রাজ্যের হয়ে বারবারোসা অসংখ্য নৌ অভিযান পরিচালনা করেছিলেন। বিশেষ করে ইউরোপের অন্যতম শক্তিশালী রাজতন্ত্র, স্পেনীয় সম্রাট পঞ্চম চার্লসের ঘোরতর বিরোধী ছিলেন তিনি। 

হাইরেদ্দীন বারবারোসার সমুদ্রের জীবন

হাইরেদ্দীন বারবারোসার বড় ভাই অরুচকে ‘বাবা অরু’ হিসেবেও অভিহিত করা হতো। বাব অরু মুলত একটি সম্মান জনক নাম। সেই সময় স্পেনে মুসলিম শাসনের পতন ঘটে। নব্য স্পেনের শাসক স্পেনে তখন মুসলিম নিধন শুরু করে। প্রান ভয়ে মুসলিম রা ভুমধ্য সাগর পাড়ি দিয়ে মরক্কো চলে আসতে থাকে। আর এই পথে তাদের যারা সাহায্য করতো তাদের দাকা হত বাবা অরু। খিজির এর বড় ভাই অরুচ ঐ সময় স্পেনের আন্দালুস থেকে মুসলিম শরণার্থীদের খ্রিস্টান গণহত্যা থেকে বাঁচাতে নিজের নৌবহরে করে উত্তর আফ্রিকা পৌঁছে দিয়েছিলেন বলেই তার নাম বাবা অরু হিসেবে অভিহিত করা হত। যাই হউক অরুচের এই সাহায্য করার ঘটনার পর পর্তুগীজ এবং স্পেনীয় খ্রিস্টানরা উত্তর আফ্রিকা উপকূলে আক্রমণ চালাতে শুরু করে, যা আফ্রিকান আমির এবং অটোমানদের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই এই আক্রমণের জবাব দিতে অটোমান সুলতান দ্বিতীয় বায়েজিদের পুত্র শাহজাদা কুরকুদ অরুচ এবং খিজিরকে ডেকে পাঠান। তাদের কাজ ছিলো পশ্চিম ভূমধ্যসাগরে খ্রিস্টান নৌবাহিনীকে প্রতিরোধ করা।

কিন্তু ১৫১২ সালে প্রথম সেলিম অটোমান সিংহাসনে বসার পর শাহজাদা কুরকুদকে পারিবারিক কারণে মৃত্যুদণ্ড দেন। যেহুতু মৃত্যু দন্ড প্রাপ্ত শাজাজাদা তাদের খুব ঘনিষ্ঠ ছিল তাই নিজেদেরকে সুলতান সেলিমের রোষানল থেকে বাঁচাতে অরুচ এবং খিজির উত্তর আফ্রিকান ঘাঁটিতে আত্মগোপন করেন। আত্মগোপনে থাকার ভিতরেও তারা স্পেনীয়দের বিরুদ্ধে আফ্রিকান মুসলিম আমিরদের সহায়তা করতে থাকেন।

এর পর সুযোগ বুঝে ১৫১৬ সালে বারবারোসা ভাতৃদ্বয় আলজিয়ার্স আক্রমণ করেন। এবং আলজিয়ার্সকে নিজেদের কারায়ত্বে নিয়ে ন্যান।  ফলে এই অঞ্চলটি স্পেনীয়দের হাত থেকে মুসলিমদের হাতে চলে আসে। আলজিয়ার্সকে মুক্ত করার সু সংবাদ অটোম্যান সুলতানের কানে যেতে সময় লাগে না। এই খবরে অটোমান সুলতান খুব খুশি হয়। এবং তাদের বিপক্ষে অটম্যান সুলতানের মনোভাব পালটে যায়। ফলে এতদিনের লুকিয়ে থাকা জীবনের অবসান হয়। এবার জনসম্মুখে বের হন তারা। অটোমানরা দুই ভাইয়ের সঙ্গে চুক্তি করার আগ্রহ প্রকাশ করে। যে চুক্তির মাধ্যমে অটোমান সুলতান অরুচকে আলজিয়ার্সের গভর্নর হিসেবে পদোন্নতি দেন। আর খিজিরকে পশ্চিম ভূমধ্যসাগরের প্রধান অ্যাডমিরাল হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু অরুচ স্পেনীয়দের সঙ্গে এক সম্মুখ যুদ্ধে মৃত্যুবরণ করেন।

অটোমান অ্যাডমিরাল হাইরেদ্দীন বারবারোসা 

অ্যাডমিরাল হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর, হাইরেদ্দীন বারবারোসা দুই দশক ধরে উত্তর আফ্রিকা, ভূমধ্যসাগর এবং পূর্ব আটলান্টিকে নিজের শক্তি বৃদ্ধি করেছেন। তার কয়েক ডজন রণতরী ছিলো, সেই সঙ্গে নৌ ও স্থলবাহিনীর বিশাল এক বহর। এই বাহিনীকে কাজে লাগিয়ে ভূমধ্যসাগরে হাইরোদ্দিন বারবাসো অটোমান প্রভাবকে আরো বেশি পাকাপোক্ত করে তোলেন। তারপর নজর দেন দক্ষিণ ইউরোপের উপকূলবর্তী এলাকায় নিজেদের প্রভাব বাড়াতে। বারবাসো তার বাহিনী নিয়ে আমেরিকার সঙ্গে স্পেনীয়দের বাণিজ্যিক পথগুলো একে একে বন্ধ করে দিতে থাকে। আর তারা এসব নৌ অভিযান থেকে প্রাপ্ত বিপুল পরিমাণ সম্পদও অর্জন করেন।

১৫৩৮ সালে পোপ তৃতীয় পল বারবারোসার বিরুদ্ধে একটি নৌ ক্রুসেডের আয়োজন করেন। পোপের নেতৃত্বে পাপাল রাজ্য, স্পেন, জেনোয়া, ভেনিস প্রজাতন্ত্র এবং মালটার নাইটদের সমন্বয়ে একটি যৌথ নৌবাহিনী গড়ে তোলা হয়। যৌথ বাহিনীর নাম দেওয়া হয় ‘পবিত্র সংঘ’। এই বাহিনীর লক্ষ্য ছিলো যেকোনো মূল্যে বারবারোসার নেতৃত্বাধীন অটোমান নৌবাহিনীকে পরাজিত করা। পোপের নৌবহরের দায়িত্ব দেওয়া হয় অ্যাডমিরাল আন্ড্রে ডরিয়ারের হাতে। আন্ড্রে ডরিয়ারের নৌবহরে রণতরীর সংখ্যা ছিল ১৫৭টি। অন্যদিকে বারবারোসার নেতৃত্বাধীন অটোমান বাহিনীর ছিলো ১২২টি রণতরী। কম সংখ্যাক রণতরী আর সৈন্য নিয়ে ১৫৩৮ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর বারবাসা পোপের বাহিনীর সাথে যুদ্ধে জরিয়ে পড়েন। কিন্তু যুদ্ধ কখনো সন্য সংখ্যা বেশি আর কমের উপর তার ফলাফল নির্ধারন করে না,যুদ্ধের ফলাফল নির্ধারিত হয় সন্যদের মনবল, একাগ্রতা তা শৃঙ্খলতা আর সেনাপতির যুদ্ধের কৌশলের উপর। তাই কম সংখ্যাক সেনা আর রণতরী নিয়েও বারবাসা সাথে প্রেভায় সংঘটিত এই নৌ যুদ্ধে  পোপের যৌথ বাহিনীর শোচনীয়ভাবে পরাজয় ঘটে।

বারবাসোর নেতৃত্বে অটোমানরা প্রেভার যুদ্ধে পোপের যৌথ বাহিনীর ১০টি জাহাজ ডুবিয়ে দিয়েছিলো। এছাড়া অটোম্যানদের সারাসী আক্রমনের ফলে যৌথ বাহিনীর ৩৬টি জাহাজ পরিত্যক্ত হয়ে যায় এবং আর ৩টি জাহাজ বারবাসোর হস্তগত হয়। মজার ব্যাপার হল এই যে, এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে অটোমানদের একটি জাহাজও হারাতে হয়নি। তবে তাদের ৪০০ জন সৈনিক নিহত হয় এবং প্রায় ৮০০ জন সৈনিক আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছিলো। পোপের খ্রিস্টান যৌথবাহিনীর ৩,০০০ নাবিক অটোমানদের হাতে বন্দি হয়। নিহত হয় কয়েক হাজার। এর ফলে রাত না পোহাতেই অন্ধকারের ভিতরে প্রান ভয়ে পোপের যৌথ বাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল আন্ড্রে ডরিয়া তার নিজ বাহিনীকে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালিয়ে যান।  

এমন চমৎকার একটি যুদ্ধ জয়ের পর, অটোমান সুলতানের তোপকাপি প্রাসাদ যেন বারবারোসাকে অভ্যর্থনা জানাতে মুখিয়ে ছিলো। তখন অটোমানের সিংহাসনে ছিলেন সুলতান সুলেইমান। তিনি বারবারোসাকে সাদরে গ্রহণ করেন এবং তাকে পুরষ্কার হিসেবে সমগ্র অটোমান নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল হিসেবে পদোন্নতি দেন। সেই সঙ্গে উত্তর আফ্রিকা এবং রোডসের প্রধান প্রশাসক হিসেবেও নিয়োগ পান বারবারোসা। পরের বছরগুলোতে বারবারোসা তিউনিস এবং ত্রিপলি অটোমান শাসনের অধীনে নিয়ে আসেন।

দীর্ঘসময়ের রোমাঞ্চকর একটি কর্মজীবন পার করার পর, হাইরেদ্দীন বারবারোসা ১৫৪৫ সালে অবসর গ্রহণ করেন। তিনি তার পুত্রের হাতে আলজিয়ার্সের শাসনভার ন্যস্ত করেন। তারপর ইস্তাম্বুলে নিজের প্রাসাদে ফিরে যান। এখানে আসার পর ১৫৪৬ সালে মৃত্যুবরণ করেন জলের রাজা হিসেবে খ্যাত হাইরেদ্দীন বারবারোসা। তার সমাধিটি বসফরাসের ইউরোপীয় অংশের ব্যসিকটাস শহরে রয়েছে, যে সমাধিটি তৈরি করেছিলেন সেই সময়ের বিখ্যাত স্থপতি মিমার সিনান। সেখানে সমুদ্রের দিকে ফেরানো বারবারোসার একটি মূর্তিও রয়েছে। পরবর্তী বহু বছর ধরে সমুদ্রগামী নাবিকরা তাদের পরম শ্রদ্ধেয় নেতাকে দেখে সম্মান জানাতো।

source by:

  1.   https://www.dailysabah.com/portrait/2019/10/17/hayreddin-barbarossa-lion-of-the-mediterranean

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

More News Of This Category
©2021 All rights reserved © kalakkhor.com
Customized By BlogTheme
error: Content is protected !!

Discover more from কালাক্ষর

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading